সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারে প্রসার (রম্য গল্প) - সত্যজিৎ বিশ্বাস


প্রকাশিত:
২ এপ্রিল ২০২১ ০১:২৮

আপডেট:
২ এপ্রিল ২০২১ ০১:২৯



‘আপু, আপনার হাতের বইটা নিতে পারেন। আমি পড়ে দেখেছি।’ কথাটা শুনে ভুরু কুঁচকে তাকাল অবনী।
বইমেলা তাঁর খুবই প্রিয় জায়গা। প্রতিবারের মত এবারও বইমেলায় শাড়ি পড়ে এসেছে। কিন্তু সাথে যার থাকার কথা সেই রিমন একটু আগে ফোন করে জানালো সে ফ্যাবিকলের আঠার মত আটকে আছে আগারগাঁও এর জ্যামে। সেই আঠা কখন ছুটবে ঠিক নেই।
খিঁচরে যাওয়া মেজাজ নিয়ে অবনী দাঁড়াল বইয়ের একটা স্টলের সামনে। একটা বই খুলে এক পৃষ্ঠা পড়ে দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টাতে যাবার সময় ঘটলো ঘটনাটা। একা একা বইমেলায় ঘুরতে হচ্ছে বলে এমনিই মন খারাপ তার উপর এই উটকো আহ্বানে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে পাশে দাঁড়ান বেঢপ লম্বা পাঞ্জাবী পড়া লোকটার দিকে তাকাল।
- আপনি কি এই স্টলের বিক্রেতা?
- জ্বি না। আসলে হয়েছে কি...
- আপনার আসলে কি হয়েছে, সেটা শুনে আমি কি করব?
- তা ঠিক।
- কোন বই ভালো, কোন বই খারাপ, আপনার কাছে কি সাজেশন চেয়েছি?
- জ্বি না।
- আমি যদি এই বইটা দুই পৃষ্ঠা পড়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিই বইটা নেবো কি নেবো না, আপনার কি কোন সমস্যা আছে?
- না, মানে আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না পি¬জ।
- আপনাকে তো চিনিই না, এখানে বোঝাবুঝির কি আছে? ভুল বোঝা তো অনেক পরের কথা।
- পি¬জ, আপনি আগে আমার কথাটা শুনুন। বইটা হাতে নিয়েই একটু সাইডে আসুন বুঝিয়ে বলছি।
- আশ্চর্য্য তো, কোথাকার কোন উটকো লোক আপনি, আমাকে বলছেন সাইডে আসতে?
- আপু পি¬জ বোঝার চেষ্টা করেন, আমার কথাটা একটু শোনেন। পি¬জ, স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট কোরেন না।
- আচ্ছা? এলাম সাইডে। এবার বলেন, আপনার কথা শুনতে হবে কেন? আপনার সমস্যাটা কি?
- আমার কেন সমস্যা থাকবে? আমার কোনই সমস্যা নেই।
-তাই? একা কোন মেয়ে দেখলেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাওয়া কোন সমস্যা না?
- আপনি আমাকে যা ভাবছেন, আমি তা না। আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি।
- ওরে বাবা, এরমধ্যেই আমি আপনাকে নিয়ে কি ভাবছি, সেটা বুঝে ফেলেছেন? বুক রিডার থেকে মাইন্ড রিডার হয়ে গেছেন নাকি? গুড, ভেরি গুড। তা, এই লাইনে কতদিন ধরে?
- বিশ্বাস করুন আপু, আপনি আমাকে সেই তখন থেকেই ভুল বুঝে যাচ্ছেন।
- ওমা, তাই নাকি? তা আপনি আমার পেছন পেছন ফলো করে কখন থেকে কিছু বোঝার চেস্টা করছেন?
- তারমানে?
- তারমানেও বোঝেন না? আচ্ছা, তাও বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি যখন দেখলেন, আমি একা একা বইয়ের স্টলে স্টলে ঘুরছি তখনই তো টার্গেট করেছেন, তাই না?
- বিশ্বাস করুন, আমি এই স্টল ছেড়ে কোথাও যাইনি। এখানেই ছিলাম।
- এখানেই ছিলেন কেন? এ স্টলের কারো সাথে খাতির আছে। তাই না?
- জ্বি।
- ওরা আপনাকে শেল্টার দেয়, তাই না?
- জ্বি। না, মানে জ্বি না।
- খবরদার, আপনি একদম নড়বেন না। নড়লেই কিন্তু চিৎকার দিয়ে লোক ডাকবো। এ দেখি পুরা একটা গ্যাং। বইমেলায় স্টল খুলে এসব হচ্ছে? আমি পুলিশ ডাকছি। আজ সবার খবর করে ছাড়ব।
- আপু, পি¬জ আমার মান সন্মান ডোবাবেন না।
- ওরে বাবা, আবার মান সন্মানের ভয়ও আছে? আলগা ভাব নিয়ে পরিচয় জমানোর সময় এসব কথা মনে থাকে না?
- ওয়াদা করলাম, আর জীবনেও অপরিচিত কোন মহিলার সাথে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে যাবো না।
- কী, আমি মহিলা?
- তাহলে আপনি কি? না মানে, আপনি কি বললে খুশি হন?
- চুপ, একদম চুপ। আমি আগে ওকে ফোন করছি। একদম নড়বেন না বললাম।

অবনী রিমনের সাথে মোবাইলে কথা শেষ করে ঘুরে দেখে সেই পাঞ্জাবীওয়ালা আর নেই। রাগে গজগজ করতে করতে স্টলের সামনে এসে হাতের বইটা দেখিয়ে স্টলের বিক্রেতা দুজনকে জিজ্ঞাসা করল, একটু আগে এই বইটা নিয়ে আমার সাথে যে ছোটলোকটা কথা বলছিল, সে কই?

দুজন, দুজনের দিক হা করে তাকিয়ে আছে দেখে অবনী আবার বলল, চালাকির চেষ্টা করবেন না। সেই লোকটা বলেছে আপনারা খুব ভালো করেই চেনেন ওকে। বলুন, সেই লম্বা পাঞ্জাবীওয়ালা কই? নাহলে কিন্তু পুলিশ ডাকবো। এবার একজন মুখ খুলল, ও আপনি শাহীন ভাইয়ের কথা বলছেন? আপনার হাতের বইটা তো উনিই লিখেছেন। বইয়ের ব্যাক কাভারে দেখুন, ওনার ছবিসহ বায়োডাটা আছে।
হাতের বইটা উল্টাতে উল্টাতে শেষ পৃষ্ঠায় আসে অবনী। ছবিটা দেখে জিহ্বায় কামড় দিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। তারপর মুচকি হেসে বলে, দেখুন তো, দাম কত আসে বইটার?
অবনী বইটা নিয়ে চলে যেতে যেতে একবারও স্টলের পাশের নারিকেল গাছটার দিকে তাকায় না। তাকালে দেখতে পেত ওটার পেছন থেকে উঁকি দিয়ে তাকে ফলো করছে লম্বা পাঞ্জাবী পড়া এক মুখ।


---
সত্যজিৎ বিশ্বাস
রম্য লেখক ও শিশু সাহিত্যিক
* রম্য বিভাগীয় সম্পাদক- কিশোর বাংলা
* নির্বাহী সম্পাদক- কিশোরকাল

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top