সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

নাঙেলি থেকে মুসকান, লড়াইটা আত্মমর্যাদার : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৩:৪১

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০১

 

অবাক হবার মতো কথা হলেও এটা সত্যি যে, এক সময় ভারতের একটা রাজ্যে নিম্ন বর্ণের নারীদের বুক অর্থাৎ স্তন খোলা রাখতে হতো। বুকের উপর কোন কাপড় রাখা ছিল অপরাধ। কেউ যদি বুক ঢাকতে চাইতো তা হলে তাকে কর দিতে হতো। যা "স্তন কর" নামে পরিচিত।

ট্রাভানকোর রাজ্য যা বর্তমানে ভারতের কেরালা নামে পরিচিত। নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং অস্পর্শ হিন্দু নারীদের ওপর এই স্তন কর ধার্য ছিল।
ইতিহাসবিদদের মতে, নিম্ন বর্ণের নারীদের স্তন উন্মূক্ত রাখা উচ্চ বর্ণের মানুষের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন হিসাবে গন্য হতো তৎকালীন সমাজে।
শ্রেণি বিভাজনকে অমান্য না করার জন্যই সরকার স্তন ঢেকে না রাখার বিধান বেঁধে দিয়েছিলেন।
ফলে এ নিয়ে বহুবার বিদ্রোহ করেছিল নিম্নবর্ণের হিন্দুরা।

ব্রাহ্মণ শাসকেরা নিম্নবর্ণের হিন্দু মহিলাদের ওপর স্তন কর বা মুলাক্করম জারি করেছিলেন। এই নিয়ম অনুসারে প্রকাশ্য স্হানে স্তন ঢেকে রাখার জন্য কর দিতে হবে।
শুল্ক কর্মকর্তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্তন পরিদর্শন করতেন। স্তনের ছোট, বড় অনুসারে কর ধার্য করা হতো।
নিম্ন বর্ণের হিন্দু পুরুষেরা তাদের মাথা ঢাকতে 'তলা করম' নামের কর দিতেন।

ট্রাভাংকাররের ইঝাভা জাতির নারী নাঙালা আর তার স্বামী চিরুকন্দন বাস করতেন চার্থালা গ্রামে। তারা ছিলেন নিঃসন্তান।
একদিন শুল্ক কর্মকর্তা স্তন জরিপ শেষে নাঙালার বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে দেখেন নাঙালা তার স্তন ঢেকে রেখেছেন। শুল্ক কর্মকর্তা নাঙালার কাছে কর দাবী করেন। নাঙালা কর দিতে অস্বীকার করেন।
এই নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়।
করের বোঝা বাড়তে থাকে সেই সাথে বাড়তে থাকে নাঙালার হযরানি। একদিন শুল্ক কর্মকর্তা এবং গ্রাম প্রধানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা আসেন নাঙালার বাড়ি। নাঙালা তাদের বাইরে বসিয়ে রেখে ঘরের ভিতরে যান। ধাঁরাল দা দিয়ে নিজের স্তন দুটি কেটে কলা পাতায় করে তাদের হাতে তুলে দেন।
রক্তক্ষরণে মারা যান নাঙালা। এই মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে স্বামী চিরুকন্দন স্ত্রীর চিতায় আত্মাহুতি দেন। কোন পুরুষের সতীদাহ হবার এটাই প্রথম ঘটনা।

১৮৫৯ সালে ট্রাভানকারে ব্যাপক দাঙা শুরু হয়। এতে বহু মানুষ নিহত হয়। অবশেষে রহিত হয় এই অমানবিক কর। এই দাঙ্গাটি কাপড়ের দাঙ্গা হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

আমরা যখন নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছি তখন রুখে দাঁড়াতে দেখছি মুসকান নামক একজন কিশোরীকে এক অন্যায় আদেমের বিরুদ্ধে।অসংখ্য পুরুষের কণ্ঠ ছাপিয়ে একজন কিশোরীর 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনী কাঁপিয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্ব।

মুসকান আর নাঙালার এই লড়াই আত্মমর্যাদার লড়াই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই। বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষ, সংখ্যালঘু মানুষ গর্জে উঠুক। তাদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে যাক সপ্ত আসমান ভেদ করে আরো উপরে। কেঁপে উঠুক অত্যাচারির বুক। নাড়িয়ে দিক অত্যাচারীর মসনদ।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top