সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ট্রাপ : উজ্জ্বল সামন্ত


প্রকাশিত:
৭ জানুয়ারী ২০২১ ২২:০৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৯

 

অনন্যা সুন্দরী ও আধুনিকা। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ফটোশুটের অ্যালবাম একজন স্বনামধন্য ডিরেক্টরের কাছে পাঠায়‌ বন্ধুর পরামর্শে। ডিরেক্টর ফোন করে ডেকে পাঠায় ঘরে। অনন্যা পৌঁছায়। কথাবার্তা হয়। 

মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: আপকো মে জরুর চান্স দুঙ্গা। লেকিন এক বাত হে
অনন্যা: জরুর স্যার।  আপ জো বলো গে মে করুঙ্গি।
মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: সোজ সমঝকর বোল রহি হো না ।
অনন্যা: হ্যা স্যার। 
মিস্টার ঝুনঝুনি ওয়ালা : আপ 30 অক্টোবর কো ইস পতে পর পহুচ জানা । আপকা ফাস্ট স্যুট হ্যায়। 
অনন্যা: ঠিক হে স্যার। মে চলতি হু।

নির্দিষ্ট দিনে  সময় মতো শুটিংয়ের ফ্লোরে পৌঁছায় অনন্যা।
অনন্যা দেখে শুটিংয়ের জন্য সেট রেডি। মেকআপ সেরে তিন ঘন্টায় তিন চারটি শর্ট হয়। 
প্রথম দিনের প্রথম সুট ভালো ভাবেই শেষ হয় নায়িকার ভূমিকায়।
মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: আপকা নেক্সট সুট ফরেন মে হো হোগা।
আপকে পাস টিকিট, ভিসা অর কুছ ডলার পহচ জায়েগা।
অনন্যা খুব খুশি। নির্দিষ্ট দিনে  এয়ারপোর্টে পৌঁছে ফ্লাইট ধরে গন্তব্যে পৌঁছেয়।
মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা এয়ারপোর্টে রিসিভ করে ওকে একটা হোটেলে নিয়ে যায়। ড্রিংস এর সঙ্গে কিছু নিয়ে মিশিয়ে খাইয়ে দেয়।অনন্যা বুঝতে পারে না যে এটা একটা ট্রাপ। 

নেশার ঘোরে অনন্যা বুঝতে পারে কেউ ওর মর্যাদা  হানি করছে। তার শরীরে তীব্র যন্ত্রণা র অনুভব করছে। কিন্তু বাধা দিতে পারছেনা। নেশার ঘোরে বারবার বলতে থাকে মুঝে ছোড় দিজিয়ে । মেরে সাথ আপ ইয়ে কিউ কর রহে হে। যন্ত্রণায় কাতর হতে হতে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

অনন্যা জ্ঞান ফিরলে  বুঝতে পারে যে ও অন্য একটা ফ্ল্যাটে আছে। একজন ফিমেল সার্ভেন্ট রয়েছে। আর কেউ নেই। অনন্যা অনুভব করে একটা ট্রাপ পড়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি ওর মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা কে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। বিদেশে একা আসাও ঠিক হয়নি ।নায়িকা হওয়ার লোভ তাকে এত বড় বিপদে ফেলবে, এটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি।

অনন্যা অনেক চেষ্টা করে বাড়ি সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কিন্তু প্রতিবার বিফল হয়।

লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যার চেষ্টা করতেও যায় কিন্তু এখানেও বিফল হয় মেড সার্ভেন্ট এর কড়া নজরদারিতে।

 

মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা ওকে এইভাবে আটকে রাখে বেশ কয়েক মাস। অনন্যা মুক্তির জন্য কাতর প্রার্থনা করলেও কেউ আমল দেয়নি। সার্ভেন্ট সব সময় ওর পাশে থাকে । অনন্যা গর্ভবতী হয়েছে। যদিও এই সন্তান অবাঞ্চিত অনন্যা চায়ও নি। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই সারাক্ষণ নজরবন্দি। বিদেশি ডাক্তার এসে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। অনন্যার প্রেগনেন্সিতে বেশকিছু কম্প্লিকেশনস রয়েছে। ডাক্তার ফোনের অপর দিকের ব্যক্তি কে বলেন। মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা দ্যা লেডি হ্যাভ কম্প্লিকেশনস।

প্রসব বেদনা উঠলে ডেলিভারি টাইমে ওটি থেকে ডক্টর এসে জানায় যেকোনো একজন প্রাণে বাঁচবে! মা অথবা সন্তান। 
ডক্টর: মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট
বেবি অর মাদার?
মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: অফকোর্স বেবি। 

কিছুক্ষণ পর একটি বাচছার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। নার্স এসে বাচ্চাটিকে ঝুনঝুন ওয়ালার  কোলে দেয়।
এবং জানায় যে তাঁর স্ত্রী মারা গেছে। অনন্যা কে  স্ত্রী ভেবেছিল।

 একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিল অনন্যা।

মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি। মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা নবজাতককে কোলে নিয়ে খুব খুশি।

মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা স্ত্রী বিয়ের  দু বছর পর অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।  ঝুনঝুন ওয়ালার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তার প্রেমিকের সঙ্গে। সেই থেকে ঝুনঝুনওয়ালা কোন মেয়েকে বিশ্বাস করে না। তাঁর স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার খবর কেউ জানেনা, গোপন রাখেন তিনি।

কিন্তু তার এই অগাধ সম্পত্তি ও বংশ রক্ষা কে  করবে? অথচ তিনি পুনরায় বিয়েও করতে চান না।  উপায় সারোগেট মাদার। কিন্তু ঝুনঝুনওয়ালার একটা সামাজিক স্ট্যাটাস আছে।

তাই তিনি মনে মনে প্লান করেন... 
 শেষমেষ ঝুনঝুনওয়ালার ইচ্ছা এতদিনে পূর্ণ হয়। 
আর অনন্যা! 
ওর মৃত্যুতে হয়তো এই অভিশপ্ত জীবন, ঝুনঝুনওয়ালার ট্রাপ থেকে থেকে চিরমুক্তি পায় ...

 

উজ্জ্বল সামন্ত
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top