সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

অসম প্রেম : দীপংকর দীপক


প্রকাশিত:
১৫ অক্টোবর ২০২০ ২২:৪০

আপডেট:
১৫ অক্টোবর ২০২০ ২৩:০১

 

পূর্বাহ্ন

কান্নার দৃশ্য। কিন্তু শ্যামলী শুধু হাসছে। তার দাবি, দৃশ্যটা হাসির হওয়াই উচিত। প্রেমিক ছেড়ে যাচ্ছে তো কী হয়েছে! এ জন্য প্রেমিকাকে কাঁদতে হবে! সেই দিন কী আর আছে! সময় বদলেছে। এ কালে প্রেমিকারা প্রেমিকদের হাসতে হাসতেই বিদায় দেন। অন্তিমে অল্প দিনেই নতুন প্রেমিক খুঁজে নেন।

শ্যামলীর কথায় পরিচালক কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তিনি মনিটরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। চোখ দুটি ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে নাকে হাত বুলাচ্ছেন। সহ-পরিচালক জুয়েলের গা থর থর করে কাঁপছে। ক্যামেরাম্যান মহাবিরক্ত হয়ে উঠছেন। কিন্তু শ্যামলীর তো হাসি থামছে না।

পরিচালক ধমকের সুরে বললেন, ‘ক্যামেরা ক্লোজ।’ তারপর তিনি হাতের ইশারায় শ্যামলীকে ডাকলেন।


হিমাদ্রি আহমেদ চেয়ারে গা এলিয়ে আছেন। ডান পায়ের ওপর বাঁ পা ভর করে বসেছেন। বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটি সামান্য নাড়াচ্ছেন। ডান হাত দিয়ে দুই গালে রেখা টানছেন। শ্যামলীর মনে কোনো ভয় নেই। সাহসী মেয়ে বটে। দ্রুত পায়ে হেঁটে পরিচালকের সামনে সটান হয়ে দাঁড়ালেন।

হিমাদ্রি আহমেদ গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কী যেন...?’

শ্যামলী টুং করে উত্তর দিলেন, ‘শ্যামা, মানে শ্যামলী। মা আমাকে শ্যামা বলে ডাকে। আর বাবা...।’

‘থাম। কে কী বলে ডাকে তা শুনতে চাইনি।’ তারপর মাথার ক্যাপটি নামিয়ে বললেন, ‘আমাকে চিন?’

‘আজব, আপনার নাটকে কাজ করছি, আর আপনাকে চিনব না!’

‘তোমাকে কে এনেছে?’

‘জ্যু ভাই, মানে জুয়েল ভাই।’

‘ছাগলটাকে ডাক?’

শ্যামলী হাতের ইশারায় জুয়েলকে ডাকলেন। জুয়েল দ্রুত ছুটে এসে পিছে হাত দিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়ালেন।

‘মেয়েটির নাম কী?’

‘স্যার, শ্যামলী।’

‘কোথা থেকে এনেছ?’

‘এশিয়ান ললিতকলা একাডেমি থেকে।’

‘কী পারে ও?’

‘নাচ, গান, অভিনয়- সবই স্যার।’

‘দুর্মা কোথাকার!’

‘মানে স্যার...।’

‘ঝুনাও না, কচিও না; তুমি ঠিক তাই।’

‘জি স্যার।’

‘ভালো দেখে একটা মেয়ে খুঁজতে বলেছিলাম না?’

‘হ্যাঁ, স্যার।’

‘এরপর থেকে চশমা পরে মেয়ে খুঁজবে, বুঝলে...।’

এ কথা শুনে জুয়েল আমতা আমতা করে বললেন, ‘স্যা...র... এঁকে দিয়ে হবে না?’

‘কচু হবে।’

শ্যামলী এবার অনুরোধ করে বললেন, ‘স্যার, জাস্ট আরেকটা সুযোগ দিন।’

‘ঠিক আছে। এবার একটা হাসির দৃশ্যে অভিনয় করবে। দৃশ্যটি হলো- তোমার প্রেমিক তোমাকে একটা কৌতুক শুনাবে। তা শুনে তুমি হো হো করে হাসবে, বুঝেছ।’

তারপর ক্যামেরা ম্যানের দিকে আঙুল তুলে, ক্যামেরা অন করার ইঙ্গিত দিলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, ‘ওকে রেডি। তিন, দুই, এক- অ্যাকশন...।’

শ্যামলী হাসছে না। প্রেমিক জাভেদের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে।

এ পাশ থেকে পরিচালক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ও শিট। হাসছ না কেন?’

