সরকারকে রাজনৈতিক কারণে মামলা না করার তাগিদ জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের
প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১০
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭
জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ফলকার টুর্ক শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সদস্যসহ ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা না করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকসহ অনেকের বিরুদ্ধে খুনসহ এমন অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে, তদন্তে যার সত্যতা মেলেনি।
রাজধানীতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। ঢালাও মামলা দায়েরের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের করা একটি কমিটির উল্লেখ করে এই জাতিসংঘ কর্মকর্তা বলেন, এমন ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার।
দুই দিনের সফরে ফলকার টুর্ক গত মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। এই সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের ছয় উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার টেকসই করার ওপর জোর দিয়ে ফলকার টুর্ক বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কয়েক দশকে গভীর হওয়া রাজনৈতিক বিভক্তি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত অপরাধের মাধ্যমে যেসব ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে হবে।
এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংলাপ ও ঘটনার সত্যতা স্বীকারের একটি প্রক্রিয়া চালুর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দমনমূলক ও সহিংস সময়ের পর সামনে এগোতে হলে সত্যতা স্বীকারের মাধ্যমে ক্ষত কাটিয়ে ওঠার একটি জাতীয় প্রক্রিয়া দরকার হয়।
ফলকার টুর্ক বলেন, গণ-অভ্যুত্থান থেকে এ পর্যন্ত যা অর্জন হলো, তাতে মানবাধিকারকে কেন্দ্রে রেখে সুশাসন, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নীতিমালাগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হলে রাষ্ট্রে বিভক্তি, বৈষম্য ও বিচারহীনতার অবসানের জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। প্রতিশোধপরায়ণতা, দুর্নীতি ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না, এমন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে বিরুদ্ধমত দমনে অভ্যস্ত হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় এবং দমনমূলক আইনের সংস্কারের তাগিদ দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান বলেন, শুধু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে। আর পুরো প্রক্রিয়াটি হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক—রাজনৈতিক আদর্শ, ধর্মীয় পরিচয়, গোত্র, লিঙ্গ ও শ্রেণিনির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ যাতে নিশ্চিত করা যায়।
ফলকার টুর্ক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চালানো এবং বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের অবসান ঘটানোরও তাগিদ দেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক
ফলকার টুর্ক গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, গত জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।
স্বৈরাচারী সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিশনের সঙ্গে নিজের আলাপের উল্লেখ করে ফলকার টুর্ক বলেন, এমন অনেক কিছু আছে, যা ঠিক করা দরকার। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন ও সম্পূর্ণ কার্যকর করতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ঢাকায় তাদের উপস্থিতি জোরদার করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা এই জাতিসংঘ কর্মকর্তাকে বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আর উন্নয়ন ও মানবাধিকার যেন একসঙ্গে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, তাঁর সরকার আগের সরকারের ভুল ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি করবে না।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি ও আঞ্চলিক সমস্যাটির টেকসই সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান।
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর চালুর সিদ্ধান্ত হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফলকার টুর্ক গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর খোলার বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দপ্তরটি খুলতে দেওয়া হবে না, এটাও তাদের বলা হয়নি, এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: