সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

আমার শিক্ষক: ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসের প্রাসঙ্গিকতা : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪১

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৯

ছবিঃ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ

 

লিখতে বসে অবগাহন করেছি অতীতের, যা অনকটাই এখন বিস্মৃতি। অক্ষত অমলিন রয়েছে যেটুকুই, স্মৃতির হলুদ পাতা থেকে কিছু তুলে ধরার  আন্তরিক চেষ্টা করলাম মাত্র। আরও পাঁচ জনের মতোই আমার অপরিণত মনে  প্রথম তুলির দাগ পড়েছিল আমার বাবা-মার। তাঁরাই আমার জীবনের প্রথম ও আদি শিক্ষক ও শিক্ষিকা। তাঁরাই আমায় শিখিয়েছিলেন সনাতন কতকগুলি জীবন সত্যকে। উপলব্ধি করেছিলাম প্রথাগত কিছু ডিগ্রী, পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেই মনুষ্যত্ববোধ  তৈরি হয় না, মানুষের আসল পরিচয় কেবলই নিহিত রয়েছে তার ব্যবহারে। তাঁরাই আমাকে শিখিয়েছিলেন যে প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হয় নিজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়,   কারও সুপারিশে নয়।

 

পরবর্তীতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে জীবনের মেধাবী পাঠ লাভ করেছিলাম যেসব নমস্য শিক্ষক কুলের কাছ থেকে, তাঁরাই পরবর্তী সময়ে আমার প্রিয় শিক্ষক। তাঁদের স্নেহে,প্রশ্রয়ে, শিক্ষায়, সহমর্মিতায়, মরমী সমালোচনায়,চরিত্র গঠনের দৃঢ়  শিক্ষায় আমি ঋদ্ধ হতে থাকি ক্রমশ। বৃহৎতর সমাজজীবন ও কর্মজীবনে  আমাদের প্রতিটি আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঠিক কী হবে, উচিত-অনুচিতের সীমারেখা সম্পর্কে বোধ আমরা শিখতে থাকি তাঁদের কাছেই। আমাদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, সামাজিক দায়বদ্ধতায় বিশ্বাস, অন্যকে মাণ্যতা দেওয়া, গুরুজনের সম্মান  জানানো, নিজের পারিবারিক রীতিকে মর্যাদা দেওয়া, রক্ষণশীলতাকে টিকিয়ে রাখা  এই সমস্ত  কিছুই বাড়ির গুরুজন ও প্রণম্য শিক্ষক মহাশয়দের কাছ থেকে পাওয়ার দুর্লভ সুযোগ  পেয়েছিলাম। শিক্ষক দিবসের পবিত্র দিনে তাঁদের চরণে জানাই অনিঃশেষ শতকোটি প্রণাম। কৈশোরে মনের অগোচরেই আদর্শ এক প্রণম্য শিক্ষকের আসনে বসিয়ে  ফেলেছিলাম ভারত তথা বিশ্বের সবার প্রণম্য স্বামী বিবেকানন্দের  ভাবাদর্শী  শিক্ষক - আচার্য  ডঃ  পর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ মহাশয়কে। সেই কবে কৈশোর বেলা। মনে  আজও দোলা দেয় ও শিহরণ জাগায়, শহর থেকে অনেক দূরে আমার প্রিয় গ্রামের স্কুলের শিক্ষক দিবসের আনন্দ মুখর অনুষ্ঠানের বর্ণিল স্মৃতি বিজড়িত সময়ের কথা,যা আজো ভুলতে পারেনি। ৫ই সেপ্টেম্বর, সবে সূর্য উঠেছে আকাশে, রোদঝলমল সুন্দর পরিবেশ। উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আমরা দল বেঁধে  জাতীয় শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের বিশালাকৃতির প্রতিকৃতি নিয়ে  গ্রাম পরিক্রমায় চলেছি। এক আশ্চর্য  ভালোলাগায় ভরে উঠেছিল মন,তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের বিশাল হলঘরে  শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হলো। একে একে সবাই প্রতিকৃতিতে  ফুলের মালা,  ফুল, পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানালেন। ভাব গম্ভীর এক অনন্য পরিবেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান। বর্ণময় মানুষটির নানান কর্মকৃতিত্ব  নিয়ে আলোচনা হলো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সামনে থেকে শুনলাম ও দেখলাম। মন জগতে এক অসীম আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। নানা প্রশ্ন জাগছিল মনে। এই মানুষটিকে নিয়ে প্রতিবছর এত কেন উন্মাদনা,? দেশের, দশের জন্য তিনি কি এমন করেছেন? মৃত্যুর পরও কেন এই রাজকীয় শ্রদ্ধাঞ্জলি? আজ পরিণত বয়সে এসে প্রতিদিন তাঁকে জানছি--চিনছি নতুনভাবে। এ -চেনার সীমা-পরিসীমা নেই। 

