সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশীদের বৃহত্তম মেলা 'প্রভাত ফেরী বৈশাখী মেলা' অনুষ্ঠিত


প্রকাশিত:
৩০ মে ২০২২ ২৩:০৭

আপডেট:
৩১ মে ২০২২ ০৫:০৫

ছবিঃ মেলা কমিটির আহ্বায়ক গাউসুল আলম শাহজাদা, মমতাজ বেগম এমপি, প্রধান পৃষ্ঠপোষক শ্রাবন্তী কাজী ও সোলায়মান দেওয়ান

 

গত ২৮ মে (শনিবার) সিডনির ব্যাংকসটাউন প্যাসওয়ের বিশাল ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের মেলা ‘প্রভাত ফেরী বৈশাখী মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজনে ছিল বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ছিলেন শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী। তিনি সিডনি থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় পত্রিকা প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক এবং সিডনির অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যশনাল একাডেমির সি ই ও এবং ডিরেক্টর।

ছবিঃ গান পরিবেশনা করছেন ফোক গানের সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম এমপি

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি ও অন্যান্য ভাষা-ভাষীদের নিকট সিডনির এই বৈশাখী মেলা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রাণের মেলায় রূপ নিয়েছে।

ছবিঃ মেলার সুভিনিয়র ম্যাগাজিন উদ্বোধন করছেন শ্রাবন্তী কাজী এবং উইন্ডি লিন্ডসে এমপি


বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া প্রায় ২০ বছর ধরে এই বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে।



আয়োজক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক, এই বৈশাখী মেলার রূপকার ও মেলা কমিটির আহ্বায়ক গাউসুল আলম শাহজাদা জানান, অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে জাতির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও এর ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াই এই মেলার প্রধান উদ্দেশ্য।



মেলা কমিটির আহ্বায়ক সকল স্পন্সর, সংগঠক, সাংবাদিকসহ সকল সেচ্ছাসেবকদেরকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ একই ভ্যানুতে ‘বৈশাখী মেলার’ তারিখ ঘোষণা করেন।
ছবিঃ ফুল দিয়ে মমতাজ বেগম এমপি কে স্বাগত জানান প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী ও কাউন্সিলর সানজিদা আক্তার সানজিদা

মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক শ্রাবন্তী কাজী এক সাক্ষাতকারে মেলাতে স্পন্সেরর কারন হিসাবে বলেন যে, সিডনিতে কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক এবং মানবিক কাজে আমার কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এই সহযোগিতার কারনে, সিডনিতে যেমন অনেকের ক্যাজুয়াল জবের ব্যবস্থা হচ্ছে, অনেক খাবারের এবং কাপড়ের দোকানের বিক্রী এবং পরিচিতি বাড়ছে। আর এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো আমাদের অর্থনীতির মূল চাবীকাঠি। বিভিন্ন কারনে আমাদের কমিউনিটির মানুষ এক ধরনের মানসিক চাপ ও অবসাদে থাকেন। এই ধরনের আয়োজন মানুষকে মানসিক অবসাদ কাটিয়ে নতুন ভাবে রিক্রিয়েশনের প্রেরণা যোগায়। এছাড়া আমাদের বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে এই দেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও এই ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভুমিকা রয়েছে। ১০ বছর আগেও এই দেশের মানুষ বৈশাখ কি জানত না। আর এখন এই দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের প্রধান নেতা সহ সবাই মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন প্রেস ব্রিফিং এ আমাদেরকে বৈশাখীর শুভেচ্ছা জানান। আর এটা সম্ভবই হয়েছে আয়োজক, স্পন্সর, মিডিয়া, সাংবাদিক এবং কমিউনিটির সকল মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টার জন্য।
বৈশাখী মেলাকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড. মাসুদুল হক এবং মিডিয়া সমন্বয়কারী ও মেলা ক্রোড়পত্রের সম্পাদক ড. রতন কুণ্ডু প্রবাসী কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।



প্রবাসী বাঙালিদের এ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাপ্রাঙ্গণে প্রায় দশ হাজারের বেশী দর্শক-অতিথিবৃন্দের সমাগম ঘটে। মেলায় কেবল প্রবাসী বাঙালিরাই নয়, অন্যান্য ভাষা-ভাষী অতিথিদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত।
ছবিঃ মেলায় উপস্থিত দর্শকদের একাংশ

সিডনির দূর-দূরান্ত থেকেও মেলায় অগনিত দর্শকদের সমাগম ঘটে। শিশু, যুবক ও প্রবীণরা বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মেলাতে অংশগ্রহণ করে।
এই বৈশাখী মেলায় উপস্থিত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও টিভি সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, কবি ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ছবিঃ দর্শকদের একাংশ

আগত দর্শকদের অনেকেই বলছেন, ‘ব্যাংকসটাউন প্যাসওয়ে’ নয়, এ যেন প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ’।



অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানের প্রতিনিধি কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সাইফুল্লাহ, উইন্ডি লিন্ডসে এমপি, ব্যাংকসটাউন- ক্যান্টারবারি সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর কার্ল সালেহ, স্ট্রেথফিল্ড সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর রাজ দত্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ সিং চুন্নু, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আব্দুল মতিন, বাসভূমি টেলিভিশনের পরিচালক আকিদুল ইসলাম, সিটি অব ক্যাম্পবেলটাউনের কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদ প্রমুখ।
ছবিঃ সিডনির ব্যবসায়ী, কাউন্সিলর এবং শিল্পীদের কয়েকজন

অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বের শেষে যুঁই চৌধুরী ও হেমার উপস্থাপনায় এবং সঞ্জয় টাবুর মিউজিক, লাইটিং ও সাউন্ডের তত্ত্ববধায়নে শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তা রাত ১০টা পর্যন্ত চলে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সিডনির স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ। আর প্রধান আকর্ষণ ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম একের পর এক সংগীত পরিবেশন করে মেলার দর্শকদের সুরের মুর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন।

ছবিঃ প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী এবং সিডনির স্বনামধন্য শিল্পী অমিয়া মতিন


অন্যদিকে মেলা প্রাঙ্গণে চারিদিক ঘিরে ছিল বাঙালি খাবার ও দেশীয় পোশাকের নানাবিধ স্টল। খাবারের স্টলগুলোতে ছিল নানা ধরনের মুখরোচক দেশীয় খাবারসহ পুরি, চটপটি, পিঁয়াজু, হালিম, জিলাপি, সিঙ্গারা বিরিয়ানি দসহ রকমারি পিঠা ও মিষ্টি।
এছাড়া তৈরি পোশাকের স্টলগুলোতে ছিল সালোয়ার কামিজ, জামদানি ও অন্যান্য তাঁতের শাড়ির বিপুল সমাহার।
মেলা উপলক্ষে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়। মেলায় বিভিন্ন রকমের রাইড বড় দর্শকদের যেমন গ্রাম্য নাগরদোলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে তেমনি ছোট ছোট বাচ্চাদের সারাবেলা আনন্দে মাতিয়ে রেখেছিল।
রাত ১০ টায় বর্ণিল আতশবাজির মাধ্যমে মেলার যবনিকাপাত হয়।

এই মেলার স্পন্সর হিসাবে আরো যারা ছিলেন তাঁরা হলেন টেলিওসের কর্ণধার জাহাংগীর আলম, সোলার ওয়ার্ল্ড, এনফেক্টর, স্ট্যাম্ফোর্ড এডুকেইশনের মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top