সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

বভ্রুবাহন : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৭ জানুয়ারী ২০২১ ২০:৫৩

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১১

 

এক

মণিপুরের পশ্চিমাকাশে সূর্য তখন একরাশ লাল সিঁদুর ঢেলে দিয়ে অস্তগামী, মণিপুর রাজমহিষী অর্জুন ভার্যা চিত্রাঙ্গদার প্রাসাদে এখনও সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলে ওঠেনি। অর্জুনের অপর এক স্ত্রী নাগরাজ কন্যা উলূপীও প্রাসাদে উপস্থিত আছেন। তীর্থযাত্রা কালে উলূপীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেছিলেন অর্জুন। মণিপুরে অর্জুনের আগমন সংবাদ পেয়ে তিনিও পৌঁছে গেছেন অর্জুন দর্শনের উদ্দেশ্যে। দুই সখির আন্তরিক ইচ্ছা অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় হস্তিনাপুরে উপস্থিত থাকবার এবং কুন্তীর সঙ্গে মিলিত হবার।

কিন্তু এই মুহূর্তে গবাক্ষ পথে অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে চিত্রাঙ্গদা অন্তরে অন্তরে কেঁপে ওঠেন, আগামী কাল মণিপুরের আকাশ যখন লাল হয়ে উঠবে, তখন তাতে শুধু অস্তগামী সূর্যের লাল আভা নয়, মিশে থাকবে রক্তের লাল রঙ। স্বামী অথবা পুত্র কাউকে হারাতে হবে তাঁকে আগামী কালের যুদ্ধে, যা ক্ষত্রিয় রমণীর কাছে নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে তাই হয়ে এসেছে, আর চিত্রাঙ্গদা নিজেও যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শিনী, তার পিতা নিজের একমাত্র কন্যাকে গড়েছিলেন একজন রাজপুত্রর মতন। অশ্ব চালনা, অস্ত্র বিদ্যায় খুব কম পুরুষই চিত্রাঙ্গদার সমকক্ষ। তবুও রমণীর মনো:ব্যথা তার নিজস্ব একান্ত, যা সর্বদা পুরুষের অগোচরেই থেকে যায়। আগামীকাল সম্মুখ সমরে যখন পিতা এবং পুত্র মুখোমুখি হবেন, তখন তারা কেউই চিত্রাঙ্গদার কথা মনে রাখবেন না। চিত্রাঙ্গদা রাজমহিষী, কিন্তু তিনি একজন স্ত্রী, একজন মাতা, সেই রমণী যিনি সদা স্বামী এবং পুত্রের মঙ্গল কামিনী, সেখানে ক্ষত্রিয় রমণী রাজরানি চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে একজন সাধারণ রমণীর কোনও তফাৎ নেই।

দূত মুখে সবই শুনেছেন চিত্রাঙ্গদা, অর্জুন অস্বীকার করেছেন বভ্রুবাহনের পিতৃত্ব, সর্বসমক্ষে নটীর পুত্র অভিহিত করে পদাঘাত করেছেন বভ্রুবাহনকে, যার নিন্দা করেছেন অর্জুনের পারিষদরাই। ফল স্বরূপ রণ দামামা বেজে উঠেছে মণিপুরের আকাশে বাতাসে।

