সিডনী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


জার্মানিতে শরণার্থীদের গির্জায় আশ্রয়ের ৪০ বছর


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০৭

আপডেট:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:১৫


জার্মানিতে জামাল কামাল আলতুনের বিচার চলছিল (১৯৮৩ সালের ঘটনা) তখন। বিচারাধীন অবস্থায় বার্লিনের একটি আদালতের ষষ্ঠতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তুরস্কের ওই আশ্রয়প্রার্থী। এ ঘটনার পর জার্মানিতে গির্জায় আশ্রয়ের বিষয়টি চালু হয়েছিল। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলতুনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে কিনা সেই রায় দেয়ার কথা ছিল বার্লিনের উচ্চআদালতের। তুরস্কে তখন সামরিক শাসন চলছিল এবং বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন চলছিল। ২৩ বছর বয়সী আলতুনের ঘটনা পুরো জার্মানিতে আলোড়ন তুলেছিল। তার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পর ফিলিস্তিনের কয়েকজন শরণার্থী বার্লিনের হলিক্রস গির্জার যাজক ইয়ুর্গেন কোয়ানটের কাছে গিয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেন।


আবেদনে গির্জায় আশ্রয় দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রাচীন খ্রিস্টান ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন তারা। পরবর্তীতে গির্জায় তাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ৭৯ বছর বয়সী ইয়ুর্গেন কোয়ানট এ বিষয়ে জানান, ‘আমরা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আরও সক্রিয় হতে চেয়েছিলাম।’

জার্মানিতে গির্জায় আশ্রয়ের বিষয়টি ঠিক এভাবেই শুরু হয়েছিল। গত ৪০ বছরে ক্যাথলিক, প্রোট্যাস্ট্যান্ট ও স্বাধীন গির্জায় কয়েক হাজার জনকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান ইকুমেনিক্যাল কমিটি।


এছাড়া, যে শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তটিকে জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে, তাদেরকেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়ে থাকে গির্জা কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মধ্যভাগে জার্মান ইকুমেনিক্যাল কমিটি জানিয়েছিল, ‘বর্তমানে অন্তত ৬৫৫ জন গির্জায় আশ্রয়ে আছেন, যার মধ্যে ১৩৬টি শিশু আছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিয়ম অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম যে ইইউ দেশে পৌঁছাবেন সে দেশকেই তার আশ্রয় আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তবে কোনো আশ্রয়প্রার্থী যদি জার্মানিতে অন্তত ছয় মাস বাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই আইনের ব্যতিক্রম হতে পারে।

এছাড়া, ১৯৮৩ সালে যখন গির্জায় আশ্রয়দান শুরু হয়েছিল, তখন প্রথম দিকে শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে রক্ষা করতে অনেকদিনের জন্য গির্জায় থাকার ব্যবস্থা করা হতো। তবে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশে হস্তান্তর না করে দেশটিতে থাকার অনুমতি দেয়া হয়।

তবে গির্জায় আশ্রয়ের বিষয়টি এখনো বিতর্কিত। রাজনীতিবিদরা মাঝেমধ্যে গির্জা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। অনেক সময় যাজকদের কাউকে কেন আশ্রয় দেয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যা দিতে আদালতে হাজির হতে হয়। এমনকি চলতি বছর জুলাইয়ে ফিয়ারসেন শহরে অভিবাসন কর্মকর্তারা এক গির্জায় ঢুকে সেখানে আশ্রয়ে থাকা এক কুর্দি দম্পতিকে বের করে দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হলে তাদের পোল্যান্ডে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top