সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


জনক, তুমি চির উজ্জ্বল : মীর আবদুর রাজজাক


প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০২১ ২০:৩৪

আপডেট:
১৬ আগস্ট ২০২১ ২১:৫৫

 

বার বার ফিরে আসি ৩২ নম্বরের বাড়িতে,
বার বার ফিরে দেখি লেকের ঘোলা জল,
গাছে মাছরাঙা পাখি,
গাছগুলো এবড়ো খেবড়ো হয়ে আছে,
মনে হয় সব কিছু যেন অভিভাবকহীন,
সব কিছু যেন অগোছালো।
সকালের কুসুম রোদ পড়েছে বাড়ির উপর,
মনে হয় যেন কতকাল আসিনি এখানে
বার বার আসি,
তবুও যেন এক গুচ্ছু শোক ভেসে আসে বাড়ির ভিতর থেকে,
নেই কথাটা বলতে শুন্যতা এসে ঘিরে ধরে আমাকে,
আমি যেন তাকাতে পারিনা,

আমার চোখে সহস্র নদীর জল,
ভিতরে শোকাহত এক সাহারা মরুভূমি
জল তৃষ্টায় কাতরাচ্ছে অহর্নিশ।
এখানে, এই ৩২ নম্বরের বাড়িতে একটি ছেলেকে হত্যা করা হলো, বয়স তার দশ বছর, নাম - রাসেল,
এখনো জানিনা এই মাসুম বাচ্চার দোষ কি?

এখানে বধুরুপে এসেছিল দুই সুদর্শনা
মুখে তাদের বাধভাঙ্গা হাসির ফোয়ারা
হাতে মেহেদী রঙ মাখা
বুকে স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বী -
কেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল?
জানিনা সেই প্রশ্নের উত্তর -
কোন ইতিহাসবিদ লিখবেন সেই উপ্যাখান।

মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সেনানি
রণাঙ্গনে তাদের ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল,
তাদেরও রক্তের ধারা প্রবহমান
রেহায় পায়নি তারাও ঘাতকের রক্তচক্ষু থেকে,
রক্তের ছোব লাগানো দেখি এখানে সেখানে।

জাতির পিতাকে শয়নেস্বপনে নিশি রাত জেগে
এক সাগর কষ্টে বুক ভাসিয়েছিলেন যিনি
যার চোখে ছিল এক নদী জল
সেই মহীয়সী রমণী-
শান্ত শিষ্ট, ধৈর্যের প্রতীক, তাঁকেও রেহায় দেয়নি ঘাতকেরা,
নিরপরাধ নারী হত্যার কী জবাব দেব আমরা?

হাজার বছর ধরে অপেক্ষায় ছিল বাঙালি
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে,
দীর্ঘ বাধা অতিক্রম করে
জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করে
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে পাহাড়ের মতো শত্রুর প্রতি হুংকার ছাড়লেন যিনি,
বজ্রকণ্ঠ দিয়ে প্রতিটি মানুষকে জাগ্রত করে
স্বাধীনতা এনে দিলেন যিনি
তাঁর প্রতিও ঘাতকের দল নির্মম আঘাত হানলো,
বুলেটে বুলেটে তাঁর শরীর ঝাঁঝরা করলো,
৩২ নম্বর বাড়িতে রক্তের বন্যা বয়ে গেলো,
সব রক্ত এক হয়ে বুড়ি গঙ্গা দিয়ে
বঙ্গপোসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে মিশে গেল
যা এখনো বহমান।

৭১ ছিল আমাদের শৌর্য বীর্যের অহংকার,
একটি জাতীয় পতাকা
একটি জাতীয় সঙ্গীত
একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র
জাতির পিতার সীমাহীন ত্যাগ
বাঙালির হাজার বছরের আকাংখার দিকপাল
তাঁকেও ছাড়েনি নরপিশাচ জঘন্য ঘাতকের দল।
৩২ নম্বর বাড়ি এখনো ইতিহাসের বাতিঘর,
এখনো এখানেই অনুপ্রেরণার উৎস ধারা বহমান।
ঘাতকেরা ভেবেছিল তুমি নিঃশেষ
কিন্তু তোমার স্মৃতি অনিঃশেষ
বার বার ফিরে আসে আমাদের উঠোনে।
ঘাতক, তোমরা পরাভুত।
জনক, তুমি চির উজ্জ্বল,
তুমি নক্ষত্রপুঞ্জের মতো আলো ছড়াবে চিরকাল।

 

মীর আবদুর রাজজাক
কবি ও প্রাবন্ধিক
প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয়প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ,  বগুড়া

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top