সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে কাউকে দত্তক নিতে যা প্রয়োজন


প্রকাশিত:
১৩ জুন ২০২১ ২১:২৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৪

 

প্রভাত ফেরী: অন্য দেশের পরিবারহীন এমন শিশুদের অনেক অস্ট্রেলিয়ানই দত্তক নিতে চান। অনেক দেশের সাথেই অস্ট্রেলিয়ার দত্তক নেয়ার বিষয়ে চুক্তি আছে, কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং এজন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন।

বর্তমানে ১৩টি দেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সক্রিয় দত্তক চুক্তি আছে, এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ানরা শিশুদের দত্তক নিতে পারবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই এটিকে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টার-কান্ট্রি এডোপশন প্রোগ্রাম বলা হয়।  

২০১৯-২০ সালের এডোপশন অস্ট্রেলিয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ২০১৯-২০ সালে ৩৩৪টি দত্তক নেয়ার আবেদন নিস্পত্তি করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩৭টি আন্ত: দেশীয় দত্তকগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। তবে বিদেশ থেকে দত্তক গ্রহণের এই সংখ্যাটি টানা ১৫ বছর ধরে কমছে।    

এই দত্তকগ্রহনের প্রক্রিয়াটি শুরু করতে আপনাকে স্টেট এন্ড টেরিটোরির কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা এসটিসিএ (STCA)-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তারা আপনাকে একটি ইচ্ছাপত্র বা এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট পূরণ করতে বলবে কিংবা আপনার দত্তক নেয়ার যোগ্যতা আছে কিনা তা প্রাথমিকভাবে জানতে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। 

STCA আপনাকে একজন এডোপশন এসেসরের সাথে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্য, পুলিশ এবং রেফারী চেকের ব্যবস্থা করতে পারে।  

সিঙ্গেল প্যারেন্ট ডেব ব্রুক চীন থেকে একজনকে দত্তক নিতে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তিনি এজন্য এক দশকেরও বেশি অপেক্ষা করেছিলেন। এসময় তিনি ফেসবুক ভিত্তিক সাপোর্ট গ্রূপ এডোপশন অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করতেন। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টার-কান্ট্রি দত্তক গ্রহণের অপেক্ষার সময় বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ অংশীদারী অনেক দেশই আগে স্থানীয় দত্তকগ্রহীতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

মিজ ব্রুক বলেন, আবেদন গৃহীত হলে এই প্রক্রিয়ার জন্য যে সময়টা বেশি লাগে তা হলো বিদেশে যে শিশুটিকে আপনি দত্তক নেবেন তার সাথে মানানসই হওয়া। 

মিজ ব্রুক বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় অপেক্ষার সময়টিও যথেষ্ট বেশি কারণ তাকে কিছু এডুকেশন সেশনে যোগ দিতে হয়েছিল, যাতে একটি শিশুকে দত্তক নিলে তাকে নতুন একটি দেশে নতুন পরিবারে মানিয়ে নিতে তথ্য এবং উপকরণগুলো অভিভাবকদের জানা থাকে। 

প্রতিটি স্টেট এবং টেরিটোরিতে দত্তকগ্রহণকারী পিতামাতাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরণের শর্ত আছে, এবং তাদের অবশ্যই যে দেশ থেকে শিশুটিকে নেয়া হবে তাদের যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে। 

এডোপশন অস্ট্রেলিয়া ২০১৯-২০ রিপোর্টে দেখা যায় দত্তকগ্রহণকারী পিতামাতাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ থেকে ৪৪-এর মধ্যে। 

আপনার দত্তকগ্রহনের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনি তখন এডোপশন ভিসা সাবক্লাস ১০২-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। 

ইমিগ্র্যাশন এডভাইস এন্ড রাইটস সেন্টারের প্রিন্সিপাল সলিসিটর আলী মোজতাহেদী বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের আগে সকলকে স্বাস্থ্য বিষয়ক শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।  

তিনি আরো বলেন, মিনিস্টার ফর ইমিগ্র্যাশন, সিটিজেনশিপ, মাইগ্র্যান্ট সার্ভিসেস এন্ড মাল্টিকালচারাল অ্যাফেয়ার্স আরো একটি অতিরিক্ত শর্ত যোগ করতে পারে যেটিকে বলা হয় এসিউরেন্স অফ সাপোর্ট।  

অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অথবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্টরা যারা বিদেশে আছেন তারা বিদেশি এজেন্সির মাধ্যমে অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈদেশিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিশু দত্তক নিতে পারেন।  

বিদেশে দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে এখানে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের জড়িত থাকতে হয় শুধুমাত্র ভিসার আবেদন নিস্পত্তি করতে।  

সিডনীর বাসিন্দা শ্রীনি লাখানি ভারত থেকে একজন শিশু দত্তক নিতে চেষ্টা করেছেন। 

তিনি বলেন, আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারাই, আমরা চেয়েছিলাম একজন শিশু দত্তক নিতে। কিন্তু এজন্য এতো নিয়ম-নীতি রয়েছে যে এই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।  

তবে মিঃ মোজতাহেদী বলেন, শিশু-পাচারের উদ্বেগের কারণে ২০১০ সালে ফেডারেল সরকার ভারতের সাথে আন্তঃ দেশীয় দত্তক গ্রহণ চুক্তি স্থগিত করে।

অস্ট্রেলিয়ায় বৈদেশিক দত্তক গ্রহণের নীতি ও মানদন্ডটি 'দ্য হেগ কনভেনশন অন প্রটেকশন অফ চিলড্রেন এন্ড কোঅপারেশন ইন রেস্পেক্ট অফ ইন্টার-কান্ট্রি এডোপশন' অনুযায়ী মেনে চলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে দত্তকগ্রহনের মূল উদ্দেশ্য হবে শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা। 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top