সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আমার খোলা চিঠি : খালেদা কায়সার


প্রকাশিত:
১৮ জানুয়ারী ২০২১ ১৯:৪৫

আপডেট:
১৮ জানুয়ারী ২০২১ ২০:০০

ছবিঃ সিডনির মিন্টোর নওয়াব রেস্টুরেন্টে জাবি’র ৫০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা

 

খুব মন খারাপ ছিল বেশ কয়েকদিন ধরে! দেশে যেতে পারছিনা করোনার কারণে! জাবি’র ২৫ বছর পূর্তিতে স্বামী-সন্তান সহ যোগ দিয়েছিলাম! তখনই ভেবেছিলাম, আল্লাহ্ পাক বাঁচায়ে রাখলে ৫০ বছর পূর্তিতেও দেশে থাকবো! কিন্তু করোনার কারণে টিকেট কাটা থাকা সত্বেও দেশে যাওয়া হলোনা মনটা খুবই খারাপ! রেসট্রিকসন বাসায় মাত্র ৫ জন। পার্কে ৩০ জন, হোটেলে স্হান অনুযায়ী দূরত্ব বজায় রেখে, তা নাহলে মালিক সহ সবার জরিমানা?  তাহলে কি এই ভাবেই একান্ত নিরামিষ অবস্হায় সিডনিতে আমরা বাসায় বসে থাকবো? ৫০ বছর পূর্তি আমরা করতে পারবোনা? করবো না? মনে মনে অপেক্ষা করছিলাম, কেউ না কেউ আমাকে ফোন করে বলবে “আপা চলেন, আমরা কয়েক জন মিলে কিছু একটা করি”। কিন্তু খুব হতাশ হলাম, কেউ কোন প্রস্তাব দিলোনা!

বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকে দু’এক জনের সাথে কথা হচ্ছে, আমেরিকাতেও। শেষ মেষ বায়াজিদ গালিব ভাই (৭ম ব্যাচ) কেনাডা থেকে আমাকে একটা লিংক দিলেনঃ “প্রিয় জাবিয়ান, আগামী ১২ জানুয়ারী ২০২১, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে আপনার শুভেচ্ছা বাণী ভিডিও ক্লীপ নিম্নের ইমেইলে পাঠাতে অনুরোধ করছি ([email protected])। বি: দ্র: মিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের জন্য উপরের লিখিত অনুযায়ী অথবা তোমার মত করে লিখে অস্ট্রেলিয়ার সবাইকে আমন্ত্রণের দায়িত্ব নিলে খুব ভাল হয়। ধন্যবাদ, গালিব”।

মনের যখন এই অবস্হা পরের দিন ৯/০১/২০২১ইং সকাল ১০টা বা ১১টার দিকে খসরু আমাকে লুতফর এর লিংক সম্পর্কে বলে। আমি বললাম, আমি জানি। এও বললাম, আমরা ১২ তারিখ কিছু না করলেও অন্তত ঐ দিন বিকালে একসাথে কোথাও বসে কয়েক জন মিলে চা- নাস্তাতো খেতে পারি। ওকে জায়গার নাম বললাম। আরো বললাম, ফেসবুকে লিখে দেই যদি দু’একজন কেউ আসে। দেখলাম, কয়েক জন মন্তব্য করছে, করোনার মধ্যে এটা কীভাবে সম্ভব? দু’একজন ফোন করলো, এক ছোটবোন ফোন করে বলে, এ কি বাঁশি বাজালেন? না ঘরে মন বসছে, আবার ভয় লাগছে। আমি বললাম, বিসমিল্লাহ্ বলে ট্রেনে চলে আস আমি ইস্টেশন থেকে তুলে নিবো। অথবা তোমার বর তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে যাবে, আমাদের বাসায় গল্প করবে, রাতে আমার বাসায় আমরা ডিনার করবো।

ফেসবুকে আমি স্পষ্ট লিখে দেই, “করোনার কারণে শুধু মাত্র জাবিয়ানরা আমন্ত্রিত”। আমি জানি, সবাই বাংলা পড়তে ও লিখতে পারে। তারপরেও ফোন! আপা বৌ নিয়ে আসা যাবেনা? আপা বাচ্চা গুলি কই রেখে আসি? আমি ভাল ভাবেই জানি, বাচ্চাকে বা বাচ্চাদের ওরা কোথায় রাখবে? তারপর ওয়ার্কিং ডে! এগুলি সমস্যা! এটাতো আমার বা আমাদের কোন পূর্বপরিকল্পনা ছিলনা! যারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই জাবি’র তাদের বললাম, তোমরা আসলে যে কোন একজন আসো। আর যারা বৌ নিয়ে আসতে চেয়েছে তাদের বললাম, বৌ নিয়ে আসলে তাকে অন্য জায়গায় আলাদা বসতে হবে!

