সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

দুই বাংলার নদীর সাথে ঐতিহ্য হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নানা রকমের নৌকা : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
২ নভেম্বর ২০২০ ২১:২৩

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১০

 

নদীর দেশ দুই বাংলা। এপার বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ), ওপার বাংলা (বাংলাদেশ)। গঙ্গা এবং পদ্মা দুই বাংলার দুই সীমার মেরুদন্ড। এক সময়ে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের প্রাণভোমরা হলো পদ্মা, আর পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি একান্তভাবেই গাঙ্গেয়।

কিন্তু শুধুমাত্র এই দুই প্রধাননদী নয়, অসংখ্য ছোট বড়ো নদ-নদী শিরা উপশিরা মতোই বঙ্গভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দুই দেশেই জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী-খাল। সুদুর  অতীতকাল থেকে প্রবহমান এই সব খাল বিল আর নদীতে বিভিন্ন ধরনের আজো নৌকা বয়ে চলেছে। বিশেষ করে বর্ষাকাল এলে নৌকার বহুমাত্রিক ব্যবহার বেড়ে যায়। যুগের পরিবর্তনে ও প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি এবং সাফল্যে দিনে দিনে বিভিন্ন ধরনের নৌকা ঐতিহ্য হারিয়ে অবলুপ্তির প্রহর গুনছে। শুধু তাই নয় দিনে -দিনে বহু নদী ও খাল-বিল হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দুই দেশ থেকেই। সেই সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে শত শত রকমের নৌকাও।

একথা  অস্বীকার করা যাবে না, যুগ  যুগ ধরে  দুইদেশের  বাঙালির মানস ও জীবনচর্চায় নদী ও বিভিন্ন ধরনের নৌকার এক গভীর ও ব্যাপক প্রভাব ছিল দৈনন্দিন  জীবনে । এক সময়ে   অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে নদী ও নৌকা  আমাদের  জীবনকে শ্রীমণ্ডিত করেছিল। ইতিহাস তার নীরব সাক্ষী। জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই দু দেশের বাঙালির কাব্য- কবিতায় -গানে-গল্প-উপন্যাস জুড়ে জীবনের ভাঙাগড়ার সঙ্গে এসেছে নদী ও নৌকার  বর্ণময় ইতিকথা। গঠনশৈলী  ও পরিবহনের ওপর ভিত্তি করেই দুই বাংলায় বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। যেমন_--ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙ্গি, পাতাম, ঘুঘু, একমাল্লাই, দোমাল্লাই, মহাজনী, শিকারী, শালতি, গহনার নৌকা, রপ্তানি, গাছি, তোনী, ছুটনাও, সাম্পান, ফেটি, নায়রি, বাছাড়িনৌকা, ডিঙি, সওদাগরী, ইলশা, কিস্তি, বেতনাই, ভড় ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিছু আবার একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।  একই সঙ্গে কমে যাচ্ছে মাঝি-মাল্লা ও নৌকা তৈরির দক্ষ কারিগরের সংখ্যা।

নৌকা একটি সুপ্রাচীন লোকজ শিল্প। বহু মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস মুখ। নৌকার সঙ্গে দুই দেশের বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক বহু প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলার দক্ষিণ প্রান্তের নদ-নদী-খাড়ি-খাল-বিল সমন্বিত দু'বাংলার ভূখণ্ডে নৌকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন "এই নদীমাতৃক দেশে নৌ-শিল্পের প্রচলন যেমন দেখিতে পাই, যত 'নাবাত-ক্ষেণী', 'নৌবাট',  'নৌদণ্ডক', 'নৌবিতান'  ইত্যাদির উল্লেখ পাইতেছি, চর্যাচর্যবিনিশ্চিত- গ্রন্থ   হইতে আরম্ভ করিয়া প্রাকৃত-পিঙ্গল  পর্যন্ত প্রাকৃত ও অপভ্রংশে রচিত অসংখ্য গান ও পদে যত নদ-নদী -নৌকা সংক্রান্ত রূপক ও উপমার দেখা পাইতেছি তাহাতে অনুমান হয়, নৌ -বাণিজ্যই প্রবলতর ও প্রশস্ততর ছিল" ।

