সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধঃ কোলকাতায় বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:১৩

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৩৫

 

১৯৭১  শুধু একটি বিশেষ সাল  বা তারিখ নয়। দু' বাংলার জাতীয় জীবনে একটা আবেগ মত্থিত   মহাগর্বের  ও অত্যন্ত পবিত্র দিন।  শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতির মুক্তির দিন, বড় প্রাপ্তি এবং আনন্দময় দিন। অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার চির আকাঙ্ক্ষিত বর্ণময় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন।  অভিশপ্তময় জীবনের চির অবসানের দিন। চিরদিন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বহু রক্তে রঞ্জিত চিরকাঙ্খিত স্বাধীনতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারত সরকার,ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ও দেশের কোটি কোটি মানুষের বেদনার্শ্রুবিমথিত ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে কোলকাতার ভূমিকা। ১৯৭১-২০২০একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তার বর্ণময় স্মৃতি চিরজাগরুক হয়ে থাকবে  বাঙালির জীবন ও স্মৃতিতে এবং সাহিত্যে। আগামী প্রজন্মের জন্য এ-এক অনন্য ঐতিহাসিক দলিল। এই  সময়ের দলিলকে উন্মোচিত করাই এই নিবন্ধটির অবতারণা। বাঙালির জীবনে ও মননে ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আজও অমলিন।

 মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স কম ছিল, যারা তখনও জন্ম গ্রহণ করেন নি, তাদের জন্য মূলত এই নিবন্ধটি।

 

(১) ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-এর আত্মপ্রকাশ। ধর্ম অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলা ভাষার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের ইতিহাস নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করে মুক্তকন্ঠের অধিকার। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ ছিল মুক্তকন্ঠের অধিকার  রক্ষার এক বলিষ্ঠ প্রচেষ্টা। ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও অনিঃশেষ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধের বনিয়াদ হিসেবেই প্রস্তুত করে দিয়েছিল বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে। ঐতিহাসিক ভাবে সত্য।

 

(২) ১৯৭১ -এ ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রকে পরিস্কার জানিয়ে দেয় যে, গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেই হবে। কারণ এটা অধিকার। ২৬শে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক বলে অসম্মানিত করেন। ফলস্বরূপ জারি হলো সামরিক আইনের নারকীয় শাসন। ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। আত্মমর্যাদায় ও সংকল্পে অটল  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশকে  স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন। ১০ -ই এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠনের বলিষ্ঠ ঘোষণা হলো। ইতিমধ্যেই চরম দুর্দিনে ও উত্তাল পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ শুধুই আশ্রয়ভূমি জন্য ভারতের দিকে এগিয়ে আসে। সেই সময় প্রায় এক-কোটি মানুষকে ভারত সরকার ও তদানীন্তন রাজ্য সরকার সাহায্য করে,আশ্রয় দেয়। এই নারকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রক্তাক্ষয়ী সংগ্রাম, সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই সক্রিয় ভাবে বিষযটি  দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের দিকে। প্রায় দুশো-ছেষট্টি দিনের ইতিবৃত্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক অমলিন চিরকালীন স্মৃতি তৈরী হয়ে যায় এপার ও ওপার বাংলার মানুষের মধ্যে,যা আজো অক্ষুন্ন রেখেছে দু'দেশ। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার  রেসকোর্স ময়দানে বিকেলবেলায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনার কাছে পাকিস্তানের হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর সেখান থেকেই আত্মসমর্পণের ইতিহাস সাক্ষী করে হয়ে ওঠে বাংলাদেশের'মহান বিজয় দিবস'। ১৯৭২-এর জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সসম্মানে মুক্তি ও বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ঘটে।  স্বাধীন ও সার্বভৌম   রাষ্ট্র হিসাবে  ১৯৭১-এ বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ এপার বাংলার বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের কাছে ভিন্ন এক তাৎপর্য বহন করেছিল, এ ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না। ১৯৪৭-এ দেশভাগ এবং প্রায় তার দু'দশকের পর পুনরায় বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ নিঃসন্দেহ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের নতুন  বর্ণিল ইতিহাসের সূচনা করে।

 

