সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

ভোকাট্টা ঘুড়ি : নুসরাত সুলতানা


প্রকাশিত:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২৯

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪০

ছবিঃ নুসরাত সুলতানা

 

সাদা কাপড়ে কালো বল প্রিন্ট শর্ট স্লিভ শার্ট, কালো জিন্স, কানে সিলভার কালারের লম্বা রিং, ঠোঁটে লাল লিপষ্টিক, চোখে আই লাইনার আর ব্ল্যাক শ্যাডো পরে ঠোঁটে চোরা হাসি নিয়ে দুইটা ছবি পোস্ট করে শাম্মী একটা রোদ চশমা পরে আরেকটা রোদ চশমা ছাড়া। ক্যাপশন দেয় হুইচ ওয়ান গাইস?
ছবি পোস্ট করার চল্লিশ মিনিটের ভেতর দুইশত ওয়াও রিএক্ট, ৬০০ লাভ রিএক্ট আর আর চারশত লাইক রিএক্ট আসে। মন্তব্য আসে শদুয়েক। একজন লিখেছে,
"তোমায় দেখে ছটফটিয়ে মরি
ঘুমাতে আমায় দাও না লাল পরী!"
অনেকেই লিখেছে ডানাকাটা পরী। একজন লিখেছে "কোকাপ শহর বাড়ি তোমার মোর শহরে এলে
বসতে আমি দেব তোমায় শীতলপাটি বিছিয়ে। "
মন্তব্যগুলো খুব উপভোগ করছে শাম্মী । এরই মধ্যে আবীরের ডাক আসে, ছেলেটা প্রায় ঘন্টা ধরে ট্যাপ নিয়ে খেলছে আর তুমি ফেসবুকিং করছ? নিজের সন্তানের প্রতি উদাসীন কোনো মাকে আমি হতে দেখিনি! খুব বিরক্ত হয় শাম্মী স্বামীর এহেন আচরণে।
কিন্তু নিজের এই ভালো অনুভূতিটুকু নষ্ট করতে চায় না। তাই কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলের সাথে পাজেল নিয়ে খেলতে বসে যায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স, মাস্টার্স পাশ করেছে শাম্মী। ক্যমব্রিয়ান স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। বছর খানেক হয়েছে ফেসবুকে কবিতা লিখছে কখনো ভুল অন্ত্যমিল আর কখনো ইংরেজি -বাংলা শব্দের মিশ্রনে। প্রতিটি কবিতার সাথেই পোস্ট করে একটা জমকালো ছবি। প্রতিটি কবিতায় প্রায় দুই -তিন হাজার লাইক এবং দুই-তিন শত মন্তব্য; অপূর্ব, অনবদ্য, মুগ্ধ, চমৎকার এমন সব প্রশংসার বানে শাম্মী ভেসে যায় এক অন্য জগতে।
আবীর মানে শাম্মীর স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং এ বি.বি.এ ও এম.বি. এ পাশ করে কর্মরত ছিল একটা বিদেশি বায়িং হাউজে হেড অফ মার্কেটিং মার্চেন্ডাইজার হিসেবে। কোভিড -১৯ শুরু হবার ছয় মাসের মাথায় চলে গেছে চাকরি। পাঁচ ফিট সাত ইঞ্চি শ্যাম বর্ণ আর তীক্ষ্ণ চোখের ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন আবীরের প্রেমে একসময় শাম্মী হাবুডুবু খেত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দুজনেরই ছিল অনেক ভক্ত-অনুরাগী। দুজনের প্রেম তাই ক্যাম্পাসে মুখে মুখে ফিরত। দুজনে মিলে কাটিয়েছে দারুণ উপভোগ্য সময়।
