সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

প্রভাবতী দেবী স্বরস্বতী: নারী গোয়েন্দার অমর স্রষ্টা : ড. আফরোজা পারভীন


প্রকাশিত:
১ এপ্রিল ২০২১ ২১:০০

আপডেট:
১ এপ্রিল ২০২১ ২১:০৬

ছবিঃ প্রভাবতী দেবী স্বরস্বতী

 

প্রভাবতী দেবী ছিলেন তাঁর সময়ের দুর্দান্ত জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ঘরে ঘরে পঠিত হতো তাঁর বই। বিশেষ করে নারীরা ছিলেন তাঁর একনিষ্ঠ পাঠক। অনেক নারী লুকিয়ে তাঁর বই পড়েছেন পারিবারিক শাসনে। কারণ তিনি নারীদের জাগাতে চেয়েছিলেন। বঞ্চিত নারী সমাজের কথাই বলে গেছেন তিনি তাঁর লেখায়। তুলে ধরেছেন সমাজের নিপীড়িত নিগৃহীত নারীদের কথা। বলেছেন নারীর বুদ্ধিমত্তা, শক্তিমত্তার কথাও। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন আমৃত্যু।  নারীকে   শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। নারী শিক্ষার জন্য করে গেছেন অসাধারণ কিছু কাজ।

এ প্রজন্ম সেভাবে জানে না প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর নাম। বর্তমান প্রজন্ম তাঁকে একেবারেই চেনে না বললে চলে।

প্রভাবতী দেবী জন্মেছিলেন ১৯০৫ সালের ৫ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙার খাঁটুরা গ্রামে মামার বাড়িতে। বাবা গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবী ছিলেন । মাত্র ন’বছর বয়সে বিভূতিভূষণ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় প্রভাবতীর। মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়েছিল ছোট্ট প্রভাবতীর। হয়ত বলেও ফেলেছিলেন সে কথা। কিংবা তাঁর আচার আচরণে বুঝে ফেলেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁর সেই কষ্ট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য হয়েছিল শ্বশুরবাড়িতে। হতে পারে বয়স ন’ বছর। কিন্তু তিনি তো আপসহীন প্রভাবতী। নির্মমতা, অন্যায় মেনে নেয়া তাঁর ধাঁতে নেই। দ্বিতীয়বার না  ভেবে সোজা মাঠঘাট ভেঙে ফিরে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে, পুরোনো ঠিকানায়।  চিরতরে সম্পর্ক বিচ্ছেদ। বাবাও আর মেয়েকে ফেরানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু এই ঠিকানাও  বেশিদিন রইল না। কিছুদিন পর  ঠিকানা বদল হলো। ঠিকানা বদল হলো ভাইয়ের পড়াশোনার জন্য। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের সংসারে বোনের স্কুলের গন্ডি পেরোনোর চেয়ে ভাইয়ের কলেজে ভরতি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল অভিভাবকদের কাছে। তাই এই ঠিকানা বদল।

 

 প্রভাবতী দেবীর প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। কিন্তু খুব অল্প বয়সেই পিতার উৎসাহে কীটস, শেলী, বায়রনসহ অনেক কবির কবিতা পড়ে ফেলেন তিনি।

১১ বছর বয়সে তত্ত¡মঞ্জরী পত্রিকায় প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘গুরুবন্দনা’। প্রথম গল্প ‘টমি’ অর্চনা পত্রিকায় ১৯২২ সালে প্রকাশ পায় । ১৯২৩ সালে তাঁর প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস ‘বিজিতা’ প্রকাশিত হয় জলধর সেন সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকায়। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা, হিন্দি ও মালয়লম ভাষায় যথাক্রমে ‘ভাঙাগড়া’, ‘ভাবী' ও ‘কুলদেবম্’ নামে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। বাংলায় ‘ভাঙাগড়া’ ও হিন্দিতে  'ভাবী' চলচ্চিত্র খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে।

 সেই সময় তাঁর ‘ইন্টারন্যাশনাল সার্কাস’ ছোটদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। তাঁর উপন্যাস পথের শেষে 'বাংলার মেয়ে' নামে নাটক হয়েছে। সাফল্যের সাথে মঞ্চস্থ হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

তিনি বাঁশরী, সারথি, উপাসনা, উদ্বোধন, সম্মিলনী, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় লেখালিখি করতেন।

