সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মনসা মঙ্গল (শেষ পর্ব) : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২১ ২০:২৭

আপডেট:
৬ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৩

ছবিঃ : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

 

ঘরদোরে কতকাল ঝটপাট পড়ে না। ঘরখানা পাকাই করেছিল বটে শ্রীপতি। ওপরে নতুন টিন। ঝাড়লে মুছলে একটু ছিরি ফিরত। তা কে আর ওসব ঝঞ্ঝাট করতে যাবে! বাস্তুজমি ছিল বাগানসমেত দু-বিঘের ওপর। তার দুই দাদা গয়াপতি আর পশুপতি নিজেদেরটা আলাদা করতে গিয়ে তাকে মোটে পাঁচ কাঠা ছেড়েছে। চাষের জমি বিঘে দশেক আছে বটে, কিন্তু দেখাশুনো না করলে, নিজে না গতর খাটালে আয়পয় তেমন নেই। চারটে ভ্যানগাড়ির মধ্যে একটার চাকা ভেঙে কেতরে পড়ে আছে উঠোনের কোণে, তিনটে বন্দোবস্তে দিয়েছে। কিন্তু আদায় উশুল করার তাগিদটাই নেই বলে কেউ তেমন পয়সা ঠেকায় না। দুপুরে ঘরে বসে সাত-পাঁচ ভাবছিল শ্রীপতি। মাসির কথামতো একটা পোস্টকার্ড জোগাড় করে মনসাকে একটা চিঠিও লিখেছে সে। একটা লাইনে একথাও লিখেছে, মাসি আবার আমার বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে। আমি বলি, সে কি হয়?

কিন্তু চিঠিটা পোস্ট করেনি সে। পকেটে থেকে থেকে পোস্টকার্ডটা নেতিয়ে গেছে। চিঠিটা পোস্ট করা উচিত হবে কি না সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না সে। চিঠি দেওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না। সর্বনাশটা করেছিল বিশ্বাসদাদা। কোরাকাঠির মানুষ। কলকাতায় কোনো ঠিকাদারের রাজমিস্তিরি, যে বাড়িতে মনসা কাজ করে সেই বাড়িখানায় কাজ করেছিল। সেই সূত্রে বাড়ির গিন্নিমার সঙ্গে ভাব হয়। গিন্নিমা গাঁ থেকে একটা খাটিয়ে পিটিয়ে কাজের মেয়ে এনে দিতে বলেছিল তাকে। সেই যে মনসাকে কাজে ঢোকাল তারপর বিশ্বাসদাদার আর দেখা নেই। দেখা হলে শ্রীপতি একবার জিজ্ঞেস করত, তার নতুন বিয়ের বউটাকে অমন লোভ দেখিয়ে ঘরছাড়া করাটা কি ঠিক হয়েছে বিশ্বাসদাদার? গাঁ ঘরের মেয়ে, বড়োলোকের বাড়ির ব্যবস্থা দেখে মাথা ঘুরে গেছে।

ঘরে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে খুব। চৌকির নীচে চালের বস্তা আছে কয়েকটা সেইখানেই যাতায়াত। গ্রীষ্মে বর্ষায় সাপও ঢোকে। ওসব তেমন গ্রাহ্য করে না শ্রীপতি। মনটা বড় এলিয়ে পড়েছে। নইলে এক সময়ে সে অশুরের মতো খাটত।

বাস্তুজমিটা ছাড়া বাপের তো তেমন কিছু পায়নি সে। মাইক ভাড়া দিয়ে, ভ্যান চালিয়ে নৌকোয় মালামাল পার করে উদয়াস্ত খেটে পাকা ঘর, জমিজিরেত করেছিল।
সেই অসুরটা যে কোথায় গিয়ে গা-ঢাকা দিল, কে জানে! এখন পড়ে আছে শুধু খোলটা।
বাইরে থেকে কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে, শ্রীপতিবাবু আছেন নাকি! শ্রীপতিবাবু!