 

আজ ও তিনি আমার কাছে অধরা। তবু তাঁর কাছেই শিখে যেতে চাই সারাজীবন। এ শেখার আনন্দ অনির্বচনীয়। তাঁকে আমার জীবনের ধ্রুবতারা বলে জেনেছি-- এ নিছক আবেগতাড়িত ভাবনা নয়। এ আমার অন্তরের সুস্পষ্ট উচ্চারণ। এ নিয়ে কোন দ্বিধা নেই,দ্বন্দ্ব নেই। তাঁর আলোকিত জীবনাদর্শ থেকে মানবতা ও মনুষ্যত্বের মহান মন্ত্রে নিজেকে দীক্ষিত করেছি সেই কৈশোরে কাদামাখা জীবন থেকেই। আমার মতাদর্শের ক্ষেত্রেও এই মানবতাবোধ আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাঁর জীবনী,কর্মধারা,আত্মভাবনা, সুমহান আধ্যাত্মিক বোধ ও জীবনদর্শন থেকে ছাত্র হিসাবে প্রতিনিয়তই সঞ্চয় করছি। এগিয়ে চলার নতুন দিশা ও শিক্ষা, যা আজ আমার জীবন পথের পাথেয়। এটাই  আমার এগিয়ে চলার ও  নিজেকে গড়ে তোলার বেদমন্ত্র। তাঁর  জীবন জুড়ে  ছিলেন দু'ই মহামানব রবীন্দ্রনাথ ও স্বামী বিবেকানন্দ। আর এভাবেই জেনেছি--" সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরই অপমান।" এই সাহসী শিক্ষার শিক্ষক তিনি। বিপদে ভয় না করার শিক্ষা দিয়েছেন তিনিই। দীনতা, হীনতা ক্লীবতা, নীচতাকে তুচ্ছ করার প্রথম মেধাবী পাঠ তারই কাছে। মনুষ্যত্বের অপমানে শুধু নিষ্ফল, ব্যথিত  হওয়া নয়, প্রতিবাদে মুখর  হওয়ার  শিক্ষা পাই আমি তাঁর কাছ থেকে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আদর্শ এই প্রণম্য শিক্ষককে খণ্ডিত ভাবে ব্যাখ্যা করার যে কোন দুঃসহ স্পর্ধা  দেখলে  মনে মনে ফুঁসে উঠি।

 

