সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

কিঞ্চিৎ মিথ্যা : আসিফ মেহ্‌দী


প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:০৫

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪১

ছবিঃ আসিফ মেহ্‌দী

 

এক.
রাশিক বাগানবাড়ির ছাদে এসে দাঁড়াল। সবে রাত নয়টা; তবে গ্রাম এলাকা বলে শুনশান নীরবতায় কানে যেন ধাপা ধরে যাচ্ছে। ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক সেই নীরবতার গভীরতাই যেন বাড়িয়ে তুলেছে। ছাদের ওপর বেশ কিছু জোনাকি পোকা উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে, আকাশের তারাগুলো নেমে এসেছে আর চোখের সামনে ছোটাছুটি করছে। তারাজগতের প্রতি রাশিকের অসীম আগ্রহ। অনন্ত নক্ষত্রবীথির জন্য এক সাগর ভালোবাসা নিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্মেছে এই তরুণ। দেশ-বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা শেষে পড়ে আছে গ্রামের এই বাগানবাড়িতে। আজ ছাদে তার সঙ্গে উঠে এসেছে তোতা। বাগানবাড়িতে তোতা মিয়াই রাশিকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে, দেখভাল করে। তারকারাজির দিকে তাকাতেই তোতা কথা বলে উঠল, ‘স্যার, ডেইলি টুইংকেল ইস্টার দ্যাখতে আপনার ভালো লাগে?’
‘ক্যান, তোর ভালো লাগে না?’
‘লাগে। লিটিল ইস্টার দ্যাখতে লিটিল ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে সিনেমার ইস্টার। বিগ ইস্টার! উনারা যদি এমুন আকাশে ঝুইলা থাকত, তাইলে রোজ আপনার মতোন ছাদে আইসা ভিউ করতাম। রুফ-টপ ভিউ।’
‘তোকে না বলেছি বাংলা আর ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলবি না? শুনতে জগাখিচুড়ির মতো লাগে।’
‘কী করুম, স্যার? আমার জন্মের সময় মা মাথার পাশে ইংলিশ ডিকশোনারি রাইখা দিছিল। পুরা ডিকশোনারি তখনই মাথায় ইনোস্টল হইয়া গ্যাছে। তাছাড়া আমার বেবিটাইম কাটছে বিলাত ফেরত এক মামার কোলে। তাই নো ওয়ে। ইংলিশে আমি এক্সপাট হইয়া গেলাম। শুধু ইংলিশে কথা কইলে ব্যাড দেখায়। তাই বাংলার লগে ইংলিশ ব্লেন্ডার করি!’
‘তুই এখন যা এখান থেকে। আমি একটু একা থাকতে চাই।’
‘ওকে, হনারেবল স্যার। গুড নাইট।’
তোতা চলে যাওয়ার পর রাশিক প্রতিরাতের মতো বিস্মিত চোখে আকাশপানে তাকাল। মানুষ বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে বিস্মিত হয় আর রাশিক বিস্মিত হয় বাগানবাড়ির ছাদে উঠে মহাবিশ্ব দর্শন করে। ভাবতে থাকে-কী ভয়ংকর সুবিশাল সৌন্দর্যের আধারে সৃষ্টিকুল প্রতিপালিত হচ্ছে! দূর আকাশের বুকে জ্বলতে থাকা জোনাক পোকাসদৃশ প্রতিটি আলোকবিন্দু পৃথিবী থেকে অনেক লক্ষ গুণ বড়! তাছাড়া তাদের মধ্যকার দূরত্ব অকল্পনীয়। প্রকাণ্ড আকৃতির এসব তারা মহাকর্ষ নামক শক্তির বলে মহাশূন্যে ঝুলে আছে। ঘুরছে নিজের অক্ষপথে এবং সেইসঙ্গে ছুটে চলেছে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে। এমন কোটি-কোটি তারা মিলেমিশে থাকে একেকটি ছায়াপথ বা তারাপুঞ্জে। সূর্য যে ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিতে আছে, সেই গ্যালাক্সিতে আরও প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি তারা আছে! মহাবিশ্বে ছায়াপথ বা তারাপুঞ্জ আছে অন্তত দশ হাজার কোটি! তারা ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু-গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি। কী প্রকাণ্ড অনন্ত অসীম এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ড! এটির একাংশ বিনা টিকিটে এক পলক দেখার সুযোগ একটি রাতের জন্যও মিস করতে চায় না রাশিক। সে দেখে আর বিস্ময়ে কত কিছু ভাবে!