সপ্তাহান্তে প্রায়ই জিন্স টিশার্ট পরে ঘুরতে বেরিয়ে যেত দুজন। অনেক যুবক যেমন আবীরকে ঈর্ষা করত তেমনি অনেক যুবতী শাম্মীকে ঈর্ষা করত। শাড়ি পরে খোপায় গাজরা পরে প্রায় সন্ধ্যায় ই শাম্মী পদ্মার পাড়ে অপেক্ষা করত আবীরের জন্য। আবীর আসলেই কখন যে আবীরের কাঁধে মাথে চলে যেত আর হাত বুকের পশমে চলে যেত শাম্মী সেটা টেরও পেত না।
আবীর সবসময়ই কম কথা বলে, অন্তর্মুখী স্বভাবের। কখনো কাউকে উচ্চকিত প্রশংসার বানে ভাসিয়ে দিতে আবীর জানে না। ভালোবাসা প্রকাশ করে কাজে, কথা দিয়ে না। অনেক জন্মদিনেই সারাদিনে একবার ও ফোন দেয়নি। শাম্মী কান্নাকাটিতে অস্থির সময় কাটিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যায় আবীর ফিরেছে; কেক, ফুল আর ডায়মন্ড এর রিং নিয়ে বা কখনো অন্য দামী উপহার নিয়ে।
চাকরি চলে যাবার পর আবীরের সাথে বন্ধুদের যোগাযোগ ও কমে গিয়েছে। সারাদিন বাসায় মুভি দেখে, বই পড়ে আর ছেলে সুনীলের সাথে সময় কাটিয়ে চলে যাচ্ছে প্রায় একবছর। হন্যে হয়ে খুঁজছে চাকরি, চেষ্টা করছে একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে। মাসে দেড় লক্ষ টাকা রোজগার করা আবীর এখন শুন্য পকেটে দিনাতিপাত করে। যে আবীর দেশী মুরগী আর নদীর মাছ ছাড়া তেমন কিছু খেতনা আর এখন চাষ করা মাছ, পোল্ট্রি মুরগী এমনকি অনেক সময় ছোট মাছও খেতে হয়। শাম্মীর বাবা মাঝে মাঝেই মেয়ের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেন আর আবীরের মাও চেষ্টা করেন গ্রামের বাড়ি থেকে চাল/ডাল, মাছ/সবজি, ফল/মুল পাঠিয়ে দিতে। জমানো টাকায় ছয় মাস চলার পরে বিক্রি করে দিতে হয়েছে নিজেদের প্রাইভেট গাড়িটি। সেদিন শাম্মী ফুপিয়ে কেঁদেছে। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না। কারণ শাম্মীর ত্রিশ হাজার বেতন ও ঠিকভাবে স্কুল থেকে দিচ্ছে না। শাম্মীর বেতন দিচ্ছে বিশ হাজার। বাসা ভাড়া পয়ত্রিশ হাজার ছিল। সেই বাসা পালটে বাইশ হাজার টাকার ভেতরে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু তাতেও পেরে উঠছে না আবীর। ইলেকট্রনিক পন্যের একটা অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছে কিন্তু ঠিক জমিয়ে উঠাতে পারছে না। আর আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু কেউই ঠিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। আবীর দিনের পর দিন আরও শামুকের মতো নিজের ভেতর গুটিয়ে যায়। শাম্মীর সাথেও ঠিকভাবে কথা বলে না।