(৩) বাংলাদেশ নামটির সঙ্গে এপার বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রিত মানুষের কলরব  এ-বঙ্গের  নিজস্বতার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে রূপ নিয়েছিল নতুন এক সতর্কতার তাই আজো বাংলাদেশের প্রতি অসম্ভব নীবিড়, অকৃত্রিম, ভালোবাসার  অমোঘ টান ও আকর্ষণ  থেকে গেছে অনেকেরই। বাংলা ভাষায় কথা বলা সব মানুষের নিজস্ব একটা ভাষার পরিচিতি যেন  নীরবে বহন করে চলেছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি, অত্যন্ত আনন্দের বিষয়,  আর দু-বছরের মধ্যেই যার আত্মপ্রকাশের  গৌরব অর্ধশতাব্দী হয়ে যাবে।

 

(৪) পৃথিবীর সমস্ত বাংলা-ভাষাভাষি ও বাঙালির কাছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ভিন্ন আলো বহন করে বাংলাভাষার জন্য। মাতৃভূমি না হয়েও অসংখ্য বাঙালির আত্মপরিচয়ের ও মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠ জায়গা হিসেবেই এক স্বতন্ত্র অন্য তাৎপর্য বহন করে এই ভূ-খণ্ডটি।

 

(৫) অবিভক্ত বঙ্গের এক সময়ের ইতিহাসের সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত বর্তমান বাংলাদেশের অনেকখানি জায়গা। বাঙালির ইতিহাস বিনির্মাণের একটি সময়, বা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অখণ্ড এই স্হানটি  বর্তমান দুই দেশের কাছে গৌরবময় জাতিপরিচয়ের এক অনন্য অধ্যায়। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা--এমন এক স্বপ্নের দিকে পৃথিবীর সমগ্র বাঙালি যেমন তাকিয়ে থাকে, তেমনি আমরাও তাকিয়ে থাকি  দেশটির দিকে বাঙালি  সত্তার  ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের অতীত ইতিহাসের কাছে নতজানু হয়ে। অবিভক্ত বঙ্গের ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণ হতে পারে না বর্তমান বাংলাদেশের প্রসঙ্গ ছাড়া। ১৯৪৭-এপৃথক একটি রাষ্ট্রের ভিতরে যখন এই ভূখণ্ডটি চলে যায়, তখন মাটিই শুধু দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল এমন নয়, ভাগ হয়েছিল বাঙালি জাতিসত্তা ও বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতি ও সামগ্রিকতা। দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল মন, আবেগ ও বাংলার ঐক্যবদ্ধ ইতিহাস।

 

(৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিনির্মাণে  ভারতের এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ও কোলকাতার ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্ব ছিল ‌অপরিসীম।এটা ইতিহাসগত ভাবেই প্রমাণিত সত্য, সেই সঙ্গে এই রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভূমিকা কম ছিল না। আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে কোলকাতা ও কোলকাতায় অবস্হিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল কোলকাতার অস্হায়ী বেতার কেন্দ্র।

 

(৭) ৭ই মার্চ, ১৯৭১-এ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার সামনে উদাত্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণের পরের দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদল বেতার কর্মী  যে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন,তা সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায়। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য সম্প্রচার করলেন ঢাকার বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা।এর জন্য অনেককে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। একটি ভাষণ গোটা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে ছিল-

"এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে। বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে,  মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেব। এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য লড়ব। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"—

 