নৌকার সঙ্গে বাঙালি জীবনের আত্মিক যোগ ধরা পড়েছে চর্যাগীতিতে। প্রাচীন বাংলার অন্যতম গর্বের জায়গা ও  কেন্দ্র  চন্দ্রকেতুগড়ের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসকথা আমরা সকলেই কমবেশি জানি। এই চন্দ্রকেতুগড়ে পাওয়া বেশ কিছু পোড়ামাটির সীলে নৌকার উল্লেখ আছে। দুটো নৌকার উল্লেখ ও নাম পাওয়া গেছে। একটি হলো  'এপ্য' বা এপ্পগ, অপরটি 'জলধীসক্ল' (জলধিশতরু)। জলধিশতরুটা ছিল সম্ভবত যুদ্ধ জাহাজ। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকের  পেরিপ্লাসের বিবরণীতেও 'এপ্পগ' নামের জলযানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গলে  এবং চর্যাপদেও বাংলা অঞ্চলে নদীপথ ও সমুদ্রপথে চলাচলে উপযোগী দাড়-টানা  পণ্যবাহী জলযান তথা নৌকা বা ডিঙ্গার কথা আমরা একাধিক বার খুঁজে পাই। কবি মুকুন্দ রাম  চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গলে  'জঙ্গ' নামের এক ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজের কথা লিখেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জামালপুর এলাকায় 'ঝঙ্গ' নামের এক ধরনের নৌকা দেখা যায়, যা সম্ভবত সেই প্রাচীন জঙ্গেরই উত্তরসূরি। পনের শতকের শেষের দিকের কবি  বিপ্রদাস পিপলাই, মুকুন্দ রাম চক্রবর্তীর বর্ণনায় বর্ণাঢ্য নাম আর বিবরণে হরেক রকম নৌকার নাম উঠে এসেছে মাঝে  মাঝেই। অসাধারণ সব নাম, শুনলেই মুগ্ধ হতে হবে। নাম গুলি এই রকম-- নরেশ্বর, সর্বজয়া, সুমঙ্গল, নবরত্ন, চিত্রলেখা, শশিমঙ্গল, মধুকর, দূর্গাবর, গুয়ারেখী, শঙ্খচূড়, ছোটমুখী, সিংহমুখী আরও অনেক রকমের। রামায়ণ, মহাভারত ছাড়াও জলযান তথা নৌকার সন্ধান বা বর্ণনা পাওয়া যায় মেগাস্হিনিসের বিবরণে। মুকুন্দ রাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলে ৭টি নৌকা ,চোদ্দটি ডিঙার  উল্লেখ আছে। বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ আছে, চাঁদসদাগর সিংহল যাত্রার জন্য নৌ শিল্পী ।

 বুসাইকে ১৪টি শক্তিশালী নৌকা তৈরির নির্দেশ দেন।  হরপ্পা ও মহেঞ্জদড়োতে নানা নৌকার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই যুগের মানুষ সমুদ্র বিলাসী ছিলেন। তাছাড়া অজন্তাগুহ চিত্র, বর্ণরত্নাকরগ্রন্থ, নবশাস্ত্রম পাণ্ডুলিপি, জাতকমালায় প্রাচীন বাংলার নৌ নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে। প্রাচীন বাংলায় সেই সময় নৌকা বানানো হতো কাঁঠাল, পিয়াল, তাল, শাল, তমাল, লালি, চটকা, সুন্দরী, পশুর, বাবলা, খই, হাডউড, ধুদুল, নিম, গাব, মেহেগিনি, শিরিষ, গামার, ঝাউ, প্রভৃতি কাঠ দিয়ে। দু'ই বাংলার নৌ নির্মাণ শিল্পের ইতিহাস সূদূরপ্রসারী। নানান কারণে এই শিল্প গড়ে উঠেছিলঃ

