সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

হাসন রাজার জীবন ও কর্ম : সামারীন দেওয়ান


প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০২১ ২০:৫৬

আপডেট:
২৫ জুলাই ২০২১ ২১:৩০

ছবিঃ  সামারীন দেওয়ান এবং হাসন রাজা

 

বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বিচারক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের চোখে একজন গভীর দর্শন তত্ত্বের আলোকজ্জল ব্যক্তি হাসন রাজা । সুফি, যোগতান্ত্রিক ও বৈষ্ণবধারার চিন্তাচেতনা মিশ্রিত মরমি ধারার সর্বোচ্চ মোক্ষলাভের সাধনায় তাঁর গানে আর মনে এক নশ্বর ও অবিনশ্বর সত্ত্বার বসত।

জন্ম সিলেটের সুনামগঞ্জে ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। আদি পুরুষগনের বসবাস উত্তর ভারতের বানারসী, অযোধ্য আর রায়বেরিলিতে। বর্ধমান, যশোর ও সিলেটের বিশ্বনাথ হয়ে শেষ স্থানটি সুনামগঞ্জে ।

চার ভাইবোন-
উবায়দুর রাজা
সহিফা বানু
মোজাফ্ফর রাজা
হাসন রাজা

মা হুরমতজান বানুর কাছে শিশুপুত্র হাসন রাজা যক্ষের ধনের মতো । চারপাশে লোকে লোকারন্যে ছিলো তাঁর বাল্যকাল ।

তাঁর জন্ম-পূর্বে মায়ের গর্ভে বৈপত্রিক তিন ভাইবোনের বসন্তরোগে অকালমৃত্যুর কথা তাঁকে বিষন্ন করে তুললো । ব্যথিত চিত্তে ঘরে বসে অল্প পড়ালিখায় আরবি, ফারসি ও বাংলা শিখলেন। মায়ের ভাষা বাংলাকে বেঁছে নিলেন তাঁর কাব্য চর্চার জন্যে প্রধান মাধ্যম হিসেবে।

সুনামগঞ্জ ও সিলেটের পথে প্রান্তরে প্রকৃতির লীলাখেলায় বন্য পশুপাখিকে আবর্ত করে বিমোহিত চিত্তে শতস্ফুর্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর সখ আর অদম্য কৌতুহল ছিল তাঁর । তখনই তাঁর ত্রীপদি কাব্য গাথুনির শুরু হয় । এই বেলায় তিনি রচনা করেন তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘সৌখিন বাহার’।

যৌবনের প্রারম্ভেই বড় রকমের একটি হোচট খেলেন ১৮৭১ সালে। স্বজনহারা হলেন বড় ভাই আর বাবাকে হারিয়ে। কঠিন সময়ের মাঝে যৌবনের পূর্ণতায় প্রেমের স্পর্শ লাগলো। হাসন বাহার কাব্য গ্রন্থ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মানবীয় প্রেম ঐশ্বরিক প্রেমে পরিপূর্ণ হলো সৌন্দর্য্যকলায়। কৌতুহলী মন ছুটলো ঘুরে বেড়াতে করিমগঞ্জ, শিলং, শিলচর, সিলেট, ময়মনসিং, ঢাকা, কলকাতা আর দিল্লী পর্যন্ত। জীবনের আস্বাদনে পর্যটক হাসন রাজা আবার বহু বিবাহে জড়ায়ে পড়লেন। আর তার সাথে নানান সৌখিনতার স্পর্শেও আবিষ্ট হলেন। ১৮৯৭ সালে ৪৩ বয়সে নিজের চোখে দেখলেন এক ধ্বংসলীলাময় ভূমিকম্প। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। মনের ওপর পড়লো একটি গভীর ছায়াপাত । তাঁর গ্রন্থ ‘হাসন উদাস’ এর মাঝে তাঁর চিরাচরিত লালিত মরমিয়াবাদের সুর ভরে উঠলো কানায় কানায়।

অফুরন্ত দানশীল হাসন রাজা উদার অসাম্প্রদায়িক আর জাতিভেদহীন সমন্বয়বাদী সাধক কবিতে রূপ নিলেন। পরিপূর্ণ হলেন মরমি কবিতে। ভেদাভেদ ভুলে জাতিতে জাতিতে, শ্রেনীতে শ্রেনীতে, মানুষে মানুষে মিলন কামনা করলেন। দয়াময় প্রেমাস্পদকে চিনে নিয়ে সবজাত একজাতে পরিনত করতে চাইলেন :

“জাতে জাত মিশিয়ে যাবে
আমিত্ব না রহিবে
এক জাত হইয়া যাবে, হাছন রাজা কয়।”

সংক্ষেপে হাসন রাজা ছিলেন একাধারে প্রকৃতিপ্রেমী, সুন্দর্য্যরে পুজারী, পাখি বিজ্ঞানী, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, মানব প্রেমী, জনকল্যান ও উন্নয়নমূখী, দানশীল, রসিক, উৎসবমুখর ও সৌখিন অথচ অনুন্নাসিক ও দয়াদ্র বিনয়ী হাসন রাজা । আল্লাহ প্রেমে এমন বিভোর ছিলেন যে সমস্ত জগত জীবনকে অসার ভেবে বলতে পারলেন-

‘কিসের ঘর বানাইমু আমি শুন্যেরও মাঝার’

১৯২২ ইংরেজির ৬ ডিসেম্বর তিনি মহাকালে তিরোধান হলেন।

তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে:
‘সৌখিনবাহার’
‘হাসন বাহার’
‘হাসন উদাস’

উপরের সম্পূর্ণ পরিচয়টি পেয়ে যাবেন অনেক অজানা তথ্যসহকারে যদি মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশিত ‘হাসন রাজা জীবন ও কর্ম ’ বইটি আপনার সুনজরের আওতাভূক্ত হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top