স্কুলের অনলাইন ক্লাস, সুনীলের গোসল খাওয়া, ঘুম ফেসবুকে ড্রেসের লাইভ দেখা এসব নিয়ে সময় একেবারে খারাপ কাটে না শাম্মীর। এছাড়া আছে কবিতা লেখা। ইদানীং ফাহিম আজাদ নামে এক কবি প্রশংসার বানে ভাসিয়ে দিচ্ছে শাম্মীকে। ইদানীং যুক্ত হয়েছে শাম্মীর ফেসবুকে। প্রায় দিনই ফাহিম কথা বলে ইনবক্সে। একদিন মেসেঞ্জারে অডিও কলে কথা হয়েছে ফাহিমের সাথে শাম্মীর। বেশ আকর্ষণীয় ভরাট কন্ঠস্বর ফাহিমের। খুব পরিশীলিত, মার্জিত ঢঙে কথা বলে। সেই থেকে বিকেলে বা সন্ধ্যায় প্রায়ই কথা হয় দুজনের।
খাবার টেবিলে বসে ইদানীং প্রায়ই খুটিনাটি নিয়ে ঝগড়াঝাটি লেগে যায় শাম্মী আর আবীরের। আজ খেতে বসে পুইশাক দিয়ে চিংড়ি মাছের তরকারিতে লবণ কম হয়েছে, কাঁচা মরিচ কম হয়েছে এসব নিয়ে এক কথা, দুই কথায় খুব রেগে যায় আবীর। শাম্মী কেন রান্না-বান্না তদারকি করে না, এসব বাজে খাবার আবীর খেতে পারবে না এইসব। শাম্মী বলে, আমার নবম-দশম শ্রেনীর ইংরেজি পড়াতে হয়, বাচ্চা পালতে হয় আমি সারাদিন বসে থাকি না। আবীর ভীষণ রিএক্ট করে, বলে; আমি বেকার সেই খোটা দিচ্ছ? যখন মাসে দেড় লক্ষ টাকা আয় করেছি তোমাকে দেশ-বিদেশে ঘুরিয়েছি, শাড়ি-গহনা যা চেয়েছ সব দিয়েছি। সেদিন যদি টাকা জমিয়ে রাখতাম তাহলে তো এই অবস্থা হত না। শাম্মী ও দ্বিগুণ রেগে যায়; বলে শাড়ি-গহনার খোটা দিচ্ছ? আমার জন্য আর্মি অফিসার, প্রশাসন ক্যাডারের প্রস্তাব ছিল ভালোবেসে তোমাকে বিয়ে করেই আজ আমার এই দুরাবস্থা। সেদিন দুপুরে আর কারোরই খাওয়া হয়নি। রাতে শাম্মী ফোন দিয়ে মায়ের সাথে কান্নাকাটি করে। মা বলে বাসা ছেড়ে দিয়ে আপাতত আমাদের সাথে ইস্কাটন এর বাসায় উঠে যা তোরা সব ঠিক হলে আবার নিজেরা বাসা নিস।
ইদানীং আবীর খেয়াল করে শাম্মী মোবাইলের বিভিন্ন এপে পাসওয়ার্ড দিয়েছে যেমন গুগল, হটস এপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি। আবীর কিছুই বলেনি। শাম্মী আর আবীরের আলাদা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় ছিল না। দিনের পর দিন সেইসব ব্যক্তিগত বিষয় বেড়েই যাচ্ছে।আবীরের ভাবনায় এই মুহূর্তে জব অথবা ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই নেই। শুধু ভাবে কি করবে! কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না।
ফাহিম দিনে অন্তত তিন-চার বার হটস এপে, মেসেঞ্জারে কথা বলে শাম্মীর সাথে। সারাক্ষণ প্রশংসা আর আবেগের প্লাবনে ভাসায় শাম্মীকে। গোসল করে বেরিয়ে দেখে ফাহিম এর মেসেজ জানু, গোসল করে বেরিয়ে চুলে তোয়ালে পেচানো অবস্থায় একটা সেল্ফি দিও। খুশী মনে পাঠিয়ে দেয় শাম্মী। ফাহিম উত্তর দেয় এখন তোমাকে পেলে আমি কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলতাম! শাম্মী বলে রাক্ষস! ফাহিম বলে, তোমাকে রাক্ষসের মতো খাব সোনা। চুষে খাব, কামড়ে খাব, ভাজ করে খাব!