একজন মানবতাবাদী, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ এবং রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তাঁর দেশ, সমাজ, শিক্ষাভাবনা ঋদ্ধ করে আমাকে। তাঁর সমাজ ও শিক্ষা এবং জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্র ভাবনা, অধ্যাত্ম ভাবনার মধ্যে খুঁজে পাই এগিয়ে চলার নতুন দিশা। এ-এক পরম প্রাপ্তি।  বিস্ময়ে আবিষ্ট হয়ে শিখি দেশের অগ্রগতিতে শিক্ষা, শিল্পের অনিবার্যতা ও সম্ভাবনা। আজ এই মোহময় চরম দুর্দিনে দাঁড়িয়ে তাঁর সুস্পষ্ট মানবিক মতামতকে লাগাই সমাজ গঠনের শিক্ষায়। ছাত্রসমাজ, তরুণদের ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অনিঃশেষ শ্রদ্ধাবোধ আমার মনে সঞ্চারিত হয়েছিল পারিবারিক প্রভাবে এ কথা সত্য। তবু তা আরও দৃঢ় হয়েছে তাঁর প্রত্যয় দৃঢ় জীবনাদর্শ  থেকেই। সার্বজনীন শিক্ষার ও নৈতিক মূল্যবোধের ধারনা লাভ করেছিলাম তাঁর জীবনদর্শন থেকে। কবিগুরুর ভাবনায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন, "এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে,দিতে হবে ভাষা"-- আজ জনশিক্ষার আন্দোলনে কবির ভাবনাজাত এই আহ্বানকে ওনার মতো আমিও কাজে লাগাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সভ্যতার মেরুদন্ড যারা, সেই দেশের অবহেলিত, বঞ্চিত,নিরান্ন, মানুষগুলোকে শিক্ষার আঙিনায় আনার শিক্ষা কাজে  লাগাতে চাই। তিনিই তো শিক্ষক। মনের অপূর্ণতাকে পূরণ করতে "বড়ো আমির" যে মহান  শিক্ষা তিনি দিয়েছেন তাকেই করেছি পাথেয়। নিজের মনের ভাঙাগড়ার খেলায় চিন্তানায়ক ও সর্বকালের  আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী  রাধাকৃষ্ণাণের   মনন  আমাকে ঐশ্বর্যশালী করে। ভারতবর্ষের প্রত্যেক রাজ্যের মাতৃভাষার প্রতি তাঁর অসীম মমত্ববোধ ছিল। তাঁর অসীম মমত্ববোধ আমার অনেক প্রশ্নের সমাধান করেছে। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া,অন্যায়কে ঘৃণা করতে শিখেছি ব্যক্তিগতভাবে জীবনে চলার পথে তাঁর অসাধারণ সমাজভাবনায়। অস্হিরতাও  চঞ্চলতাতেও আমাকে শানিত করে তার উজ্জ্বল মানবতাবাদের শিক্ষা।

 

তাঁর কাছে পাওয়া ধর্মীয় উপলব্ধি, এ এক পরম প্রাপ্তি। মনের আকাশকে তিনি কখনো খন্ড করে দেখেননি। নতুন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মকে দেখেছিলেন। আমার ও দৃষ্টিভঙ্গি এক ই।ধর্ম হলো একটি আচার, একটা অনুভুতি বোধ। ধর্মের নামে সমাজে যখন চলে জুয়াখেলা তখন  ধর্মকারার প্রাচীরে আঘাত  হানার  সংকল্প যোগান কবিগুরুর ভাবনায় ভাবিত হয়েই। তুচ্ছ আচারের মরু বালুরাশিকে দূরে সরাতে, কর্মের মধ্যে মুক্তি সাধনার  শিক্ষা তো তাঁর কাছেই  পাই। এ কোন ভোগবাদী চেতনা নয়। শাশ্বত সুন্দরের  আরাধনায়  মহান  মানবিক শিক্ষায় তিনি আমাকে করেন  আলোকিত।

 