(১) বাণিজ্যক যোগাযোগ স্হাপন (২) ধর্মপ্রচারে নৌযান এক বিশেষ স্হান করেছিল (৩)প্রত্যহিক জীবনের চাহিদা।   চট্টগ্রাম থেকে এপার বাংলার শ্রীপুর-বলাগড় পর্যন্ত নদী ও সমুদ্র-উপকূলবর্তী এলাকার চাহিদার চাপে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন স্থানে নৌকা তৈরির কারখানা। মুসলমান শাসকদের আগমনের পরে বাংলার নৌ--শিল্পের আরও বিকাশ ঘটেছিল। কারণ শাসকগণ দেখেছিলেন কিভাবে বাংলার স্হানীয় শাসকগণ  এই নদী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন স্বাধীন ভাবে শাসন করেছেন। স্বাধীন সুলতানী বাংলার রাজধানী 'সোনারগাঁও' আজ রূপকথার নগরী হলেও এর  ঐতিহাসিক বাস্তবতা চিরন্তন ও অবিস্মরণীয়। নানান স্বর্ণালী ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজ ও।এক সময়ে নৌশিল্পের  পীঠস্থান ছিল সোনারগাঁও। বিশাল বিশাল কাঠের জাহাজ তৈরি করা হতো এখানে। বর্তমান বাংলাদেশের সোনারগাঁও-এ লোকজ শিল্পের যাদুঘর রয়েছে।

নানান ধরণের নৌকাও জাহাজের মডেল রয়েছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব নৌকার রেপ্লিকা আছে এখানে। নৌকার কথা বললে আমাদের চোখে সাধারণত ভেসে ওঠে পালতোলা  ও ছইওয়ালা ছোটখাটো গড়নের একটা গড়ন। দুই বাংলায় এক সময়ে যে বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যেত,আজ তার অনেক খানি লুপ্তপ্রায়। তা সত্বেও গঠনশৈলী ও পরিবহনের উপর নির্ভর করে এখনও দুই বাংলায় বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। একটি নৌকার বিভিন্ন ধরনের অংশ থাকে। যেমন খোল, পাটি, এই, হাল, দাঁড়, পাল, পালের দড়ি, মাস্তুল, নোঙর, গলুই, বৈঠা, লগি, ওগুণ। নৌকা প্রধানত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়।

