সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

কথা ছিলো হেমন্তে : শাহনাজ পারভীন


প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০২১ ২০:১৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০১:৩৯

 

কথা ছিলো এ হেমন্তেই দেখা হবে তাদের। দীর্ঘ দিনের পরিচয়, কিন্তু দেখা হয় নি আগে। কথা ছিলো সূর্য পাঁচ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’র অনুষ্ঠানে নায়েম, ঢাকায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করবে। সেখানে বৃষ্টিও যাবে আলোচক হিসেবে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই প্রোগ্রাম ঠিক করা। ওদের প্রথম কথা হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। সেই হিসেবে এক বছর পর ওদের দেখা হবে সরাসরি। তেমনটিই ইচ্ছে ছিলো বৃষ্টি আর সূর্যের। কিন্তু মার্চ আসতে না আসতেই বিশ্বময় কোভিড পেণ্ডামিক শুরু। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত বন্ধ। ক্রমাগত লকডাউন, কোয়ারান্টাইনে জন জীবন বিপর্যস্ত। ইচ্ছে করলেও কেঊ অহেতুক বাসা থেকে বের হতে পারে নি। সময়ের সাথে সাথে অবস্থার একটু উন্নতি হয়েছে ঠিকই, তবে সামগ্রিক অবস্থা এখনও সঙ্গীন নয়। তাই এই বছর অন্য সময়ের মতো ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’র অনুষ্ঠান সরাসরি হচ্ছে না। ভার্চ্যুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানের লিঙ্ক পেয়েছে বৃষ্টি। সূর্য পায়নি। কথাটা প্রথম সূর্যই তুলেছিলো।
- বৃষ্টি, আমাদের দেখা হবার কথা ছিলো আজই। কিন্তু অনুষ্ঠান তো হচ্ছে না। আমাদের ঢাকায় আসাও হচ্ছে না।
- অনুষ্ঠান তো হচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল। অনুষ্ঠানের লিঙ্ক পাঠিয়েছেন কোঅর্ডিনেটর ম্যাডাম।
- আমাকে তো বোধ হয় পাঠান নি।
- চেক করো মেইল, ম্যাসেঞ্জার। পেয়ে যাবে ঠিক।
- সে না হয় পেলাম, কিন্তু আমাদের দেখা? সে তো আর হলো না নায়েমের লনে!
- ইচ্ছে হলে এসো। শুধু অনুষ্ঠান উপলক্ষেই যে যেতে হবে, তার তো কোন মানে নেই। এমনিতেও তো হতে পারে। তোমার ওখান থেকে তো ঢাকা বেশি দূরে নয়।
- তা তো পারেই। তবে এই সময়ে ঢাকায় যাবার রিস্ক না নেওয়াই ভালো। আমি আমার কথা ভাবছি না, আমি ভাবছি তোমার কথা।
- কেন, তোমাকে নিয়ে না ভেবে আমাকে নিয়ে ভাবছো কেন?
- আমি তো যে কোন ভাবেই চলে যেতে পারি, কিন্তু তোমার কথা আলাদা। দেশের অবস্থা খারাপ।
- সে তো জানিই। করোনার প্রকোপে দেশের অবস্থা খারাপ।
- তা তো আছেই। তারপরও দেখছো না, মেয়েদের নিরাপত্তারও কতটা অভাব। বর্তমানে স্মরণকালের খারাপ সময় চলছে।
- হুম। ঠিক বলেছো তুমি। বর্তমানে স্বামীর সাথে বাইরে ঘুরতে গেলেও নিরাপত্তা নেই, ঘরের মধ্যে, আদীবাসী, শিক্ষক, ছাত্রী, শিশু, বৃদ্ধা কেউই নিরাপদ নয়।
- তাই বলছিলাম। সাবধানে থেকো।
- ঠিক আছে। তুমিও সাবধানে থেকো। আমাদের যশোরে তো দিনে দুপুরে মার্কেটের সামনে থেকে ছিনতাই হচ্ছে।
- ঠিক আছে, তাহলে দেখা হচ্ছে কবে, কোথায়?
- করোনা যাক, আগামী হেমন্তে।
- আগামী হেমন্তে? না, না তা হতে পারে না। তাহলে ফাইনাল ডেট ঠিক হবে কি করে?
- অপেক্ষা করো।
- এক বছর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
এরই মধ্যে ফোনের কানেকশান অফ হয়ে যায়ে বৃষ্টির। বার বার চেষ্টা করেও ঢুকতে পারে না ফোনে। হয়তো এরই মধ্যে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
কথা শেষ না হবার বেদনায় সূর্যের মনটা খারাপ হয়ে যায়। দখিনের জানালা খুলে দিলেই দূর থেকে ভেসে আসে ছাতিমের সুবাস। ছাতিমের সুবাসের সাথে সাথে সে যেন হঠাৎ আসা ঝুম বৃষ্টির মুখরিত কলতানে নতুন করে ভেসে যায়। আহা! বৃষ্টি! আহা! কোভিড! ছাতিমের সুবাসে কেন মন কেমন করে!

 

শাহনাজ পারভীন
কবি, গবেষক, কথাসাহিত্যিক,
প্রিন্সিপ্যাল, তালবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ, যশোর

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top