সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


অবসর একটি অভিশাপ : কাজী খাদিজা আক্তার


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২০ ২২:০৭

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২০ ২২:১০

 

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন "এক গ্লাস জল পান করা যায়, কিন্তু এক সমুদ্র পান করা যায় না।কাজের ফাঁকে ফাঁকে এলেই অবসর উপাদেয় নইলে তা বিস্বাদ,  বিরক্তিকর। " তাই বলছিলাম, কাজ থেকে ছুটি নেয়ার জন্য যেমন অবসর প্রয়োজন তেমনি অবসর থেকেও মাঝে মাঝে পালিয়ে বেড়াতে হয়। অতিরিক্ত অবসর কখনও কখনও গলায় কাঁটার মতো বিঁধে থাকে , তাকে উৎখাত না করা পর্যন্ত শান্তি নেই।জীবনে অবসর শব্দটি  তখন নিরানন্দ শব্দের সমার্থক  হয়ে যায়। 

বর্তমান পৃথিবীতে মহামারির কালে অবসর শব্দটি যেন আনন্দকে আরও গ্রাস করছে।হোম কোয়ারান্টাইন সময়ে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী অবস্থায় থেকে তা আরও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।শিক্ষকতার পেশায় আছি বলে দীর্ঘ ছুটি ভোগ করছি। মাঝে মাঝে অনলাইন ক্লাস চলছে আর প্রাত্যহিক ঘরের কিছু কাজকর্ম থাকলেও, অফুরন্ত অবসর। আমার কাছে অফুরন্তই মনে হয়,অবসর অল্প হলেও কাটতে চায়না। চেষ্টা করি এই অবসর গুলোকে আবার অবসরের কাজে পরিণত করতে। এবং আমি মনে করি সকলেরই তাই করা উচিত। আসলে অবসর বলতে কিছু নেই, যেটা আছে সেটা হলো জীবনের রস উপভোগের কিছু সময়। নিজেকে গুছিয়ে সাজিয়ে নেয়ার সময়,নিজেকে ভালোবাসার সময়।নতুনভাবে নিজেকে আবিস্কারের নেশায় মত্ত থাকা। 

আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, যদি আমরা সাধারণ থেকে অসাধারণ পর্যন্ত একটি প্রশ্ন করি - অবসরে আপনি কি করেন? তাহলে এর মানে দাঁড়ায় আমরা কিন্তু তাঁর বা তাঁদের কাজের  কথাই জিজ্ঞেস করছি। এ প্রশ্নের উত্তরে কেউ কিন্তু বলেননা যে, তিনি ঘুমিয়ে থাকেন,তাকিয়ে থাকেন কিংবা হাসতে থাকেন।বরং জবাবে কিন্তু আমরা শুনতে পাই,  কেউ গান করেন, কবিতা লিখেন,কেউবা ছবি আঁকেন,বাগান করেন, আড্ডা দেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর প্রতিটিই কিন্তু কাজ। একজন সুস্থ মানুষ কখনোই অবহেলায় অবসরে সময় কাটাতে পারেনা।

অবসর শব্দের ইংরেজি  "leisure"  এর অর্থটি ঠিক এরকম যে,ব্যক্তির নির্ধারিত মুক্ত সময় অর্থাৎ যখন যা খুশি মনে চায় করে নিয়ে যাওয়া যায়। অর্থাৎ ব্যবসা, কর্মজীবন,গৃহস্থালি কাজ থেকে দূরে থাকার অলস সময়টুকু অবসর সময় নামে বিবেচিত হয়। এই অলস সময়টুকু কাটানোর বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান। তার মানে এই নয় যে আমাকে কাজের ফাঁকে একটু অবসর নিতে হবেনা।নিতে হবে তবে সেটা পরিমিত। অবসর যেন নিরানন্দ হয়ে না পরে,অবসর যেন একঘেয়েমিতে রুপ না নেয় সেদিকে আমাদের নজর থাকা উচিত। সেজন্য আমাদের অবসর সময়গুলোকে রাঙিয়ে নিতে হবে নিজের মতো করে। সৃজনশীলতা,নিপুণতা আনন্দের উৎস। সেটাকে নিজের মধ্যে থেকে খোঁজে বের করতে হবে।অবসর যেন অবসাদ হয়ে, ক্লান্তি হয়ে, বিস্বাদ রুপে আপনাকে গ্রাস না করে। 

চার্লস ডারউইন বলেছেন," যে লোক জীবনের একটি ঘন্টা নষ্ট করার সাহস করে,সে আসলে জীবনের মূল্য এখনও বোঝেনি। " ঠিক তাই।অবসর আমাদের শরীরকেও নিস্তেজ এবং মস্তিষ্ককে ক্রিয়াহীন করে তোলে। আমি দেখেছি দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষ করে একজন মানুষ যখন অবসরে চলে যান অর্থাৎ চাকরিজীবন থেকে অবসরটাকে যখন জীবনের দৈনন্দিন    অবসর হিসেবে বেছে নেন বা স্বীকার করে থাকেন তখন সেই মানুষটি বয়সের তুলনায় আরও বৃদ্ধ হয়ে যান।বার্ধক্য তখন তাঁর সঙ্গী হয়। কিন্তু এই অবসর সময়টাকে যদি তিনি বই পড়ার মধ্য দিয়েও কাটিয়ে নিয়ে  যান তাহলে জীবনে বেঁচে থাকার অন্য এক স্বাদ খোঁজে পান।আবার এটাও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে যে, দীর্ঘ কর্ম জীবন শেষ করে নতুন কর্মজীবন বেছে নিয়েছেন ভীষণ আত্মবিশ্বাসে। কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য বা আরাম আয়েশের জন্য যে মানুষ কর্ম করে তা কিন্তু নয়।কিছুটা মনের খোরাক বা আনন্দ লাভের জন্যও কিন্তু করে থাকে। অবসরকে আলস্য- এর সমার্থক না করে বরং আনন্দ -এর  সমার্থক করলে জীবন বড় উপভোগের হয়। জীবনে ক্ষুদ্র কিছুতে যেমন বৃহৎ কিছু পাওয়ার নেশা থাকে তেমনি ছোট্ট ছোট্ট অবসর গুলোকে জোড়া লাগিয়ে আরও অনেকদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সুযোগ থাকে। কর্ম আছে বলেই অবসরের এতো মাধুর্য। তবে অবসর কাটানোই যখন কিছু মানুষের কর্ম হয়ে দাঁড়ায় তখন নিরানন্দ আর বিস্বাদ ধরার  ধূলোয় লুটোপুটি খায়।তাই মনে রাখতে হবে আপনার কর্মের মধ্যেই যেন অবসরের শ্রী ফোটে উঠে, অবসর হয় যেনো সুন্দর সময়। A thing of beauty  হয় বলেই তা Joy for ever - ও হয়।           

 

কাজী খাদিজা আক্তার
প্রভাষক(ইংরেজি) 
সরাইল সরকারি কলেজ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top