 

দুই.
দুই হাজার বিশ সাল পৃথিবীগ্রহের জন্য বিষময় একটি বছর বললে ভুল হবে না। চোখে দেখা যায় না, এমন এক জীবাণু দোর্দণ্ড প্রতাপে নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের দুনিয়া। চারদিকে করোনা ভাইরাস আতংক। করোনা দুর্যোগে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের মুখে ঝুলেছে মাস্ক, হাত ঢুকে গেছে গ্লাভসে, বন্ধ হয়ে গেছে মেলামেশা-আড্ডাবাজি। হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন নামক কিছু নতুন টার্মের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছে মানুষ। এভাবে বেঁচে থাকতে গিয়ে কেউ কেউ হাঁপিয়ে উঠেছে; অসহ্য বোধ করছে। তবে রাশিকের জীবনযাপনে কোনো পরিববর্তন ঘটেনি। কারণ- ঘুম, খাওয়া, গবেষণা আর মহাবিশ্ব দর্শন-এই ছকে রাশিকের জীবন বাঁধা। আগাগোড়া তার জীবন হোম কোয়ারেন্টাইনড এবং আইসোলেটেড।
রাশিকের বাবা-মা থাকেন ছোট ছেলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়। বড় ছেলে রাশিককে কত বোঝালেন। লাভ হয়নি। এই সুপরিসর ডুপ্লেক্স বাগানবাড়িতে গবেষণার প্রলোভন, কানঝাঝা করা নীরবতায় অনন্ত নক্ষত্রবীথি দর্শনের সুযোগ এক জীবনে রাশিক ছাড়তে পারবে বলে মনে হয় না। তবে সবসময় যে একাকীত্ব তার ভালো লাগে, তা নয়। কখনো-সখনো জীবনসঙ্গীর জন্য তার হৃদয়ে হাহাকার সৃষ্টি হয়। আপ্লুত হয়ে সে ভাবে, জীবনসাথীর খোঁজ কি কভু পাবে না? রাশিকের বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার বিয়ে না করার কারণটি বেশ উদ্ভট। রাশিক বিয়ে করতে চায় কোনো নারী এলিয়েনকে! দুটি ভিন্ন দেশের ছেলেমেয়ের মধ্যে যেমন বিয়ে হতে পারে, তেমনি রাশিকের যুক্তি দুটি ভিন্ন গ্রহের ছেলেমেয়ের মধ্যেও বিয়ে হতে পারে। কিন্তু মা-বাবাও রাশিককে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন যে এলিয়েন বলে কিছু নেই। লক্ষ-কোটি গ্রহের একটিতেও ভিনগ্রহী নেই-রাশিক এটি মানতে নারাজ। শেষমেশ অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে রাশিকের মা ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘বাবা, আমি তোকে প্রাণভরে দোয়া করে গেলাম, তুই যেন তোর মনের মতো বউ পাস।’