আমার পেশাগত জীবনের শিক্ষা পেয়েছি ওনার কাছ থেকে,এব্যাপারে একটি মূল্যবান কথা প্রাসঙ্গিক, "সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই, যারা আমাদের ভাবতে সাহায্য করেন।" আজও তাঁর ঈশ্বর উপলব্ধি আমাকে নতুন পথের দিশা দিয়ে আমাকে ঋদ্ধ করেছে। তিনি এক সভায় বলেছিলেন, "ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের ভিতর দিয়েই অনুভব করেন, দুঃখ ভোগ করেন। তাঁর গুণসমূহ, জ্ঞান, সৌন্দর্য, এবং ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের ভিতর দিয়েই প্রকাশিত হয়।" কৈশোর থেকে পরিণত জীবন জুড়ে  বইয়ের  সঙ্গে সখ্যতা ও ভালোবাসা গড়ে উঠেছে, এটা তাঁর শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত। এই প্রসঙ্গে তাঁর নিজস্ব  অভিমত আমাকেও গভীর ভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে।  'বই হল এমন এক মাধ্যম যার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতু নির্মাণ করতে পারি।" সেই সঙ্গে মানবজীবন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা আজ ও আবিষ্ট করে আমাকে, "আমরা যে মানবজীবন পেয়েছি তা হল আদর্শ  মানবজীবন গড়ে তোলার উপকরণ।" শিক্ষকতা জীবনের প্রান্তবেলায় উপনীত হয়েছি, গোটা কর্মজীবনে ছাত্র-শিক্ষকের বহু অমলিন স্মৃতি রোমন্থন করি। এই সম্পর্ক এই পেশার গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাকে ভাবায়, গভীর ভাবে ভাবায়। আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। বর্তমান পরিবেশে তাকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 

"A great teacher is like a candle--it consumers itself to light the way for  others"। আমার দীর্ঘ কর্মজীবন থেকে উঠে আসা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে কিছু  উপলব্ধি হলো,  শিক্ষককে আগে তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করতে হবে, তবে না শিক্ষকের পড়ানো বিষয় ছাত্রদের ভালো লাগবে ।বহুগুণী  শিক্ষককে সারা জীবনে পেয়েছি। শিক্ষক দিবস এলেই একটা অতীত স্মৃতি ভীড় করে। এগুলো হয়তো আমৃত্যু ভোলা সম্ভব নয়। দিনের পর দিন কী সহজাত, ভঙ্গিতে স্নেহে দিয়ে  তৈরি করেছিলেন ছাত্রদের। আগামী প্রজন্মের জন্য তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি। ব্যবহারিক  জীবনে অর্জিত বিদ্যা প্রয়োগ করার  অভিজ্ঞতাই হল আসল শিক্ষা। শাশ্বত সুন্দরের আরাধনায় মহান মানবিক শিক্ষায় তিনি আজও আমাকে আচ্ছন্ন করে  রাখেন, তিনি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। বিশ্বমানবতাবোধের  মহান ভাবনা তিনি সঞ্চারিত করেছেন আমার হৃদয়ের গভীরে। তাই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে  যেকোন অন্যায়, অবিচার, ও লাঞ্ছনায়, তথাকথিত  সভ্যের  নির্লজ্জ অমানুষিকতার  প্রতিবাদে ঝলসে উঠি আমি।

হে মহান শিক্ষক তোমার অফুরান উজ্জ্বল জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিসম্ভার  থেকে তিল তিল করে সঞ্চয় করছি আয়ূধ। আমার সীমাবদ্ধতার মাঝেও তোমার শিক্ষা  প্রতিনিয়ত পথ দেখায় আমাকে। এই মর্ত্য পৃথিবীতে যতদিন থাকি, প্রতিটি মুহূর্তে তোমার চিন্তার  সমারোহ আমাকে প্রাণিত করছে জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হতে। আজ জাতীয় শিক্ষক দিবসের পবিত্র দিনে শুধুমাত্র ভালোবাসা ও অনিঃশেষ শ্রদ্ধার ডালি  নিয়ে  তোমায় তর্পন করতে  চাই না।--তোমাকে চাই জীবনের প্রান্তবেলায় একমাত্র অবলম্বন রূপে । 

 

'আমার শিক্ষক'   প্রবন্ধটি  আমি উৎসর্গ করলাম প্রয়াত  আমার সবচেয়ে  আদর্শ প্রিয় জাতীয় শিক্ষক স্বর্গীয় সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের পদচরণে। তাঁর সমস্ত জীবনাদর্শ মহিরুহের দীর্ঘ ছায়ার মতন সারা জীবনময় আবিষ্ট করে  রইল  আমাকে । আমি চোখ বুঝলেই তাঁকে  দেখতে পাই, সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়ালে   তাঁরই  অভয়বাণী শুনি,কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বিচলিত হলে  তারই  কথাগুলি অনুরণিত হয়ে ওঠে মনের মধ্যে।               