তিনশোরও বেশি বই রয়েছে প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, গান, গোয়েন্দা কাহিনি। সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী গোয়েন্দা চরিত্রের স্রষ্টাও এই প্রভাবতীই। গোয়েন্দা চরিত্র কৃষ্ণা তাঁর অনন্য সৃষ্টি। মাত্র নয় বছর বয়সে স্বামীর বাড়ির কঠিন শিকল ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন যে নারী তিনিই করেছিলেন এই দুঃসাহসী চিন্তা।

কৃষ্ণা সিরিজের কৃষ্ণা নামের একটি মেয়ে ডিটেকটিভের সাহস ও দক্ষতা নিয়ে তিনি অনেকগুলি বই লিখেছিলেন। প্রখন দূরদৃষ্টির কারণে সেই সময়ের কৃষ্ণা আজকের যুগের সাহসী ও স্মার্ট নারীর সমতুল্য হয়ে উঠেছে। আজও এ চরিত্র সমসাময়িক এবং প্রাসঙ্গিক।

নারী স্বাধীনতা, নারীর জীবন সংগ্রাম, শিক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি অমৃত্যু কাজ করেছেন। তাঁর লেখায় বার বার নারীর অবস্থাই উঠে এসেছে। ‘পল্লীসখা’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে প্রভাবতী লিখছেন “ মেয়েদের শাসন আমাদের দেশে বড়ই কড়া। তাহাদের অতি শিশুকাল হইতেই কঠোর শাসনের তলে থাকিতে হয়। যে সময়টা বিকাশের, সে সময়টা তাহাকে বন্ধ করিয়া রাখা হয়। ...অন্য দেশে যে সময়টা বালিকাকাল বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে, আমাদের দেশের মেয়েরা সেই সময়ে গৃহের বধূ, অনেক সময়ে সন্তানের মা।” নিজের ছোটবেলার জন্য কি বারবার আক্ষেপ হত প্রভাবতীর!!

ন’বছর বয়সে শ্বশুরবাড়ি  ছেড়ে পিতার বাড়িতে এসেছিলেন। সে ঠিকানাও বদলে গিয়েছিল ভাইয়ের কারণে। বারবার এমন ছেড়ে যাওয়া আর ঠিকানা বদলে কোনোই বক্তব্য রাখার সুযোগ ছিল না মেয়েদের। মুখ বুজে সব মেনে নিতে হতো। এই বাধ্যতাই হয়তো তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিল মেয়েদের নিজের ঘর গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। তাই চলতি ছক ভেঙে তাঁর কলমে বারবার উঠে এসেছে শিক্ষিতা, কর্মপটু, স্বয়ংসম্পূর্ণ মেয়েদের ছবি। যার গভীরে দৃষ্টি ফেললে  বোঝা  যায় ধরা বাধা নিয়ম ডিঙিয়ে এই লেখক পৌঁছোতে চাইছেন নারীর অনাশ্রয় আর সহায়হীনতার ইতিহাসে। গড়তে চাইছেন তাদের আশ্রয় আর নিজস্ব ইতিহাস। নিজের জীবনের কষ্টের  অভিঘাত মনে রেখে পরম্পরা ভাঙতে চেয়েছিলেন প্রভাবতী। নারীকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন সমাজ নামের নিষ্ঠুর নিয়তির প্রতারণা থেকে। তাই তাঁর কলমে উঠে আসছিল কর্মক্ষম বুদ্ধিদীপ্ত কর্মক্ষম নারীর ছবি। আর এই প্রণোদনা থেকেই হয়তো জন্ম গোয়েন্দা কৃষ্ণা আর শিখার।  নিজের জীবন-অভিজ্ঞতায় মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তিনি বুঝেছিলেন হাড়ে হাড়ে, চিনেছিলেন নির্মম সমাজকে। সেই কষ্ট সেই বঞ্চনা অবচেতনে তাঁকে সাহস জুগিয়েছিল নিশ্চয়ই। তাই তাঁর হাত থেকে পাই আত্মপ্রত্যয়ী নারীচরিত্র কৃষ্ণা আর শিখা।