ওই পাশ থেকে শ্যামলী জোর গলায় উত্তর দিলেন, ‘জাভেদ ভাই তো কৌতুক বলছে না।’

‘কৌতুক বলতে হবে না। শুধু তোমার হাসির দৃশ্যটা নেব। আবার রেডি। তিন, দুই, এক- অ্যাকশন...।’

কিন্তু এবারও শ্যামলীর মুখে হাসি নেই। পরিচালক আবার বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘রাবিশ, আজকের জন্য ক্যামেরা ক্লোজ।’

 


রাত ১০টা। হিমাদ্রি আহমেদ স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে চেয়ারে বসে দুলাচ্ছেন আর পড়ছেন। এমন সময় জুয়েল তার রুমে প্রবেশ করেন।

‘স্যার, শ্যামলী ম্যাডাম আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান।’

পরিচালক সাহেব পাশের টেবিল থেকে চশমাটা হাতে নিয়ে চোখে পরেন। তারপর বলেন, ‘আসতে বল।’

শ্যামলী ধীর পায়ে পরিচালকের রুমে ঢুকেন। হিমাদ্রি আহমেদ চশমার উপর দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘এত রাতে! থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে?’

‘না, স্যার।’

‘তাহলে।’

‘স্যার, আমি অনেক প্র্যাকটিস করেছি। ইনশাল্লাহ, কাল ঠিকঠাকভাবে পারব।’

‘ওকে যাও, গিয়ে ঘুমাও। কালকের বিষয় কাল দেখা যাবে।’

 


পরদিন সকাল। ইউনিটের লোকজন সবাই স্পটে হাজির। শ্যামলীও রেডি। কিন্তু তার মনে আগের সেই চঞ্চলতা নেই। কিছুটা গম্ভীর। হিমাদ্রি আহমেদ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসলেন। কিছুক্ষণ পর হাত উঁচিয়ে ক্যামেরা অন করার ইঙ্গিত দিলেন। জাভেদের সঙ্গে শ্যামলীর দৃশ্যধারণ শুরু হলো। এবার এক এক টেকেই সব দৃশ্যগুলো ওকে হয়ে গেল। হিমাদ্রি সাহেব তো মহাখুশি। শ্যামলীকে ডেকে থ্যাঙ্কস জানালেন। তারপর ডাকলেন জুয়েলকে। তিনি পিছনে হাত দিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়ালেন।

‘কনগ্রাচুলেশন, জুয়েল। তোমাকে তো এমন মেয়েই খুঁজে আনতে বলেছিলাম।’

‘না, মানে স্যার...। আমি নিজে খুঁজে আনিনি।’

‘তা হলে, কে খুঁজে দিয়েছে।’

‘শিউলি আপা। মানে স্যার, শিউলি আপার সঙ্গেই উনি পড়েন।’

‘তার মানে, ও আমার মেয়ের বান্ধবী?’

‘হ্যাঁ, স্যার।’

 


সন্ধ্যা। শ্যামলী তার রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ানো। আয়নার দিকে কিছুটা ঝুঁকে কপালের লাল টিপটা তুলছেন। তার গায়ের ওপর থেকে আঁচলটা পিছলে ফ্লোরে পড়ে আছে। গোলাপী রংয়ের পিঠ খোলা ব্লাউজে তার রূপমাধুর্যকে যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন সময় হিমাদ্রি সাহেব রুমে প্রবেশ করলেন। স্যারকে দেখেই শ্যামলী থতমত খেয়ে গেলেন। দ্রুত আঁচলটা টেনে বুকের ওপর তুললেন।

‘সরি, সরি... এ সময় রুমে প্রবশে করায়।’

‘না, না, স্যার। ঠিক আছে।’ পাশের চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বসুন।’

‘বসতে আসিনি। তুমি না কি খুব ভালো গান গাও! আকাশে চাঁদ উঠেছে। প্রযোজকসহ অন্য শিল্পীরা বাইরে বসে আছেন। তারা তোমার গান শুনতে চান।’

