সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


আয়নার সামনে দাঁড়ানো রাত (নেপালি কবিতা) : কবি সুধা এম. রাই


প্রকাশিত:
১৬ জানুয়ারী ২০২১ ১৮:০৪

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৯

ছবিঃ কবি সুধা এম. রাই এবং অনুবাদক বিলোক শর্মা 

 

কবি সুধা এম. রাই, (গ্যাংটক, সিকিম)
অনুবাদ: বিলোক শর্মা (ডুয়ার্স, পশ্চিমবঙ্গ)

 

নগ্ন/অর্ধনগ্ন কামুক পাহাড়
গলিতরূপে নেমে আসে যখন রূপোর বস্ত্র
একটি শৃঙ্খলিত পোট্রেট সকাল
ঘুম থেকে জেগে উঠার পর
আহা!
আমি আমার মায়ের বুকে হাজারবার চুম্বন করলাম।

আরব সাগরের কোনো কিনারায়
প্রতীক্ষারত কোনো জাহাজ
বসে রয়েছে পৌছানোর জন্য
'ইন্দো মনসিন্দে বীড'(1)-অবধি
আমি তাকেও
নির্দ্বিধায় চুম্বন করলাম।

তোমার স্মৃতিতে অবরুদ্ধ হয়ে
আমি নগ্ন
আয়নার সামনে দাঁড়ানো রাত
দেখলাম নিজের দর্পণ
অর্ধ সম্পূর্ন আলোকিত
অর্ধ সম্পূর্ন অন্দ্ধকার

এই সন্ধ্যা
কাব্যে জীবনের হানা দেওয়া সন্ধ্যা
অক্ষরগুলোর যাত্রায় অর্থের ধর্নায় বসা সন্ধ্যা
বৈতরণীতে জড়িয়ে যাওয়া শব্দসন্তাপ
মৌনতার ফাঁদে আটকানো বিরহী সন্ধ্যা

এই অস্তব্যস্ত সন্ধ্যা
বিচলিত হয়ে নেমে আসে যখন
আমার পুরো রাতকে রোধ করতে
শীতল তোমার সাগরে
ডুব লাগিয়ে
আমি ভিজে সিক্ত হই।
এসো আমরা
আমাদের জীবনের স্বনির্মিত
অদৃশ্য বাঁধকে
কোনো এক নাম দিই
কোনো এক আকার দিই
আর কিছু নাহলে
তোমার কথকলির সরগমে
সেই তেজস্বী নেত্র ও ভঙ্গিতে
মারুনী(2)র তালে মাততে দিই
অর্থহীন মস্তিতে মেতে উঠা
এই পরিবেশদ্বারা লালিত সঙ্গীত সর্জককে
জীবনের শুভক্ষণের ধুন শোনাই
এসো! আমরা জীবনের ধুন গাই।

এই রাত
গলিতরূপে নেমে আসে যখন রূপোর বস্ত্র
আমি নির্বস্ত্র হই
এসো আরও একবার
তোমার সুরক্ষার তরঙ্গ দিয়ে
আমার লজ্জা ঢেকে দাও
এমনিতেও মানুষ নগ্ন এখানে
আয়নায় নিজের বিম্ব দেখতে
অবকাশ কার রয়েছে এখানে?

বন্ধু!
সঙ্গের অর্থ
প্রত্যক্ষে তোমার উপস্হিতিই সবকিছু নয়
কিন্তু...
তোমার শক্ত বাহুপাশে বাঁধা
কোনো একটি ক্ষণ সেটি
এক বিশেষ মুহূর্ত

সেরকমই আরও কিছু।

  1. মলায়ালাম শব্দ: বাংলায় অর্থ-আমার মনের বাসা
  2. নেপালি জাতির এক বিশেষ নৃত্য

 

কবি সুধা এম. রাইয়ের নেপালি কবিতা 'অইনা সামু উভিএকো রাত'-এর বঙ্গানুবাদ

সুধা এম. রাই: কবি সুধা এম. রাই ভারতীয় নেপালি সাহিত্যে এক পরিচিত নাম। 1981 সাল থেকে সাহিত্যে নিয়মিত কলম চালানো কবি রাইয়ের এখন অবধি চারটি কাব্যকৃতি-'ফুলকো যৌবন ফুলৈসিত জোড়' (1995),  'বিরোধাভাস' (2000), 'পদচিহ্ন' (2007), ভূমিগীত (2013), এবং একটি কাহিনী সংকলন 'সমাধানহীন পাইলাহরু' (1998) প্রকাশিত রয়েছে। এছাড়া, তার দুটো অনুবাদকৃতিও রয়েছে। সার্ক সাহিত্য সম্মেলন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে ভারতীয় নেপালি সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি 1999 সালে সিকিমদ্বারা সাহিত্যের 'স্রষ্টা পুরস্কার' ও 2009 সালে কালিম্পঙের 'ভাইচন্দ স্মৃতি পুরস্কার' দিয়ে সম্মানিত হন।

বিলোক শর্মা: ভারতীয় নেপালি সাহিত্যে কবি ও অনুবাদক হিসেবে পরিচিত। শিক্ষায় বোটানীতে পোষ্ট-গ্র্য়াজুয়েট এবং কৃষি-আধিকারিক। একটি নেপালি কাব্যকৃতি 'সময়াভাস' প্রকাশিত রয়েছে। কবিতা লেখালেখির পাশাপাশি নিয়মিত নির্বাচিত নেপালি কবিতার বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশনা করেন। এছাড়া, এখন অবধি চারটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top