সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০


নতুন বই বিতরণের মাধ্যমে সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত


প্রকাশিত:
২ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৩৮

আপডেট:
২ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৪০

বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা      ছবি: প্রভাত ফেরী

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: বছরের প্রথম দিনটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল পরম আনন্দের। উত্তীর্ণ হয়ে নতুন শ্রেণিতে উঠেছে। শিশু-কিশোররা খালি হাতে স্কুলে গিয়েছে আর নতুন বই নিয়ে ঘরে ফিরেছে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণের উচ্ছ্বাস আর নতুন বই প্রাপ্তির আনন্দ দুয়ে মিলে খুশির বন্যা বয়ে গেছে দেশের প্রতিটি স্কুলে। নতুন বইয়ের সোঁদা গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে শিশু-কিশোররা। কোমল প্রাণের যত স্বপ্ন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে নতুন বইয়ের পাতার ভাঁজে।

শিশুদের মাঝে বই বিতরণ করছেন সাকিব আল হাসান   ছবি: প্রভাত ফেরী

বুধবার সকালে সাভারের অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে ঢুকতেই কানে ভেসে আসে শিশু-কিশোরদের আনন্দের প্রতিধ্বনি। সবুজ মাঠজুড়ে হাজার হাজার শিশু। মাথায় তাদের লাল রঙের ক্যাপ। শিশুদের কলরবে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরাও। ঢাকঢোল আর ব্যান্ড দলের বাজনা উৎসবকে পুরোপুরি মাতিয়ে দেয়। পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কেন্দ্রীয় এ আয়োজন উপলক্ষে রঙবেরঙের পতাকা আর ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির আঙিনা। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু এ অনুষ্ঠানে রঙিন বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মতোই একই চিত্র ছিল দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুখর হয়ে ওঠে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছাসে।

নতুন বছরের প্রথম দিনে উপহার হিসেবে দেশের সাড়ে চার কোটি শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরাও উৎসবে অংশ নেন। নতুন বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে সরকার। এ বছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি ভাষায় বই পাচ্ছে। গত চার বছর ধরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই বিতরণ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করা হয়েছে।

উচ্ছ্বসিত শিশুদের সাথে সাকিব আল হাসান    ছবি: প্রভাত ফেরী

পাঠ্যপুস্তক উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করছি যাতে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ কমানো যায় এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা যায়। শুধু জিপিএ ফাইভের পেছনে যাব না। আমি পড়বো আমি শিখবো আমি চেষ্টা করব। জিপিএ-ফাইভ ছাড়া আর কোন কাজ করবো না, কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেব না এরকম করা যাবে না। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সহিংসতা থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।

অন্যদিকে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

বই হাতে উচ্ছ্বসিত শিশুরা   ছবি: প্রভাত ফেরীসকালের মিষ্টি রোদে ঝলমল করছে চারপাশ। কয়েকদিনের ঠান্ডা কেটে যাওয়ায় প্রকৃতিও যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। আর নতুন বছরের প্রথম দিনের এই পরিবেশে দেশব্যাপী পালিত বই উৎসবের রঙ ছড়িয়েছে বেশ। সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। কচিকাঁচাদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার রঙিন আয়োজনে বাড়তি আকর্ষণ ছিলেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রস্তুতির সময় তিনি শিশুদের সঙ্গে গল্প জমিয়েছেন। তাদের নানা গল্প ও আনন্দ উচ্ছ্বাসে নিজেকে শামিল করে হেসে হয়েছেন কুটি কুটি। বই উৎসবের এই দৃশ্যে অনেকের চোখ আটকে যায়। অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করেন দৃশ্যটি।

রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়োজন করা হয় এই বই উৎসব। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় শিশু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। উৎসবের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান পরিববেশন করে শিশুরা। সংগীত সকালটি মুখর হয়ে ওঠে লালন সাঁইয়ের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গানে। এরপর নৃত্য, গম্ভীরাসহ বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শিশুদের সাংস্কৃতিক পর্ব শেষ হয়। এরপর প্রধান অতিথিদের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠান চলে বই উৎসব নিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  কেন্দ্রীয় মাঠে নতুন বই হাতে শিক্ষার্থীরা   ছবি: প্রভাত ফেরী

শিশুদের আনুষ্ঠানিকভাবে বই তুলে দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় শেষ পর্ব। দীর্ঘ সময় মঞ্চে বসে থাকা সাকিব আল হাসান উঠে দাঁড়ান অতিথিদের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুদের প্রস্তুত করা হয় অতিথিদের হাত থেকে বই নেওয়ার জন্য। শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে অতিথিরা প্রস্তুত হন। সাকিব আল হাসান এই ফাঁকে শিশুদের সঙ্গে আলাপ জমান। শিশুদের নানা প্রশ্ন করেন, শিশুদের সঙ্গে মেতে ওঠেন আনন্দ-গল্পে। আর এভাবেই শেষ হয় এবারের পাঠ্যপুস্তক উৎসব।


বিষয়: নতুন বই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top