গলাটা চেনা নয়। এ তল্লাটে তাকে বাবু বলে ডাকেই বা কে? শ্রীপতি বাইরে এসে দেখল, পাতলা চেহারার একজন তার বয়সি ছেলেই দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। দেখার মতোই দৃশ্য বটে। সারা উঠোন জুড়ে গাছের পাতা, ছোটো ছোটো শুকনো ডালপালা, খড়কুঁটো পড়ে আছে। ঝাঁট পড়েনি, নিকোনো হয়নি। তুলসী মঞ্চে তুলসী গাছটা শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে। জল দেওয়া হয়নি গাছে।

কাকে খুঁজছেন?
আপনিই কি শ্রীপতিবাবু?
হ্যাঁ।
ছোকড়া ভারি সুন্দর হাসল। বলল, বাড়িতে ঢুকে চারদিকে দেখে মনে হচ্ছিল, বাড়িতে বহুকাল কেউ নেই বুঝি!
শ্রীপতি হেসে বলল, না থাকার মতোই আছি।
আমার নাম দুলাল দাস, কলকাতা থেকে আসছি। গোসাবার দিকে বাড়ি। তা দেশেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম একবারটি দেখা করে যাই।
কলকাতা থেকে আসছে শুনে শ্রীপতি একটু খাতির করে বলে, তা ভিতরে এলে হয়।
ভিতরেই ভালো। একটু কথা আছে।

লোহার চেয়ারটায় ছোকরাটাকে বসিয়ে নিজের চৌকির বিছানাটায় বসল শ্রীপতি। ছোকরা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। ঝুল, মাকড়শার জাল, মেঝেময় ধুলো, বিছানায় ময়লা চাদর। দেখার মতোই ব্যাপার।
ছেলেটা তার দিকে চেয়ে বলল, আর কেউ থাকে না বুঝি?
না। আমি একা।

ছোকরা একটু চুপ করে বসে কী যেন ভেবে নিয়ে বলল, দেখুন, আমি একটু বিপদে পড়ে এসেছি। দোষঘাট ধরবেন না। শুনেছি, আপনি লোক বড়ো ভালো, তাই সাহস করে এসেছি। আমি ভালো লোক কে বলল?

কোরাকাঠির শীতল বিশ্বেসকে চেনেন তো!
শীতল বিশ্বেসকে না চিনে উপায় কি শ্রীপতির। সে-ই তো নষ্টের গোড়া, সে মাথা নাড়া দিয়ে বলল, চিনি।
শীতলদা ভরসা দিয়ে বলেছিলেন, তুমি শ্রীপতির কাছে যাও। সে বড়ো ভালো লোক।
নিজের প্রশংসা শুনতে এখন বিশেষ ভালো লাগছিল না শ্রীপতির। সে মাথা নীচু করে বলল, কথাটা কী?

বলছি। আমি কাঠের মিস্তিরি। গাঁয়ে কদর নেই, বাজারও নেই, তাই কলকাতায় গিয়ে বসেছি। বলতে নেই, সেখানে এখন আমার মেলা কাজ। বালিগঞ্জে একটা বাড়ির কাঠের কাজ করতে গিয়ে শীতলদার সঙ্গে আলাপ। কথায় কথায় তার কাছে কিছু কথা ভেঙে বলে ফেলেছিলুম। তাতে ফের অনেক কথা জানা হল। আপনার কথাও। শ্রীপতি চেয়ে রইল চুপ করে। তার যেন মনে হচ্ছিল এরপর একটা ধাক্কা আসবে।

ছোকরা ফের একটা ফাঁক দিয়ে বলল, আমি সল্টলেকের ডিডি ব্লকে একটা বাড়িতে থাকি। লাহিড়ীদের বাড়ি। চেনেন তো!
চিনি। ও বাড়িতে-

ছোকরা হাত তুলে তাকে থামিয়ে বলল, দোষঘাট নেবেন না কিন্তু। ও বাড়িতে এই অঞ্চলের একটা মেয়ে কাজ করে। নাম পিয়ালি। গিন্নিমা তার সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। মেয়েটিও বড়ো ভালো। চেহারা, স্বভাব, সহবত সব দিক দিয়েই অমন মেয়ে হয় না শ্রীপতির মুখটা একটু হাঁ হয়ে গেল। কথাই এল না মুখে।

ছেলেটা একটু হেসে বলল, কুমারী মেয়ের মতোই থাকে। আমি তো কিছু বুঝতেও পারিনি। তাই আমিও বিয়েতে মত করলুম। কিন্তু মেয়েটা শুনে কেমন গুম মেরে গেল। কাটা কাটা কথা কইল। এমনটা হওয়ার কথা নয়। বলতে নেই, আমার হাতের কাজ ভালো। ভগবানের দয়ায় ভালোই কামাই হয়। শিগগিরই দোকান দেব। আমার মনে হয়েছিল পিয়ালি বর্তে যাবে। কিন্তু সে তেমন খুশি হল না শুনে। তবে দু-চারদিন বাদে যেন নিমরাজি মতো হল।

শ্রীপতি শূন্য চোখে চেয়ে বলল, ‘ও’।

আজ এই দিন চারেক হল শীতলদার সঙ্গে আলাপ। কোথায় থাকি জিজ্ঞেস করায় যখন লাহিড়ীবাড়ির কথা বললুম তখন শীতলদা লাফিয়ে উঠল, ও বাড়িতে তো আমিও কাজ করেছি। এখন কথায় কথায় মনসাবালার সব কথা বেরিয়ে পড়ল। আমার তো মাথায় হাত! না জেনে একটা কাজ করে ফেলেছি। তখন শীতলদা বলল, দ্যাখো বাপু, আমি শ্রীপতির মাসির কাছে শুনে এসেছি, সে আবার শিগগির বিয়ে বসবে। পিয়ালির তো ফেরার লক্ষণ নেই। তা যদি হয় তবে তোমার পিয়ালিকে বিয়ে করার পথ পরিষ্কার। তবে কথাটা আমার বিশ্বাস হয়নি। তুমি বরং গিয়ে শ্রীপতির কাছে জেনে এসো।

তাই জানতে এসেছেন?

হ্যাঁ। গত সাতদিন পিয়ালির সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। সে মোটে আমার সঙ্গে দেখাই করতে চায় না। ডাকলে সাড়া দেয় না। ওপর থেকে নীচে নামে না। মনে হয় দোটানায় আছে। তা আপনি যে বিয়ে করছেন, এ খবর কি সে জানতে পেরেছে?

শ্রীপতি হেসে বলে, খবর তো আমি জানি না। ভারি অবাক হয়ে দুলাল বলে, তাহলে কি কথাটা সত্যি নয়?

না। তবে পিয়ালির যদি আপনাকে বিয়ে করার ইচ্ছে হয় তবে করবে।

দুলালের মুখ ভারি উজ্জ্বল হল, রাগ করলেন না তো, ভাই? শ্রীপতি ম্লান হেসে বলে, রাগারাগির ব্যাপার তো নয়। গায়ের জোরে তো সব দখল করা যায় না। আমার সে সাধ্যও নেই। না দুলালবাবু, আমার দিকে কোনো দাবিদাওয়া নেই। যান, বিয়ে করে সুখে থাকুন গে।

আপনার মতো মানুষ দেখিনি শ্রীপতিবাবু। শীতলদা বলেছিল বটে আপনি মানুষ ভালো। কিন্তু এতটা ভালো তা বুঝতে পারিনি। শ্রীপতি মৃদু হেসে বলে, মনসার কাছে যাব-যাব করছিলাম কয়েকদিন ধরে। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আর যাওয়ার দরকার নেই। কী বলেন?

