সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


‘রাশিয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান বুঝতে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী’


প্রকাশিত:
২৩ মার্চ ২০২২ ০১:৫০

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:২৮

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার পর ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। আজ সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চু৵য়ালি বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে সরব হলেও এই প্রশ্নে ভারতের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বধ৴ন শ্রিংলা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের শ্রিংলা বলেন, ভারতের অবস্থান কী মরিসন তা বুঝেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীই মনে করেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য ইউক্রেন সংকটকে কারণ হিসেবে খাড়া করা ঠিক হবে না। শ্রিংলা বলেন, ইউক্রেনের চলমান সংকট ও সে দেশের জনগণের দুর্দশা নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুজনেই মনে করেন, অতি দ্রুত এই সংকটের অবসান হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পর্কে ভারতের মনোভাব কী, মরিসন তা বুঝতে পেরেছেন। এই যুদ্ধের প্রভাব যাতে ‘কোয়াড’–এর উদ্দেশ্যকে নষ্ট না করে সে বিষয়ে দুই নেতাই একমত। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে জাতিসংঘের সনদের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপরেও দুই প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন বলে শ্রিংলা জানান।

কোয়াডের চার সদস্যের মধ্যে একমাত্র ভারতই এখন পর্যন্ত ইউক্রেন সংকটের জন্য সরাসরি রাশিয়ার নিন্দা করেনি। বাইডেন, কিশিদা ও মরিসন যেভাবে প্রকাশ্যে রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন, সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন, নরেন্দ্র মোদি তা করেননি। কিশিদা বারবার রাশিয়ার সমালোচনা করলেও মোদি একবারও রাশিয়ার নাম উচ্চারণ করেননি। ভারতের এই আপাত নীরবতা কোয়াডের লক্ষ্যচ্যুতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে কি না, কিংবা চতুর্দেশীয় এই জোটকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে কি না, সেই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। সেই আশঙ্কা যে অমূলক, সোমবার মরিসনের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা তা স্পষ্ট করে দেন। ভারতের মনোভাব মরিসনের ‘বোধগম্য’ হয়েছে বলে শ্রিংলা যে মন্তব্য করেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অবশ্য দেওয়া হয়নি।

রাশিয়ার প্রতি ভারতের নির্ভরতা সর্বজনবিদিত। রাশিয়ার সমর সম্ভারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। ভারত–রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সোভিয়েত জমানা থেকে অপরিবর্তিত। কাশ্মীর প্রশ্নে রাশিয়া কখনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের পাশ থেকে সরেনি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন দৃঢ়ভাবে ভারতকে সমর্থন করেছে। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে রাশিয়া বেশ কিছুটা চীনের দিকে ঝুঁকেছে। তাতে আপাতদৃষ্টে সম্পর্কের ভারসাম্য কিছুটা টাল খেয়েছে মনে হলেও ইউক্রেন সংকটে ভারত জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করেনি। প্রকাশ্যে নিন্দাও করেনি। রাশিয়াকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যাও দেয়নি। এই সংকটের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও রাশিয়া থেকে ভারত পেট্রোপণ্য কিনতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। বাইডেন, কিশিদা ও মরিসন প্রত্যেককেই এই আচরণের কারণ ও বাধ্যবাধকতা বোঝাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট দাবি।

মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের ব্যাখ্যায়—ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে চীনের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য ভারতের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। চীন–সম্পর্কিত নীতির বাস্তবায়নে ভারতের অপরিসীম গুরুত্ব সম্পর্কেও কোয়াড সদস্যরা অবহিত। রাশিয়ার প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ কেন নয়—ভারত তা অন্যদের বোঝাতে পেরেছে। এটাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য।

পশ্চিমা দুনিয়া অবশ্য তার মতো করে চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখছে। কিশিদা ও মরিসনের পর চলতি সপ্তাহেই ভারতের সঙ্গে বাক্যালাপ হবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি (উপমন্ত্রী) ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার পাশাপাশি তিনি ভারতও সফর করবেন। চলতি সপ্তাহেই তিনি দিল্লি আসছেন। ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দুনিয়াকে জোটবদ্ধ করতে জো বাইডেনও পোল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন বলে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top