 

অসংখ্য  সফল ও কৃতি মানুষের পিছনে শিক্ষকের  যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা  নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই শিক্ষক শুধুমাত্র যে  পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হতে হবে,তা  নয়। তিনি থাকতে পারেন  জীবনের যে কোনও  ক্ষেত্রেই।  তিনি  যে  পড়ুয়াকে শেখাবেন,তাই নয় তিনি তাকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন , জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে সাহস দেবেন, ব্যর্থতায় বন্ধুর মতোই  পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাকে  শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখাবেন।

 

ভারত তথা বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এক জন আদর্শ  শিক্ষক স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় বিশ্বাসী  ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ (১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের, ৫ই সেপ্টেম্বর) তামিলনাড়ুর মাদ্রাজ শহরের কাছাকাছি তিরুতান্নিতে  জন্মগ্রহণ   করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ১৯৫২--১৯৬২) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি (১৯৬২--১৯৬৭) ছিলেন। জন্মদিন ও পরিবার নিয়ে একটু মত-পার্থক্য  আছে। তাঁরই পুত্র  পণ্ডিত ডঃ সর্বপল্লী  গোপাল, (জহওরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস প্রফেসর অফ হিষ্ট্রি এবং ফেলো অফ সেন্ট অ্য।ন্টনি'স কলেজ, অক্সফোর্ড) তাঁর 'রাধাকৃষ্ণাণ এ বায়োগ্রাফি'   বইতে লিখেছেন---'ডঃসর্বপল্লী  রাধাকৃষ্ণাণের জন্ম ২০সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দ। তাঁর পিতা বীরাস্বামী ও মাতা সীতাম্মা । তাঁরা চার ভাই ও এক বোন  ছিলেন।'

 

ডঃ রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ভারতবর্ষে ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। বহুমুখী প্রতিভার এক বিরল বর্ণময়, বহু কৌণিক ব্যক্তিত্ব ডঃসর্বপল্লী কৃষ্ণাণ। একাধারে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক, আচার্য, দার্শনিক, ও জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীতে তিনি দর্শন তত্ত্বের একজন বড় মাপের পণ্ডিত ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন শৈশব থেকেই।কোন পরীক্ষায় প্রথম  ছাড়া দ্বিতীয় হন নি। অসাধারণ মেধার জন্য বৃত্তি পেতেন। তাঁর বর্ণিল কর্মজীবনের কৃতিত্ব বহু ব্যাপ্ত। তিনি সর্বদাই আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন। পৌরাণিক যুগে মুনি-ঋষিদের  পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থাকেই বর্তমান সমাজের উপযোগী করে আধুনিক করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর ৮৭ বছরের  কর্মজীবনে বহু কীর্তি  সমাজে রেখে গেছেন। হিন্দু সমাজের ধর্মের কোন গোঁড়ামি  তাঁর মধ্যে ছিল না। নিয়মশৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও অনুরাগ এবং ধীরস্থির ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন দর্শনের ছাত্র। সংস্কৃত ভাষা শিখে বিভিন্ন উপনিষদ ও হিন্দুশাস্ত্রের জ্ঞান সংগ্রহ করেছিলেন। আচার্য শংকর 'ব্রক্ষসত্য ও জগৎমিথ্যা'  বলেছিলেন। অনেকেই এই উক্তির সমালোচনা করলে তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থ পড়ে নিজের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং বলেন, "জগৎঅলীক বা মিথ্যা নয়, শূন্য নয়, কারণ জগৎ হল ঈশ্বরের ইচ্ছার এক বাস্তব প্রতিফলন। তবে জগতের এই বাস্তবতা ভগবানের সত্যতা থেকে আলাদা- 