মহামুনি ব্যাসদেবের পরামর্শে অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছেন মহারাজ যুধিষ্ঠির। সেই যজ্ঞের ঘোড়া রক্ষা করতে পৃথিবী ভ্রমণে বেরিয়েছেন ভীম, অর্জুন, কর্ণপুত্র বৃষকেতু প্রমুখ মহাযোদ্ধারা। অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া যে রাজ্যে ঢুকবে, সেই রাজ্যের রাজাকে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের বশ্যতা স্বীকার করতে হবে ধনরত্ন উপঢৌকন দিয়ে, আর যে রাজা তা অস্বীকার করে যজ্ঞের ঘোড়া আটকাবেন, তাকে বশ্যতা স্বীকার করাতে যুদ্ধে পরাজিত করে যজ্ঞের ঘোড়া উদ্ধার করতে হবে। বহু রাজ্য ভ্রমণ করে, বহু যুদ্ধ জয় করে যখন ঘোড়া ঢুকল মণিপুরে, তখন মহা পরাক্রমশালী মণিপুর রাজ বভ্রুবাহনের সৈন্যরা সেই ঘোড়া আটক করে নিয়ে এল রাজ সকাশে। অশ্বের ললাট লিখন পড়ে বভ্রুবাহন বুঝতে পারলেন স্বয়ং তার পিতা মহা ধনুর্ধর পার্থ অশ্ব সহ মণিপুরে উপস্থিত হয়েছেন।

বভ্রুবাহন মাতা চিত্রাঙ্গদাকে সে কথা জানিয়ে বললেন, যদিও আমি না জেনেই অশ্ব ধরেছি তথাপি ক্ষত্রিয় হিসেবে আমি এই অশ্ব ফেরত দিতে অপারগ, ক্ষত্র ধর্ম পালন করতে আমি যুদ্ধ করব এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রেই আমি পিতাকে আমার পরিচয় প্রদান করব, যুদ্ধ না করে তাঁর শরণ নিলে তিনি আমাকে হীন, কাপুরুষ ভাববেন। চিত্রাঙ্গদা বললেন, পুত্র আমি তোমাকে কখনও পিতার সঙ্গে যুদ্ধের অনুমতি দিতে পারি না, তবে তো লজ্জায় আমার জীবন ধারণ করা চলে না, তুমি এখনই নিজ ভুল স্বীকার করে পিতার শরণ নেবে, তাকেই পুত্র বলে যে পিতার সেবা করে; পিতৃলোকের সেবা করার অর্থ দেবতাদের প্রসন্ন করা এবং জেনো এই তোমার মাতৃ আজ্ঞা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বভ্রুবাহন বহু ধনরত্ন ও চন্দনশোভিত পুষ্প মালা সহ অশ্ব নিয়ে আত্ম পরিচয় দিতে গেছিলেন অর্জুন সকাশে।

সেখানে পেলেন জারজ বলে সম্ভাষণ এবং পদাঘাত। অর্জুন বললেন আমার পুত্র ছিল বীর অভিমন্যু, একা সে পুত্র যুঝেছিল সপ্তরথীর সাথে আর তুমি প্রথমে অশ্ব ধরে পরে ভয়ে এসেছ আমার শরণ নিতে। আমার ঔরসজাত পুত্রের কখনই এই আচরণ হতে পারে না।

 

দুই

চিত্রাঙ্গদা মনে মনে পিছিয়ে যান অনেকগুলো বছর। তখন তীর্থ যাত্রায় বেরিয়ে মণিপুর এসে পৌঁছেছেন কৌন্তেয় অর্জুন। নগরের পথে চিত্রাঙ্গদা দেখলেন অর্জুনকে এবং অর্জুন চিত্রাঙ্গদাকে, মোহিত অর্জুন রাজপ্রাসাদে এসে চিত্রাঙ্গদার পিতা রাজা চিত্রভানুর কাছে নিজ পরিচয় দিয়ে চিত্রাঙ্গদাকে বিবাহ ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। রাজা অর্জুনকে বললেন মহেশের বরে আমাদের বংশে একটিমাত্র সন্তানের জন্ম হয়, তাই শর্ত দিলেন যেহেতু চিত্রাঙ্গদা তার একমাত্র সন্তান এবং তাকে তিনি পুত্রবৎ পালন করেছেন, সেহেতু অর্জুন ঔরসে চিত্রাঙ্গদার জ্যেষ্ঠ পুত্রই হবে ভবিষ্যতে মণিপুরের সিংহাসনের অধিকারী। সেই শর্তে অর্জুন সম্মতি দিলে অর্জুন এবং চিত্রাঙ্গদার বিবাহ সম্পন্ন হয়। একবছর অর্জুন থেকে যান মণিপুরের রাজপ্রাসাদে চিত্রাঙ্গদার সাথে।সেই একটি বছর চিত্রাঙ্গদার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। হর্ষে, ক্রীড়ায় অতিবাহিত পার্থ সঙ্গর ফল স্বরূপ বভ্রুবাহনের জন্ম, আর তাকেই আজ অর্জুন অভিহিত করছেন নটীর সন্তান বলে!