অনেককিছু রান্না করে নিয়ে শাম্মীর বাসায় আসে শাম্মীর মা। আবীরের জন্য শার্ট, প্যান্ট, শাম্মীর জন্য নতুন ড্রেস, সুনীলের নতুন জামা, খেলনা ইত্যাদি নিয়ে আসে। রাতে খেতে বসে ফাইজা আহমেদ (শাম্মীর মা) আবীরকে বলেন, তোমরা আপাতত বাসা ছেড়ে দিয়ে আমাদের সাথে ওঠ। তোমাদের দুই রুম ছেড়ে দেব। আবীর বলে, না মা। তা হয় না। ফাইজা বলেন, তাহলে বেড়াতে চল মাসখানেক থেকে এস। আবীর জানায় ; শাম্মীকে আর সুনীলকে নিয়ে যান। আমি পরে গিয়ে ওদের নিয়ে আসব।
প্রায় এক সপ্তাহের রান্না করে রেখে শাম্মী সুনীলকে নিয়ে মায়ের বাসায় যায়। শাম্মী হাসফাস করছিল বাসায় থাকতে থাকতে। মায়ের বাসায় এসে যেন বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে। ফাহিমকে এরই মধ্যে একদিন ফোনে জানিয়েছে শাম্মী যে সে ইস্কাটন মায়ের বাসায়। ফাহিম বলে, তাহলে এবার দেখা হবে ময়না পাখি।
একদিন সন্ধ্যায় বেশ জমকালো সাজ দিয়ে শাম্মী বের হয়। ফাইজা জিজ্ঞেস করেন, কোথায় যাচ্ছ তুমি?
শাম্মী জানায়, আম্মু আমি একটু বান্ধবীর সাথে দেখা করে কফি খেয়ে আসি। ফাহিম শাম্মীকে দেখেই হ্যান্ডশেক করে হাতে উষ্ণ চাপ দেয়। কফি খেয়ে ফাহিম রিক্সায় শাম্মীকে বাসায় দিয়ে যায়। রিক্সায় ফাহিম শাম্মীর লিপষ্টিক পরা ঠোঁট দুটোকে পিষে ফেলে নিজের ঠোঁট দিয়ে। আলতো করে চাপ দেয় স্তনে, ঘাড়ে চুমু খায়। শাম্মী একবার চেষ্টা করে বাঁধা দিতে কিন্তু আদরের উপবাসে থাকা শরীর, মন কোনোটাই বাঁধা দিতে সায় দেয় না। রিক্সা থেকে নেমে যাবার সময় ফাহিম বলে, আজ রাতে দিবা কিন্তু সোনাই। শাম্মী কপট রাগ দেখিয়ে বলে পারব না যাও। কতদিন না দেখে থাকব! দুইমাস হয়ে গেছে আমাদের প্রেমের!
শাম্মী বলে ফাহিম এটাকে প্রেম বল না। আমাদের খুব ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ আছে। সেখানে ভালোবাসা, রোমান্স এসবও আছে।
কফিশপে ফাহিম সম্পর্কে শাম্মী যা জানতে পারে তা হল; ফাহিম ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে বি.বি.এ ও এম. বি এ পাশ করেছে। আছে নিজের একটা মাঝারি ব্যবসা। লেদ মেশিন, পানির ফিল্টার, গ্লাস ওয়ার্ক, সি. সি. ক্যামেরা এসব নিয়ে ভালো ই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু মহামারি করোনা সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ফাহিমের স্ত্রী হেনা অনলাইন ড্রেসের ব্যবসা করে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কথায়, কথায় জানতে চেয়েছে শাম্মী কতখানি স্বাভাবিক ও গভীর হেনা আর ফাহিমের সম্পর্ক? ফাহিম জানিয়েছে হেনা অনেক মোটা হয়ে গেছে। কিন্তু খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করার কোনো ইচ্ছে নেই। অনেক টাকা দিয়ে জিমনেসিয়ামে ভর্তি করেছে ফাহিম কিন্তু জিমনেসিয়ামেও হেনা যায় না ঠিকভাবে। চরম বিরক্তিকর এবং একঘেয়ে যৌন জীবন ফাহিমের। ফাহিম একটা প্রেমময়, উপভোগ্য এবং নিরাপদ যৌন সম্পর্ক চায়। কিন্তু মেয়ে আদ্রিতাকে কোনোভাবেই ইনসিকিউরড করতে চায় না। তাই কখনো সংসার ভাঙার কথা ভাবে না।