 ছই বা ছাউনি এবং লগি বানানো হয় বাঁশ দিয়ে এবং পাল তৈরি হয় শক্ত কাপড়জোড়া দিয়ে। নৌকার খোলকে জলনিরোধক করার জন্য এতে আলকাতরা লাগানো হয়। পরিবর্তন যুগের ধর্ম।একে অস্বীকার করা যায় না। মান্যতা দিতেই হয়। পরিবর্তনশীল সময়ের চাহিদাকে মান্যতা দিয়ে স্বাধীনতা পর থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল দুই বাংলা।  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য জন্য বহু নদীকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই নদী হারালো নিজস্ব গতি। গতিপথ অবরুদ্ধ  হওয়ায় বহু নদীর অপমৃত্যু ঘটল। যোগাযোগের উন্নতির জন্য দুই বাংলার বহু নদীর উপর তৈরি হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির ব্রিজ। ফলে নৌকার ব্যবহার ক্রমশ কমতে লাগলো।কাজ হারালো হাজার হাজার মাঝি। জীবিকায় টান পড়ল। ঐতিহাসিক তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীন বাংলায় বহু ধরনের নৌকার ব্যবহার  ছিল। কালগর্ভে  বহু হরেক রকমের নৌকার বিলীন হয়ে গেছে।  কিছু কিছু বিলুপ্তির পথে। নদীর সঙ্গে নৌকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আজ প্রশ্নচিহ্নের সামনে। কিন্তু নদীমাতৃক দুই বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে নৌকায় একমাত্র ভরসা। বাংলাদেশেও পশ্চিমবঙ্গের নৌকা তৈরির পীঠস্থান মানিকগঞ্জ ও হুগলির বলাগড়। নৌকা তৈরির ও বিক্রির হাট আমরা দেখতে পাই। বাংলাদেশের ফিরোজপুর হলো সবচেয়ে বড় নৌকা বিক্রির হাট। ১কিমি জুড়ে হাট বসে। এই হাটে বিক্রি হয় কোশা ও ডিঙি এবং জেলে নৌকা । নৌকারদাম সাধারণত ২ হাজার থেকে আট হাজার টাকা। প্রতি শুক্রবারে বসে হাট। নৌকার উপর ভ্রাম্যমান বাজার বসে ফিরোজপুর জেলার আটঘরে সন্ধ্যা নদীর বুকে আজও। বর্ষার সময়ে  সপ্তাহে দুই দিন।  ক্রেতা-বিক্রেতা থাকেন নৌকায়। ২০০বছরের সুপ্রাচীন এই ভাসমান বাজার। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের জন্য এই ভাসমান হাট বসে। এছাড়াও কোলকাতার পাটলী উপনগরীতে ভাসমান বাজার বেশ কিছু দিন আগে চালু হয়েছে। এই লোকজ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব শিল্প। বন্যা হলে মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, সুন্দর বন, দুই চব্বিশ পরগনা সাধারণ মানুষের একমাত্র অবলম্বন দেশী ধোঁকা। মাছ ধরার কাজে অপরিহার্য।যন্ত্রচালিত ভটভটি ট্রলার পরিবেশ বান্ধব নয়। নদী দেহে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে দুই বাংলার ৪০ লক্ষ মানুষ মাছ ধরার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, দুই চব্বিশ পরগনা, কোলকাতা, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ার, মালদহ, হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান জেলার কিছুটা অংশে এবং বাংলাদেশের সিলেট,  সাতক্ষীরা, বরিশাল, যশোর, পাবনা, ময়মনসিংহ, খুলনা , কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম,  নবাবগঞ্জ, ঢাকাসহ বহু জেলায় আজ ও মাছধরা ও মালপত্তর পরিবহনে নৌকা অপরিহার্য।  পালতোলা  নৌকা রূপসা, মেঘনা  নাগর, সুবর্ণরেখা, সোমেশ্বরী ,মধুমতি, বুড়িগঙ্গা, ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, মাত্রা, গোসাবা, বিদ্যাধরি, বেতনি, কলাগাছিয়া  রূপনারায়ণ, সুন্দরবন এলাকায় আজ ও   প্রতীয়মান।

আমাদের অন্বেষন হারিয়ে যাওয়া নৌকাগুলোর পরিচয় ও তার গঠনশৈলী উন্মোচন করা। প্রাচীন বাংলায় বহু বর্ণময় নৌকার পরিচয় আমরা কমবেশি সবাই জানি। ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমণ্ডিত নৌকার গুলো নানা ধরনের ছিল। গঠনশৈলী অনুসারে প্রত্যেকের এক একটি নান্দনিক ও কাব্যিক নাম ছিল। সেগুলো আজ অতীতের কথকতা।

(১) মলার: বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলায় একসময় তৈরি করা হতো মলার নৌকা। এই নৌকা মূলত  ভারী মালপত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হোত। ১২-৬৫ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম । মলার নৌকায় পার থাকতো দুটি, দাঁড় ৬টি। এই ধরনের নৌকা বর্তমানে দুই বাংলায় অবলুপ্তির পথে।

(২) ঘাষী: মারিও বেশি ওজন বহন করার উপযোগী নৌকা হলো ঘাষী নৌকা।মালপত্র পরিবহনের কাজের জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে যন্ত্রচালিতবড় বড় ট্রলারের ব্যবহার হচ্ছে। পরিবহন খরচ অনেক কম।

(৩) গয়না নৌকা: মাঝারি বা বড় আকারের গয়না নৌকা মূলত যাত্রী পারাপারের কাজেই ব্যবহার করা হতো। নৌকার ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচার ছাদ থাকে। একসঙ্গে প্রায়২৫-৩০ জন যাত্রী বহন করার ক্ষমতা ছিল এই নৌকার।