এইসময় প্রতিহারিণী এসে চিত্রাঙ্গদা সমীপে সংবাদ দিল মহারাজ বভ্রুবাহন দর্শনপ্রার্থী। চিত্রাঙ্গদা তাকে আসতে বললেন। বভ্রুবাহন এসে চিত্রাঙ্গদাকে প্রণাম করে বললেন, মাতা, আমি জানি আপনি আগেই সমস্ত খবর পেয়েছেন। অশ্বমেধের ঘোড়া ধরবার পরেই আমি আপনাকে বলেছিলাম যে ক্ষত্রিয়র মতন যুদ্ধ না করে আমি ঘোড়া ফেরত দেব না, কিন্তু আপনার আদেশে আমি সিদ্ধান্ত বদল করেছিলাম আর তার ফলাফল আপনার সামনেই আছে। কাল যুদ্ধে আমি অর্জুনকে বোঝাব আমার যথার্থ পরিচয়। চিত্রাঙ্গদা বললেন, পুত্র ক্রোধে অন্ধ হয়ো না। অর্জুন সমরে দুর্জয়। ভীষ্ম, দ্রোন, কর্ণ যা পারেনি তা তুমি কীকরে করবে! স্বয়ং মহাদেব অর্জুনের যুদ্ধে তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর প্রদান করেছিলেন আর অর্জুনের সঙ্গে রয়েছেন স্বয়ং ভীমসেন, কর্ণপুত্র বৃষকেতু। বভ্রুবাহন হেসে বললেন মা তোমার আশীর্বাদে অসম্ভবকে সম্ভব করব। কাল ভীমার্জ্জুন বভ্রুবাহন যুদ্ধে লজ্জা পাবে, আমি আন্দাজ করতে পারি কর্ণপুত্র বৃষকেতু পিতার মুখ উজ্জ্বল করতে কাল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করবে কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতা আমি জয় করব। আপনি মন শক্ত করুন মাতা, কাল বভ্রুবাহন যুদ্ধে অর্জুনের নিস্তার নেই।

সেই সময় উলূপী, বভ্রুবাহনকে তার বিমাতা হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিলেন। বিস্মিত চিত্রাঙ্গদাকে উলূপী বললেন এই যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবি, সকলের মঙ্গলের জন্য এবং আত্মমর্যাদা রক্ষা করবার জন্য আমি বভ্রুবাহনকে অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার আদেশ দিচ্ছি।

চিত্রাঙ্গদা অনুভব করলেন এক গূঢ় তত্ত্বের যা অলঙ্ঘনীয় এবং বভ্রুবাহনকে আশীর্বাদ করলেন, কাল অর্জুন পুত্রর মতন যুদ্ধ করো, যাতে তোমার পিতা তোমার জন্য গর্বিত হতে পারেন। বভ্রুবাহন বিদায় নিলে চিত্রাঙ্গদা নির্বাক বসে থাকেন, ভাবেন কৃষ্ণসখা অর্জুনের বিনাশ নেই কিন্তু বভ্রুবাহনকে কাল যুদ্ধে কেউ জয় করতে পারবে না। তিনি নিজে একজন ধুরন্ধর যোদ্ধা হিসেবেই সেকথা বুঝতে পারছেন। অপমানিত বভ্রুবাহনের সামনে কারো নিস্তার নেই।