জগতের নিজস্ব কোন স্বাধীন সত্তা নেই। তবে জগতের কর্তৃত্ব  ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সেই অস্বিত্ব ভগবৎ সত্তার বাইরের বস্তু নয়।"

 

তিনি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি  কলেজ, মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা ও অক্সফোর্ড এবং আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। অন্ধ্র ও বারাণসী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের সংস্থার  সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যেমন---ইউনিভার্সিটি এডুকেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, ইউনেস্কোয় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা ও তার একজিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ারম্যান  ছিলেন, পরে  প্রেসিডেন্ট হন। বহুসাম্মানিক  ডক্টরেট  ডিগ্রি উপাধি পান। ১৯৩১ সালে নাইট উপাধি ও পেয়েছিলেন ১৯৪৬-এ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভারতের দূত ও ছিলেন। ১৯৫৪সালে  ভারতরত্ন সম্মান পান। ১৯৫২ সালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হন, ১৯৬২  সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ। তাঁর বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়চরিত্র ও প্রতিভার দ্বারা  ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর রাজনীতিতে প্রথম প্রবেশ এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতরূপে  বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হন।

 

তাঁর বিশেষ ব্যক্তিত্ব, সংযত জীবন যাপন ও আচরণ এবং  সহানুভূতিশীল লোক ব্যবহার তাঁর চরিত্রের বিশেষ গুণ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বই পড়ার নেশা ছাড়া  অন্য কোন নেশা ছিল না। ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হলে বেতন ১০,০০০ টাকা, কিন্তু অধ্যাপক হিসাবে ২০০০ টাকা বেতনে অভ্যস্ত, তাই তিনি ২০০০ টাকা গ্রহণ করে বাদবাকি টাকা দেশের কাজে খরচ করতেন। বিলাসবহুল জীবনযাপন পছন্দ করতেন না, তাই সিমলার রাজপ্রাসাদে 'ইণ্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অব  আ্যডভান্স স্টাডিজ' নামে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন। বিভিন্ন পদের অধিকারী হয়েও পারিবারিক সমস্যা বা সুখ-দুঃখ, তাঁর হৃদয় থেকে দর্শনের চিন্তা মুছে ফেলতে  পারেনি। এই সময়ে বিভিন্ন দর্শনের মতবাদের ওপর বক্তৃতাগুলি নিয়ে  নিজেই   বই লিখেছিলেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো (১) এথিক্স অব দি বেদান্ত (২) দি রেন অব রিলিজন ইন কনটেম্পোরারি ফিলজফি (৩) দি হিন্দু ভিউ অব লাইফ (৫) বুদ্ধের জীবন-আদর্শ নিয়ে 'ধর্মপদ'  ৬) রিলিজিয়ান ইন এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড (৭) দি ফিলোজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর।'

 

বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা' নামক একটি গবেষণা মূলক প্রবন্ধ লেখেন, তিনি ভেবে ছিলেন তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ দর্শনের অধ্যাপক বাতিল করে দেবেন। কিন্তু অধ্যাপক আ্যলফেড জর্জ হগ তাঁর প্রবন্ধ পড়ে খুব খুশি হন। ডেকে পাঠান, তিনি উপস্থিত হতেই হগ সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করে বলেন, 'ভবিষ্যতে তুমি একজন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক হবে'।

বিভিন্ন  বইগুলিতে যে মতবাদ তিনি দিয়েছেন তা স্বামী বিবেকানন্দের মতাদর্শ। বিবেকানন্দ ভাবাদর্শী শিক্ষক ছিলেন। বিবেকানন্দ সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনি, (১) তিনি বলেছিলেন, "আমরা যেন যোগ্য নাগরিক হতে পারি সেই দেশের, যে দেশ জন্ম দিয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের" (২) "বিবেকানন্দের রচনাবলীর সঙ্গে পরিচয় না হলে আমার জীবনটা একেবারে অন্য হয়ে যেত- আমি জীবনের পরিনত বয়সে দাঁড়িয়ে তাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা উজাড় করে দিচ্ছি ওই মহান হিন্দু সন্ন্যাসীর প্রতি"।