‘ওকে স্যার, আমি কয়েক মিনিটের মধ্যে আসছি।’

 


বৃষ্টিবিলাসের ফুল বাগানের পাশে শীতল পাটি বিছানো। সবাই শ্যামলীর প্রতীক্ষায় বসে আছেন। পাশেই হরামোনিয়াম রাখা আছে। প্রযোজক জহুরুল সাহেবের সামনে তবলা। কৈশোর থেকেই ভালো তবলা বাজান তিনি। একটি হলুদ রঙের শাড়ি পরে শ্যামলী আসলেন। হিমাদ্রি আহমেদ জহুরুল সাহেবের সঙ্গে শ্যামলীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘এবার তাহলে ফাটিয়ে দাও।’

স্যারের কথা শুনে শ্যামলী কিছুটা লজ্জার পাশাপাশি সঙ্কুচিতও হলেন। গান ভালো করতে না পারলে তো তার প্রশংসার কোনো দামই থাকবে না।

অনেকটা সাহস নিয়েই শ্যামলী হারমোনিয়ামের ঘাট টেপা শুরু করলেন। তারপর ‘খেক’ দিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে গান শুরু করলেন।

 


ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি ঝরে...রাত দুপুরে

মনটা আমার কাঁদে শুধু তোমার তরে...।

তুমি নেই গো পাশে

এমনো মধুরও রাতে।

একাকিনী ওগো আমি

প্রেম-বিরহে যেন মরি

এ দেহে তুষের অনল জ্বলে...।

ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি ঝরে...রাত দুপুরে

মনটা আমার কাঁদে শুধু তোমার তরে।

 


ঝির ঝির ঝির বাতাস বয়...মনে তে ভয়

তুমিহীনা এ হৃদয়; নীরস হয়ে রয়।

জ্যোছনালোকে মেঘবালিকা

খেলে কত খেলা।

আঁধার রাতে জ্বলে মরি

আর করো না হেলা।

রাত গড়িয়ে যায়; চোখেরও জলে...

ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি ঝরে...রাত দুপুরে

মনটা আমার কাঁদে শুধু তোমার তরে।

 


গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে শ্যামলীকে স্বাগত জানালেন। জহুরুল সাহেব বললেন, ‘দারুণ গেয়েছে তুমি। হারমোনিয়ামের সঙ্গে তবলার বিটগুলো চমৎকার মিলেছে।’

তার কথা শেষ না হতেই হিমাদ্রি সাহেব বললেন, ‘আহা, এ সময় যদি ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ত, তাহলে গানটা হৃদয়কে আরো বেশি ছুঁয়ে যেত। তবে ঝির ঝির বাতাসটা কিন্তু গানটাকে কম জমিয়ে দেয়নি।’

এরপর বেশ কিছুক্ষণ জমিয়ে আড্ডা চলল। আড্ডা শেষে হিমাদ্রি সাহেব শ্যামলীকে বললেন, ‘কাল কিন্তু তোমার একটা সাঁতারের দৃশ্য রয়েছে।’

শ্যামলী চমকে উঠে বললেন, ‘সাঁতার!’

‘কেন, তুমি সাঁতার জান না।’

‘না মানে, পারতাম; এখন বোধহয় ভুলে গেছি।’

‘তাহলে কাল সকালেই তোমাকে লীলাচল পুকুরে সাঁতার শেখাবো। এর পরেই শুটিং শুরু হবে। ওকে এখন সবাই গিয়ে ঘুমাই। ভোরেই সবাইকে উঠতে হবে কিন্তু।’

 


সূর্য ওঠার আগেই হিমাদ্রি সাহেব উঠলেন। ভোরে ওঠা তার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে উঠেই তিনি কিছুক্ষণ বৃষ্টিবিলাসের রাস্তা দিয়ে হাঁটেন। তারপর কোমরে গামছা বেঁধে বিভিন্ন গাছের গোড়ায় পানি দেন। তিনি তার শুটিং স্পটটাকে স্বর্গীয় উদ্যানের মতো করে সাজিয়েছেন।

 


শ্যামলী সাঁতারের প্রস্তুতি নিয়েই রুম থেকে বের হলেন। হিমাদ্রি সাহেব তাকে দেখেই ফিক করে হেসে বললেন, ‘ভালো মেয়ে তো তুমি। কাজকে বেশ প্রাধান্য দাও দেখছি। চল চল পুকুরে চল।’