এইভাষণ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে দাবানলের মতো। তারপরেই শুরু হয়ে যায় পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের বেদনার্শ্রুবিমথিত স্বপ্নের সংগ্রাম। ১৯৪৭ সাল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ খণ্ডিত স্বাধীনতা পেলেও তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগণ  পূর্ব বাংলাকে শোষণ করার,হীনবল করার  এক নীল নকশা তৈরি করেন। এব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মহম্মদ জিন্না, লিয়াকত আলি, নিজামুদ্দিন, ভুট্টো প্রমুখ স্বৈরাচারী শাসকগণ। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ  আলি জিন্না ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে সমগ্র পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বাংলা ভাষার ওপর এই  আক্রমণের প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ বহু ছাত্রনেতারা। শুরু হলো স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম--ভাষা রক্ষার জন্য অন্তহীন সংগ্রাম। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলার মানুষ মাতৃভাষার জন্য ভাটার রাজপথ রঞ্জিত করল বুকের রক্তে। সেই সময়ে রচিত একটি বিখ্যাত গান আজো উদ্বেলিত করে বাঙালি জাতিকে--'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো/ একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।' ক্রমে ভাষা আন্দোলন রূপ নিল সামাজিক-সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধিকার আদায়ের গণসংগ্রামে। গণবিদ্রোহে যখন গোটা পাকিস্তানের প্রশাসন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন জারি করা হলো সামরিক শাসন। বাঙালি জাতি এটা মেনে নিতে পারেনি। বাঙালির আত্মমর্যাদাবোধ  জেগে উঠলো তীব্র থেকে তীব্রতর। মার্শাল আইয়ুব খান বন্দুকের নল উঁচিয়ে দেশ শাসনের ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। বাংলার ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিক, মজুর ও বুদ্ধিজীবী সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এই শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। নেতৃত্ব দিলেন সেই সময়ের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান সহ আরো অনেকে। চলল সীমাহীন নারকীয় তান্ডব, অত্যাচার, নীপিড়ন। মানুষকে তবুও থামানো গেল না। আয়ুব খানের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিলেন অত্যাচারী শাসক, সেনাবাহিনী  প্রধান ইয়াহিয়া খান। ফের শুরু হলো আরো দমননীতি। তবুও থামলো না স্বাধীনতা আন্দোলন।ক্রমশ ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশের বিভিন্ন স্থানে। বরং যন্ত্রনার গর্ভ থেকে জ্বলল আগুন। এক মশাল থেকে জ্বললো লক্ষ লক্ষ মশাল। উত্তাল হলো ওপার বাংলার মানুষ। মুক্তি চায় পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। অনেক রক্তের বিনিময়ে সেদিনের পূর্ব পাকিস্তান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে  গড়ে উঠলো সশস্ত্র সংগ্রাম। সে এক আশ্চর্য সময়।

 

(৮) ১৯৭১-এর গণভোটে বিপুল সংখ্যক ভোট পাওয়া সত্ত্বেও  আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলো না। এর পিছনে চক্রান্তে ছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খান। ১৯৭১ এ, ২৫ মার্চ গভীর রাতে মেশিনগান, সুজ্জিত ট্যাঙ্ক, মর্টার, কামান নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার সেনাবাহিনীর দল  নির্দয় ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঢাকার ঘুমিয়ে থাকা শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর। শুরু হলো গণহত্যা, লুন্ঠন, নারীধর্ষণ। বৃদ্ধা, শিশুরাও রেহাই পেলনা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকরা হলো বহু বুদ্ধিজীবীদের। ঢাকা মহানগর রক্তে ভেসে গেলো। এই ঘটনা ছিল, মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নারকীয়  লোমহর্ষক, জঘন্য, বর্বর নিষ্ঠুর বিরল ঘটনা। সমগ্র বিশ্বের মানুষ শিহরিত হয়ে ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে লাহোরে নিয়ে গেল। ২৬শে মার্চ শুরু হলো প্রতিরোধের সশস্ত্র সংগ্রাম। বিভিন্ন সেনাছাউনি, পুলিশ লাইন, সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সৈনিকরা এবং সর্বস্তরের মানুষ, যার  যা, সঙ্গে ছিল তা নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা বালুরঘাট ট্রান্সমিটার দখল করে নিয়ে, সেখান থেকে বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুরু করলো। ২৭শে, মার্চ এই বেতার কেন্দ্র ইথারের বুকে কম্পন তুলে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল একটি স্ফুলিঙ্গের জন্মবার্তা----স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী। বিচ্ছিন্ন ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বাহিনী পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ের আশা ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু এই বেতারবাণীতে পূর্ব বাংলার মানুষ ফিরে পেলেন হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস। দিশাহারা বাঙালি সর্বাত্মক স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ২৮ ও ৩০শে মার্চ-এর গণহত্যা রোধ করার জন্য বিশ্ববাসী ও জাতিসংঘের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান হয়। ৩০শে, মার্চ ৭১-এর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বোমার আঘাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যায়। কোন বিকল্প ব্যবস্হা না পেয়ে বিপ্লবী বেতারের শব্দ সৈনিকগণ ক্ষুদ্র এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার বয়ে নিয়ে এলেন এক মুক্তাঞ্চলে। সেখান থেকে বেশ কিছু দিন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়েছিল জীবনের ঝুকি নিয়ে। এ-এক অনন্য ইতিহাস। সোনালী অক্ষরে চিরদিন লেখা থাকবে। আগামী প্রজন্মের জন্য এক জীবন্ত দলিল হিসাবে বিবেচিত হবে নিশ্চিত। মুক্তিযুদ্ধের যেদিন থেকে সূচনা হয়, সেদিন থেকে বহু দেশপ্রেমিক দায়িত্ববান বেতার ও টেলিভিশনের কর্মীরা সামরিক বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ফলে দেশজুড়েই তাদের উপর হলো অকথ্য নির্যাতন। অনেককেই প্রকাশ্যে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হলো। অবশেষে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য বহু বেতার, টেলিভিশন, শিল্পী, সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী বাধ্য হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিল।সে এক দুর্বিষহ জীবন যাপন। ওদিকে পূর্ব বাংলার স্বজনহারা, গৃহহারা মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লুকোচুরি খেলে চলেছে। এক চরম সংকটময় ক্রান্তিকাল। শুধুই রক্তের স্রোত বয়ে চলেছে রূপসী বাংলার বুকে।

