সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে


প্রকাশিত:
৩০ মার্চ ২০২০ ১৬:৪১

আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২০ ০২:৪৭

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৪ হাজার ১১। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ জন।

গত একদিনে স্পেনে ৮৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। ইতালিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৪৭২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫১ চিকিৎসক। যুক্তরাজ্যে গত একদিনে নতুন করে ২০৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ইরানে আরও ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার। মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২৩৬ জন।  ইতিমধ্যে করোনা আতঙ্কে দেশটি কয়েক হাজার বন্দীদের মুক্তি দিয়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের এক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

স্পেনে একদিনে ৮৪৪ জনের মৃত্যু: করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর শনিবার সবচেয়ে ভয়াবহ দিন পার করেছে স্পেন। এদিন দেশটিতে ৮৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা তাদের জন্য এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৫৩৮ জন মারা গেছেন। করোনায় মৃত্যুসংখ্যায় বর্তমানে স্পেনের ওপর একমাত্র ইতালি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকেও খুব বেশি পিছিয়ে নেই তারা। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৭৯৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সেখানে একদিনের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ছয় হাজারেরও বেশি।

স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অনাবশ্যক কর্মীদের আগামী দুই সপ্তাহ বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যথারীতি বেতন পেয়ে যাবেন, তবে পরবর্তী কোনও সময়ে কাজ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্পেন সরকার। দেশটির রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই বললেই চলে। কেউ বাইরে বের হলেই কারণ জানতে চাচ্ছে পুলিশ। অপ্রয়োজনে বের হলে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। গত ১৪ মার্চ থেকে দেশটির সব স্কুল, বার, রেস্টুরেন্ট, অনাবশ্যক পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। মহামারির কারণে সপ্তাহ তিনেক ধরে প্রায় অবরুদ্ধ রয়েছে গোটা স্পেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার বন্দির কারামুক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের মুখে কয়েক হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন শীর্ষে। সেখানে এক লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানকার কারাগারগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ২০টি কারাগার যেসব শহর ও কাউন্টিতে অবস্থিত সম্প্রতি সেগুলোর ওপর জরিপ চালিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে দেখা গেছে, গত ২২ মার্চ থেকে ২২৬ কয়েদি ও ১৩১ জন স্টাফ নিশ্চিতভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি বিচারপতি, পাবলিক ডিফেন্ডার, প্রসিকিউটর ও কখনও কখনও রাজনৈতিক আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়।

নিউ জার্সির প্রধান বিচারপতি কারাগারে মৃত্যু ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে এক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।  ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে গত সপ্তাহ থেকে প্রায় ৪৫০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির কর্তৃপক্ষ। এই বন্দিরা ২৮ হাজার ৩০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই হত্যা করা হয়েছিল।

রবিবার যুক্তরাজ্যে ২০৯ জনের মৃত্যু: যুক্তরাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনাভাইরাসে আরও ২০৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে প্রাণহানির এই সংখ্যা শনিবারের চেয়ে সামান্য কম। শনিবার দেশটিতে করোনায় মারা যান অন্তত ২৬০ জন।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, স্বাস্থ্যবিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রিটেনে করোনা আক্রান্ত অন্তত ২০৯ জন মারা গেছেন। যা শনিবারের তুলনায় কম।

নতুন করে মারা যাওয়া ২০৯ জনের মধ্যে ১৯০ জনই ইংল্যান্ডের। এছাড়া ওয়েলসের ১০, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ৬ এবং স্কটল্যান্ডের একজন রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, দেশটিতে এখন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১৯ হাজার ৫২২ জনে পৌঁছেছে।

ইরানে নতুন করে ১২৩ জনের প্রাণহানী: ইরানের করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজার ৬৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩০৯ জনে পৌঁছেছে। রোববার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা টুইটারে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে করোনার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে ইরানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার ব্যাপক ব্যবস্থা নিলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলী রেজা ভাহাবজাদেহ এক টুইটে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের দেশে নতুন করে আরও ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৯০১ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩০৯ জনে পৌঁছেছে।

সুইজারল্যান্ডে মৃত ২৫৭, আক্রান্ত ১৪ হাজার: নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন সুইজারল্যান্ডে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৭ জন। রোববার দেশটির জনস্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।

সুইজারল্যান্ডে একদিনে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ২১৩ জন। রোববার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৬ জন।

ইতালিতে আক্রান্ত ৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভেঙে পড়েছে ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ৯২ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্তকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর মধ্যে রোগীদের সুস্থ করে তোলার কাজে নিয়োজিত ৬ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীও আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে। আর চিকিৎসকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে।

ইতালির চিকিৎসক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ইতালিতে করোনাভাইরাসে চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। হঠাৎ করেই বেশ কয়েকজন চিকিৎসক মারা গেছেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top