সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


আসন্ন রমজান উপলক্ষে কিছু করনীয়


প্রকাশিত:
১৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৪

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ১২:৩৯

 

আর অল্প কিছুদিন পরেই রমজান। রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে শুরু হবে যেই মাস। রমজানের আগমনে প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ই আনন্দিত হয়। প্রতিটি মুসলিম পরিবার এবং সমাজে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। কারণ এই মাসসমূহ কল্যাণ আর পুণ্যের মাস। রমজানুল মোবারক সব মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। সারা বছর এই মাসের প্রতীক্ষায় মুমিনের হৃদয় অধীর আগ্রহী হয়ে থাকে।

তবে এই মাসের জন্য অপেক্ষা থাকলেও সবাই পরিপূর্ণ উপকৃত হতে পারে না। সম্পূর্ণ লাভবান হতে পারে না। কেউবা পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও তাকওয়া অর্জনে সার্বিকভাবে সফল হয়। অন্যদিকে অনেকেই অলসতা, খাওয়া-দাওয়া আর বেচাকেনায় সময় পার করে দেয়। শুধু অবহেলা আর গুরুত্বহীনতায় একটি বিশাল সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

মূলত রমজানে পরিপূর্ণ সফল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে রমজান পূর্ববর্তী সময়ের প্রস্তুতির সঙ্গে। কেননা রমজান তো আর এমন অতিথি নয় যে সাধারণভাবে তাকে বরণ করলেই চলবে। বরং এর জন্য চাই সুন্দর অভ্যর্থনা ব্যবস্থা ও যথাযথ প্রস্তুতি। যেন এর সমূহ কল্যাণে সিক্ত হওয়া যায়। এর সার্বিক নেয়ামত ও পুরস্কার পেয়ে বিজয়ী হওয়া যায়। এই মাসের সব পুণ্য সহজেই অর্জন করা যায়। তাই রমজানের প্রস্তুতিকল্পে সবাইকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণে একজন মুমিনকে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। রমজান আসার পূর্বেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। প্রত্যেক মুমিন যথাযথ প্রস্তুতি নিলেই এবারের রমজান হয়ে উঠবে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম রমজান। প্রস্তুতি গ্রহণে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে-

ইস্তেগফার করা : রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে একজন মুমিনকে সর্বপ্রথম তওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে পুত-পবিত্র হয়ে একটি ভালো আমল শুরু করবে। এতে আমলে প্রশান্তি পাবে। হৃদয়ে পবিত্র শক্তি পাবে এবং আমলের প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করবে।

ঈমানি প্রস্তুতি : রমজান বরণে ঈমানি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এবং রমজানের সমূহ কল্যাণ প্রাপ্তির লক্ষ্যে রমজান প্রাপ্তির দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রতীক্ষায় থাকতেন। রমজান পর্যন্ত পৌঁছার জন্য দরবারে এলাহিতে দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রামাজান।’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ, তুমি রজব এবং শাবান মাসে আমাদের ওপর বরকত নাজিল এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত বাড়িয়ে দাও।’ (মুসনাদে আহামাদ : ১/২৫৯; বায়হাকি : ৩/৩৭৫)

ইলম অর্জন করা : রমজান থেকে পরিপূর্ণ উপকৃত হতে হলে রমজান বিষয়ে ভালো করে জানতে হবে। তাই রমজান বিষয়ে নিজে ইলম অর্জন করতে হবে। তালিমের মাধ্যমে পরিবারের লোকদেরও শেখাতে হবে। রমজানের রোজার ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, রোজা ভঙ্গের কারণ, রোজার আদব, রোজা অবস্থায় করণীয়সহ এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিভিন্ন বই অধ্যয়নের মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করতে হবে। সঠিকভাবে রোজা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। তাই এ বিষয়ে কোনো অবহেলা করা যাবে না।