পুরো বাগানবাড়িই রাশিকের গবেষণাগার। তাই অবস্থা যাচ্ছেতাই। যাহোক, সম্প্রতি রাশিক নির্মাণ করেছে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক একটি যন্ত্র! তবে কাউকে এখন পর্যন্ত জানায়নি। কারণ, যন্ত্রটি সমাজ-সংসার তথা পৃথিবী গ্রহে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। যন্ত্রের নাম সে দিয়েছে, ‘মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র’। কাল্পনিক ‘লাই ডিটেক্টর’-এর মতো কাজ করে বাস্তবিক এই ‘মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র’। ভাগ্যিস করোনা মহামারী শুরুর আগেই রাশিকের সমস্ত গবেষণা শেষ হয়েছিল। তা নাহলে ঝামেলা হয়ে যেত। এটি নির্মাণের আগে গবেষণা পর্বে অজস্র ডাটা লেগেছে। সেসবের ব্যবস্থা হয়েছে নানা দেশ থেকে। মানুষের সত্যভাষণ এবং মিথ্যা সংলাপ রেকর্ড করে রাশিককে পাঠানো হতো অনলাইন ড্রাইভে। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরে জানতে পারেনি রাশিকের মূল উদ্দেশ্য শুধু ডাটা অ্যানালাইসিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং একটি অত্যাশ্চর্য যন্ত্র উদ্ভাবন।
রাশিক নিজের উদ্ভাবিত একটি সফটওয়্যার দিয়ে প্রতিটি অডিও ক্লিপ থেকে তার বিভিন্ন উপাংশ আলাদা করেছে। অডিওগুলো বিভিন্ন উপাংশে ভাগ করার এক পর্যায়ে রাশিক আবিষ্কার করল-মিথ্যা বললেই অডিওতে যুক্ত হয়ে যায় এক্সট্রা কিছু উপাংশ, যা বক্তা নিজেও টের পায় না! বেশিরভাগ ভাষার অডিও ক্লিপগুলোর ভয়েসের অর্থ রাশিক না বুঝতে পারলেও, মিথ্যা কথার ক্ষেত্রে উপাংশগুলো ঠিকই পাওয়া গেছে! অর্থাৎ প্রকৃতিগতভাবে কোনো সৃষ্ট জীবের শরীর চায় না তার সত্ত্বা মিথ্যা বলুক। তাই বাড়তি উপাংশ শরীর অজানা কোনো উপায়ে ভয়েসে যুক্ত করে দেয়। সেসব উপাংশ ডিটেক্টর সার্কিট বানানোর মাধ্যমেই রাশিক নির্মাণ করেছে ‘মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র’। এছাড়াও রাশিকের অনুসিদ্ধান্ত-প্রকৃতি মিথ্যা সহ্য করে না; তাই সব জীবের ক্ষেত্রেই মিথ্যাবচনে এসব উপাংশ অটো-জেনারেট হয়। সেকারণে ‘মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র’ সমস্ত জীবের জন্য কার্যকরী।