 


শানের ঘাট। শ্যামলী হিমাদ্রি সাহেবের আগে আগেই নামলেন। মেয়েটির সাহস দেখে খানিকটা অবাক হলেন তিনি। বললেন, ‘পুকুরে কুমিরের বাচ্চা আছে কিন্তু।’

শ্যামলী পেছন ফিরে হেসে বললেন, ‘তাই নাকি। তাহলে তো ওদের সঙ্গে বেশ দুষ্টুমি করতে পারব।’ এই বলে পানিতে ঝঁপিয়ে পড়লেন তিনি। পুকুরটি বেশ গভীর। শ্যামলী তা বুঝতে পারেনি। তাই ঠাঁই না পেয়ে হাবুডুবু খেতে লাগলেন। বিপদ দেখে পরিচালক সাহেব নায়কীয় ভঙ্গিতে তাকে উদ্ধার করলেন। কয়েক ঢোক পানি খেয়ে ফেলেছেন নায়িকা। নায়ক সাহেব তাকে আড়কোল করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে দাঁড়ালেন। পুকুরে নায়ক-নায়িকা এখন মুখোমুখি। শ্যামলীর পুরো শরীর ভিজে চুপচুপে। আঁটোসাঁটো কামিজের ভেতর দিয়ে শ্যামলা বর্ণের শরীরটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বুকটা সুতীক্ষè হয়ে উঠেছে। তা দেখে হিমাদ্রি সাহেবের চিকচিকে বিবসনা গায়ের লোমগুলো কিছুটা কাঁটা দিয়ে উঠে। মুহূর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললেন, ‘আত্মাহুতি দিবে নাকি! এভাবে কী কেউ সাঁতার শিখে!’

তারপর শ্যামলীকে উপুড় করে হালকাভাবে ধরে বলেন, ‘এখন দুই পা আর দুই হাত দিয়ে নিজেকে ভাসমান রাখতে চেষ্টা কর।’

এভাবে কিছুক্ষণ প্র্যাকটিসের পর সত্যি সত্যিই শ্যামলী সাঁতার শিখে গেল।

 


তখন গভীর রাত। সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকারা ডাকছে। শ্যামলীর পাশের রুমেই হিমাদ্রি সাহেব ঘুমিয়েছিলেন। ওর মাথার কাছের জানালাটা খোলা ছিল। হিমাদ্রি সাহেব জানালা দিয়ে তাকে চাপা সুরে ডাকলেন। শ্যামলী কিছুটা ভয় পেয়ে বললেন, ‘কে! কে ওখানে?’ তিনি মুখে আঙুল তুলে অস্পষ্ট স্বরে বললেন, ‘দরজাটা খোল, কথা আছে।’

শ্যামলী কিছুটা চাপাসরে বললেন, ‘এত রাতে!’

‘দরজা খোল, বলছি।’

শ্যামলী দরজা খুললেন। তারপর লাইট অন করতে গেলেন। হিমাদ্রি সাহেব তাকে বাধা দিলেন। কারণ বাইরের চাঁদের আলোতে রুমের ভেতরটা বেশ স্পষ্টই দেখাচ্ছে।

‘বসুন, প্লিজ।’

তিনি ওর খাটে গিয়ে বসলেন। শ্যামলী তার পাশে বসতে বসতে বললেন, ‘কী কথা, বলুন?’

হুট করেই হিমাদ্রি আহমেদ তার পায়ে আছড়ে পড়ে বললেন, ‘আমি তোমাতে মুগ্ধ। এ হৃদয়ে তুমি দেবী রূপে স্থান করে নিয়েছ।’

শ্যামলী থ খেয়ে গেলেন। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

পরিচালক সাহেব তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আমার হৃদয় ভালোবাসায় বিচলিত। আমাকে তোমার হৃদয়ে স্থান দাও।’

শ্যামলী পাথর হয়ে গেলেন। এত বড় একজন পরিচালক, আজ তার প্রেম প্রত্যাশী। একি তার জীবনের সৌভাগ্য, নাকি ক্ষণিকের দুঃস্বপ্ন।