(৪) ইলশা নৌকা: ইংলিশ মাছ ধরার জন্য জেলেরা এই নৌকা মূলত ব্যবহার করে। বর্তমানে বাংলাদেশের পদ্মা, রুপসা, বুড়িগঙ্গা, ইছামতি নদীতে দেখতে পাওয়া যায়। এখনও প্রচলিত আছে। এই ধরনের নৌকায় মোটা কাপড়ের পাল লাগানো থাকে।

(৫) বাতনাই নৌকা: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বরিশাল, যশোর, খুলনা, মানিকগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় এই নৌকার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল।আজ শুধুই ইতিহাস। এই ধরনের নৌকায় ১৭-১৮ জন মাঝি লাগতো দাঁড় টানার জন্য। ১৪০-১৬০ টন মালপত্র বহন করতে সক্ষম। বিশাল চারকোনা একটি পাল থাকতো। বর্তমানে যান্ত্রিক নৌকার ব্যবহারের খরচ কম ও সময়কম লাগে বলে এই ধরনের নৌকার ব্যবহার কমে গেছে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সামান্য কিছু জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।মূলত ইট,বালি,পাথর, সিমেন্ট পরিবহন করার কাজ এই ধরনের নৌকায় হয়। দুই বাংলায় এই ধরনের নৌকার প্রচলন কমে গেছে।

(৬ )কোশা/কোষা/কোসা:   বর্ষাকালে চরাঞ্চলে বা বিলেকোসার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। অনেকটা ডোঙার মতো গঠনশৈলী। এলাকা বিশেষে এর আকার ছোট-বড় হয়। কোষা মূলত পারিবারিক নৌকা হিসেবে প্রাচীন বাংলায় ব্যবহৃত হতো। এখনও দুই বাংলায় বিভিন্ন স্থানে এর প্রচলন আছে। হাটবাজার ও স্বল্প দূরত্বে চলাচলের কাজে বিশেষ করে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটি আদর্শ কোশা নৌকাতে আট জনের মতো যাত্রী বহন করা যায়। কোন ছই থাকেনা। পুরো নৌকা উন্মুক্ত থাকে। কোষা বৈঠা দিয়ে চালানো হয়ে থাকে। অগভীর জলে লগি ব্যবহার করে চালা নো যায়।

(৭) ছইওয়ালা বা একমালী: এক সময়ে পালতোলা পানির মতো ছইওয়ালা একমালাই ছিল দূরপাল্লার নৌকা। আজও দুই চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুরের কিছু কিছু জায়গায় ও বাংলাদেশে এই ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। কোলকাতার বাবুঘাট, ডায়মণ্ডহারবার, কোলাঘাট, সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও বাংলাদেশের বরিশাল জেলার দুশুমি গ্রাম সংলগ্ন আশেপাশের এলাকাসহ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কয়েকশ মানুষ ছইওয়ালা নৌকার মাঝি হিসেবে পুর্বপুরুষ ধরে এই পেশা এখনও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

(৮) পানতোলা পানসি: প্রাচীন বাংলায় নৌভ্রমণে দূরে কোথাও যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন ছিল পালতোলা পানসি। সম্রাট আকবরের আমলে এই নৌকায় করে জমিদাররা বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করতে যেতেন। বর্ষায় মাটি অঞ্চলে নাইওরি বহনে এই ধরনের নৌকার জনপ্রিয়তা ছিল। এই নৌকার সঙ্গে বঙ্গসংস্কৃতির একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। পানিতে চড়ে মাঝিমাল্লার ভাটিয়ালি, মুর্শিদী আর মারফতি গান গেয়ে মনকেড়ে নিতো যাত্রীদের। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও বরিশাল অঞ্চলে এই নৌকার প্রচলন ছিল ব্যাপক এক সময়ে। গ্রামেগঞ্জের নৌপথে চলাচলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা এর জায়গা দখল করে নেওয়ায় এই নৌকার চাহিদা এখন আর তেমন নেই।