তিন.
ডুপ্লেক্স বাগানবাড়ির দোতলায় রাশিকের বসার চেম্বার। সকালবেলায় এক কাপ চা ও একটি বই নিয়ে নিজের চেম্বারে বসল রাশিক। সবেমাত্র চায়ে চুমুক দিয়েছে, এমন সময় তোতা দৌড়ে ঢুকল। বলল, ‘স্যার, গুয়েস্ট কামিং।’
বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিজ্ঞানপ্রেমীরা মাঝেসাঝে রাশিকের সঙ্গে দেখা করতে আসে। কিন্তু তোতাকে এমন এলোপাতাড়ি ছুটে আসতে কখনো দেখা যায়নি। তাই ধমক দিয়ে রাশিক বলল, ‘কতবার বলব, শব্দটা গুয়েস্ট না; গেস্ট! আর এভাবে লাফিয়ে আসার কী আছে?’
‘স্যার, পাবলিক না; সিনেমার ইস্টার কামিং।’
‘বেশি কথা বলবি না। ডেকে নিয়ে আয়’।
অতিথিকে দেখে রাশিকও ধাক্কা খেল। এত রূপবতী নারী সে জীবনেও দেখেনি। নিজেকে সামলে নিয়ে রাশিক বলল, ‘বসুন। কী ব্যাপার বলুন তো?’
‘না, তেমন কিছু না। আপনি অনেক বড় একজন বিজ্ঞানী। ভাবলাম, দেখা করে যাই।’
‘না, না, আমি তো তেমন কেউ না। তারপরও আসার জন্য কৃতজ্ঞতা।’
‘আসলে আপনার সাম্প্রতিক আবিষ্কারটা আমাকে ভীষণভাবে অবাক করেছে।’
‘কোনটি বলুন তো?’
‘ওই যে মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র!’
রাশিক এবার চুপ হয়ে গেল। এই যন্ত্রের কথা সে ছাড়া আর কেউ জানে না। কোনো জার্নালেও এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কিছু লেখেনি সে। বিস্মিত হয়ে রাশিক জিজ্ঞেস করল, ‘এই যন্ত্র সম্পর্কে আপনি জানলেন কীভাবে?’
‘এত সুন্দর একটি যন্ত্র আবিষ্কার হলো; আর আমি জানব না! আপনার যন্ত্রটি কি দেখতে পারি একবারের জন্য?’
রাশিক কিছুটা ইতস্তত করল কিন্তু সে নিরুপায়। পাশের একটি সেলফ থেকে মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্রটি এনে টেবিলের ওপর রাখল। টেবিলের একপাশে রাশিক আর অন্যপাশে আগন্তুক তরুণী বসে আছে। রাশিক যন্ত্রটি অন করল। এখন এটি যেকোনো মিথ্যা ধরতে পারবে। কারণ, এই চেম্বারের জন্য তা ক্যালিব্রেট করা আছে।
মেয়েটি বলল, ‘যন্ত্রের কাজ কি একদম শেষ হয়েছে?’
রাশিক উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ’।
‘মিথ্যা বললে কীভাবে বোঝা যায়?’
‘আওয়াজ করে। ক্যা-ক্যা আওয়াজ।’
‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে আমি যে মাস্ক-গ্লাভস ছাড়া চলে এসেছি, এতে মাইন্ড করেননি তো?’
‘না, না, এতে মাইন্ড করার কী আছে?’ রাশিক এই কথা বলতেই যন্ত্রটি ক্যা-ক্যা করে উঠল।
মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, ‘যন্ত্রটি আওয়াজ করল। তার মানে, আপনি মাইন্ড করেছেন।’
রাশিক একটু থেমে বলল, ‘জি, তবে মাস্কের জন্য না। মাইন্ড করেছি এই সময়ে আসার জন্য। এখন আমার “মি টাইম” চলছে। “মি টাইমে” আমি নিজেকে সময় দিই। বই পড়ি, চা পান করি।’
‘আর কতদিন এভাবে একা থাকতে চান?’
‘সারাজীবন একা থাকলেও আমরা সমস্যা নাই।’ আবারও যন্ত্রটি ক্যা-ক্যা করে উঠল।
মেয়েটি এবারও হেসে বলল, ‘দেখলেন তো, নিজের যন্ত্রের কাছে নিজেই ধরা খেলেন। সারাজীবন একাকী থাকার ইচ্ছা আপনার নেই।’
‘ধন্যবাদ, আপনি কীজন্য এসেছেন বললে খুশি হব।’