এক সপ্তাহ পর শাম্মী আবীরকে ফোন দেয় বলে তুমি আস আমি বাসায় যাব। খুশি হয় আবীর আর সুনীলের কথাও খুব মনে পড়ছিল আবীরের। আবীর এই দুর্দিনেও শ্বশুরবাড়ি ফল, মিষ্টি, সুনীলের জন্য চকলেট নিয়ে আসে। ফাইজা অনেক কিছু রান্না করেছেন আবীরের জন্য দেশী মুরগীর রোষ্ট, পোলাও, মেজবানি গরুর মাংস, চিংড়ি মালাই কারি, বেলে মাছ দিয়ে আলু টমেটো চর্চরী, রুই মাছের কাবাব। আবীরের চেহারায় একটা স্মিত হাসি খেলে যায়। খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে
শাম্মী আবীরের পছন্দের আদা চা বানিয়ে দেয়। শাম্মীর বাবা-মা, আবীর, শাম্মী, শাম্মীর ছোট ভাই শিহাব সবাই মিলে রাত এগারোটা অব্দি গল্প করে। এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে সুনীল। শাম্মী রাতে কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে হালকা গোলাপি একটা নাইটি পরে পারফিউম দিয়ে ঘুমাতে আসে। সুনীলকে একপাশে রেখে কাছে এসে শোয় আবীরের। আবীরের হাতে মাথা রেখে বুকের সাথে ঘেষে শোয়। খুব চায় আবীর একটা রাত সেই প্রথম প্রেমের মতো আদরে আর প্রেমে ভাসিয়ে দিক। আবীরের গলা ধরে আদুরে কন্ঠে শাম্মী বলে, আমি কি দেখতে খুব পচা হয়ে গেছি? বিয়ের মাত্র ছয় বছর। এরই মধ্যে আমার সব আদর শেষ? আবীর বলে তুমি চির সুন্দর আমার কাছে কিন্তু আমিই ঝরে যাচ্ছি। আমি এই অনিশ্চয়তা আর নিতে পারছি না। তাছাড়া তুমি স্কুল, ছেলে, কবিতা, সোসাল মিডিয়া সব নিয়ে তো ভালো ই আছ। শাম্মী বলে, এগুলো কোনোটাই তোমার বিকল্প না। শাম্মী একটা চুমু এঁকে দেয় আবীরের গালে। আবীর অনেকদিন পর পছন্দের খাবার বেশ পেট ভরে খেয়েছে। হাই তুলতে তুলতে শাম্মীকে বলে, শাম্মী আমি অনেক ক্লান্ত। বাইরের ঘন প্রবাহমান রাত, ঝুম বৃষ্টি এইসবকিছু ছাপিয়ে শাম্মীর শরীর আর মনের ক্ষুধা মূর্তিমান হয়ে ওঠে। দীর্ঘ আটমাস আরবী শাম্মীকে প্রগাঢ় একটা চুমুও খায়নি সঙ্গম তো দূরে থাক। ফাহিমের মুখে সারাদিন আদরের কথা শুনে সে হাহাকার আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর যে দুদিন দেখা হয়েছে ফাহিম চুমু আর স্তন, যোনী সব ছুঁয়ে দিয়েছে। ভালোই উপভোগ করেছে। ফাহিম যদি কোথাও নিয়ে যেয়ে সেক্স করত শাম্মী কি বাঁধা দিত? শাম্মীর শরীর-মন কি বাঁধা দিতে পারত?