(৯) ডোঙা: তালগাছের কাণ্ড কুঁদে এই ধরনের নৌকা বানানো হয়। তাছাড়া তালের নাও--কোন্দা নামে পরিচিত। বেশ টেকসই মজবুত। ও পাশ্বদেশ বা বিস্তার এত কম যে, এতে বেশি মানুষ বা মালপত্র বহন করতে সক্ষম নয়। একটু বেসামাল হলে,উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাঁর গাছের গোঙা সহজে পঁচে নাবলে ঠোঙা বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়।

(১০) বালার নৌকা: বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকা ছিল বাংলার।মূলত ব্যবসা--বণিজ্যের জন্য এই নৌকি সুপ্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নৌকাগুলি আকারে বড় হয়, দৈর্ঘ্যে ১২-১৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বৈঠা বায় ১০--১২জন মাঝি। এই নৌকায় পার থাকে দুইটি।

 (১১) সওদাগরী নৌকা: মূলত ব্যবসা- বাণিজ্য করার জন্য সওদাগরগণ এই নৌকা ব্যবহার করে দেশ--দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতেন। মঙ্গলকাব্য ও চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে যার উল্লেখ পাওয়া যায়। বহু জনকে বহন করতে সক্ষম এই ধরনের নৌকা। পাল লাগানো থাকতো। বর্তমানে একেবারেই বিলুপ্ত।

(১২) বাচারি/বাছারি: বাঙালি একধরনের বাণিজ্যিক নৌকা।৪০টনের ওজন বহনে সক্ষম এই ধরনের নৌকা। কয়েক দশক আগেই বিলুপ্তির পথে চলে গেছে।  

(১৩) পাতাম: পাতাম এক ধরনের যুগল নৌকা গঠনশৈলী অসাধারণ। দুটি নৌকাকে  পাশাপাশি রেখে 'পাতাম' নামক লোহার পাত দিয়ে যুক্ত করে এই যুগল নৌকা তৈরি করা হয়।একে অনেক জায়গায় জোড়ানাও বলে। মূলত মালপত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।মাঝি ছাড়াও চার জন দাঁড় টানার লোক থাকে। একটি পাল থাকে। এক সময় বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় দেখা যেত। ওপার বাংলার সিলেট ও কিশোরগঞ্জ  এলাকায় দেখা যেতো।এখন বিলুপ্তিপ্রায়।

(১৪) বাঅইচেরনৌকা: দুই বাংলার লোকজীবনের সঙ্গে নৌকা বাইচ গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। নৌকা এক ধরনের লোকজক্রীড়া। আজকের সময়ে এই ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে দুই বাংলায়। দু'চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলি, নদীয়া,মারলে নৌকা বাইচের প্রচলষ রয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের কমবেশি সব জেলায় এই ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে।এই নৌকাকে কেন্দ্রকরে বিভিন্ন ধরনের মজার খেলার চল ছিল। ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় দুই বাংলায়। নৌকাবাইচ একটি।  জনপ্রিয় খেলা। নৌকার দৈর্ঘ্য ১৩০-১৫০ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতিযোগিতার সময়ে৩০--৯০জন  মাঝিদল থাকে। নৌকার আকৃতির উপর নির্ভর করে কতজন মাঝির দরকার। নানান রকম নামে পরিচিত ছিল। পঙ্খিরাজ, দ্বীপরাজ, সোনার তরী প্রভৃতি। এই ধরনের নৌকা একেবারেই বিলুপ্ত হয়নি দুদেশে।

(১৫) ভটভটি/শ্যালোনৌকা: বিশশতকের শেষে নব্বই দশকের শুরুতে এপার বাংলা- ওপারবাংলার দেশি নৌকায় মোটর লাগানো আরম্ভ হয়।দেশী নৌকা যান্ত্রিক নৌকায় রূপান্তরিত হয়। জল সেচে ব্যবহৃত শ্যালো পাম্পের মোটর দিয়ে স্হানীয় ভাবে এই সব নৌকা চালানো হয় বলে একে অনেক জায়গায় শ্যালোনৌকা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা রূপে পরিচিত। সুন্দরবনসহ সমস্ত রাজ্যের কমবেশি সব জায়গাতেই এর ব্যবহার বহুলাংশে ।