বিবেকানন্দের রচনাবলী তাঁর হাতে  আসে এক অদ্ভূত পরিস্থিতিতে। তিরুতান্নি শহরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ  করে  তিনি চলে আসেন তিরুপতি শহরে। এখানে বিবেকানন্দের রচনাবলী হাতে পান। মিশনারিরা সুযোগ পেলে ভারতের সভ্যতা ও সনাতন হিন্দু ধর্মনিয়ে নানা কটুক্তি করতো, এটা তিনি মানতে পারেন নি। এই কটুক্তির যথাযথ উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন বিবেকানন্দের রচনাবলী পড়ে। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারা তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলেন যে, যেখানে বিবেকানন্দের আলোচনা সভা হতো সেখানেই শ্রোতা হিসাবে প্রতিনিয়তই উপস্থিত থাকতেন। সেই আলোচনাসভায় বহু লোকের মধ্যে ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ, এল কে আদবানি, আই  কে গুজরাল  এবং  আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি  উপস্থিত থাকতেন।

১৯৬২-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন রাধাকৃষ্ণাণ। নোবেলজয়ী ব্রিটিশ দার্শনিক, বারট্রাণ্ড র  রাসেল বলছিলেন, "ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ ভারতের রাষ্ট্রপতি  হওয়া মানে দর্শন বিষয়টার কাছে একটা আলাদা সম্মানের। আমিও নিজে দার্শনিক, তাই আমিও গর্বিত"।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পড়ুয়াদের ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহলের দাবি ছিল তাঁর জন্মদিনটা যেন বিশেষ

ভাবেই      উদযাপন করা হয়। তখন ডঃ   রাধাকৃষ্ণাণ বলেছিলেন, "জন্মদিন উদযাপন না করে  সেই দিনটা যদি  শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়, তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।" সেই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হয়। আজ ও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ ও পালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবসের রেওয়াজ  চালু হয়েছে ১৯৯৫ সালে। এই দিনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করা যায় না।

 

শিক্ষক দিবস হলো শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি দিবস যা ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, চিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিভিন্ন দেশে শিক্ষক দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হতে থাকে।   অধিকাংশই ক্ষেত্রেই প্রতিটি দেশ  কোন বিখ্যাত শিক্ষক কিংবা উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনকে উপলক্ষ করে এই দিবস পালিত হয়ে থাকে। ১১ সেপ্টেম্বর ডোমিনো ফসটিনো সার্মেন্তোর মৃত্যু দিবসকে আর্জেন্টিনা শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করে। ভারতে ডঃ রাধাকৃষ্ণাণের জন্ম দিনকে উপলক্ষ করে ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উদযাপন করা হয় সারাদেশে । তাই শিক্ষক দিবস আমাদের কাছে আজও একটি মহান দিন হিসাবেই  সূচিত হয়।  গ্রীক দার্শনিক আ্যরিস্টটলের একটি মন্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়, "যাঁরা শিশুদের  শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই, শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন"। নির্দিষ্ট দিনটি  বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়ে থাকে।

বিশ্বের ১৯টি দেশে ৫ই  অক্টোবর শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয়। ইউনিসেফ থেকেও ৫ -ই অক্টোবর দিনটিকে "বিশ্ব শিক্ষক দিবসের" স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ১১টি দেশ শিক্ষক দিবস উদযাপন করে২৮ শেষ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান পালন করে ৫ই অক্টোবর, নেপাল, গুরুপূর্ণিমার দিন, ভূটান ২রা মে, শ্রীলঙ্কা ৬ অক্টোবর, চিন ১০ ই সেপ্টেম্বর। বিশ্বের  সমস্ত শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। শিক্ষক জাতির তথা দেশের মেরুদন্ড। মানুষ তৈরির কারিগর। অন্য পেশার  সঙ্গে এর যথেষ্ট  তফাৎ আছে। সমাজ জীবনে আলাদা একটা গুরুত্ব আছে। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পালন করা হয়। ১০০দেশে এই দিনটি  পালিত হয়ে থাকে।এই দিবসটি পালনে এডুকেশান ইন্টারন্যাশানল (EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা  গ্রহণ করে। দিবসটি উপলক্ষে(EI)প্র তিবছর  একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি সারা দেশ-বিদেশের "শিক্ষক" পেশাজীবীদের জন্য  সেরা সম্মান। পরবর্তীতে যাতে কার্যকরী ও যথার্থ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে  সেটাই উদ্দেশ্য।