পরের দিন মহারণ শুরু হল বৃষকেতু বভ্রুবাহনে। যেন কর্ণ অর্জুন মুখোমুখি কুরুক্ষেত্রে। বহু যুদ্ধের পর অর্ধচন্দ্র বাণে বৃষকেতুর মাথা কেটে ফেললেন বভ্রুবাহন। অর্জুন বিলাপ করতে থাকলেন, কর্ণ শোক ভুলে ছিলাম বৃষকেতুকে দেখে, এখন আমি যুধিষ্ঠিরকে কী জবাব দেব! বভ্রুবাহন অর্জুনকে ডেকে বললেন, হে অর্জুন বিলাপ করো না, বৃষকেতু সম্মুখ সমরে প্রাণ দিয়ে ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করে স্বর্গে গেছে, তুমি নিজেকে রক্ষার উপায় করো। তোমার রথে কৃষ্ণকে দেখছি না, তাঁকে স্মরণ করো। তুমি আমাকে জারজ বলে গালি দিয়েছ, অথচ তোমাদের পাঁচ ভাই এর জন্ম বৃত্তান্ত সবাই জানে। কার পুত্র আর কাকে পিতা বলো! ক্রোধে অর্জুন গান্ডীব তুলে নিলেন, যুদ্ধ শুরু হল যেন পূর্বে রামের সঙ্গে লব কুশের যুদ্ধ। কিন্তু ক্রমশ অর্জুন বুঝতে পারলেন তার আজ রক্ষা নেই। মহাবলী ভীমসেনও আজ অজানা কারণে নিষ্প্রভ।

 

তিন

কিছুক্ষণ আগে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, বভ্রুবাহনের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে কর্ণ পুত্র বৃষকেতু ও বভ্রুবাহন জনক অর্জুনের। মাতা চিত্রাঙ্গদার ইচ্ছা পূরণ করেছেন বভ্রুবাহন, তিনি অর্জুন পুত্রর মতনই যুদ্ধ করেছেন এবং অর্জুন নিশ্চয়ই মৃত্যুকালে উপলব্ধি করে গেছেন বভ্রুবাহন তারই ঔরসজাত সন্তান। ভীম, অর্জুন, বৃষকেতুকে একত্রে যুদ্ধ জয় একমাত্র অর্জুন তনয়ের পক্ষেই সম্ভব। অদূরে প্রবল জয়োচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে তার সৈন্যদল, মণিপুরবাসী মুহুর্মুহু জয়ধ্বনি দিচ্ছে তার নামে, কিন্তু কিছুই স্পর্শ করতে পারছে না বভ্রুবাহনকে। এই কী ক্ষত্রিয়র জীবন! এই কী রাজধর্ম! কই কোনও আনন্দ তো হচ্ছে না যুদ্ধ জয়ের, কেন বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে অন্তর? যুদ্ধক্ষেত্রে শায়িত রয়েছে মহাবীর অর্জুন, সেই অনিন্দ্য সুন্দর পুরুষ, শিশুকাল থেকে রাজপুত্র বভ্রুবাহন ক্রীড়াচ্ছলে অস্ত্র চালনার সময়কাল থেকে অর্জুন হতে চেয়েছে, চিত্রাঙ্গদা তাকে বলেছেন পিতার মতন হতে হবে, অর্জুনের সমান বীর পৃথিবীতে নেই, অদেখা পিতার গর্বে গর্বিত হয়েছে বভ্রুবাহন আর আজ সেই পিতার মস্তক ভুলুন্ঠিত তার বাণে। বভ্রুবাহনের তো কোনো কৃষ্ণ সারথি নেই, তবে কে দেবে সান্ত্বনা তাকে পিতৃ বধে? ঐ যে শায়িত ভ্রাতৃসম কর্ণের নন্দন মহাযোদ্ধা বৃষকেতু, কে শোনাবে প্রবোধ বাক্য তাকে হত্যার! যুদ্ধকালে যখন গঙ্গাদেবি তার কাছে বাণবেশে এসে অর্জুন নিধনে পরামর্শ দিলেন, তখনই তো বভ্রুবাহন জেনেছেন গঙ্গার শাপে আজ তার হাতে অর্জুনের নিস্তার নেই। মাহেষ্মতীপুরের রাজা নীলধ্বজের পুত্র প্রবীর অশ্বমেধের ঘোড়া ধরলে, অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে তার মৃত্যু হয়। পুত্রশোকে রাজরাণী, ‘জনা’ গঙ্গার জলে দেহ ত্যাগ করেন। ক্রোধে গঙ্গা অর্জুনকে অভিশাপ দেন, পার্থ তোমার জন্য সতী কন্যা আত্মাহুতি দিল, ভীষ্মকে তুমি অন্যায় যুদ্ধে শিখন্ডিকে সামনে রেখে হত্যা করেছ, তার মৃত্যু হয়েছে পৌত্রের হাতে আর তোমারও মৃত্যু হবে নিজপুত্রের হাতে। বভ্রুবাহন ভাবে তবে কিসের জন্য তার জয় জয়াকার! এখন সে বুঝেছে গঙ্গা বাক্য সত্য করতে শ্রীকৃষ্ণ অনুপস্থিত থেকেছেন অর্জুনের রথে। কিন্তু কী হবে এইসব তত্ত্ব কথা বিচারে? কোন মুখে মাতা চিত্রাঙ্গদার সামনে দাঁড়াবে সে!