(১৬) টাউরে নৌকা: এইধরনের নৌকা ভারি। বেশি ওজনের মালপত্র বহন করতে সক্ষম।মালপরিবহনের কাজে বেশি ব্যবহার করা হতো, এক সময়ে। সুন্দরবন  অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় দেখা যেত ৪০বছর আগে এখন এই নৌকার প্রচলন নেই বললেই চলে।

(১৭) ডিঙিনৌকা: দু'বাংলার অত্যন্ত পরিচিত সবচেয় বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত নৌকা হচ্ছে ডিঙি নৌকা। নদীর তীর বা খাল, হাওড়--বাঁওড়ে যারা বাস করে, তারা নদী পারাপার, মাছধরা ও অন্যান্য কাজে এই নৌকার ব্যবহার করে। আকারে ছোট বলে এই ধরনের নৌকা চালাতে এক জন মাঝিই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে এতেও পাল লাগানো হয়ে থাকে ।

(১৮) ময়ূরপঙ্খী: প্রাচীন বাংলায় রাজা--বাদশাদের শৌখিন নৌকার নাম ময়ূরপঙ্খী। এই ধরনের নৌকার গঠনশৈলী অভিনবত্বের দাবি রাখে। নান্দনিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। সামনের দিকটা দেখতে ময়ূরের মতো বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে ময়ূরপঙ্খী। নৌকা চালানো র চারজন মাঝির দরকার হয়। এই ধরনের নৌকায়  দুটো পাল  ব্যবহৃত হতো। ১৯৫০ সালের পর থেকে এই নৌকার প্রচলন একেবারেই নেই। একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বজরানৌকা: সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলায় জমিদার ও বিত্তশালী মানুষের নৌ ভ্রমণের শখের বাহন ছিল বজরা । বঙ্কিমচন্দ্রের 'দেবী চৌধুরানী' উপন্যাসে ও রাণী রাসমণি টেলিসিরিয়ালে  বজরা নৌকার উল্লেখ লক্ষ্য করা গেছে।এই ধরনের নৌকায় খাওয়া,শোয়া-ঘুমানোর সহ  নানান সুবিধা থাকত। বজরানৌকায় পালের ব্যবহার থাকতো।হাল ও দাঁড় চালানোর জন্য কমপক্ষে ৫জন মাঝি লাগতো। সময়ের  দাবিতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের  কারণে  বহু আগেই এই নৌকার প্রচলন ও কদর কমে গেছে।

(১৯) সাম্পান : কালজয়ী বাংলা গানেরজনপ্রিয় শিল্পী শ্যামল মিত্রের গানে ও বাংলাদেশের বহু কবিতায় ও উপন্যাসে এই নৌকার উল্লেখ আমরা পাই। বাংলাদেশের লোকগীতি সাম্পান নৌকার পরিচয় নানা ভাবে  উন্মোচিত হয়েছে। রফিক আজাদের একটি কবিতায়  আমরা এই নৌকার পরিচয় পাই। 'সুন্দর সাম্পানে চড়ে মাধবী এসেই বলে যাই'। দুই বাংলার লোকগীতি ও সাহিত্যের পরতে পরতে এই সাম্পানের উল্লেখ আছে। বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পরিচিত নৌকা হলো সাম্পান। গঠনশৈলীতে একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ায় সাম্পান বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কুতুবদিয়া এলাকায় এই ধরনের নৌকার প্রচলন ছিল এক সময়ে। এই নৌকার সামনের দিকটা উঁচু আর বাঁকানো, পিছনটা  সোজা। সাম্পান একটি ক্যান্টনিজ শব্দ, এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ভাঙলে, মানে দাড়ায়  সাম মানে তিন আর পান মানে কাঠের টুকরো। আভিধানিক অর্থ 'তিন টুকরা কাঠ'। একজন মাঝি চালিত এই নৌকা মালপত্র পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো।এক সময়ে বড় আকারের সাম্পান দেখা যেত, যার তিনকোনা আকারের পাল থাকতো। মাঝির সংখ্যা থাকতো সাত জন। বর্তমানে অবলুপ্তি ঘটেছে।

