সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


পাঁচ বছর পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে


প্রকাশিত:
১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১০

আপডেট:
১৬ মে ২০২৪ ২০:৩৬

পাঁচ বছর পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া একেবারেই কমিয়ে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। কর্মী নিতে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে আমিরাত। ১৯টি খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেবে আমিরাত। সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৬০০ ডলার (৫০ হাজার টাকা)।



প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণির কর্মী যাবেন সমঝোতা স্মারকের অধীনে। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সমকালকে বলেছেন, প্রথম পর্যায়ে শুধু নারীরা যাবেন। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম সমকালকে জানান, নারী ও পুরুষ দুই ধরনের কর্মী যাবেন। তিনি বলেন, 'নারীদের কাজ করার মতো ১৯টি খাতই নেই আরব আমিরাতে।' 



সমঝোতা স্মারকের আওতায় কত সংখ্যক কর্মী আরব আমিরাত যাবেন, তা নির্ধারণ করা হয়নি। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী সমকালকে বলেন, আরব আমিরাতের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠানো হবে। তাদের চাহিদার বিপরীতে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হবে। সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। মন্ত্রী জানান, কর্মীদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন হবে ৬০০ ডলার। কাজের ও কর্মীর দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন এর চেয়ে বেশি হতে পারে। 



২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে চার লাখ ২০ হাজার কর্মী নেয় আমিরাত। পরের বছরগুলোতে বার্ষিক দুই লাখের বেশি করে বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যান। ২০১২ সালে দুই লাখ ১৫ হাজার কর্মী আমিরাত যান। পরের বছর থেকেই জনশক্তি রফতানি তলানিতে ঠেকে। ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ২৪১ বাংলাদেশি কর্মী যান আমিরাতে। তাদের ১৩ হাজার ৭১০ জনই ছিলেন নারী। গত বছর মাত্র চার হাজার বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গিয়েছেন; চাকরি নিয়েছেন। এর মধ্যে সোয়া তিন হাজারই নারী কর্মী।



প্রবাসীকল্যাণ সূত্র জানিয়েছে, 'ওয়ার্ল্ড এক্সপো'র স্বাগতিক দেশ হতে চেয়েছিল তেলসমৃদ্ধ আরব আমিরাত। কিন্তু বাংলাদেশ ভোট দেয় রাশিয়ার পক্ষে। 'ক্ষুব্ধ' আমিরাত বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। শ্রমবাজার খুলতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব আমিরাত সফরে গিয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিতে অনুরোধ জানান। 



পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় কর্মী রফতানির বাধা উঠে যাওয়াকে বড় সাফল্য বলে দাবি করেছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, একসময়ে আমিরাত ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। নানা কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তা আবার চালু করতে পারা অনেক বড় অর্জন। আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. নমিতা হালদারের বরাতে তিনি জানান, সমঝোতা স্মারক সইয়ের দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে। শিগগির এর অধীনে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। 



আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ১৯টি ক্যাটাগরির কর্মী নিয়োগে চুক্তি সই হয়েছে। কয়েক মাসের আলাপ-আলোচনার পর সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করা হয়। দুবাইয়ের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উভয়ে দেশের শেষ পর্যায়ের আলোচনার পর তা চূড়ান্ত হয়। 



আমিরাতে মানবসম্পদমন্ত্রী নাসের আল হামলির উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. নমিতা হালদার ও আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সাইফ আহমেদ আল সুআইদি নিজ নিজ পক্ষে স্মারকে সই করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। 



সমঝোতা স্মারকে কর্মী নিয়োগের বিধান, পদ্ধতি, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য, কর্মীদের অধিকার, সুযোগ-সবিধা, দায়িত্ব ও কর্তব্য, নিয়োগ চুক্তির বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে। পৃথক বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আরব আমিরাতে কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় ২০১৭ সালের শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে। সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি থাকবে।



সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল বাংলাদেশ। তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা ছিল দেশটিতে। কিন্তু বহুল আলোচিত এ স্মারক সইয়ের পরদিনই কর্মী নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করে মালয়েশিয়া। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ সমকালকে বলেছেন, তারা আশা করছেন, আরব আমিরাতের বেলায় তেমন কিছু হবে না। এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে কর্মী পাঠাতে পারবে।



বিনা খরচে নারী কর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। মাসিক ৮০০ রিয়াল (১৬ হাজার টাকা) বেতনে প্রায় দেড় লাখ নারী তিন বছরে সৌদি গিয়েছেন। তবে অভিযোগ, নারীদের অনেকেই সেখানে নিপীড়িত হচ্ছেন। চার হাজার নির্যাতিত কর্মী ফিরেছেন তিন বছরে। অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে আমিরাতে যেন বাংলাদেশি নিরাপদ কর্মপরিবেশ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top