প্রধান সম্পাদকের কথা
কেটে যাক হতাশার অন্ধকার
প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৫
আপডেট:
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:২৯
জীবনে কখনো হতাশ হবেন না। আমাদের এই জীবনটা হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ, পাওয়া, না পাওয়া দিয়ে সাজানো। এর কোন একটা না থাকলে জীবন কখনো অর্থময় হবে না। জীবনের যে আপাত ভুলগুলি আপনাকে আত্মদগ্ধ বা আত্মদংশন করছে, মনে রাখবেন সেই ভুলগুলি না হলে আপনার অভিজ্ঞতা এবং উপলদ্ধি - কোনটাই পরিপূর্নতা পেত না। বরং ভুল থেকে যদি আপনি শিক্ষা নিতে পারেন, তাহলে আপনার সামনে সীমাহীন সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে যা আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আপনার কাংখিত লক্ষ্যে। চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। আপনাকে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে চেষ্টা করে যেতে হবে। অর্থ, সময়, বয়স, শারিরীক অক্ষমতা কোনটাই সাফল্যের জন্য বাঁধা হতে পারে না, যদি আপনার মধ্যে চেষ্টা এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকে।
আলি বাবার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের অন্যতম ধনী জ্যাক মা ৩০বার চাকুরীতে ইন্টারভিও দিয়েও একটা চাকুরী পাননি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন নি বা হতাশ হয়ে থেমে থাকেন নি। হাল ছাড়েন নি বলেই আজ জ্যাক মা বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবাসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিং চরম কষ্ট আর দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধে করে তাঁর লেখা চালিয়ে গেছেন। হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম গল্পটি লেখা শেষ করার পর বইটি প্রকাশ করার জন্য রাউলিংকে প্রকাশকদের কাছে অনেক ঘুরতে হয়েছিল । আটজন প্রকাশক তাঁর বইয়ের পান্ডুলিপি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। শেষে ব্লুমসবারি নামের একটা প্রকাশনী তাঁর বইটা প্রকাশ করে। সেই বইয়ের কারনে অখ্যাত রাউলিং বিখ্যাত হয়ে যান। আজ তিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী লেখিকা। কর্নেল স্যান্ডার্স বেঁচে থাকার জন্য কি না করেন নি! বাসের কন্ডাক্টর, রেলের শ্রমিক, ফেরি, আইন প্র্যাক্টিস থেকে সেনা বাহিনীর কাজ- সব কিছুই করেছিলেন। কোথাও কোন সফলতার মুখ দেখেন নি। কিন্তু তিনি কখনো দমে যান নি। ৬০ বছর হয়ে যাবার অনেক পর শুরু করলেন ফ্রায়েড চিকেনের ব্যবসা- কে এফ সি। তিনি ৭৪ বছর বয়সে নিজের ব্যবসার শেয়ার বিক্রী করে মিলিনিয়ার হওয়ার বিরলতম রেকর্ড গড়েন। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তাইকিচিরো মোরি ৫৫ বছর বয়সে চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে শুরু করলেন নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। ১৯৯৩ সালে ৮৮ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখন তাঁর সম্পদের পরিমান হয়েছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। রে ক্রক শুরুতে খাবার ফেরি করে বেড়াতেন। তাঁর ছিল ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট। যেখানে ভীড় ভাট্টা দেখতেন, সেখানে তাঁর ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন। ঘটনাক্রমে তার পরিচয় হয় ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বার্গার রেস্টুরেন্টের দুই মালিক ভ্রাতৃদ্বর মরিস ও রিচার্ড ম্যাকডোনাল্ডের সাথে। তাদের বানানো খাবার খেয়ে মুগ্ধ হন ক্রক। তিনি ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের রাজি করান যেন তাকে দেশের অন্যান্য শহরেও রেস্টুরেন্টটির শাখা চালু করার অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে ৫২ বছর বয়সে ইলিনয়তে তিনি ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রথম শাখা চালু করেন। ১৯৬১ সালে যখন তিনি ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের কাছ থেকে পুরো রেস্টুরেন্টটির মালিকানাই কিনে নেন, ততদিনে তিনি করে ফেলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডলার। রাজা রবার্ট ব্রুসের কথা তো আমরা সবাই জানি। যুদ্ধে ১৮ বার পরাজিত হয়েও তিনি থেমে থাকেন নি। তিনি আশাহত হোননি। নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এক সময় ঠিকই জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। জো বাইডেনকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কত ঝড় ঝাপ্টা আর উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছিল। দূর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন নিজের পরিবারকে। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং স্থির লক্ষ্যের কারনে তিনি একদিন ঠিকই ৮০ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
প্রতিটা মানুষের মধ্যেই কোন না কোন প্রতিভা বা শক্তি লুকিয়ে আছে। আপনাকে জানতে হবে আপনার ভিতরের শক্তিটাকে। এই জন্য আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ আপনি কি হতে চান? আপনার কি ভাল লাগে? খুঁজতে চেষ্টা করুন আপনার ভিতরের শক্তিটাকে। যখন উত্তরটা পেয়ে যাবেন, তখন নিজেকে গড়ে তুলুন বাজ পাখির মত করে। একটা সময়ের পর বাজ পাখির নখ দূর্বল হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে আসে। শিকার করে বেঁচে থাকাই তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যায়। তখন বাজ পাখি চলে যায় দূর পাহাড়ে, লোকালয় থেকে একদম আড়ালে। তারপর শুরু হয় বাজ পাখির লড়াই। যে লড়াইটা শুধু তাঁর নিজেকে গড়ার জন্য। পাহাড়ের গায়ে আছড়ে আছড়ে ভেঙ্গে ফেলে তাঁর দূর্বল নোখগুলি। ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় বেঁচে থাকার সংগ্রামটা সে একা নিজেই করতে থাকে। বাজ পাখি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। এক সময় তাঁর নখ আগের চেয়েও ধারালো হয়ে উঠে, শরীরের গজায় নতুন পালক, চোখে ফিরে আসে নতুন দৃষ্টি শক্তি। তারপর পাহাড় থেকে ফিরে আসে যে বাজ পাখি, তা আগের চেয়েও হয়ে উঠে অনেক শক্তিশালী এবং ক্ষীপ্র। এই শক্তি এবং ক্ষীপ্রতা নিয়ে আমরা আবারো জেগে উঠি, হতাশা এবং অবসাদকে দূরে ঠেলে পৃথিবীর বুকে আমাদের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তুলি, নতুন প্রজন্মের জন্য আলো জ্বেলে রাখি। আর এই জন্য আমাদের বাঁচার মত করে বাচঁতে হবে। হতাশার অন্ধকারকে দূরে ঠেলে দিয়ে জীবনটাকে অর্থময় করে তুলতে হবে। কারন আমাদের জীবন একটাই।
শ্রাবন্তী কাজী
সি ই ও, অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি
ডিরেক্টর, সাদ ইনভেস্টমেন্ট
প্রধান সম্পাদক, প্রভাত ফেরী
কেন্ট স্ট্রীট, সিডনি
১০/০২/২০২৩
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: