সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণময় ৪৯তম মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪১

আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৫৮

ছবিঃ লেখক ডঃ সুবীর মণ্ডল

 

আগামী ১৬ ডিসেম্বর, রক্তস্নাত বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকী, ৪৯তম বিজয় দিবস।  ২০২১ সাল নানা দিক থেকে বাংলা দেশের কাছে গৌরবময় সাল। স্বাধীনতার ৫০ বছর ছোঁয়া এবং বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী। তাকিয়ে আছে ভারত সহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ। ১৬ কোন সংখ্যা নয়। একটা প্রতিজ্ঞা, চরম প্রাপ্তি,  কঠোর জীবন সংগ্রামের  এবং স্বপ্নপূরণের আবেগী তারিখ। দীর্ঘ আত্মবলিদানের মাধ্যমে এক স্বপ্নপূরণের পবিত্র ও গর্বিত দিন। স্বপ্নভঙ্গ থেকে স্বপ্নপূরণের আবেগী দিন।একে কখনো কোন জাতি ভুলতে পারেনা। গোটা বাঙালির  জাতিসত্ত্বার অহংকার। স্মরণে, বরণে এই দিনকে  বর্ণময় করে তোলা বাঙালি জাতির প্রধান কর্তব্য। করোনার আবহাওয়ায় এবছরও পালিত হবে গভীর মর্যাদার সঙ্গে মহান বিজয় দিবস। একটা স্মৃতিকাতরতাময় গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দিন। একটি উজ্জ্বল স্বপ্নপূরণের পবিত্র দিনে সমগ্র দেশ সামিল হবে এই গণমানুষের মহান উৎসবে।  একটা দেশের মানুষের কাছে এ-এক পরম প্রাপ্তি। ঐতিহ্য পরম্পরায় এই দিন পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে (১৯৭১-এর১৬ ডিসেম্বর)। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ও বাঙালি  হিসেবে আমরাও গর্বিত। বাংলা দেশের মানুষের ও বাঙালির কাছে এক -আকাশ অহংকার। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে যার  শুভসূচনা, আজ তার ৪৯তম মধুর উদযাপন  হতে চলেছে। শুভ দিন আগত। সেজে উঠবে রূপসী বাংলার দেশ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল শহর-জেলাও গ্রাম। তাঁর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। একটা উন্মাদনা গোটা দেশ জুড়ে। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী থাকবে তামাম দুনিয়ার মানুষ। ঘরে ঘরে চলেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য এই বিজয় দিবস।

 স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাথা উচু করার দিন। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ (ত্রিশ লক্ষ) আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বীর বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।" ইতিহাসের নানান বাঁক পেরিয়ে এই বিজয় দিবস। তাই অর্থগত দিক দিয়ে অসাধারণ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।  পরতে পরতে বাঙালির জাতিসত্ত্বার অহংকার জড়িয়ে আছে, শুধু তাই নয় এর সঙ্গে জড়িত আছে সমগ্র দেশের আত্মমর্যাদা। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে এই মহান বিজয় দিবস।এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জাতীয় উৎসব বললে কোন ভুল করা হবে না বলে আমার নিজস্ব বিশ্বাস। বাংলাদেশের এক স্বপ্নমুখর বর্ণিল দিন। একে ভোলা সম্ভব নয় কোন দিন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আর পাকিস্তানি বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন, নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয় বাঙালি জাতি।

৪৯ বছরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার বিশ্লেষণ  হবে সর্বত্র। সেটাই স্বাভাবিক। বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে  মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মা পাবে, শান্তি- ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের অনেকের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় পুরো জাতি স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদদের। যাঁদের জীবন উৎসর্গে  দেশের মানুষ পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। "মুক্তির মন্দির সোপান তলে /কত প্রাণ হলো বলিদান/তারা কি আর ফিরিবে  আজ"। একই সঙ্গে প্রত্যয় ব্যক্ত হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচী। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হবে। বর্ণাঢ্য মিছিলে ভরে যাবে রাজপথ। হাতে হাত রেখে, নতুন করে এগিয়ে  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি।

সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হবে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে  জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সূচনা হবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রত্যুষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের। বিজয় আবেগে উদ্বেলিত সাধারণ মানুষের ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর সকল শহীদ মিনার। দেশ জুড়ে উচ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ।

১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেটির উদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের মহামুহূর্তটি সূচিত হয়েছিল আজকের এই দিনে। ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সৈন্য প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেছিল। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত্ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। কোন ভিক্ষা নয়, কারও দয়ার দানে নয়, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর নত মস্তকে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় মেনে নেয়। পৃথিবীতে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসাবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ  সমগ্র দু'বাংলার বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আনন্দ অনেকভাবেই আসতে পারে জীবনে। কিন্তু মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা যুদ্ধজয়ের আনন্দের কোনো তুলনা হয়! ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই রূপসী বাংলার সবুজ দেশে ৪৯ বছর আগে আজকের এই দিনে উদিত হয়েছিল বিজয়ের লাল সূর্য। মুক্তিপাগল বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো। যে সূর্য কিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রং। সেই রক্তের রং সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল লাল সবুজ পতাকা। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অর্জনে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সব রকমের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভারত ও এপার বাংলার কোটি কোটি বাঙালি।

