সিডনী মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিত ভাবে রুখে দাড়াব


প্রকাশিত:
১ মে ২০১৯ ০৩:৫৪

আপডেট:
৩০ নভেম্বর ২০১৯ ২২:১২

অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিত ভাবে রুখে দাড়াব

নানান রাজনৈতিক নাটকীয়তার পর অবশেষে ঘোষিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ৪৬তম ফেডারেল নির্বাচনের তারিখ। আগামী ১৮ মে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।  আমরা আশা করি এই নির্বাচনের জন্য এমন একটি সরকার ক্ষমতায় আসবে যারা কিনা সত্যিকার অর্থেই সাধারন অস্ট্রেলিয়ানদের  প্রতিনিধিত্ব করে। উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদ, জঙ্গীবাদ দমন এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেবার ব্যাপারে কার্যকার ব্যবস্হা গ্রহন করে।

লোভ নিয়ে গ্রীক পৌরানিকের একটা গল্প বলি। ফ্রিজিয়ার রাজা মিডাসের কাছে একদিন তাঁর রক্ষীরা রাজ্যের আংগুর ক্ষেতে ঘুমানো এক স্যাটারকে (অর্ধ মানব ও অর্ধ ছাগ সদৃশ প্রানী) ধরে নিয়ে এল। রাজা দেখেই চিনতে পারলেন এ হচ্ছে ওয়াইনের দেবতা ডিওনিমাসের অনুচর সিলেনাস। তিনি সিলেনাসকে দ্রুত মুক্ত করে দিলেন। এতে দেবতা ডিওনিমাস খুশী হয়ে রাজাকে বললেন তিনি যা চাইবেন দেবতা তাকে আজ তাই দিবেন। রাজা মিডাস বললেন তিনি এমন ক্ষমতা চান যে, তিনি যা ধরবেন তাই যেন সোনা হয়ে যায়। দেবতা রাজাকে আরেক বার ভেবে চিনতে দেখতে বললেন, তিনি যা চাচ্ছেন তা ঠিক আছে কি না। মিডাস লোভের বশে অন্ধ হয়ে বললেন, তিনি ভেবে চিন্তেই এই বর দেবতার কাছে চাইছেন। দেবতা তাকে সেই বর দিয়ে দিলেন। রাজা মিডাস খুশী্তে আত্মহারা। মন্ত্রী, আমলা, সভা সদরা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছেন, রাজা যাই ধরছেন তাই সোনা হয়ে যাচ্ছে। এক সময় রাজার ক্ষিধে পেল। কিন্তু সমস্যা হল রাজা খেতে পারছেন না। উনি যে খাবারই ধরছেন, তাই সোনা হয়ে যাচ্ছে। উনি ক্ষুধায় কাতর হয়ে গেলেন। খবর শুনে অতি আদরের রাজকন্যা দৌড়ে এল ক্ষুধায় ক্লান্ত বাবার কাছে। রাজা মেয়েকে আসতে দেখে বারন করতে যাবেন নিজের কাছে আসতে, কিন্তু ততক্ষনে দেরী হয়ে গেল। মেয়ে এসে বাবাকে স্পর্শ করল। আর অমনি রাজকন্যা সোনার মূর্তি হয়ে গেল।  নিজের আদরের মেয়েকে হারিয়ে রাজা মিডাস নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।

বাংলাদেশে পর পর দুটি অগ্নিকান্ডের ঘটনার পিছনে অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম যে কারন রয়েছে, তা হচ্ছে রাজা মিডাসের মত লোভ। লোভ আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে। তাই  আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবাসন বাড়ীর নীচে অননুমোদিত দোকান বানিয়ে ভাড়া দেই, বিপদজনক ক্যামিকেলের গোডাউন গড়ে তুলি, বাড়ীর জন্য নিজের নির্ধারিত সীমার বাইরে ও আরো দুই ফুট দখল করে দেওয়াল তুলে দেই, ব্যবসায়ী ও আবাসন প্রতিষ্ঠান গুলোতে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেই,  অনুমোদন ছাড়া, নকশা পরিবর্তন করে বিল্ডিং তৈরী সহ নানবিধ অবৈধ কর্মকান্ড করি। আমরা ভুলে যাই, লোভের আশায় আমরা যে সোনা রাতারাতি  চাইছি তা আমদের ধংসের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজে বাঁচতে হলে আর আগামী প্রজন্মকে বাচাতে হলে আমাদের সবার আগে এই লোভ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

এখন বাংলা বৈশাখ মাস। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনটিকে পহেলা বৈশাখ বলা হয়। বাংলাদেশী ছাড়াও, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব  এশিয়া  বৈশাখ উৎসব পালন করে থাকে। নানারকম আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়। আমরা অস্ট্রেলিয়ান বাঙালীরা ও এই উৎসব পালনে  পিছিয়ে নেই। প্রবাসেও  নিজেদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা সচেষ্ট। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অস্ট্রেলিয়ার  প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও অস্ট্রেলিয়া নিযুক্ত বাংলাদেশের  হাই কমিশনার সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া সিডনীর অলিম্পিক পার্ক, ফেয়ার ফিল্ড  স্টেডিয়াম, ক্যাম্বেলটাউন শো গ্রাউন্ড, লাকেম্বাসহ বিভিন্ন স্হানে বরাবরের মত বৈশাখী মেলা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চে ঘটে গেল পৃথিবীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী মর্মান্তিক ঘটনা। গত ১৫ই মার্চ শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় এক শ্বেতাংগ সন্ত্রাসী ব্রেনটন একাই গুলি করে ৪৯ জন মুসল্লিকে হত্যা করে। আহত হয়েছেন অনেকে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেনটন ট্যারেন্ট কিশোর বয়স পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে থাকাবস্থায় তার মধ্যে বর্ণবাদী কোনো উম্মাদনা তো দূরের কথা, ধ্যান-ধারণাও ছিল না।

তার পরিবার এবং বিভিন্ন প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায় যে, এরপর সে ইউরোপে চলে যায়। সেখানেই সে বর্ণবাদী চিন্তার দ্বারা আকৃষ্ট ও উদ্ধুদ্ধ হয় এবং পরিণত হয় এক বর্ণবাদী সন্ত্রাসীতে।  নিরীহ মানুষের উপর আক্রমন এবং নির্বিচারে গুলি করে তাদের মেরে ফেলা ছিল পৃথিবীর নির্কৃষ্টতম ঘটনাগুলার মধ্যে একটা। মনে হয় এ এক অন্ধকার পৃথিবী। মানব জন্ম যখন প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তখন এই নির্মমতার পরও হতাহতদের আত্মীয় স্বজন যখন হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান যখন গভীর ভালবাসায় এই অসহায় মানুষদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন, নিউজিল্যান্ডের আপামর মানুষ যখন এই অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ায়, তখন এই আধার কাটিয়ে ঠিকই নতুন সূর্য উঠে, মানবতার জয় গানে সবাই যেন আবার নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। আসুন না আমরা একবার জেসিন্ডার মত হই। জাতি ধর্ম বর্ণ সব ভুলে একে অন্যকে কাছে টেনে নেই। বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিত ভাবে রুখে দাড়াব এই হোক আমাদের নতুন বাংলা বছরের দৃপ্ত শপথ। শুভ নববর্ষ

 

শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী

সম্পাদক


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top