 

(৯) ১৭এপ্রিল, ১৯৭১-এ কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথ তলায় অস্হায়ী বাংলাদেশ সরকার আত্মপ্রকাশের পর মুক্তিযুদ্ধের প্রচার জোরালো করার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে নতুন করে গঠনের প্রয়োজন হলো। কোলকাতার বাংলাদেশ মিশনে ছড়িয়ে পড়া দেশত্যাগী শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বেতার সাংবাদিক ও কলাকুশলীরা সকলেই মিলিত হলেন। ভারত সরকারের কাছে সহযোগিতার আবেদন করা হলো। অবশেষে ভারত সরকারের অনুমতি মেলে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক বিশাল দ্বিতল বাড়িতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে কাজ শুরু হয়। শুধু বেতার কেন্দ্র নয়, ওই বাড়িতে আশ্রয় পেলেন পূর্ব বাংলার বহু প্রথিতযশা শিল্পী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, নাট্যকার, কবি ও কলাকুশলীরা। পঞ্চাশ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটারে ২৫মে, ৭১-এ যুদ্ধ বেতার'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে'র শুভ সূচনা হলো। শুরু হলো ইথারে ইথারে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাময় উদাত্ত আহ্বান। গর্জে উঠলো পদ্মা, মেঘনা যমুনা, রূপসা, ভৈরবের তীরে তীরে বাংলার মুক্তিযুদ্ধে হাজারো নিবেদিত প্রাণ ও জীবন। শৃঙ্খল শাণিত তরবারিতে রূপান্তরিত,বেতারের শব্দ সৈনিকের কন্ঠনির্মোঘ ক্ষমতা মদমত্ত স্বৈরাচারী শাসনের অচলায়তন কাঁপিয়ে দিল। অগণিত বাঙালি নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ বণিতার প্রাণকে সচকিত ও উজ্জীবিত করল লড়াইয়ের জন্য। এই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ও সাধারণ মানুষের মনে দেশপ্রেমের আগুন জাগানোর জন্য নানান ধরনের বিষয়কে নিয়ে শব্দ সৈনিকেরা কাজ করে চলল।

 

জনপ্রিয় কিছু অসাধারণ অনুষ্ঠান গোটা পূর্ব বাংলার মানুষকে উদ্বেলিত করলো। এই গুলো ছিল রাজনৈতিক জীবন্তিকা রচনা যা বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধকে প্রতিটি মানুষের অধিকার আদায়ের যুদ্ধে পরিনত করেছিল।

