সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সিগারেট এবং একটি দিনের সমাপ্তি : কাজী খাদিজা আক্তার 


প্রকাশিত:
৭ এপ্রিল ২০২১ ২০:০৮

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩১

 

বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হব। সরাইল বিশ্বরোড।এজায়গাটা সবসময় ব্যস্ত থাকে।তিনটি রাস্তার সংযোগস্থল। গাড়ি লাইন ধরে আছে।মনে হচ্ছে সময় লাগবে।দাড়িয়ে আছি। ৬৫-৭০ বয়সের একজন মহিলা পাশে এসে দাঁড়ালেন। জিজ্ঞেস করলাম, 

- রাস্তা পার হবেন?

- হ,মা।

- আচ্ছা, আমার হাত ধরেন,আমার সাথে পার হবেন।

- আইচ্ছা। 

অন্যদিনের থেকে রাস্তার অবস্থা আজ আরও জটিল এবং সাথে আরও একজন আছে, কাজেই সতর্কতার পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়া উচিত। রাস্তা পার হলাম এবং বৃদ্ধ মহিলাকে মাধবপুরের বাসে উঠিয়ে দিলাম।তিনি আমার হাত ধরে বললেন, আল্লা তোমারে বাচাক মা।কিছুপর আমি একটি সিএনজিতে উঠে বসলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। পাশে একজন ভদ্রলোক। আরও একজন এসে দাঁড়ালেন। হাতে জলন্ত  সিগারেট। আমাকে দেখে উনি সামনের সিটে বসে যেতে চাইলেননা।কারণ টাকায় কিনা সিগারেটটা না খেয়ে ফেলে দিতে হবে এবং ম্যাডাম পরিচিত।আমি বললাম আপনি বসেন।উঠে বসলেন। তিনিও একজন সিএনজি ড্রাইভার। প্রায় প্রতিদিনের যাওয়া আসায় অনেক ড্রাইভারদেরই চেনা আছে। আমি বললাম,

- দিনে কয়টা সিগারেট খান?

- এই আফা চাইর পাশটা।

-কি উপকারে আসে?

(তিনি হাসলেন)

-না,মাইনে আফা। সইলডা বাল্লাগে।গাড়ি চালাইয়া আরাম পাই।

-এখন খাচ্ছেন না কেন?

-এইযে ফালাই দিছি, অহন আর খামুনা।

- ভালো কথা। এখন থেকে দিনে দুটা সিগারেট কম খাবেন। এবং এভাবে আস্তে আস্তে একেবারে ছেড়ে দিবেন। তাহলে যতদিন বাঁচবেন ততদিন বউ ছেলেমেয়েদের সাথে সুস্থভাবে বেঁচে থাকবেন। আপনি ভালো থাকলে ওরাও ভালো থাকবে।

-হ, আফা ঠিকই কইছেন।একবারেতো আর পারুমনা, আস্তে আাস্তেই ছাইড়া দিমু।

এবার সিএনজি স্টার্ট করতে করতে ড্রাইভার সাহেব বললেন,

- আর কইয়েন্না আফা এই গু না হাইলে হেরার জুইত অয়না। না হাওয়েনের লাইগ্গা কতো যে বুজাই, ক্যাডা হুনে কার কতা।

ড্রাইভার সাহেবের 'জুইত'কথা শুনে "পদ্মা নদীর মাঝি" -র কুবেরের সেই কথাগুলো মনে হলো-" হালা মাছ দইরা জুইত নাই, আইজকার মতো শেষ, ইকটু জিরাই লই, গণসা তামুক বাইর কর।"

 

কলেজ টাইম শেষ করে সরাইল উপজেলায় গেলাম। সেখানে ইউএনও সাহেবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা আছে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে। বসে আছি। মহোদয়ের জন্য অপেক্ষা। পাশে শ্রদ্ধেয় স্যার। সিগারেট শেষ করে এসে বসলেন। শরীরটা ভালো নেই। একটু পরপর কাশছেন। মনে হচ্ছে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। বললাম,

- স্যার শরীরটা ভালো নেই?

- এই একটু কাশি আরকি।

- আপাতত কয়েকদিন সিগারেটটা খাবেননা স্যার।

কষ্ট পাচ্ছেন।কি হয় না খেলে? ছেড়েদিন স্যার, কত কিছুইতো জীবনে ছেড়ে দিতে হয়। আর এটাতো সামান্য সিগারেট। 

স্যার কিছুই বললেন না।মাঝে মাঝেই আমি স্যারকে বলি।তিনি কিছু বলেননা। হয়তো ভাবেন, ছেড়ে দিতেইতো চাই, কিন্তু পারিনা…

 

বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে একটু সপিং এ বের হলাম।মেয়ের জন্য বই আর টুকটাক কিছু কেনাকাটা আছে।

বেডকাভার কিনছি।দোকানদারের সাথে দরদাম হচ্ছে। দোকানের বাইরে একজন একটু পরপর কথার ভেতর কথা বলছে। বুঝতে পারছি না।এটাতো মাছ কিংবা গরুর বাজার নয় যে দালাল থাকবে। কাপড় এবং রঙ এর প্রশংসা করছেন। মানে কেনার জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছেন।খানিকপর সিগারেটের গন্ধ পেলাম। বললাম সিগারেট কে খাচ্ছে? দোকানদার বললেন, এই সিগারেট নিয়ে দূরে যান। আমি বললাম,

-উনি কি টেইলর? 

- হ্যা আপা, আপনি কিভাবে বুঝলেন?

- আমার মনেহয়, আমার কাপড় কেনা শেষ হলে উনি বালিশের কাভার এবং চাদর সেলাই করার জন্য বলবেন। সেজন্যেই অপেক্ষা করছেন। কিন্তু সিগারেট খান কেন চাচা?

(তিনি বেশ লজ্জা পেলেন।সিগারেটটা আড়াল করে ফেললেন)

- না, এমনি।

- বাঁচামরাতো আল্লাহর হাতে। ধরুন আপনি যদি আরও দশবছর বাঁচেন, আপনিকি চাননা সুস্থ ভাবে বাঁচতে? আপনি অবশ্যই জানেন ধূমপান করলে কিকি মারাত্মক অসুখ হয়। তাহলে নিজের কথা ভেবে হলেও সিগারেট ছেড়ে দিন।

(তিনি সিগারেটটা পায়ের তলায় ফেলে দিলেন)

- আইচ্ছা মা, এইডাতো ফালাই দিলাম।

- অনেক খুশি হয়েছি। কাপড়গুলো আপনিই সেলাই করবেন। ভালো করে। কাপড়ে যেনো সিগারেটের গন্ধ না পাই।

হাসতে হাসতে তিনি চলে গেলেন……

 

কাজী খাদিজা আক্তার 
প্রভাষক (ইংরেজি) 
সরাইল সরকারি কলেজ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top