উনিশ শতকের প্রৌঢ়ত্বে বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দাকাহিনি বলে একটি নতুন জঁরের জন্ম হয়। কিন্তু গোয়েন্দার ভূমিকার ছিল পুরুষেরাই। গোয়েন্দার ভূমিকায় মেয়েদের অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা এই প্রথম প্রভাবতীর হাতে। তখন ধারণা করো হতো গোয়েন্দাসুলভ বুদ্ধি বা শারীরিক সক্ষমতা কেবল পুরুষেরই আছে, পুরুষরাই পারে গোয়েন্দা হতে। নারী অক্ষম। এই অনড় মিথের শিকড়ে আঘাত  হেনেছিলেন প্রভাবতী। পূর্বপ্রচলিত ওই ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলা গোয়েন্দাসাহিত্যের দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলেন নারী গোয়েন্দা সৃষ্টির মাধ্যমে। এ জাগরণ শুধু নারীর ছিল না, ছিল সমাজেরও। ‘আকস্মিক বিপদে পড়ে শুধু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে কেমন করে উদ্ধার পেতে পারেন মেয়েরা, এ বইয়ে রয়েছে তাঁর ইঙ্গিত’। ‘শুকতারা’-র  বৈশাখ, ১৩৫৯ সংখ্যায় সিরিজ প্রবর্তনের এই বিজ্ঞাপনটিই ছিল। এ বিজ্ঞাপন এতদিন ধরে  সমাজ লালিত মেয়েদের বুদ্ধিহীনতার মিথকে নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আর ‘মহিলা গোয়েন্দা’ বিষয়টিই তখন ছিল প্রায় অচেনা। তাই এ ধরণের লেখা ছিল বড় ঝুঁকি। কিন্তু সেকালে এই ঝুঁকি নেওয়া  বিফল হয়নি। বিফল হয়নি তা বোঝা যায় অব্যবহিত পরেই মেয়ে গোয়েন্দা অগ্নিশিখা রায়কে নিয়ে প্রভাবতী দেবী আরও একটি সিরিজ লেখেন। লেখক জানান- “শুধু ছেলেদের ছাড়া মেয়েদের ‘অ্যাডভেঞ্চারে’র বই এ পর্যন্ত কেউ লেখেন নি। এই কারণেই ‘কুমারিকা সিরিজের’ আবির্ভাব। কোন আকস্মিক বিপদ এলে কলেজের মেয়েদের যা করা প্রয়োজন, ‘কুমারিকা সিরিজ’ পড়লেই তার ইঙ্গিত পেয়ে যাবে।”

উপযুক্ত ব্যায়ামের ফলে সুগঠিত চেহারা, মাতৃভাষা ছাড়াও পাঁচ-সাতটা ভাষায় অনর্গল বাক্যালাপের দক্ষতা, অশ্বারোহণ, মোটর চালানো, কৃষ্ণা ও শিখার গুণাবলীর তালিকা কমবেশি একই। একজন যেমন মা-বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে অকুতোভয়, অন্যজন অনায়াসে অপরের হুকুমের পরোয়া না করে নিজের শর্তে জীবনে বাঁচার ঘোষণা করে। সেদিনের নারী নয়, নারী যা হয়ে উঠতে পারে, ছাত্রীদের সামনে সেই আগামীর মডেল উপস্থিত করতে চেয়েছিলেন চিরন্তনী শিক্ষিকা প্রভাবতী দেবী। তাঁর ধারণার আদর্শ নারী গড়ে তোলার তাগিদেই কৃষ্ণার জবানিতে জানিয়েছিলেন- “ মেয়েরাও মানুষ মেসোমশাই! তারাও যে শিক্ষা পেলে ছেলেদের মতোই কাজ করতে পারে, আমি শুধু সেইটাই দেখাতে চাই। চিরদিন মেয়েরা অন্ধকারে অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে, আমি তাদের জানাতে চাই, পিছিয়ে নয়- সামনে এগিয়ে চলার দিন এসেছে, কাজ করার সময় এসেছে,- মেয়েরা এগিয়ে চলুক, তাদের শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিক।”

এমন মেয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রভাবতী। সেই স্বপ্ন মেয়ের বাস্তবায়ন করেছিলেন গোয়েন্দা সিরিজে। স্বপ্ন বলেই লাগাম ছিল না তাতে। ছিল আতিশয্য আর অতিনাটকীয়তা। মেয়েদের সম্বন্ধে প্রচলিত দীর্ঘদিনের নির্বুদ্ধিতার মিথ ভাঙতে পারলেও ভাঙা সহজ ছিল না পিতৃতন্ত্রের শিকল ভাঙা। কৃষ্ণা সিরিজের বিজ্ঞাপনে সদ্যস্বাধীন দেশের ‘মা- বোন’দের পরমুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বনির্ভরতার ডাক দিয়েছিলেন। কৃষ্ণাকে দিয়ে ‘ স্বৈরাচারী দুর্বৃত্ত নরপশুদের কবল থেকে’ তার ‘নারীধর্ম্ম’ বজায় রাখার পবিত্র কর্তব্যটি বরাবর সম্পাদন করে যান লেখিকা। তখনকার দিনে  ভালো মেয়ের আবশ্যিক শর্ত, ছিল ‘চরিত্ররক্ষা’। সময়ের চাহিদাকে মান্য করেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন প্রভাবতী দেবী।

