সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:৪৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:৩০

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই কাজ করছে সেখানে তারা সুনাম অর্জন করছে। তাদের একটা ভালো জিনিস যেটা শুধু একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবেই নয়, তাদের মধ্যে যে মানবিক গুণাবলি রয়েছে সেই মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে তারা জনগণের হৃদয়ে একটা স্থান করে নিয়েছে। আমি যখন বিদেশে যাই বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান তারা যখন প্রশংসা করে তখন গর্বে আমার বুক ভরে যায়। রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ২০১৯-২০ গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের সমাপনী ও সনদপত্র (পিএসসি) বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ডিএসসিএসসির শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব যেমন পালন করছে, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। কিন্তু একটি বিষয় বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করব, সেটা হচ্ছে সমাজে যখন ‘ব্যাধি’ দেখা যায় সেটা নিয়ে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে সমাজকে রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলোর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি ও মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ের মেধা, শক্তি, মনন দেশের কাজে লাগবে। উন্নয়নের কাজে লাগবে। তারা বিপথে চলে যাক, নিজেদের জীবনটা ধ্বংস করুকÑ সেটা আমরা কখনও চাই না।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রাখছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছ থেকেই আসছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন বিশে্বর যেকোনো দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, সেই সক্ষমতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রাখছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী আজকে আমাদের দেশের একটা সুনাম অর্জিত হয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জনগণের একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে যেকোনো দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ১১ বছর আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বক্ষেত্রে আমরা আধুনিক সাজসরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করতে পেরেছি।

সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় এটা মনে করি, আমাদের প্রশিক্ষণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিন্তু সবাই পারে আরও দক্ষতার সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বিদেশে আমরা যখন ছিলাম বা যেতাম তখন বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলা হতো, যে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, বাংলাদেশ মানে দুর্যোগের দেশ। কিন্তু আজকে কেউ এ কথা বলে না।

গত এক দশকে আজকে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ, আমরা খুব শিগগিরই প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হব। কোনো গ্রাম আর অবহেলিত থাকবে না। গ্রামের মানুষ যারা বসবাস করে তারা সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পাবে। সেভাবেই আমরা আমাদের প্রতিটি গ্রামকে সাজাতে চাই, গড়ে তুলতে চাই এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে চাই। দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। কেউ ভূমিহীন থাকবে না। বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি আমরা লাভ করেছি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কোর্স সম্পন্নকারী অফিসারদের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন সনদপত্র (পিএসসি) বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সব গ্র্যাজুয়েটকে সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি তাদের সবাইকে নতুন দায়িত্বে মনোযাগী হয়ে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য উপদেশ প্রদান করেন। তিনি সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ স্বাগত ভাষণ দেন। কমান্ড্যান্ট তার ভাষণে বলেন, এ বছরের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর এক মহতি লগ্নে এই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কলেজের উন্নয়নে অনবদ্য সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, এ বছর ডিএসসিএসসি ২০১৯-২০ কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৫ জন অফিসার, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩৪ জন অফিসার, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ২২ জন অফিসার এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরালিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাম্বিয়া থেকে আগত ৫৪ জন অফিসারসহ সর্বমোট ২৩৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। সামরিক বাহিনী কম্যান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত মন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শামসুল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও, সংসদ সদস্য, আমন্ত্রিত সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনীর পিএসও, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসিসহ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top