সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা: মমতা


প্রকাশিত:
৭ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪০

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:২০

 

প্রভাত ফেরী: ক’মাস আগে দিল্লিতে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বৈঠক সে প্রস্তুতির পালে হাওয়া দিচ্ছে। ভারতে বিজেপি বিরোধী বিকল্প জোট গঠনের নীরব প্রস্তুতি চলছে অনেক দিন ধরেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলে গুঞ্জন, মূলত আগামী লোকসভা নির্বাচনেই ক্ষমতার পালাবদল চায় বিরোধীরা। আর সে লক্ষ্যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হতে ছক কষার কাজ চলছে।

তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির কথাতেও এবার সে ইঙ্গিতই স্পষ্ট হলো। তিনি বলেছেন, সময়ের যাত্রাপথে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে আসল লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছে এ তৃণমূল কংগ্রেসই। দেশের মানুষ এখন তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখছেন।

সম্প্রতি তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিজেপির বিকল্প মুখ হতে রাহুল গান্ধী ব্যর্থ। মমতাই পারবেন এ ব্যর্থতা কাটাতে।

দলীয় মুখপত্রের শারদীয় উৎসব সংখ্যার প্রবন্ধে মমতা লিখেছেন, বাংলার সীমা অতিক্রম করে একের পর এক রাজ্য থেকে ডাক আসছে, আপনারা আসুন। নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা।

বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূলের ভূমিকা তুলে ধরে মমতা বলেন, বাংলার এবারের নির্বাচন (বিধানসভা) গোটা দেশ দেখেছে, বিজেপির সর্বশক্তিকে কীভাবে তৃণমূল হারিয়ে দিয়েছে। যারা দেশ চালাচ্ছেন (আসলে ডোবাচ্ছেন), তারা সবাই তো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলেন। কুৎসা করলেন। এজেন্সি নামালেন। তবু তৃণমূলকে হারাতে পারলেন না। এটা একটা ইতিহাস। এটা একটা মডেল। দেশের মানুষ এ মডেলের ওপর ভরসা রাখছেন।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জোর অবস্থানের পরও বিধানসভা নির্বাচনে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন মমতা। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে আগামী দিনে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের উঠে আসা নিয়ে কানাঘুষা জোরালো হয়।

তৃণমূলের এ অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, বিজেপির ‘নেপথ্য মদতে’ই মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করা হচ্ছে এবং বিরোধী ঐক্যকে নড়বড়ে করার চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ‘বাংলা নেতৃত্ব দিক’ কথাটির সারার্থ আসলে বিজেপি বিরোধী মঞ্চে মমতার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তবে দিল্লিতে বিভিন্ন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা সাফ বলেছিলেন, কে নেতা হবেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল হল বিজেপিকে হটানো।

উৎসব সংখ্যার প্রবন্ধেও একইভাবে মমতা লিখেছেন, দেশের মানুষের দাবি, দিল্লির মসনদ থেকে সরাতে হবে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী বিজেপিকে। মানুষের আশা-ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে। বিকল্প জোটের নেতৃত্ব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কিন্তু বাস্তবটা কংগ্রেসকে অনুভব করতে হবে। অন্যথায় বিকল্প শক্তির গঠনে ফাঁক থেকে যাবে।

সেই বাস্তবতা কী- এর ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী প্রবন্ধে লিখেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেস দিল্লির দরবারে বিজেপিকে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। গত দুটি লোকসভা নির্বাচন তার বড় প্রমাণ। দিল্লিতে যদি লড়াই না থাকে, তা হলে মানুষের মনোবল কমে যায় এবং লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যগুলিতেও বিজেপি কিছু বাড়তি ভোট পেয়ে যায়। সেটা এবার কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।

শারদ সংখ্যার প্রবন্ধে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসসহ সবাইকে নিয়ে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেন, আমরা কখনোই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মঞ্চের কথা ভাবছি না, বলছি না। নিজেদের অঙ্কে নয়, দেশের স্বার্থে একজোট হতে হবে। বিকল্প মঞ্চ শক্তিশালী করতে হবে। সে মঞ্চ হবে নীতির ভিত্তিতে, কর্মসূচির ভিত্তিতে।

তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলছেন, তৃণমূল তাদের কাজকর্মে নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে চাইছে! তাদের প্রতিপক্ষ মোদী না কি রাহুল- সেটা আগে স্পষ্ট করুন তৃণমূল নেত্রী! কংগ্রেস তার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে?

লোকসভায় কংগ্রেসের এ দলনেতা আরও বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভারতের দুটো দলকে বিজেপি পেছন থেকে মদত দিচ্ছে শুধু কংগ্রেসকে খতম করার জন্য! একটা দলের নাম আপ, আর একটা হচ্ছে তৃণমূল। দেশে যেখানে কংগ্রেস লড়াই করছে, সেখানে তৃণমূল গিয়ে কংগ্রেসের ক্ষতি করবে এবং বিজেপিকে ঘুরিয়ে সাহায্য করবে, আর বাংলায় ভাষণবাজি হবে- মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়তে পারে না, তৃণমূল লড়ে!

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top