বস্তুত: বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণ একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে এই জাতির ঘাম ঝরানো সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের মহান সেনাপতি হিসেবে কাউকে বিবেচনা করতে গেলেই উচ্চারিত হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু মানেই আমাদের নতুন অস্তিত্ব। ৫৫ হাজার বর্গমাইল জুড়েই তাঁর অস্তিত্ব আজো বিদ্যমান।

ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনকালে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। লড়াই করেছে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সোয়া ২শ' বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিলো বাঙালিদের অবদান। বাঙালিরাই ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির স্বপ্নভঙ্গ হয়। যে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে তারা ইংরেজদের বিতাড়িত করেছিলো সেই একই রকম শোষণ বঞ্চনার মুখোমুখি হয়ে পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই। শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। পাকিস্তানীরা এ -ভূখন্ডের মানুষকে তাদের তাঁবেদার মনে করতো। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো। ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯'র গণ অভ্যুত্থান এ সবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন সব পরিণতিকে দিয়ে দেয় চূড়ান্ত রূপ। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রনিনাদ ঘোষণা 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'। এই ঘোষণা জাতির মনে বয়ে আনে অন্য এক প্রেরণা, জাগিয়ে তোলে মুক্তির উন্মাদনা। প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানী বাহিনী আজকের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে পরাজয় বরণ করে।

 করোনার ভয়াবহ আবহাওয়া উপেক্ষা করে মহান বিজয় দিবস পালনে যেন নতুন সাজে সেজেছে বাংলাদেশ। সারা দেশ ছেয়ে গেছে লাল-সবুজ পতাকায়। কোটি কোটি কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।"

 শেষ কথাঃ।                                                               

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। যেসব কীর্তিমান মানুষের আত্মত্যাগে এই বিজয় সম্ভব হয়েছিল, বিজয়ের দিনে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে নতজানু হয়ে। যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এ বিজয়কে অনিবার্য করে তুলেছিলেন, তাঁদের প্রতি জানবে সশ্রদ্ধ অভিবাদন।
পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবস থাকলেও বিজয় দিবস থাকে না। বাংলাদেশ সেই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী দেশ, যেটি ২৪ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের পর রণাঙ্গনে শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছে। বাংলা দেশের স্বাধীনতার বয়স  ৫০ বছর ছুঁতে চলেছে। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটি খুব বেশি দীর্ঘ সময় না হলেও একটি জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য একেবারে কম নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে  মুক্তিযুদ্ধ করেছিল  মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকরা, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা অর্জিত হয়েছে? স্বাধীনতার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল সব ধরনের অধীনতা থেকে মুক্তি এবং সমাজে গণতন্ত্র, ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা। সব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাহাত্তরের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয়,  সেখানে স্থির থাকতে পারিনি। একদলীয় শাসন কিংবা সামরিক শাসন  বাংলা দেশের অগ্রগতিকে বারবার ব্যাহত করেছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় ব্যবস্থাকেও  বাংলা দেশ সংহত করতে পরিনি।  তবে একথা সত্য কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক সূচকে  বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে  এবং  অনেক খানি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সক্ষম  হয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গোটা দেশ জুড়ে। 

শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রিড়া  ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক আজো অটুট। আর্থ সামাজিক উন্নয়নে একটা জোয়ার বইছে। বাংলাদেশ নানান বিষয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে নানান ক্ষেত্রে।  বাণিজ্যিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আভ্যন্তরিন শান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের অমলবন্ধন অটুট রাখতে পেরেছে।
আজকের বিজয় দিবসের শপথ হোক, সব ধরনের হানাহানি ও বৈরিতা-বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে, দেশের ও জনগণের কল্যাণে সবাই এক হয়ে কাজ করার শপথ গ্রহণ হোক বিজয় দিবসের পবিত্র আঙিনায়।
বিজয়ী জাতি কখনোই পরাভব মানে না। বাংলাদেশ তার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ভারতে ঐদিনকে  স্মরণ করে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। দিল্লির ইন্ডিয়ান গেটে অমরজ্যোতিতে  শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে দেশের তিন বাহিনীর প্রধান। ১৯৭১-এর১৬ডিসেম্বর ভারতের কাছেও এক মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণ করে, জয়ী হয় ভারতীয় বাহিনী সহ মুক্তিবাহিনী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ঘটে, সেই কারণেই ভারতীয় সুমহান সেনাবাহিনীর এই জয়কে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এই দিন ভারতবর্ষের মানুষের কাছে মহান বিজয় দিবস সমানভাবেই সমাদৃত। আগামী প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে এই মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা সকলকেই করতে হবে। এর ফলে নিজের দেশের প্রতি দেশপ্রেম জাগ্রত হবে বেশি বেশি করে।বিজয় দিবস উপলক্ষে দীর্ঘ ৫০বছর ধরেই দু'বাংলার কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মীরা এবং দেশের বুদ্ধিজীবী মানুষ সহ আপামর মানুষ নানান সৃষ্টিসম্ভার রচনা করে চলেছেন।এটা বড় গর্বের বিষয়। আগামী প্রজন্মের জন্য বিজয়ার দিবস হোক দেশপ্রেমের ও চেতনার জাগ্রত মঞ্চ।আর যারা সেই সময় জন্মাননি, বয়সে ছোট ছিলেন তাদের জন্য উপহার হোক এই দিন। চেতনার উন্মেষ ঘটুক। সৃষ্টি হোক অমল দেশপ্রেম ও প্রীতি।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা ও আনন্দ বাজার পত্রিকার আর্কাইভ।

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top