(১) জল্লাদের দরবার ২) মীরজাফর সাবধান। খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল জনমানসে। প্রায় ছয় মাস ধরেই এই রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-নাটক  এপার-- ওপার বাংলার শ্রোতাদের বুকে আলোড়ন তুলেছিল। বেতারে যুদ্ধের সংবাদ, বিভিন্ন নির্দেশ,শক্রকে বিভ্রান্ত করার বিভিন্ন রণকৌশল প্রচারিত হতো ধারাবাহিক ভাবে। এতে আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। এই সব ঘটনা আজ শুধুই ইতিহাস। কোলকাতায় অবস্হিত অস্হায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কোন স্টুডিও ছিল না। দ্বিতলের একটি ঘরে দরজা, জানলা বন্ধ করে অনুষ্ঠান রেকডিং হতো। কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মাঝে প্রতিদিন রেকর্ড করা টেপ ক্যানবন্দি করে ভারত সরকারের বিশেষ ট্টান্সক্রিপশন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিত। প্রতিদিন সকাল ৮টা, দুপুর ১টাও সন্ধ্যা ৭টায় এক ঘন্টা সময় ধরে অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো। ওই বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে আশ্রিত গীতিকার, সঙ্গীতশিল্পী গান লিখতেন, সুর দিতেন। সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা নাটক, ব্যঙ্গরচনা, সংবাদ, পর্যালোচনা করতেন। অগ্নিশিখা, চরমপত্র, জল্লাদের দরবার, রক্তস্বাক্ষর, প্রতিধ্বনি প্রভৃতি অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল জনমানসে। অফুরন্ত প্রেরণা ও দেশাত্মবোধ থেকে জন্ম নিতে থাকলো এই ধরনের সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম, যা মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদেরকে গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। সমগ্র এপার বাংলা মানুষ ও ভারত সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা না পেলে শব্দ সৈনিকরা কলকাতায় বসে দীর্ঘদিন ধরে শক্রুর দুর্গে আঘাত হানতে পারতো না। ‌

বিভিন্ন ধরনের গবেষণা মূলক গ্রন্হের তথ্য  থেকে জানা যায় যে সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধারা আজো বেঁচে আছেন, তাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারবো, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যদি কোলকাতায়  না থাকতো তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ  এমন সার্বিক পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারতো কি ? একটা দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আর একটি দেশের সুমহান কর্তব্য মানব ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এটা সমগ্র বাঙালি জাতির গর্বেব বিষয়। এ নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই বলে আমার বিশ্বাস। স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্র ছাড়া বিভিন্ন রণাঙ্গনের খবর বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছনোর কাজ আর কারোর পক্ষে সম্ভব হতো না। এটা ঐতিহাসিকগত ভাবে ধ্রুবসত্য। মুক্তিযুদ্ধের বাহিনীরা যখন অব্যর্থ লক্ষে আঘাত হানতো শক্রুর কলজেতে, দুশমনদের হটিয়ে বাংলার বীর মুক্তিফৌজ তখন স্বদেশের এক একটা অংশ মুক্ত করছিল হায়নার কবল থেকে তার খবর যদি  শব্দ সৈনিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রচার না করত, তবে কে দিতে বাংলার মানুষকে  শক্রুকে চরম আঘাত হানার ডাক? কে শোনাত যুদ্ধ শেষ, মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি---?

 

১০) কোলকাতায় সাত মাস ধরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছিল। পশ্চিমবঙ্গের বহুকৃতি সাহিত্যিক, শিল্পী, নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সাংবাদিকদের একটা বড় অংশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ ঋণ ভোলার নয়।৭১-এর ডিসেম্বরে 'মার্শাল সঙ' ও 'জোরসে স্লোগান দো' ব্যবহারের নির্দেশ পালন করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলীরা। ১৯৭১-এর ৩রা ডিসেম্বর, শক্তিহীন হয়ে পড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভারতের মিত্রর বাহিনী ও  মুক্তিবাহিনীর মিলিত আক্রমণে মাত্র ১৩ দিনেই  পতন ঘটে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লে: জেনারেল নিয়াজি ওতার অধীনস্থ ৯০ হাজার পাঠান সৈন্য, বেলুচ ও পাঞ্জাবি সেনাসহ ভারত-বাংলাদেশ মিলিত বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল অরোরার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেন। এটাই ইতিহাস।