হিমাদ্রি সাহেব তার মাথায় হাত দিলেন, তারপর কপালে, গালে ও ঠোঁটে। তবুও হাতের মায়াবী ছোঁয়া থামল না। ক্রমশ ঘাড়, গলা থেকে বুকের দিকে চলে গেল। এবার শ্যামলীর স্তব্ধতা ভাঙল। তার দেহ সাড়া দিয়ে উঠল। কৈশোর পার করে কেবল যৌবনে পা দিয়েছেন তিনি। তাই তার স্নায়ুতন্ত্র আরো বেশি সতেজ।

শ্যামলী চাপাসুরে বললেন, ‘আমার ভয় লাগছে!’

হিমাদ্রি সাহেব ওর নাভিমূলে হাত দিতে দিতে অস্পষ্ট স্বরে উত্তর দিলেন, ‘কিচ্ছু হবে না। তোমার জীবন তো এখন আমারই।’


মধ্যাহ্ন

ক’দিন ধরে শ্যামলীর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে মাঝেই বমি হচ্ছে। দিন দিন তার সন্দেহের মাত্রা বাড়তেই থাকল। তিনি ফোন করে বিষয়টি হিমাদ্রি আহমেদকে জানালেন। উনি তাকে বৃষ্টিবিলাসে আসতে বললেন।

একজন প্রবীণের দিকে ধাবিত। অন্যজন কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণী। ঝাউ গাছের নিচে মুখোমুখি দু’জন।

‘বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দেয়া যায় না?’

শ্যামলী কোনো কথা বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। হিমাদ্রি আহমেদের চুল কিছুটা আলুথালু। মুখোমণ্ডল অনেকটা ফ্যাকাশে। বারবার চুলে হাত বুলাচ্ছেন। অনেকটা অস্থির।

‘সাটোমিস নামে একটি ঔষধ আছে। তিনদিন খেলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে পড়ে যাবে।’

‘আমি আমার বাচ্চা নষ্ট করব না।’ গম্ভীর গলায় বললেন শ্যামলী।

হিমাদ্রি সাহেব চুল থেকে হাত ছেড়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘কী বলছ তুমি?’

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলছি।’

‘আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছ?’

‘আমি আপনাকে নই; বরং আপনি আমাকে করছেন।’

‘প্লিজ, শ্যামলী। আমার সুখের সংসারটা ভেঙে যাবে।’

‘আমি ওই রাতে তা বলেছিলাম, আপনি শোনেননি।’

‘এখনও কেউ তো জানে না, তাহলে সমস্যা কোথায়?’

‘বাসায় বুঝে গেছে। তাছাড়া জহুরুল ভাই সব জানে।’

‘ও জানে মানে!’

‘সেদিনের ঘটনা সব দেখেছেন।’

‘তাহলে কী করণীয়?’

‘আমাকে বিয়ে করতে হবে।’

‘কী বল! তুমি তো আমার মেয়ের বয়সী।’

‘ওই রাতেও তো মেয়ের বয়সী ছিলাম।’

‘আমি আমার কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত। তুমি আমাকে বাঁচাও।’

‘এর উপায় একটাই। সসম্মানে বিয়ে করতে হবে।’

‘সবাই আমাকে গালি দিবে। ছি: ছি: করবে। আমার সংসারটা তছনছ হয়ে যাবে।’

এ কথা শুনে শ্যামলী কিছুটা প্রতিবাদী কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি তো শুধু নিজের কথাই ভাবছ। আমার কী হবে, তা একবার ভেবে দেখেছ! বিয়ে কর। সব ঠিক হয়ে যাবে। তা না হলে, আমি মিড়িয়াকে সব জানিয়ে দেব। বিখ্যাত নাট্যকার-পরিচালকের নামে এ কথা শুনলে লোকে গায়ে থুথু ফেলবে। পরবর্তীতে বিয়ে করতেও বাধ্য হবে। ’

‘এ কাজ ভুলেও কর না। আমি ভেবে দেখছি।’

‘তোমাকে ৭ দিন সময় দিলাম। এর মধ্যে সব ব্যবস্থা করবে।’

 


