সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সিডনিতে উড়লো বাংলাদেশের মানব পতাকা


প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৩২

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৩

 

২০২১ সালটি বাংলাদেশিদের জীবনে একটি বিশেষ বছর। এ বছর যে তাঁদের মুক্তি সংগ্রাম তথা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছরকে উদযাপনের উপলক্ষকে ঘিরে দেশে নানা অনুষ্ঠান, কার্যক্রম এবং উদ্যোগ রয়েছে। দেশের আপামর জনসাধারণের ন্যায় প্রবাসীরাও স্মরণকালের এই বিশেষ উপলক্ষকে চিরস্মরণীয় করতে মরিয়া। সেই লক্ষে সিডনির অন্যতম ব্যস্ত উপশহর Bankstown এর Paul Keating Park ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব "All Alumni Event"।
নিকট অতীতে অতিমারির ভয়াল কালকে জয় করে অভিনব এক আয়োজনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে উদযাপন করতে সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের এল্যামনাইদের সংগঠনগুলি একত্রিত হয়েছিল এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে। বিজয়ের এই উৎসবে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (AUST), ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (IUB), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (KU), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (JU), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (DU), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (RU), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (CUET) সমূহের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। প্রাক্তনদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আগত বাংলাদেশী ও দ্বিতীয় প্রজন্মের স্থানীয় বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীরাও (BD Student Societies) স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানটির সফলতা এনে দেয়।
বিকাল ৪টায় অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব শুরু হয়। বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল এবং এই আয়োজনের প্রধান অতিথি খন্দকার মাসুদুল আলম। এতে আরো অংশগ্রহণ করেন All Alumni Event এর আহ্বায়ক মোস্তফা আব্দুল্লাহ, All Alumni Event'র সহ-আহ্বায়ক ডাঃ এজাজ চৌধুরী, খালেদা কায়সার, কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, কাউন্সিলর সুমন সাহা, কাউন্সিলর সাজেদা আক্তার সানজিদা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের ‘ইস্ট হিলস’ আসনের মাননীয় এমপি Ms Wendy Elizabeth LINDSAY তিনি তাঁর শুভেচ্ছা বক্তৃতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ও কষ্টার্জিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি সকল বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের এতোগুলি সংগঠনের একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতীয় কোন উপলক্ষকে উদযাপনের প্রয়াস নিঃসন্দেহে গৌরবের এবং অবশ্যই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। এই মিলন মেলার অন্যতম প্রধান ছিল আকর্ষণ বাংলাদেশের মানব পতাকা তৈরী। যাতে অংশগ্রহণ করে ২৪০ জনের একটি দল। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সাধিত হয় সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। বাংলাদেশের জাতীয় মানব পতাকা প্রবাসে এই প্রথমবার উত্তোলিত হলো All Alumni Event'র উদ্যোগে। এছাড়াও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আলোকে রচিত গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের সমন্বয়ে তৈরি একটি স্মরণিকা নাম "সুবর্ণ বন্ধন"। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনের বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ানদের চিত্রাঙ্কন ছিল আরেকটি বিশেষ অর্জন।
উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিকাল ৬টায় শুরু হয়ে রাত ১০:৩০ মিনিট পর্যন্ত পরিবেশিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন নিলুফার শায়লা সুহিন। শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করেন কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও গানে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইরা পরিবেশন করেন দেশাত্ববোধক কবিতা, গান, নাটিকা, গীতি আলেখ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্যাশন-শোতেও ফুটে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা। সব শেষে সুপার ব্যান্ড পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সব গান।
বিশাল এই কর্মযজ্ঞকে সফল করতে একটি কার্যনির্বাহী দল নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। এক সাথে কাজ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ এই দলটি গড়ে তুলেছে সৌহার্দ্যের এক কাঙ্খিত সৌধ। দল, মত, শ্রেণী, বর্ণ ও ধর্মের যাবতীয় বৈষম্য দূর করে কণ্ঠে তুলেছে সাম্যের গান। গড়ে তুলেছে দুর্বার অগ্রযাত্রার কাফেলা। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আগামী প্রজন্মের বাংলাদেশিদের জন্য তাঁরা উপহার দিয়ে গেল অনন্য ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠান।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top