এখনও বভ্রুবাহনের অজানা তার বিমাতা উলূপী, অর্জুনের শাপমোচনের উদ্দেশ্যেই তাকে পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়েছিলেন। শিখন্ডিকে সামনে রেখে অর্জুন যখন অন্যায় যুদ্ধে ভীষ্মের পতন ঘটিয়েছিলেন, তখন বসুগণ (গঙ্গা দেবির আট পুত্র, তার মধ্যে একজন হলেন দেবব্রত ভীষ্ম) গঙ্গার সম্মুখে অর্জুনকে অখন্ড নরকবাসের শাপ দেন। সেই শাপ দানের কথা শুনে ফেলেছিলেন উলূপী, ভীত উলূপীর উপরোধে তার পিতা নাগরাজ, ‘কৌরব্য’ তখন বসুগণকে শাপ প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। বসুগণ তাকে জানান বভ্রুবাহনের সঙ্গে যুদ্ধে অর্জুন ভূশয্যা নিলে তার শাপমোচন হবে। গঙ্গাদেবির অর্জুনকে নিজপুত্রের হাতে মৃত্যুর অভিশাপও নরকবাস থেকে রক্ষা পেতে আদতে অর্জুনের জন্য শাপে বর হয়েছিল।

অদূর ভবিষ্যতে বভ্রুবাহন বিমাতা উলূপীর পরামর্শে পাতাল প্রবেশ করে নাগরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে অমৃত মণি নিয়ে আসবেন, শ্রীকৃষ্ণের মণিপুরে আগমন ঘটবে এবং তিনি স্বয়ং অমৃত মণির স্পর্শে অর্জুন এবং বৃষকেতুর পুনর্জীবন দান করবেন। কিন্তু সেসবই অনতিদূরে হলেও এখনও কালের গর্ভে, বভ্রুবাহনের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।

এই মুহূর্তে বভ্রুবাহন বিস্মৃত হলেন তিনি রাজা, ক্ষত্রিয় বীর। এখন তিনি শুধুই একজন হতভাগ্য পুত্র, যার হাতে মৃত্যু হয়েছে পিতার, যাকে সদ্য স্বামীহারা শোকগ্রস্তা মাতার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, যার বৈধব্যর কারণ সে নিজে। চোখের জলে কখন তার বুক ভেসে গেছে, হাজার জনতার জয়ধ্বনি সেই জল লক্ষ্য করে না, বভ্রুবাহন চিত্রাঙ্গদার প্রাসাদের দিকে পা বাড়ান, দীন-হীন ও রিক্ত।

 

পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top