দুলাল মাথাটা নীচু করে রইল। বোধহয় লজ্জা হয়েছে। তারপর খুব সংকোচের সঙ্গে পকেট থেকে একখানা মাঝারি ডায়েরি আর সস্তা ডটপেন বের করে শ্রীপতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, কটা কথা লিখে দেন।

কী কথা?

আপনার যে আপত্তি নেই। সেই কথাটা পিয়ালির নইলে ঠিক বিশ্বাস হবে না। । শ্রীপতির হাত কাঁপল না। সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে সে ডায়েরির পাতায় লিখে দিল, কল্যাণীয়া মনসা, দুলালবাবুকে তুমি বিয়ে করতে পারো। আমার কোনো আপত্তি নেই। ইতি।

ডায়েরিটা পকেটে রেখে দুলাল বলল, আপনার চেয়ে বয়সে বোধহয় আমি বড়োই হব, নইলে পায়ে হাত দিয়ে একটা প্রণাম করে যেতাম।

ছিঃ ছিঃ। ও কথা শুনলেও পাপ হয়। আপনি আসুন। নিশ্চিন্তে আসুন।

দুলাল চলে যাওয়ার পর মনটা বড় ফাঁকা হয়ে গেল শ্রীপতির। সামনের জীবনটা যেন ধু ধু করছে। মনসাকে লেখা পোস্টকার্ডখানা বের করে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ল সে। তারপর ছিন্ন টুকরোগুলো মুঠোয় নিয়ে বসে রইল চুপ করে।

দিনটা কেটে গেল একটা ঘোরের মধ্যে। রাতটা কাটল দুঃস্বপ্ন দেখে। বিটকেল সব স্বপ্ন।

দুটো দিন কাটল ভারি কষ্টে। মনটা যেন কেমন কুয়োর মধ্যে পড়ে আছে। মাথাটা কেন যেন পাগল-পাগল। জীবনের একটা কপাট বন্ধ হয়ে গেল তো! সে কপাট আর খুলবে না কখনও। হয়তো এই ভালো হল। এখন নিশ্চিন্তে থাকা যাবে।

দুদিনের মাথায় বেলা এগারোটা নাগাদ মদনার দোকানের বেঞ্চে বসেছিল শ্রীপতি। মদনা খদ্দের সামলাচ্ছিল। হঠাৎ হেঁকে বলল, ওরে শ্রীপতি, পটল গায়েন একটা চিঠি রেখে গেছে তোর নামে। পটল গায়েন! সে কে?

পিওন। তোর খোঁজ করছিল কাল। চিঠি আছে। আমি বললুম, এখন তাকে বাড়িতে পাবে না, আমার কাছে রেখে যাও, দিয়ে দেব। শ্রীপতি পোস্টকার্ড হাতে নিয়ে দেখল, আঁকাবাঁকা কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং অক্ষরে লেখা, শ্রীচরণেষু হ্যাঁ গো, তুমি শিগগির একবার আসবে? ভীষণ দরকার, চিঠি পেয়েই আসবে কিন্তু। দেরি করবে না, মা কালীর দিব্যি। ইতি মনসা।

চিঠিটা হাতে নিয়ে বজ্রাহতের মতো বসে রইল শ্রীপতি। মনসা, মনসা ডাকে কেন? সব তো চুকেবুকে গেল। তবে ডাকে কেন? চটকা ভেঙে সে উঠে পড়ল, বলল, মদনদা, দুশোটা টাকা হাওলাত দেবে? বড় দরকার।

মদন অবাক হয়ে বলে, দেব না কেন? নিয়ে যা, বলি চললি কোথায়?