‘আমি অনেকদিন ধরে আপনাকে অনুসরণ করছি। কীভাবে করছি, তার সহজ উত্তর-প্রযুক্তির মাধ্যমে। সত্যি বলতে অনুসরণ করতে করতে আমি আপনার ভীষণ ভক্ত হয়ে গেছি। আর ভক্ত হিসেবে তো আপনার সাক্ষাৎ পেতেই পারি, তাই না?’
রাশিক চুপ থাকল মেয়েটির কথা শুনে। রাশিককে চুপ দেখে মেয়েটি বলল, ‘কথা বলছেন না যে? আমাকে হয়তো আপনি খারাপ ভাবছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ভালো মানুষ।’
এইবার রাশিককে ভড়কে দিয়ে মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্রটি ক্যা-ক্যা করে উঠল। রাশিক ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াল। তার মনে অজানা আশংকা ভর করা শুরু করল। মেয়েটি বলল, ‘আপনি কাইন্ডলি ঘাবড়াবেন না। যন্ত্রটি কেন শব্দ করল বুঝতে পারছি না। আমি তো মিথ্যা বলিনি।’
এটুকু বলতেই আবার যন্ত্রটি ক্যা-ক্যা করল।
মেয়েটি বলল, ‘আপনি ঘামছেন। আমি আপনাকে কতটা পছন্দ করি, সেটা বলতে এসেছি। দয়াকরে ভুল বুঝবেন না। সত্যি বলছি, আমি খুবই ভালো মানুষ।’
যন্ত্রটি এবার ক্যা-ক্যা করতেই থাকল। রাশিক কাঁপা কাঁপা হাতে যন্ত্রটি নিল এবং একটি বাটন চেপে ধরে শব্দ থামাল। বলল, ‘একই ধরনের মিথ্যা তিনবার বললে যন্ত্রটি এমন অনর্গল ক্যা-ক্যা করা শুরু করে!’
রাশিকের মনে সন্দেহ ও ভয় জেঁকে বসেছে-এই আগন্তুক নিশ্চয়ই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তার বাড়িতে হাজির হয়েছে! ঠান্ডা কণ্ঠে সে বলল, ‘আপনি কাইন্ডলি চলে গেলে আমি খুশি হব।’
মেয়েটি বলল, ‘কিন্তু আমি যে আপনাকে প্রোপোজ করতে এসেছি।’
যন্ত্র আর আওয়াজ করল না। মেয়েটি এবার সত্যি বলেছে। কিন্তু যাকে খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যন্ত্র, তার প্রপোজাল বিবেচনা করার মতো মানসিক অবস্থা রাশিকের নেই। রাশিক বলল, ‘দেখুন, খারাপ মানুষদের সঙ্গে আমি বন্ধুত্ব করি না। আপনি চলে গেলে খুশি হব।’
মেয়েটি এক মুহূর্ত কিছু চিন্তা করল। তারপর বলল, ‘ইউরেকা! ইউরেকা!’
‘ইউরেকা ইউরেকা করছেন কেন?’
‘যন্ত্র আমাকে খারাপ ভাবছে না। প্রমাণ দেখতে চান?’
রাশিক চুপ থাকল। মেয়েটি জোরে বলে উঠল, ‘আমি খুব খারাপ মানুষ।’
যন্ত্র ক্যা-ক্যা করে উঠল! রাশিক ভীষণ অবাক হলো। একজন মানুষ ভালোও না, খারাপও না-যন্ত্রের এমন আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না রাশিক।
মেয়েটি হাসলে অনিন্দ্য সুন্দর লাগে। সে হাসিমুখে বলল, ‘মুখ কালো করে রাখবেন না। এত টেনশনের কিছু নেই। এখনই আপনার কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যন্ত্র আর আওয়াজ করবে না।’
‘জি, তাহলে সত্যটা বলুন দয়াকরে।’
মেয়েটি মোহনীয় হাসিতে তুমি করে সম্বোধনের মাধ্যমে বলল, ‘আমি খুব ভালো এলিয়েন। আমি তোমাকে ভালোবাসি, রাশিক। তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’
যন্ত্র এবার আওয়াজ করল না। এই কথা শুনে রাশিকের মুখ থেকেও কোনো আওয়াজ বেরোল না। ঘটনার আকস্মিকতায় সে থ। মেয়েটির কথায় যে কিঞ্চিৎ মিথ্যা লুকিয়ে ছিল, তা যে এত মধুর হবে, সেটি রাশিক কল্পনাও করেনি।

সমাপ্ত

 

আসিফ মেহ্‌দী
কথাসাহিত্যিক ও প্রকৌশলী

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top