সমাজ-সংস্কার-শিক্ষায়  শিক্ষকদের উপযুক্ত মান্যতাদান করার যোগ্যদিন শিক্ষক দিবস। সমাজে শিক্ষকদের সম্মান ও অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৬২ সাল থেকে ভারতে ৫ই  সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন শিক্ষা সংস্হায় নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়। প্রধানত ছাত্র-ছাত্রীদের অনুষ্ঠান। উদ্যোগ তারাই নেয়। এইদিন তারা প্রিয় শিক্ষক--শিক্ষিকাদের ভালোবেসে সামান্য উপহার দেয়, শিক্ষক-শিক্ষিরাও তাদের আশীর্বাদ স্বরূপ মিষ্টিমুখ করান। বস্তুত একজন ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে যোগ্য শিক্ষকের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ শিক্ষকই  পারেন তার ছাত্র-ছাত্রীকে নিশ্চিত রূপে আদর্শিত ভাবে রূপান্তরিত করতে। একজন যথার্থ  শিক্ষকই পারেন তাঁর ছাত্রের মধ্যে যথার্থ মনন-চিন্তাকে  বাস্তব রূপে প্রতিফলিত করতে এবং আগামী  জীবনযাত্রায় প্রতিটি উপযুক্ত জীবিকা ও সৎ নাগরিক তথা মানুষ গড়ার কারিগর তাঁরাই।

 

এই প্রবন্ধটি শেষ করবো ছাত্রবৎসল ডঃ রাধাকৃষ্ণাণের শিক্ষক হিসাবে জীবনের উপলব্ধি মালা দিয়ে। একজন শিক্ষক আজীবন বেঁচে থাকেন তাঁর শিক্ষার্থীদের মাঝে।এটা বিশ্বাস করতেন তিনি। তাঁর উপদেশ, 'ভালো শিক্ষক হতে গেলে নিয়মিত পড়তে হয়, আর তা পড়ার  বই না হলেও চলে'। প্রায় বলতেন 'যদি ভালো  শিক্ষক হয়ে ছাত্রমন জয় করতে পার তবে কোন ছাত্র অসন্তোষই তোমাকে ছুঁতে পারবে না।' সব সময় যে কথাটা বলতেন তা অত্যন্ত মূল্যবান, 'আমার অস্তিত্ব ছড়িয়ে রয়েছে আমার কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে'।

 

জীবনের দীর্ঘযাত্রায় প্রতি মুহূর্তে এই মহান পুরুষের জীবনাদর্শ -এর মণিমুক্তা কুড়োতে কুড়োতে এগিয়ে চলে ছিলাম। আপনার অমল জীবনাদর্শ হোক আগামীর পথ চলার পাথেয়। জীবনের মোমবাতিটা নিজের মতন করেই জ্বেলেছেন তিনি, জ্বলেছেন তিনি, জ্বলে রাঙিয়ে দিয়েছেন আমাদের মতো অভাজনের জীবনের দিগন্তগুলি, ভিন্ন এক গোধূলির মায়াবী আলোয়। হে আচার্য দেব, বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রণাম খানি  রইলো। কবে আরও বেশি আলোকপ্রাপ্ত হবে আমরা!

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত (গবেষক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প ও ভ্রমণ লেখক)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top