সারা দেশে ঢিঢি পড়ে গেছে, হিমাদ্রি আহমেদ বিয়ে করেছেন। পত্র-পত্রিকার পাতায় পাতায় এ খবর বড় বড় আকারে ছাপা হয়েছে। কেউ কেউ তাকে ছি: ছি: করছেন। আবার কেউ প্রেমের জয়গান গাইছেন। হিমাদ্রি সাহেবের প্রথম স্ত্রী ইতিমধ্যেই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি শহরের বাসা রেখে নিজস্ব শুটিং স্পট বৃষ্টিবিলাসেই নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সংসার পাতলেন।

এর মাস সাতেক পরেই হিমাদ্রি আহমেদের ঘর আলো করে নবজাতকের জন্ম হলো। জহুরুল সাহেবসহ পরিচিতজনরা এসে তাদের অভিনন্দন জানালেন।

 

অপরাহ্ন

কিছুদিন ধরে হিমাদ্রি সাহেবের শরীরটা ভালো নেই। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু রোগ ধরা পড়ছে না। তার শরীর ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। অধিকাংশ সময় তিনি ঘুমিয়ে কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে শ্যামলীর মনটাও ভালো নেই। রাত জেগে স্বামীর সেবা করতে করতে তারও চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।

সন্ধ্যায় জহুরুল সাহেব এলেন। শ্যামলী শিশুপুত্রকে খাওয়াচ্ছিলেন।

‘স্যারের অবস্থা এখন কেমন?’

‘ভালো নয়, জহুরুল ভাই। কিছুই ধরা পড়ছে না।’

‘কোথায় উনি?’

‘ঘুমাচ্ছেন।’

‘হ্যাঁ, দেশী চিকিৎসকদের ওপর ভরসা নেই। বেশির ভাগই হাতুড়ে। কেউ কেউ রোগ না বুঝেই ঔষধ-পথ্য দিয়ে পেসক্রিপশন ভরে ফেলেন। আবার কোনো কোনো ডাক্তার ঘুমের ঔষধ দিয়ে রোগীকে ঘুম পড়িয়ে রাখায় বেশ পটু।’

‘হ্যাঁ, ওনাকেও তো ঘুমের ঔষধ দিয়েছেন। তা খেয়ে দিন-রাত শুধু ঘুমান আর ঘুমান। রাতে তার কোনো হুঁশ থাকে না। এত বড় বাড়ি। আশপাশে বদ মানুষের অভাব নেই। আমি একা মেয়েমানুষ কীভাবে থাকি বলুন!’

‘তাহলে আমার বোনকে পাঠিয়ে দেই।’

‘না না না। তার আর দরকার হবে না। আমার মা আসবেন বলেছেন।’

‘তাহলে তো সমাধান হয়েই গেল। কোনো সমস্যা হলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করতে দ্বিধা করবে না কিন্তু।’

‘হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। আপনি ছাড়া ওনার আর আপন কেইবা আছে।’

 


জহুরুল ভাই খাটের ওপর গালে হাত দিয়ে বসেছিলেন। শ্যামলীর কথা শুনে তিনি গাল থেকে হাত নামালেন। তারপর মুচকি হেসে বললেন, ‘বছর ছয়-সাতেক ধরে স্যারের সঙ্গে আমার ওঠা-বসা। প্রথম দিকে ওনাকে কিছুটা ভয় পেতাম। পরে উনি নিজেই ভয় ভাঙ্গিয়ে দিলেন। ধীরে ধীরে ওনার সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠল।’

‘হ্যাঁ, উনি আমাকে সবই বলেছেন। কিন্তু দিন দিন ওনাকে নিয়ে চিন্তা বেড়েই চলেছে। কি করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।’  

‘শিগগিরই ওনাকে বিদেশে নেয়া উচিত। তা না হলে কোনো অঘটন ঘটে গেলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।’

‘বিদেশে চিকিৎসা করাতে তো প্রচুর টাকার প্রয়োজন হবে!’

‘স্যারের ব্যাংক ব্যালেন্স কি কম আছে!’

