সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


দুঃখী মানুষের মুখের হাসি, আমার জীবনে বড় পাওয়া: শেখ হাসিনা


প্রকাশিত:
২১ জুন ২০২১ ১৭:৫১

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৬

 

প্রভাত ফেরী: আওয়ামী লীগও মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যেমনটি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছি। একটি ঘর পেয়ে দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি দেখতে পাই, এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কিছু নেই। মানুষের জন্য মানুষ- এটাই সব থেকে বড় কথা। ক্ষমতা আমাদের কাছে ভোগের বিষয় নয়। কীভাবে মানুষকে ভালো রাখা যায় এটা হলো সবচেয়ে বড়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি বাংলাদেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করব। এর জন্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছি। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তৃণমূলের মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করছি। বস্তিবাসীদের ঢাকায় ভাড়ায় থাকার জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। তাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করছি। শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাব, নিজে ভালো থাকব সেটা তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ, মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ। মানুষের সেবক হিসাবে প্রথম যখন সরকার গঠন করি, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, যে সেবক হিসাবেই নিজেকে আমরা তৈরি করেছি এবং সেভাবেই সাহায্য করে যাচ্ছি কাজ করে যাচ্ছি।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোববার সকালে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ঘরপ্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৬ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা শুধু ‘লুটপাটের রাজনীতি’ করে গেছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য তাদের কোনো চিন্তাই ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে সীমিত সম্পদ নিয়েই আমরা কিন্তু এ ছিন্নমূল, গৃহহারা, ভূমিহীন মানুষদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছি। এরমধ্যে রয়েছে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে কক্সবাজারে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। আমাদের সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন। পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা এ কাজে এগিয়ে এসেছে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- আবারও এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে জমি পাব না, সেখানে জমি কিনে ঘর করে দেব। এভাবে আমরা চাচ্ছি, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের ঘরবাড়ি করে দেব।
গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। শুরুতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে একটি থিম সং বাজানো হয়। পরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শেখ হাসিনা মডেল শীর্ষক’ একটি তথ্য চিত্র পাওয়ার পয়েন্টের মধ্যমে তুলে ধরেন ড. কায়কাউস। সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন উপকারভোগীরা। এ সময় কুড়িগ্রাম সদর, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, শেরপুরের ঝিনাইগাতী এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখানকার উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঘর পেয়ে যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম : প্রথমেই কুড়িগ্রাম সদরের আটগাছি ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সেখানকার উপকারভোগী রিকশা চালক আব্দুল প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, নিজের কোনো জয়গা জমি ছিল না। এখন বাড়ি-ঘর হয়েছে। নতুন জীবন ফিরে পেলাম। যতদিন বেঁচে থাকব, নামাজ পড়ে আপনার জন্য, আপনার বাবার জন্য দোয়া করব। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাকে একটা ঠিকানা করে দিতে পেরে আমিও অনেক খুশি হলাম। দোয়া করবেন যেন এভাবেই মানুষের জন্য করে যেতে পারি।
আগে ছিলাম ভিখারি, এখন লাখপতি : এরপর প্রধানমন্ত্রী মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদী গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। সেখানে শিলা দেবী নামের এক বৃদ্ধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীকে সাতকড়া রান্না করে খাওয়ানোর আবদার করেন। স্বীকৃতি না মিললেও নিজেকে বীরাঙ্গনা দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন আমি লাখপতি। শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ভগবান তাকে দীর্ঘজীবী করুন। আর কামনা করি বঙ্গবন্ধুর আত্মা, আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা- এরা যেন শান্তি পায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে। শিলা দেবীকে বোন বলে সম্বোধন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি যদি সুযোগ পাই নিশ্চয়ই আসার চেষ্টা করব। আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ- এ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আত্মত্যাগ কিন্তু বৃথা যায় না। আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন সবাই ভালো থাকেন এ কামনা করি।
শুধু ঘর নয়, বিদ্যুৎ-পানিও পেয়েছি : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ। এসময় ঘর ও জমি পাওয়া স্বামী পরিত্যক্ত তাসলিমা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু ঘর নয়, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। আমার মাথায় যত চুল আছে আল্লাহ আপনাকে ততো হায়াত দারাজ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব খুশি হলাম আপনারা ঘর পেয়ে ভালো আছেন, আপনারা ভালো থাকেন। যে ঘরটা দিলাম সবাই সেটার যত্ন নিয়েন।
আমাদের এখন আর কষ্ট নেই : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাবি ইউনিয়ের একটি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। এ সময় জাহানারা বেগম বলেন, ‘আপনি ঘর দিয়েছেন আমি খুশি হয়েছি। পোলা-মাইয়া খুশি হইছে। আল্লাহ তুঁয়ারে হায়াত দিয়োক। আরার কনো কষ্ট নাই। আগে ছিল কষ্ট, এখন আর কষ্ট নাই।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব খুশি হলাম কথা শুনে। মানুষের মধ্যে যে আনন্দ এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া। সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এর আগে দুই শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দ্বিতীয় ধাপে রোববার আরও সাড়ে ৫৩ হাজার অসহায় পরিবারকে নতুন ঘরের দলিলসহ চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হলো। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top