ফিরে আসে শাম্মী, আবীর নিজেদের বাসায়। আবীর কিছুটা সতেজ আগের চেয়ে। ঘুরে এসে শাম্মীর সাথে কথা-বার্তা আগের চেয়ে বেশি বলে। শাম্মীর কষ্ট লাঘব না হলেও ঝগড়াঝাটি না হওয়াতে কিছুটা স্বস্তি পায়।
ফাহিম রাত হলেই মেসেজ দেয় দাও, না দেখে ঘুম আসবে না। দেখে তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাব। শাম্মী জিজ্ঞেস করে হেনা কই থাকবে? ফাহিম বলে, পাশের রুমে মেয়ের সাথে। আজ একবার ভিডিও কলে আসা যাবে? শাম্মী জানায় না আবীর বাসায়।
হঠাৎ করে আবীর এর মা ডেকে পাঠান আবীরকে। বলেন রাজশাহী আয়। আম নিয়ে যা আর তোকে কিছু টাকাও দিয়ে দেব। বাগানের আম বিক্রি হয়েছে সেখান থেকে।
হঠাৎ একদিন সারাদিন ফাহিমকে অনলাইনে দেখা যায় না। ফোন দিয়েছে শাম্মী দুইবার। কিন্তু ফোন রিচ করতে পারেনি। সারাদিন পর সন্ধ্যায় মেসেজ দেয় ফাহিম, কেমন আছো জান? শাম্মী বলে, কে কার জান? ফাহিম বলে, এই বিল্লিটা আমার জান। শাম্মী বলে, হুউ মুখে মুখেই। সারাদিন কোনো খবর নাই! ফাহিম জানায় সে খুব বিপদে আছে। একটা বড় অর্ডার পেয়েছে কিন্তু টাকার অভাবে কোটেশন দিতে পারছে না। শাম্মী জিজ্ঞেস করে, কত হলে হবে?
এক শুক্রবার সন্ধ্যায় আবীর রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বাসে ওঠে। শাম্মী বলে আমাকে আর সুনীলকে আম্মার বাসায় দিয়ে আস। আবীর, শাম্মী আর সুনীলকে ইস্কাটনে মায়ের বাসায় দিয়ে দশ দিনের জন্য রাজশাহী যায়। একদিন সুনীলকে মায়ের বাসায় রেখে নিজের বাসায় আসে। মাকে বলে আসে মা আমি কিছু বই-পুস্তক নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। স্কুলে ক্লাসের জন্য এগুলো লাগবে। ফাহিমকে জানায়; বাসায় কেউ নেই আমি একা। তুমি এসে কফি খেয়ে যাও আর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ ও আছে।
নীল শার্ট, কালো লেগিংস, ঠোঁটে মেরুন লিপষ্টিক দিয়ে, গায়ে কড়া পারফিউম দিয়ে শাম্মী অপেক্ষা করে ফাহিমের জন্য। মেসেজ পাঠিয়ে রাখে লিফটের পাঁচ ফাইভ সি। দরজা খোলা কলিং বেল দেবে না। বাসায় ঢুকে দরোজা বন্ধ করে দেবে।
ফাহিম এক ঘন্টার ভেতর চলে আসে। এসেই লুফে শাম্মীকে কোলে তুলে নেয়। তারপর নিয়ে যায় নরম তুলতুলে বিছানায়। শাম্মীর সমস্ত শরীর লেহন করে, ভরিয়ে চুম্বনে আর আদরে। তিন ঘন্টায় তারা দুইবার সঙ্গমে মিলিত হয়। শাম্মীর স্তনে মৃদু চাপ দিয়ে বলে;
আজ আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছ মহারানী।
শাম্মী কাবাব ভেজে দেয়, কফি বানিয়ে দেয়। যাবার সময় ফাহিমের হাতে তুলে দেয় এক লক্ষ টাকা। ফাহিম জিজ্ঞেস করে কবে দিতে হবে? শাম্মী জানায়; ছয় মাস পরে দিলে হবে। তবে এটা ছাড়া আমার আর কোনো সঞ্চয় নেই। ফাহিম বলে ইউ আর গ্রেট।