ঘাটের দিকে দৌড়তে দৌড়তে শ্রীপতি বলল, কলকাতায়। পৌঁছতে বেলা প্রায় দুটো হল। ডোরবেল বাজানোর পর মাত্র কয়েকবার চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই দরজা খুলে সামনে দাঁড়াল মনসা। আলুথালু চুল, চোখ বড়ো বড়ো। মুখখানা শুকনো, কেমন অবাক অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলেছে। তারপরই হঠাৎ তার দু-হাত ধরে ঝাকুনি দিতে দিতে বলল, কেমন পুরুষ তুমি? কেমন পুরুষ? নিজের বউকে পরের বাড়িতে ফেলে রাখতে লজ্জা করে না তোমার? লজ্জা করে না?

শ্রীপতি এমন অবাক যে বাক্যস্ফুর্তি হচ্ছে না।

টপটপ করে দু-চোখ থেকে জল পড়ছে মনসার। নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে কান্নায়, এক্ষুনি তুমি আমাকে এই যক্ষের পুরী থেকে নিয়ে চলো, এক্ষুনি! আমি আর এক লহমাও থাকব না এখানে! শ্রীপতির বড়ো ভোম্বল লাগছে মাথাটা, কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। তাকে কথা বলতে দিলও না মনসা, তার চোখের দিকে চেয়ে উদভ্রান্ত মুখে বলল, এরা ভীষণ খারাপ! ভীষণ! নোংরা ঢেকে বাবু বিবি সেজে থাকে। কেন এখানে ফেলে রেখেছিলে আমাকে? কেন?

শ্রীপতি শুধু কোনো রকমে বলতে পারল, নিয়ে যেতেই তো আসি, তারপর ফিরে যাই।

আর নয়! আর এক মুহূর্ত নয়! দু-মিনিট দাঁড়াও, আমি আসছি। বলে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল মনসা, একটু বাদেই তরতর করে নেমে এল নীচে। এক হাতে একটা স্যুটকেশ বগলে একটা পুঁটুলি।

চলো, চলো, আর দেরি নয়।

এই তাড়াহুড়োয় শ্রীপতির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। বড্ড জোর পায়ে হাঁটছে মনসা। শ্রীপতি তাল রাখতে পারছে না। সাজেওনি ভালো করে। চুল এখনও আলুথালু, চোখের নীচের জলের দাগ। মনসা একটা ট্যাক্সি দাঁড় করাল। বলল, ওঠো।

শ্রীপতি ভারি আতঙ্কিত হয়ে বলে, ট্যাক্সিতে কোথায় যাবে? ধামাখালি।

ওরে বাব্বা, সে যে অনেক ভাড়া লাগবে।

লাগুক। আমার টাকাগুলো দিয়ে কি আমার শ্রাদ্ধ হবে? ওঠো তো। তিন দিন আগেই ব্যাংক থেকে সব টাকা তুলে রেখেছি। অনেক টাকা।

শ্রীপতির যে কেমন লাগছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। পাশাপাশি বসে সে একটা গভীর স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে চোখ বুজল।

ঠেলা দিয়ে মনসা বলল, ঘুমোবে না। কথা বলো, আমার কত কথা জমে আছে।

ঘুমোচ্ছি না, গো। ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, দুলালবাবু নামে একজন এসেছিল আমার কাছে কদিন আগে।

জানি। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। শোনো, নিজের জিনিস যদি পাহারা দিয়ে না রাখতে পারো তবে শেয়াল শকতেন ছিড়ে খেতে চাইবেই। বুঝেছ?

শ্রীপতি হঠাৎ টের পেল তার ভিতরকার যে অসুরটা ফেরার হয়ে গিয়েছিল সে হঠাৎ কোন্ ফাঁকে ফিরে এসে ভিতরে সেঁদিয়েছে। তার ভিতরটা এখন ফুঁসছে, টগবগ করছে, লন্ডভন্ড হচ্ছে। একেবারে ভাসাভাসি কান্ড!

 

মনসা মঙ্গল (পর্ব এক)
মনসা মঙ্গল (পর্ব দুই)
মনসা মঙ্গল (পর্ব তিন)
মনসা মঙ্গল (পর্ব চার)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top