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, স্হান ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। মুক্তিসংগ্রামের এই বিজয় দিবসে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলো। বাঙালির অতি গৌরবময় দিন। এক সাগর রক্ত মাখানো বাংলাদেশের পতাকাকে পৃথিবীর অধিকাংশ  রাষ্ট্র  স্বীকৃতি দিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার  ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় উৎসব মাত্র কিছুদিন বাদে পালিত হবে। নিঃসন্দেহে এক অনন্য সাধারণ উৎসব। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রাণপুরুষগণের অবদান  আজ সকলেই বিস্মৃত হতে চলেছে। এঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা ও শব্দ সৈনিক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলীরা বাংলার ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের হৃদয়ে কী পরিমাণ সাহস ও আশা জাগিয়ে তুলেছিল তা অতুলনীয়। তাঁদের অবদান কে ভুলে গেলে ইতিহাস কোন দিন ক্ষমা করবে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের বেদনার্শ্রু বিমথিত স্বপ্নের বাস্তব রুপায়ণ করেছিল এই বেতার কেন্দ্র ‌। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রত্যেক শব্দ সৈনিককে ১৪-১৫ঘন্টা পরিশ্রম করতে হতো। কোলকাতার বেতার কেন্দ্রের মধ্যে খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা ছিল। কোন বিলাসিতার ছোঁয়া ছিল না। কাজ করে চাদর পেতে গভীর রাতে সামান্য কিছু সময়ের জন্য ঘুমতে হতো। এ-এক কৃচ্ছসাধন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খবর  সংগ্রহ করে নানান ধরনের ফিচার ও ব্যঙ্গ নাটক রচনা করতে হতো। বিশ্ব জনমত বৃদ্ধির উপরে গুরুত্ব দিতে হতো কলাকুশলীদের। শব্দ সৈনিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রণাঙ্গনে সরাসরি খবর সংগ্রহের যেতেন। আঞ্চলিক জবরদখল, উপনিবেশবাদ, সাংস্কৃতিক দমন নীতি, অর্থনৈতিক শোষণ, একনায়কতন্ত্রের আগ্রাসন, ভাষার অপনোদন, সাম্প্রদায়িতা এই সব কিছুর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ ও গণবিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে কোলকাতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের  গৌরবময়ভূমিকা পালন ছিল সেই সময় এক  নজিরবিহীন ঘটনা। শুধুই সম্বল ছিল দেশপ্রেমের আগুন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও  প্রতিফলিত হতো এই অন্তরতম সুর।

শেষ কথাঃ  এই সব আজ অনেকটা রূপকথার মতোই মনে হয় আমাদের। কাঙ্খিত স্বাধীনতা বাংলাদেশ সরকার গঠনে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। যে সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমির জন্য অন্তহীন ত্যাগ করে করেছিলেন, তাদের কথা বিস্মৃত হওয়া, মনে হয় একেবারে কাম্য‌ নয়। স্বাধীনতাকামী মানুষের, মানুষের অধিকারে বেঁচে ওঠার অনন্য নজির। চিরদিন  বাঙালি জাতির স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের সেদিনের সাড়ে সাত কোটি মানুষ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল-জীবনানন্দের অনুভবে একাত্ম হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন "বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি/ তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা" কিংবা ' 'আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি।' এ-কেবল বাংলাদেশের শুধু জাতীয় সঙ্গীত নয়----  বাঙালি জাতির হৃদয় সঙ্গীত।

একটা দেশের মানচিত্র টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ইতিহাস যখন সাহিত্যের বিভিন্ন আকর থেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ সেই সব মানুষ যারা দেশভাগ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের লড়াই ভাষা-আন্দোলন দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স কম ছিল, নেহাতই সদ্যোজাত অথবা শৈশবের আঙিনায় ---তখন তাদের আশ্রয় ইতিহাসের পাতা এবং সাহিত্যে প্রতিফলিত সময়। ফেলে আসা সময়ের পাতা উলটে তারা দেখেছে, কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ ও উপন্যাসের পাতায় শুধুমাত্র সময়ে ইতিহাস নেই একটা প্রজন্মের পথ হাঁটার ইতিহাসও লেখা হয়ে যায় সেই সঙ্গে। সুতরাং আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে  যাক ফেলে আসা গৌরবময় দিনের বার্তা, তাদের পাঠ হোক নিজস্ব দর্শনের আয়নায়।

"দুয়ারে খিল/টান দিয়ে তাই খুলে দিলাম জানালা/ও পারে যে বাংলাদেশ/ এপারে ও সেই বাংলা"।

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
প্রাবন্ধিক, অনুগল্প-ছোটগল্প, চিত্রনাট্য ও রম্যরচনা এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক
বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top