সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


হিজড়া নজরুলের বিজয়, সমাজ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং ট্যাবুর অবসান : সাইফুর রহমান কায়েস


প্রকাশিত:
৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:১৫

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২০

ছবিঃ হিজড়া নজরুল

 

কুষ্টিয়ার ত্রিলোচনপুরে হিজড়া নজরুলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করলেও চমকিত হবার কিছু নাই। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই বিজয় জনগণের লিঙ্গবোধক চেতনার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে। 

যে সমাজে হিজড়াদেরকে ট্যাবু হিসাবে বিবেচনা করা হয় সেই সমাজেই নজরুল একজন জনপ্রতিনিধি হবার মতো গৌরব অর্জন করেছেন- যা কীনা জনসাধারণের উদারনৈতিক সাম্য ও সমতার ভিত্তিকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দানের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করবে বলেই আমরা মনে করি। 

লিঙ্গনিরপেক্ষতা হিজড়াদের শারীরিক গঠনকে তুলে ধরে। এরা না নারী, না পুরুষ। আবার উভয় বৈশিষ্ট্যময় শারীরিক গঠনের জন্য এরা ট্যাবু হিসাবে বিবেচিত। ফলে এরা চিরকাল প্রচলিত  সমাজব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়া পৃথককৃত জনগোষ্ঠী বলেই বিবেচিত হয়ে আসছে। সমাজব্যবস্থার মূলস্রোতে এদের জায়গা হয় নি কোনোদিনই। এরা তাই মৌলিক অধিকার লাভের মুখ কখনোই দেখেন  নি। এদের প্রতি সমাজ এবং রাষ্ট্র- উভয় প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্তব্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নিজেদের উদাসীনতা কিংবা এদেরকে কোনোপ্রকার সত্ত্বাধিকারী বিবেচনারহিত হওয়ায় এদের বঞ্চনা কখনো ঘুচানোর উদ্যোগ না নেয়ায় হিজড়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরা কখনো মানুষ পদবাচ্যে বিভূষিত হন নি। ফলে এদের ভাগ্যে দুর্ভাগ্যসূচক রোজনামচা কেবল ভারী হয়ে আমাদের হৃদয়ের পারদ গলাতে ব্যর্থ হয়েছে এতোদিন। সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি। এদের ভেতরে থাকা গুণাবলী স্বীকৃত হয় নি কোনোদিনই । চাকুরী, ব্যবসা বাণিজ্যে, সামাজিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এরা উপেক্ষিত থেকে গেছেন। এদেরকে মনে করা হয় বেশ্যা বা প্রজারঞ্জক হিসাবে। কিন্তু এদের মাঝেও যে প্রতিভা আছে সেটি নজরুল দেখিয়ে দিলেন। কারো শারীরিক গঠন কোনো সৃষ্টিশীল কাজের জন্য বাধা হতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া না জানা মানুষ তিনি- পৃথিবীর পাঠশালা থেকে শিখেছেন মানবতাবাদ আর নিয়েছেন সেবা করার দীক্ষা । তাই জনসেবক নির্বাচিত হবার বিষয়টি মোটেই অযাচিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। দীর্ঘ বঞ্চনার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠার ফলে নিজের ভেতরে জেগে ওঠা আত্মশক্তিকে তিনি কল্যাণের দিকে নিয়ে গেছেন। তার এই বিজয় বিশ্বব্যাপী বঞ্চনাকারীদের বিরুদ্ধে একটি অশনিসংকেত। তার বিজয়কেতন উড়াবো সকলে মিলে। তার জন্য সাধুবাদ এবং অভিনন্দন । তিনিই হবেন নতুন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্ত কণ্ঠস্বর । স্যালুট আরেকবার এবং পুনর্বার নজরুল, আপনাকে।

 

দেশের নানাস্থানে হিজড়াদেরকে নিপীড়ন করা হয়। শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। যেটি সভ্য দুনিয়ার রীতিবিরুদ্ধ। আমরা তা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। তাদেরকে সমাজের, রাষ্ট্রের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতক্রমে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাম্য, সমতা ও ন্যায্যতা প্রাপ্তির বিষয়টিতে নজর দেয়া এখন সময়ের দাবী। এদেরকে দক্ষ জনশক্তিরূপে গড়ে তুলে সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় টেকসই উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটবে বলেই আমাদের বদ্ধমূল ধারণা।

 

সাইফুর রহমান কায়েস
প্রধান সম্পাদক 
শব্দকথা টোয়েন্যিফোর ডটকম 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top