কারণ, আমি তাৎক্ষনিক চিন্তা করে নিয়েছিলাম, রেস্টুরেন্টে যেই সাইডটা আমি নিবো ...... সেখানে গ্যাপ রেখে আমরা ২০/২৫ জন বসতে পারবো। তানাহলে করোনার কারণে আমাদের জরিমানা হবে! বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বললাম, কেউ ইচ্ছা করলে আমার বাসায় তোমার দুলাভাইয়ের কাছে রাখতে পারো অথবা প্লীজ অন্য ব্যবস্হা করো।

আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ সাজ্জাদ-রেখা (ব্যাচ-২৩) আমার কথায় রাগ করেনি, বাচ্চাকে অন্য জায়গায় রেখে এসেছে। তারমানে, তারা জাবি’কে প্রচন্ড ভালবাসে! আমার কথা রেখেছে এবং এত দূর থেকে এসেছে। আমি সত্যি সত্যি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ সাজ্জাদ-রেখা।

আমি কৃতজ্ঞ, নিগার সুলতানা শাম্পিন (২৯ব্যাচ) এর কাছে, শাম্পিন তোমার জন্য বিরাট এক হাগ! আসার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমার কাছে যখন তুমি জানতে পারলে বাচ্চা নিয়ে আসা যাবেনা। আমিও কষ্ট পেয়েছি তুমি আসতে না পারার কারণে

আমি বাহাবা দেই মাহবুবা রহমান কান্তা (২৭ ব্যাচ) কে, বুদ্ধিমতি মেয়ে। আমার ফোন পেয়ে চলে আসলো সব পরিবার পরিজন সহ। সবাইকে ভিতরে নিজেদের মত ডিনারে বসিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলো। আমি এর জন্য তোমার স্বামী ও বাচ্চাদের সাধুবাদ জানাই।️

কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই, বাকি সবাইকে? ২৪ ঘন্টার ও কত অল্প সময়ে ওয়ার্কিং ডে তে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে ক্লান্ত শরীরে, বাসায় না গিয়ে শুধু মাত্র জাবি’র টানে এইভাবে ছুঁটে আসা!

আদর জানাই, সাবিনা ইয়াসমিন বেবি (১৩ তম ব্যাচ) কে মাত্র ২৪ ঘন্টার নোটিশে সেই ডুরেল থেকে আসার জন্য আর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করার জন্য।

আমরা ভাবতেই পারিনি এত লোক হবে। ভেবেছিলাম খুব বেশি হলে ২০ জন হবে। তোমরা কেউ আমাকে ভুল বুঝনা বা রাগ কর না প্লীজ। তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে আমি বাধ্য হয়েছি এই কারণে, এক - লোক সংখ্যা বেশি, দুই- রেস্টুরেন্টের মালিক ভয় পাচ্ছিল, আশেপাশের রেস্টুরেন্টের লোকেরা কমপ্লেইন করে দেয় কিনা? তার উপরে পুলিশ এসেছিল দেখার জন্য।

আমি সত্যিই খুব দু:খিত, করোনার কারণে কি হয় না হয়? রেসট্রিকসন চলছে। তাই সবকিছু সংকুচিত করতে হয়েছে। না হলেতো আমরা হল ভাড়া করেইতো করতে পারতাম! সেখানে সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে আসতে পারতো। অনেকেই জানতে চেয়েছো করোনা কেটে গেলে কোন অনুষ্ঠান হবে কিনা? তাঁদের জন্য বলছি, তোমরা যদি করতে চাও কেন হবে না?

আচ্ছা, আমাকে কেউ সাহায্য করবে? কোন দুষ্টু ছেলে বা মেয়ে ওখানে বলছিল, মিনি ‘পা কে অষ্ট্রেলিয়া সরকারের এওয়ার্ড দেওয়া উচিত করোনার আইন ভঙ্গ করে অনুষ্ঠান করার জন্য! তাকে আমার ধরা দরকার। যার জন্য করি চুরি সেও বলে চোর? তবে সত্যি, আমিও ভয় পেয়েছি এত জন দেখে।

ধন্যবাদ জানাই, আনিস ভাই (২য় ব্যাচ) অর্থনীতি, শাহজাহান সরদার ভাই (৩য় ব্যাচ বাংলা), আবদুস সোবহান ভাই( ৫ম ব্যাচ রসায়ন), শত ব্যস্ততার মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টা নোটিশে চলে আসার জন্য।

ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে।

ছবিঃ লেখিকা খালেদা কায়সার

যারা আমাদের এই পরিকল্পনাহীন সামান্য চা-চক্রের আয়োজনকে তোমাদের প্রাণবন্ত যোগদানের মাধ্যমে এত সুন্দর রুপ, রসে-গন্ধে ভরে দিলে যার আমেজে এই বছর সুন্দর কেটে যাবে। ইনশাল্লাহ্ আমরা সবাই দোয়া করি, আল্লাহ্ পাক যেন আমাদেরকে খুব দ্রুত করোনা মুক্ত করে দেন। সারা পৃথিবী আবার স্বাভাবিক হোক, তখন আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর রিউইনিয়ন করবো।

সবাই ভাল থেকো, সুস্হ্য থেকো, সাবধানে থেকো। সারা পৃথিবীর মানুষ ভাল থাকুক। পৃথিবী করোনা মুক্ত হোক।

শুভ সুবর্ণ জয়ন্তী আমার, আমাদের প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

খালেদা কায়সার
জাবিয়ান, সমাজ সংগঠক,‌ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top