সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


বাংলাদেশের জন্য শঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস


প্রকাশিত:
২৮ জানুয়ারী ২০২০ ২১:৫২

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৬

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। চীন ছাড়িয়ে আশপাশের দেশগুলোতে সংক্রমিত হয়েছে করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ভয়াবহতা নিয়ে সোমবার বেইজিংয়ে জরুরি বৈঠক করেছে। গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। চীনের মধ্যে ভাইরাসটি সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন হচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে লড়াই করে যাচ্ছে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৮১ জনের প্রাণ, সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে।

২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতোই একই পরিবারের সদস্য করোনা ভাইরাস, যারা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।

ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরও বিশেষভাবে দেখাশোনা করতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার না ঘটতে পারে। চীন বা হংকং থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

মারাত্মক করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে চীনে আটকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি। লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য বিভিন্ন কাজে উহানে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩শ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। অনেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। যারা দেশে ফিরতে চান, তাদের ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনে বেইজিংয়ের বাংলাদেশি দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের যোগাযোগের জন্য ইতোমধ্যে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু করেছে। হটলাইন নম্বর হচ্ছে +৮৬১৭৮-০১১১-৬০০৫ এবং এই নম্বরটি চীনে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষত শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি দূতাবাস এর আগে জানিয়েছিল যে, বেইজিংয়ে বাংলাদেশি মিশন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

গবেষকরা ধারণা করছেন, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোনো প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। ভাইরাসটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিচ্ছে। এ ধরনের ভাইরাস যানবাহনের হাতল, দরজার নব, টেলিফোন রিসিভার ইত্যাদি সাধারণ বস্তু থেকেও ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে এসে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। যারা হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন, তারা হাত পরিষ্কার করতে অ্যালকোহল স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে থুতু-কফ ফেলা বন্ধ করার বিষয়ে সচেতনতা দরকার। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার ব্যবহারের পরই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। হাত দিয়ে নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ যত কম করা যায়, ততই ভালো। বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্তত ১৪ দিন তাকে বাড়িতে একটি আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেন, ভয়াবহ করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করতে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। স্ক্যানারের মাধ্যমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দেখে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হবে। করোনাভাইরাস রোধে আমরা জনসচেতনতার ব্যবস্থা করেছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছি। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে যারা বিমানে করে আসবেন তাদের একটা ফরম দেওয়া হবে। তারা ফরম পূরণ করে জমা দেবে এবং একটি কার্ডও সঙ্গে নিয়ে যাবে। যাতে পরবর্তীতে যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আমরা শনাক্ত করতে পারি। ইতোমধ্যে ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করেছি, করেনটাইন এরিয়াও তৈরি করেছি। সারা দেশে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top