‘ছিল। তবে চিকিৎসায় চিকিৎসায় অনেকটা শেষ হয়ে গেছে।’

‘চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি আছি কী জন্য! সবার আগে স্যারকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। ওনাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার সব ব্যবস্থা আমি করব। ওখানে আমার পরিচিত লোক আছে। কোনো সমস্যা হবে না।’

এ কথা শুনে শ্যামলী কিছুটা আশ্বস্ত হলেন। তার গুমড়ো মুখ থেকে এক চিমটি শুকনো হাসি বেরিয়ে এল।

 


রাত। হিমাদ্রি আহমেদ ঘুমিয়ে রয়েছেন। বাঁ পাশে তার শিশুপুত্র ঘুমানো। বালিশের নিচ থেকে শ্যামলী মুঠোফোনটি তুলে নিলেন। তারপর জহুরুল সাহেবের নাম্বারে ডায়াল করলেন।

‘হ্যাঁ, শ্যামলী। বল...।’

‘ঘুমিয়ে পড়েননি তো?’

‘না। কিছুক্ষণ আগে সিঙ্গাপুরে কথা বললাম।’

‘কী বললেন তিনি।’

‘স্যারকে দ্রুত নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি দু’তিন দিনের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করছি।’

‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

‘কী বল যে, এ তো আমার কর্তব্য। ঠিক আছে। কাল সকালে আমি তোমাদের ওখানে আসছি। সরাসরি কথা হবে।’

‘ওকে।’

 


শ্যামলী তার স্বামীকে আলতো ঠেলা দিলেন। হিমাদ্রি আহমেদ ঘুমঘুম কণ্ঠে বললেন, ‘উ’।

‘চিন্তার কোনো কারণ নেই। তোমাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।’

হিমাদ্রি আহমেদ চোখ খুলে কিছুটা শুকনো মুখে হাসলেন। তারপর শ্যামলীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘আমার জন্য এত করে কী হবে!’

শ্যামলী স্বামীর বুকে হাত রেখে কিছুটা আদরমাখা স্বরে বললেন, ‘তুমিই তো আমার সব। তোমার জন্য সব করতে পারি।’ এই বলে তিনি স্বামীকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর তার গালে-মুখে বার কয়েক চুমু খেলেন। হিমাদ্রি সাহেবও স্ত্রীকে আঁকড়ে ধরলেন। ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে আদর করলেন। তারপর তার সুউচ্চ বুকে হাত রাখলেন। শ্যামলীর গা শিউরে উঠল। সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। প্রবীণের দিকে ধাবিত হিমাদ্রি আহমেদ যৌবনাবতী স্ত্রীর মনবাঞ্ছনা বুঝতে পারলেন। তিনি নিজের মনবল দ্বারা শরীরের শক্তি যথাসম্ভব বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু যে শক্তির ক্ষয় হয়েছে, তার উত্থান দীর্ঘ সময় ধরে রাখা সম্ভব নয়। হিমাদ্রি আহমেদ অল্পতেই স্ত্রীর দেহের কাছে নত স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। শ্যামলীর ক্রমবর্ধিত নিঃশ্বাস মুহূর্তেই থেমে গেল। উদীয়মান রক্তের উন্মদনা কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই থমকে গেল। কামবাণে বিদ্ধ শ্যামলী ঝাঁকি দিয়ে স্বামীকে পাশে ফেলে নিজের বক্ষদেশ নিজেই পিষ্ট করতে লাগলেন। কিন্তু তাতেও যখন পর্যাপ্ত সুখ মিলল না, তখন দাঁত কিড়মিড় করে নিজের চুল মুঠোবন্দিপূর্বক সজোরে টেনে ধরে নিজেকে আঘাত করতে চেষ্টা করলেন।

 


সকাল হতেই জহুরুল সাহেব এলেন। শ্যামলী তখন ঘর গোছগাছ করছিলেন। তার শাড়ির আঁচল কোমরে প্যাচানো ছিল। চুলগুলো খোপা বাঁধা। স্বামী-সন্তান দু’জনেই পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। জহুরুলকে দেখেই তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘আপনার প্রতীক্ষাই করছিলাম।’

‘তাই নাকি! সুখবরটা পেয়েই দ্রুত ছুটে এলাম। আমরা কিন্তু পরশুই সিঙ্গাপুরে যাচ্ছি। সেখানে থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন প্লেনের টিকেট কনফর্ম করতে পারলেই হল।’

শ্যামলী ‘হুম’ বলে নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

খানিকটা থেমে জহুরুল সাহেব আবার বললেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। ওখানেও লোক পাঠিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবরটা পেয়ে যাব।’