(২০) ঘুঘু: সুন্দরবনের মৎস্যজীবী দলের সদস্যরা খাড়িতে মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করতো। খুব ছোট আকৃতির নৌকা।

(২১) বেতনাই:  গোলপাতা ও বনের কাঠ বোঝাই করার নৌকা।

(২২) নিকারীনৌকা: শিকারী এক সম্প্রদায়ের জেলে। এরা নিজেরা মাছ ধরে না,অন্যের কাছ থেকে মাছ কিনে ব্যবস্হা করে এদের নৌকাকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত জন্য শিকারী নৌকা বলা হয়ে থাকে। 'তিতাস একটি নদীর নাম' 

উপন্যাসে এই নৌকার উল্লেখ আছে এছাড়াও মহাজনী নৌকা, ব্যবসার মালবাহী নৌকা। গাহি নৌকা, ঘাস বহনকারী নৌকা। মাড়ুয়া নাও, বাজরি জাতীয় শস্য বিশেষ। শালতি নৌকা হলো শাল গাছের গুঁড়িতে তৈরি নৌকা। বাজারি নৌকা, বাজার অর্থাৎ গ্রামের সবচেয়ে ধনবান ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত নৌকা। ধোলাই নৌকার প্রচলন ছিল সুন্দরবনে। ইট, বালি বহনের জন্য ব্যবহৃত হতো। আজ ও কিছু কিছু দেখা যায়। সমস্ত নৌকা গুলির নাম করণ হয়েছে নৌকার আকৃতি, মাঝির সংখ্যা এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে।

 শেষকথা, এক সময়ে বাংলার নদীগুলিতে সারি সারি পালতোলা নৌকা চোখে পড়ত।এখন সময়ের বিবর্তনে জৌলুস হারানো নদ-নদীর  করুণ পরিণতি আর যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে। আবহমান গ্রাম বাংলার লোকজ--সংস্কৃতির অন্যতম ধারক পালতোলা নৌকা। নববধূ শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না আর ধরে না। একটা সময় দুই বাংলার লোকজীবনের পরতে পরতে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নৌকা ও নদী আর। পালতোলা নৌকা স্বচ্ছ জলের কলতান, পালে লাগা বাতাসে পতপত শব্দ অন্যরকম অনুভূতিতে জুড়িয়ে যেতো প্রাণ। পালতোলা নৌকায়নদীভ্রমণে তৃপ্ত হতো মন। সারিবদ্ধ নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল ওড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠতো। মাঝনদী থেকে ভেসে আসা দরাজ কণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে অপার সুখকর তৃপ্তি এনে দিত।এখন শুধুই স্মৃতি। কালের পরিক্রমায় এই সব নৌকা এখন অতীত। যান্ত্রিক আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নৌকা। নৌ মাঝিদের জীবন আজ বিপন্ন।কদর নেই মাঝি--মাল্লাদের। অন্য পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্যা হচ্ছে। বর্তমানে ইঞ্জিন চালিত নৌকার ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে, সঙ্গে বেড়েছে দূষণের মাত্রা। পালতোলা নৌকার জায়গায় দখল নিয়েছে শ্যালোইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্হানীয় নাম ভটভটি। শান্ত --স্নিগ্ধ নদীর পরিবেশ আজ বিপন্ন। কালের আবর্তে এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে "পালের নাও,পালের নাও, পান খেয়ে যাও" ইত্যাদি সব ছড়া‌। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যাতায়াত ব্যবস্হার অভাবনীয় অগ্রগতি ও নদীর  নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ--পথ ব্যবহার অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমে গেছে। এ জন্য নৌকার ব্যবহার  দিনে দিনে কমে গেছে। তবে এই সব মনোমুগ্ধকর নৌকা গুলো বাংলার প্রাচীনতম লোকজ শিল্প ছিল, তার অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। শীঘ্রই এগুলো সংরক্ষণ করা না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি।

 

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক,রম্যরচনা, চিত্রনাট্য অণুগল্প ও ছোটগল্পের এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top