সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পৃথিবীতে গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়াচ্ছে করোনা : রিপোর্ট- শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২০ ২৩:১৯

আপডেট:
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১২

 

আজ বিশ্বজোড়া প্রধান সমস্যার নাম হল করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের প্রকোপ সারা দুনিয়া জুড়ে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মানুষের চিন্তা ক্রমাগত বাড়াচ্ছে এই মারণ ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে আজ বাড়ছে দারিদ্র্য। এই অতি মহামারীর জন্য, গরীব মানুষেরা হয়ে পড়বেন আরো আরো গরীব। যা পরিসংখ্যান এই বিষয়ে পাওয়া যাচ্ছে, তা চমকে ওঠার মতো।
করোনার জন্য, সংক্রমণ আর লকডাউনে, প্রায় ১০০ কোটি মানুষ, সারা পৃথিবীতে, দারিদ্র‍্যের চরম সীমায় গিয়ে পৌঁছাবেন। আমাদের দেশ ভারতবর্ষেও এর কুপ্রভাব পড়বে। ভারতে, আরো ৬ কোটি মানুষের আয় দাঁড়াবে গিয়ে দিনে মাত্র ১৪৪ টাকা। গত বছর, ভারতে, চরমতম দারিদ্র্য সীমার নীচে ছিলেন ৪ কোটি মানুষ। যা ভীষণ ভীষণ খারাপ সংকেত ভারতের জন্য।
এই ভয়ংকর সংবাদ দেওয়া হয়েছে, একটি গবেষণাপত্রে। এই গবেষক দলে আছেন, লন্ডনের কিংস কলেজ ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। গরীবদের আর্থিক অবস্থা এমনিতেই সারা বিশ্বে ছিল খারাপ। এই করোনা এসে তা আরো খারাপ করে দেয়। অবস্থা এমন জায়গায় যাচ্ছে, তাতে বিশ্বের অনেক মানুষ দুবেলা পেটপুরে খাবার খেতে পাবে কিনা, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে।
গরীবদের আর্থিক অবস্থা বোঝানোর জন্য, বিশ্বব্যাংকের যে কয়েকটা মানদন্ড আছে, তার একটি হল, নূন্যতম আয় দিনে, ১৪৪ টাকা ২৪ পয়সা, বা তার থেকেও কম। এই আয় যারা করেন, সারা পৃথিবীতে তাদের বলা হয় কি জানেন? চরমতম দরিদ্র মানুষ। যাদের আয় দিনে, ৪১৭ টাকা ৪১ পয়সা, তারা হলেন বেশি দরিদ্র মানুষ।
চরমতম থেকে খুব - নানা ধরনের দারিদ্র্যের মাত্রা বুঝতে গড় দৈনিক আয়ের যে সীমা বিশ্বব্যাঙ্ক ঠিক করে দিয়েছে, তার ভিত্তিতে, এই গবেষণা। এই গবেষকরা বলেছেন, এই মাপকাঠিতে আগামী দিনে, বিশ্বের অন্তত ১১২ কোটি মানুষ দারিদ্র‍্যের চরম সীমায়। এখনকার থেকে, আরও আরও গরীব হয়ে পড়বেন, কমকরে হলেও, ৩৭০ কোটি মানুষ। যা সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
এই গবেষণাপত্রে, জানা গেছে আরো অনেক তথ্য। এবার সেই বিষয়ে, আপনাদের সামনে আলোকপাত করছি আমি। এখন বিশ্ব অর্থনীতির যা অবস্থা, তার নিরিখে, করোনা ভাইরাস বিশ্বের গরীব মানুষদের ক্ষতির পর ক্ষতি করে যাবে। কত মানুষ যে তাদের কাজ হারাবেন, তার ঠিক নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে বেকারত্বের হার
শুধু বাড়বে, আর বাড়বে। এসবের জন্য, বিরাট চাপ পড়বে, পৃথিবীর অর্থনীতির ওপরে।
করোনার জন্য সারা পৃথিবীর আর্থিক মানচিত্র বদলে যাবে। এই মারণ ভাইরাসের প্রভাবে, মোট ৪০ কোটি মানুষকে সহ্য করতে হবে, চরমতম দারিদ্র‍্যের জ্বালা - যন্ত্রণা। বিশ্বব্যাঙ্কের আগের পরিসংখ্যানে, যার সংখ্যা ছিল ৭ থেকে ১০ কোটি। এই পরিস্থিতির সার্বিক অবনতিতে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকায়, মানুষের গড় বাৎসরিক
আয় কমে যেতে পারে কমপক্ষে, ২০ শতাংশ।
গবেষকদলের অন্যতম সদস্যের নাম হল সামনার। তিনি বলেছেন, " নানা দেশের সরকার, যদি জরুরি ভিত্তিতে এই সব মানুষদের কল্যাণের জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, লকডাউনে, প্রতিদিন গরীব মানুষেরা যেভাবে মার খাচ্ছেন, তা মেরামত করতে ইতিবাচক ব্যবস্থা না নিলে, গোটা বিশ্বেই গরীব মানুষদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু আর থাকবে না। "
এই চরমতম দারিদ্র‍্যেও, থাকবে, অবশ্যই থাকবে বৈষম্য। এটা একেক জায়গায় একেক রকম। কোথাও, কম, কোথাও বেশি। তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির। যার একদম প্রথম দিকে আছে ভারতের নাম। কারণ, ভারত খুব খুব জনবহুল দেশ। এই দেশের জনঘনত্বও অত্যন্ত বেশি।
ভারতের পরে আছে সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলি। সারা পৃথিবীর যে ১১২ কোটি মানুষ চরমতম দারিদ্র‍্যের শিকার হতে চলেছেন, করোনা ভাইরাসের জন্য, তাদের এক - তৃতীয়াংশ হলেন আফ্রিকার মানুষ।
তবে এটা ঠিক, যে, পৃথিবীতে গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়াচ্ছে করোনা - যা চিন্তা ক্রমশ বাড়াচ্ছে বিশ্ববাসীর।


শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top