বিকেলে চলে যায় শাম্মী মায়ের বাসায়। মায়ের বাসায় গিয়েই সুনীলকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমায়। কেমন একটা মিশ্র অনুভূতি হয় শাম্মীর। কিছু একটা পাবার আর অনেককিছু হারিয়ে যাবার। রাতে যথারীতি ফাহিমের মেসেজ দাও। আজ থেকে ঘুমই আসবে না। এখন আবার খুব ইচ্ছে করছে। শাম্মী খুব বিরক্ত হয়। তার মনে ফাহিমের সমস্ত আকর্ষণ কেবল শাম্মীর শরীর নিয়ে। শাম্মী বলে আজ পারব না শরীর ভালো লাগছে না।
আটদিন পর আবীর শাম্মীকে বলে তুমি আজ সন্ধ্যায় বাসায় চলে আস কাল সকালেই আমি চলে আসতেছি।
সন্ধায় সুনীলকে নিয়ে বাসায় আসে শাম্মী। শাম্মীর মা রাতের খাবার দিয়ে দিয়েছেন। রাতে শাম্মী বাসায় এসে জানায় ফাহিমকে যে সে বাসায় আসছে। ফাহিম বলে, আজ হেনাও বাসায় নেই। চল আজ ভিডিও কলে ফোন সেক্স করি। শাম্মী বলে না বারবার আবীর ফোন দেবে আর বাচ্চা পাশে নিয়ে সম্ভব না। ফাহিম বলে, তাহলে দাও প্লিজ, মুখ সহ দেবে।

পরের দিন সকালে আবীর বাসায় পৌঁছায়। আবীরের ফোনের চার্জ শেষ। বাসায় এসেই শাম্মীর ফোন হাতে নিয়ে বলে আহনাফ (আবীরের ছোট ভাই) কে একটা মেসেজ দেব। পাসওয়ার্ডটা দাও। মুহূর্তেই শাম্মী বলে দেয় পাসওয়ার্ড। মেসেঞ্জার খুলেই আবীর দেখে ফাহিম নামের কেউ একজন লিখেছে উফস হট! তোমার বুবস সারাক্ষণ চুষতে ইচ্ছা করে আর তোমার ভ্যাজাইনাও অসম্ভব সুন্দর। সেদিনের মতো সময় আবার কবে আসবে আমাদের জীবনে! মেসেঞ্জার এর একটু উপরে উঠেই আবীরের পায়ের নীচের মাটি সরে যায়! যে শাম্মী তার বুকে মাথা এই কি সেই শাম্মীই? সেই শাম্মীই কি ফাহিম নামের একজন পুরুষকে নিজের স্তন এবং যোনীর ছবি পাঠিয়েছে? সেদিনের মতো সুন্দর সময় মানে আবীর ঢাকায় নেই সেই সুযোগে কি শাম্মী ফাহিমের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে!
আবীর মুহূর্তেই নিজের মোবাইলে ছবিগুলো এবং মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখে।
কিছুক্ষণ পরে বুয়া এসে পরোটা, আলু ভাজি, ডিম ওমলেট প্রস্তুত করে। গতরাতে শাম্মীর মা আবীরের জন্য পায়েস করে পাঠিয়েছে । আবীর খুব স্বাভাবিক ভাবে নাস্তা খাচ্ছে। নিজের ভেতর বয়ে যাচ্ছে ঝড়। বারবার নিজের সাথে বোঝাপড়া। কি করবে আবীর! নাস্তা শেষ করে চা খেতে খেতে আবীর শাম্মীকে ডাকে।
শাম্মী তখনও নাস্তা খাচ্ছিলো। শাম্মী বলে, খেয়ে আসি।
শাম্মী আসলে আবীর সরাসরি জিজ্ঞেস করে, ফাহিম আজাদ কে? শাম্মী ভড়কে যায়। বলে একজন কবি। আবীর আবার জিজ্ঞেস করে আর? তোমার সাথে কি সম্পর্ক? শাম্মী ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফাইট দেবে। শাম্মী উত্তর দেয় আমার ফেসবুক বন্ধু। আবীর বলে, সব ফেসবুক বন্ধুকেই স্তন আর যোনীর ছবি পাঠাও? শাম্মী বলে ছি! বাজে বক না।