শ্যামলীর চোখ ছলছল করে উঠল।

জহুরুল সাহেব কিছুটা এগিয়ে গিয়ে শ্যামলীর বাহুতে হাত দিয়ে বললেন, ‘তোমার কথা ভেবেই আমি এত কিছু করছি।’ অতঃপর তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে চিন্তামুক্ত থাকার ইঙ্গিত দিলেন।  

 


সিঙ্গাপুর। দুই বেডের একটি রুমে উঠলেন তারা। হিমাদ্রি সাহবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে ধরা পড়ল, তার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এ কথা শুনে শ্যামলীর মুখ কালো হয়ে উঠল। জহুরুল সাহেব তাকে নানা ধরনের আশ্বাস দিতে লাগলেন। বললেন, ‘এ মুহূর্তে ভেঙে পড়লে স্যারও মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। তাছাড়া তোমাকে তো তোমার ছেলের কথা ভাবতে হবে।’

 


কাল হিমাদ্রি আহমেদের অপারেশন। স্যারকে হাসপাতালে রেখে জহুরুল সাহেব কিছু সময়ের জন্য হোটেলে এলেন। শ্যামলী বেডের ওপর গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন। তার চোখ দুটি ছলছল করছিল। পাশে শিশুপুত্র ঘুমোচ্ছিল। জহুরুল সাহেব শ্যামলীকে দুই বাহু তুলে দাঁড় করালেন। তারপর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমি তো আছি, নাকি!’

এ কথা শুনেই শ্যামলী জহুরুল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলেন। তিনি শ্যামলীকে অনেক বোঝালেন। তাকে আরো ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন।

 


হিমাদ্রি আহমেদকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্যামলীর চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। পাশে শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে জহুরুল সাহেব তাকে নানাভাবে আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করছেন। হিমাদ্রি আহমেদও অশ্রু সজল চোখেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলেন। মুহূর্তেই ওটির দরজা বন্ধ হয়ে গেল।  

 


ক্ষণিকবাদেই ওটি থেকে একজন ডাক্তার বের হলেন। তাকে দেখেই জহুরুল সাহেব দ্রুত পায়ে কয়েকধাপ এগিয়ে আসলেন। পিছে পিছে শ্যামলীও ছুটে এলেন। জহুরুল সাহেবের বুক ধড়ফড় করছে। ম্লানমুখী শ্যামলীর গাও থরথর করে কাঁপছে। তা দেখে ডাক্তার হাত উঁচিয়ে তাদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিলেন। তারপর ইংরেজিতে যা বললেন, তার অর্থ এরূপ দাঁড়ল যে, এখনও হিমাদ্রি সাহেবের অপারেশন শুরু হয়নি। একটা বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রধান ডাক্তার তাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। হিমাদ্রি সাহেবের শরীরের যে অবস্থা তাতে অপারেশন করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণই হবে। এতে ৫০ ভাগ বাঁচার নিশ্চয়তা আছে। মারা গেলে তাদের কিছুই করার থাকবে না। তবে অপারেশন না করলে ধুঁকে ধুঁকে হলেও রোগী আরো কিছুদিন বাঁচতে পারবে। এখন অপারেশন শুরু করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত তাদেরকেই দিতে হবে।

এ কথা শুনে শ্যামলীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জহুরুল সাহেবের মুখমণ্ডলে দুশ্চিন্তার রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠল।

‘এখন কী করবে শ্যামলী, তুমিই বল?’

শ্যামলী ছলছল চোখে জহুরুল সাহেবের দিকে তাকালেন। তারপর এগিয়ে গিয়ে তার হাত আঁকড়ে ধরলেন। তারপর ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বললেন, ‘ধুঁকে ধুঁকে বাঁচার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো।’ এ কথা বলে তিনি জহুরুল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। হিমাদ্রি আহমেদের অবর্তমানে এখন জহুরুলই তো তার একমাত্র ভরসা।

পাশেই ডাক্তার দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তাদের কথা বুঝতে পারলেন না। অবশেষে জহুরুল সাহেব ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করে বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে দিলেন।

 

দীপংকর দীপক
সাহিত্যিক, সাংবাদিক
কালের কণ্ঠ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top