রোজা রাখা : পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কিছু রোজা রাখা যেতে পারে। রাসুল (সা.) নিজেও শাবান মাসে অধিক রোজা রাখতেন। যেমনটি হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসুল (সা.) নিজে বলতেন, ‘এটি এমন মাস যা রমজান ও রজবের মাঝামাঝি হওয়ায় মানুষ এ ক্ষেত্রে অনেক অবহেলা করে। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার নিকট আমল প্রেরণ করা হয়। আমি চাই যেন রোজা অবস্থায় আমার আমল প্রেরিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)। তবে এ রোজা রাখায় যদি শারীরিক কোনো দুর্বলতা আসার বা রমজানের রোজায় ভিন্ন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তা বর্জন করতে হবে।

কোরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করা : রমজান মাস কোরআনের মাস। তাই রমজানে যেন বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা যায় সে জন্য এখন থেকেই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তেলাওয়াতে সমস্যা থাকলে এখনই তা বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। বর্তমান করোনার লকডাউন ও হোম কোয়ারেন্টাইনের কারণে হাতে অনেক সময়। সেই সঙ্গে অনলাইনে অনেকে কোরআন তেলাওয়াত শেখাচ্ছেন। আপনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তেলাওয়াত সহিহ ও বিশুদ্ধ করে নিতে পারেন। পরিবারের অন্য সদস্য যারা আছে তাদেরকেও উৎসাহ দিন। কোরআন খতমের জন্য কিছু পুরস্কার ঘোষণা করুন।

পরিকল্পনা গ্রহণ করা : সফলভাবে যেন রমজান পালন করা যায় সে জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। ইবাদত, তেলাওয়াত, দোয়া সব কিছুর জন্য একটি রুটিন করে নিন। সওয়াবের আশায় অন্যকে যেন ইফতারি করানো যায় সে জন্য ব্যক্তিগতভাবে কিছু উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

সামাজিক প্রস্তুতি : সামাজিক প্রস্তুতি হিসেবে আশপাশের সবাইকে রোজা রাখায় উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় রমজান আসার পূর্বেই সামাজিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। আত্মীয়তার বন্ধনকে আরও বৃদ্ধি করতে রমজানে সবার বাড়িতে বিভিন্ন হাদিয়া ও ইফতার প্রেরণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন তালিমি মজলিসে অন্যদের দাওয়াত করা যেতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রস্তুতি : করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের রমজানে অর্থনৈতিক প্রস্তুতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবদিক বিবেচনা করে রমজানের পূর্বেই একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বা বাজেট তৈরি করুন। যেহেতু দোকানপাট অনেকটা বন্ধ অথবা থাকলেও দ্রব্যমূল্য বেশি তাই প্রস্তুতি হিসেবে সুযোগ বুঝে এখনই কিছু কেনাকাটা করে রাখতে হবে। আবার সওয়াবের আশায় কোনো প্রকার অপচয় যেন না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজেদের সচ্ছলতা থেকে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে। দানের হাতকে আরও বড় করতে হবে। রাসুল (সা.) রমজানে প্রচুর পরিমাণে দান করতেন। যাকাত ফরজ হয়ে থাকলে তার হিসাবটা রমজানের পূর্বেই করে নিতে হবে। যেন রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে যাকাত প্রদানের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। এ ছাড়াও রমজানে অধিক পরিমাণে সদকা করার লক্ষে রমজানের পূর্ব থেকেই কিছু কিছু সঞ্চয় করা যেতে পারে। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে অথবা প্রতিবেশীদের মধ্যে কারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল আছে তার একটি তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।

মোটকথা, রমজান আসার পূর্বেই রমজানের পরিপূর্ণ বরকত ও পুণ্য অর্জনে এবং সার্বিকভাবে সফলতা লাভে একজন মুমিনকে প্রস্তুত হতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে রমজানকে বরণ করতে হবে। তাহলেই আমরা রমজান থেকে যথাযথ উপকৃত হতে পারব ইনশাল্লাহ।


বিষয়: রমজান


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top