আবীর শাম্মীর গালে চড় দিয়ে বসে। বলে তোমার ফোন নিয়ে আস। নিয়ে আসে শাম্মী। সকালে আবীর ফোন ফেরত দেবার পরেই ডিলিট করেছে সব। শাম্মী বলে নাও দেখাও কোথায় কি আছে! আবীর হাসি দেয়, বলে শাম্মী তুমি এত বোকা! তুমি কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছ ভালো। দুঃসময় যাচ্ছে, আমি তোমার শরীর মনের চাহিদা পূরণ করি না। তাই বলে তুমি এই অল্প কয়েকদিনের সম্পর্কে ন্যুড ছবি পাঠাবে! এত সস্তা তুমি! শাম্মী বলে কই তুমি দেখাও! আবীর হেসে বলে আমার কাছে সব আছে, সকালেই নিয়েছি। জানি তুমি মুছে দিয়েছ। শোনো আমি এই অসৎ তোমার সাথে থাকতে পারব না। আমি বিদেশে চলে যাব। সন্ধ্যায় এক বন্ধুর বাসায় যাব। সুনীলকে আঠারো বছর হলে আমি নিয়ে নেব। ওর সব খরচ আমি দেব। সেটা নিয়ে তুমি ভেবো না। তুমি তোমার মা-বাবাকে বলে আমকে ডিভোর্স দেবে। কারণ আমি এখন দেনমোহরের পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে তোমাকে তালাক দিতে পারব না। যদি ঝামেলা কর আমি সবাইকে তোমার এইসব ছবি পাঠাব। আমি আমার শাম্মীকে ভালোবাসতাম, এই শাম্মীকে না। আমার শাম্মী কোনোদিন অন্য কাউকে চুমু খেতে পারতো না!
একটু পরে শাম্মী মেসেজ দিয়ে ফাহিমকে জানায় সবটা। ফাহিম বলে; তুমি সাথে সাথে মেসেজ মুছে দাওনি কেন? মেসেঞ্জারের পাসওয়ার্ড দিয়েছ তাহলে মেসেজ ডিলিট করনি কেন? শাম্মী কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমি কি জানতাম যে ও মেসেঞ্জার ঘাটাঘাটি করবে? ফাহিম বলে, তোমার হাসবেন্ডকে বুঝাও আজকাল এরকম সম্পর্ক সবার থাকে দেখ যেয়ে আবীরেরও আছে। নইলে দশমাস ধরে তোমার সাথে সেক্স করে না কেন? আর বল যে তুমি আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। শাম্মী বলে, কোনো লাভ নেই আমি ওকে চিনি। ফাহিম বলে, তোমার ঝামেলা তো তোমাকেই সামলাতে হবে সোনা। আমিতো জোর করে তোমার সাথে সম্পর্ক করিনি। আমি চেয়েছি তুমিও এগিয়ে এসেছ।

আবীর রেডি হয়ে শাম্মীর হাতে পঁচিশ হাজার টাকা দেয় আর বলে, আপাতত তোমার মায়ের বাসায় উঠে যেতে পারো। এটা বাসা ভাড়া এই মাসের। আর একমাসের এডভান্স দেয়া আছে। তুমি ভালো থেকো। আমি চলে যাচ্ছি। দরজা খুলে বেরিয়ে যায় আবীর। শাম্মী তখন মেসেঞ্জার, ফোন, ফেসবুক কোথাও খুঁজে পায় না ফাহিমকে। জানালায় দাঁড়িয়ে শুন্যের পানে চেয়ে থাকে শাম্মী, দুচোখে শ্রাবণ ধারা। পেছন থেকে এসে পা জড়িয়ে ধরেছে সুনীল ঠিক তখনই আকাশ থেকে একটা ভোকাট্টা ঘুড়ি থপাস করে নীচে আছড়ে পড়লো।

 

নুসরাত সুলতানা
কবি ও কথাসাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top