সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

আত্মকথন (অনু গল্প) : রাজ


প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২১ ২০:২৮

আপডেট:
১৪ অক্টোবর ২০২১ ২০:৩০

 

আমার পরিচয় - আমি বিখ্যাত লেখিকা রুবি রায়। আজ যাকে নিয়ে লিখছি সে আমার সাবেক কাজের মেয়ে ছন্দা। আমি কলকাতায় বাস করি। আমাদের দূর- সম্পর্কের এই আত্মীয়ের মাধ্যমে অজপাড়াগাঁ হতে ছন্দা নামের কাজের মেয়েটিকে আমরা পাই। ৮ কিংবা ১০ বছরের একটা মেয়ে।  সে যখন প্রথম আমাদের বাসায় আসে লিকলিকে ছিল তার চেহেরা। এলোমেলো বড়ো বড়ো চুল। পুরনো ছেঁড়া কাপড়। ড্রেস ছিল শুধু একটিই। যে এনেছিল তাকে সে দাদু বলে ডাকতো। সেই দাদুর হাতে ওর পুরো বছরের মাহিনা পাঠিয়ে দিই।
তার কাজল কালো দুটি চোখ।শুকনো শুকনো মুখ। তার কাছে শুনে জানতে পেরেছি-ওর বাবা ফেরারি মানুষ। ৫ বোন ওরা। বাবা কোথায় চলে গেছে তারা কেউ জানেনা। ৫ বোন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তার মা এজন্য গ্রামের সেই দাদুর কাছে তাকে তার নিয়ে এসেছিলেন কাজের মেয়ে হিসেবে একটা কাজ পেতে। সেই সূত্রে আমাদের বাড়িতে তার আসা। 

সে মাঝে মাঝে আমাকে বলত যে-তার বাকি ৪ বোনের কথা ওর খুব মনে পরে। ছন্দার সবচেয়ে বেশি মনে  পরত তার মাকে।  আমাদের বাসায় সে ফ্লোরে ঘুমাতো। সে যদিও হতদরিদ্র মানুষের সন্তান ছিল তারপরও তাকে কখনো অভদ্র আচরণ করতে দেখিনি। আমাদের বাসার কাজ খুব মনোযোগ সহকারে করতো। আমি কিছু বলতাম না চুপচাপ সব দেখতাম। সে মাঝে মাঝে আমার মেয়ের মেকআপ লুকিয়ে লুকিয়ে নারাচাড়া করতো। আমি দূর হতে দেখতাম। সে কখনো লুকিয়ে মাখতো না। দেখার পরে রেখে দিতো। আমার মেয়ে টিনার বয়েসী। মাঝে মাঝে ওরা ছাঁদে  খেলতো। ওর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ওর ৪ বোনকে নতুন কাপড় দেওয়া সাথে তার মাকে নতুন একটা শাড়ি দেওয়ার। ওদের বাসায় কোন ফোন ছিল না। তাই কথা বলতে পারতোনা। সব সময় ওর পরিবারের কথা বলতো। আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম। সে আমাকে আম্মা বলে ডাকতো। কখনো কোন ভালো ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বেড়াতে আসলে তার কাজের প্রশংসা সবাই করতো। তাকে গ্রিফট হিসেবে দিতে চাইলে সে নিতে অস্বীকার করতো।
মাথা নীচু করে দাড়িয়ে থাকতো। আমার তার এই সব স্বভাব খুব পছন্দ লাগতো। তার একবছর পূর্ণ হওয়ার আর কিছু দিন বাকি ছিল। আমি আমেরিকায় একটা সম্মেলনে যোগদানে গেলাম। আমার ফিরতে কয়েকমাস দেরি হয়েছিল।
ফিরে আসার পরে শুনি ছন্দা কে তার সেই দাদু নিয়ে গেছেন। ওর মা নাকি ভীষণ অসুস্থ হয়েছিল। তারপর সেই মানুষটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। ফোন সুইচ অফ। আজো ট্রাই করি সুইচ অফ।
ছন্দা যাওয়ার সময় নাকি আমাকে খুব খুঁজেছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমিও তাকে খুব ভালোবাসতাম। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওদের পরিবারের সবাইকে নতুন কাপড় উপহার দিয়ে ছন্দাকে অবাক করে দেওয়ার।  কিনতু সে সৌভাগ্য আমার কপালে জোটেনি।  ছন্দার কোন ঠিকানা জানিনা আমি। সে  খালি হাতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছে।

আমি খুব আফসোস করি – আহা, ছন্দার যদি মনের আশা পূরণ করতে পারতাম! ফুটপাতে কোন ছোট মেয়ে দেখলে আমি তাদের মাঝে ছন্দার ছায়া খুঁজে পাই। আমি আজো ছন্দাকে ভুলিতে পারিনি।

 

রাজ
গল্পকার, কবি ও উপন্যাসিক, তেতুলিয়, পন্চগড় 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: রাজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top