 প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর বলিষ্ঠ লেখনী সেই সময় খুব নাম করেছিল।  প্রধানত সামাজিক বিষয় নিয়ে তিনি লিখতেন। হিন্দু ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধও পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। 

সমাজসেবা ও দেশপ্রেমের গভীর স্বাক্ষরও রয়েছে তাঁর লেখায়। ওই অঞ্চলে সরোজ নলিনী নারী মঙ্গল সমিতির শাখা কেন্দ্রের সভানেত্রী ছিলেনতিনি। ‘বিপ্লবীর স্বপ্ন’ উপন্যাসটি প্রভাবতীর স্বদেশপ্রেমের সাক্ষ্য বহন করে।

প্রভাবতী দেবী নিজের পায়ে দাঁড়ানের প্রয়োজন বোধ করেছিলেন । তাই  ব্রাহ্ম গালর্স ট্রেনিং কলেজ থেকে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট অর্জন করে উত্তর কলকাতার সাবিত্রী স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উদ্যোগে তিনি কলকাতা পুরসভা পরিচালিত বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

নিজ গ্রাম খাঁটুরার ‘বঙ্গ বালিকা বিদ্যালয়’ যখন বিলুপ্তির পথে তখন প্রভাবতী দেবী নিজের প্রতিভা ও কর্মদক্ষতায় তাকে ‘খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয়’ নামে পুনরুজ্জীবিত করে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সাবিত্রী দেবী স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য লাভ করেন। কবিগুরু তাঁকে সাহিত্য রচনাতে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন। শোনা যায়, তাঁর ‘মাটির দেবতা’ উপন্যাসটি লেখার পিছনে রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং উৎসাহ ছিল। পরে তিনি ছোট বোন হাসিরাশি দেবীকেও কবির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। হাসিরাশিও ভাল লিখতেন, ছবিও আঁকতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘চিত্রলেখা’।

প্রভাবতী দেবী এতখানিই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তাঁর নাম নকল করে বাজারে প্রচলিত উপন্যাসের বাড়াবাড়ি আটকাতে তাঁকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছিল। সেই জনপ্রিয়তার কারণেই দেব সাহিত্য কুটীরের বিখ্যাত দুটি সিরিজ ‘প্রহেলিকা’ ও ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’- তে তাঁর সৃষ্ট কৃষ্ণা চরিত্রের সাফল্য, প্রকাশককে একখানা সম্পূর্ণ ‘কৃষ্ণা’ সিরিজ প্রকাশে আগ্রহী করেছিল।

প্রভাবতী দেবীর নামের সঙ্গে ‘সরস্বতী’ যুক্ত ছিলো না। তাঁর অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবদ্বীপের পন্ডিতসমাজ তাকে ‘সরস্বতী’ উপাধি দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘লীলা পুরস্কার’ পান।

যে প্রভাবতী দেবী সরস্বতী স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেননি তিনিই লিখেছিলেন তিনশোরও বেশি বই। উৎসাহ সাহস আর অধ্যাবসায়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত প্রভাবতী। তাঁর বই রঙ্গমঞ্চ আর চলচ্চিত্রেও রূপায়িত হয়। যোগাযোগ ছিল ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে। আগে যখন আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষার অভাব ছিল তখন অনেকেই ঘর সংসারের ফাঁকে ফাঁকেই সাহিত্যসাধনা চালাতেন। সেইসব সাহিত্যিকদের আবেগঘন সৃষ্টি পাঠকসমাজকে একসময় অভিভূতও করে তুলেছিল। কিন্তু আজ তাঁরা বিস্মৃত প্রায়। প্রভাবতী বেঁচে আছেন তাঁর অমর সৃষ্টিতে। কিন্তু ক’জন মনে রেখেছে তাঁর কথা! এ প্রজন্মের ক’জন জানে তাঁর কথা!

গলব্লাডারের অসুখে ভুগে কলকাতার পাতিপুকুরে নিজ বাসগৃহে ১৯৭২ সালের ১৪ই মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অমর লেখক। সশ্রদ্ধ সালাম জানাই তাঁর প্রতি।

 লেখক: কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, কলামলেখক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top