সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


জুম'য়ার দিনের ফজিলত ও আমল : মুফতী মাহমুদ হাসান 


প্রকাশিত:
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:১৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০২:২০

 

এমন কিছু সময় এবং দিন রয়েছে যার মধ্যে অল্প আমল করেই অনেক সওয়াব এবং ফযিলতের অধিকারী হওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো জুময়ার দিন (শুক্রবার)।সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুময়ার দিন শ্রেষ্ঠতম। জুমার দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। ফজিলত অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ এই জুময়ার দিন ।জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।আমার এই প্রবন্ধে জুময়ার দিন ফজিলত আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব:

 

জুম্মার দিন আদম আলাইহিস সাল্লাম কে সৃষ্টি করেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করেন আর এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।

 

عن أبي هُرَيرَة رَضِيَ اللهُ عنه، عنِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أنَّه قال:خيرُ يومٍ طَلعَتْ فيه الشَّمسُ يومُ الجُمُعة؛ فيه خَلَقَ اللهُ آدَمَ، وفيه أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وفيه أُخرِجَ منها، ولا تقومُ السَّاعةُ إلَّا في يومِ الجُمُعة  (رواه مسلم رقم الحديث 854)

অর্থ ঃ দিন সমূহের মধ্যে জুম’আর দিন শ্রেষ্ঠ এই দিনে আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সাল্লাম কে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জান্নাত থেকে বের করেন এবং এই দিনে অর্থাৎ জুম্মার দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে  (মুসলিম শরীফ854)

 

জুমার দিনের ফজিলত:

 

عن ابي هريرة رض قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من راح إلى الجمعة في الساعة الأولى فكأنما قرب بدنة، ومن راح في الساعة الثانية فكأنما قرب بقرة، ومن راح في الساعة الثالثة فكأنما قرب كبشًا أقرن، ومن راح في الرابعة فكأنما قرب دجاجة، ومن راح في الخامسة فكأنما قرب بيضة. (البخاري رقم الحديث.881)

 

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’  (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।

 

দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ:

 

قال رسول الله صلّى الله عليه وسلّم: “الصلواتُ الخمْسُ، والجُمعةُ إلى الجُمعةِ، ورَمضانُ إلى رمضانَ: مُكَفِّراتٌ لما بينهُنَّ إذا اجْتُنِبتِ الكبائِرُ”. (المسلم233)

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’  (মুসলিম; ২৩৩)।

 

জুময়ার নামাজে যাওয়ার প্রতি কদমে (পা ফেলায়)এক বছর নফল নামাজ ও এক বছর নফল রোজা রাখার সাওয়াব

 

عن ابي بن اوس الثقفي رضي قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول:من غسل يوم الجمعة واغتسل ثم بكر وابتكر ومشي و يركب ودنا من الامام فاستمع ولم يلعب كان له بكل خطوة عمل سنة اجر صيامها و قيامها (رواه ابو داود، الرقم ۳۴۵،ترمذي۴۹۶،نساءي۱۳۸۴،ابن خزيمة۱۷۵۸)

 

অর্থ হযরত আউদ ইবনে আউস ছাক্বাফী (রাঃ) বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি জুম’আর দিন-

১. সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে গোসল করবে। ২.সকাল সকাল মসজিদে আসার জন্য রওনা দিবে

৩.পায়ে হেঁটে যাবে

৪.ইমামের নিকট বসবে।

৫.গুরুত্বসহকারে খুতব শুনবে।

৬.অহেতুক কাজ ও কথা থেকে বেঁচে থাকবে।তাহলে তার প্রতি কদমে এক বছর নফল রোজা রাখার এবং এক বছর নফল নামাজ পড়ার সাওয়াব তার আমলনামায় দেয়া হবে।  (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস নং- ১৭৫৮/ নাসায়ী, হাদীস নং- ১৩৮৪, তিরমিযী, হাদীস নং- ৪৯৬/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৪৫)

 

নূর আলোকিত হওয়া

 

عن ابي سعيد الخدري رض أن النبي صلي الله عليه و سلم قال من قرا سورة الكهف في يوم الجمعة اضاء له من النور ما بين الجمعتين وفي رواية مجلز رض اضاء له من النور ما بينه و بين البيت العتيق  (رواه البيهقي في السنن الكبري ج۳ ص ۳۵۳، البيهقي في شعب الايمان ج ۳ ص۱۱۳)

অর্থ হযরত আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য এমন নূর আলোকিত হবে যা সে জমা থেকে পরের জমা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে সেই ব্যক্তি থেকে কাবা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।  (বাইহাকী ফী সুনানীল কুবরা ৩/৩৫৩)

 

আশি বছরের গুনাহ মাফ এবং আশি বছরের নেকী।

 

عن ابي هريره رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى صلاه العصر من يوم الجمعه فقال قبل اي يقوم من مكانه “اللهم صل على محمد النبي الامي وعلى اله وسلم تسليما” ثمانين مرة غفرت له ذنوب ثمانين عاما وكتبت له عبادة ثمانين سنه.  (ذكره السخاوي في القول البديع في الصلاه على الحبيب الشفيع ي صف284 فضائل درود شريف )

অর্থ হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর আপন স্থান থেকে ওঠার পুর্বে এ দরুদ শরীফ আশি বার পাঠ করবে তার আশি বৎসরের পাপ মাফ করে দেয়া হবে আর আমলনামায় আশি বছরের নফল ইবাদতের নেকী লেখা হবে। (আসসাখাবী পৃ: ২৮৪)

দুরুদ শরীফ কি হলো

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدَن النَّبِيِّ الأمِّيِّ وَعَلَى الِه وَسَلِّمْ تَسْلِيْمًا

 

জুময়ার দিন দুয়া কবুল হয়

 

عن جابر بن عبد الله عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال يوم الجمعه سنتا عشرة يريد ساعة لا يوجد مسلم يسال الله شيئا الا اعطاه الله عز وجل فالتمسوها اخر ساعة بعد العصر. ( رواه ابو داود في سننهج1 ص 150)

অর্থ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন জুমার দিন একটি মুহূর্ত আছে । যে সময় যেকোন মুসলমান আল্লাহ তাআলার নিকট যা কিছু প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করবেন ।কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো। ( আবু দাউদ১/১৫০)

 

জুম্মার নামাজ না পড়লে যে শাস্তি:

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।  (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

 

অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমা ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক। (অর্থাৎ জুমার নামাজ আদায় করুক), নতুবা আল্লাহ তাআলা তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতঃপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে।  (মুসলিম)।

 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল।  (মুসলিম)।

 

তবে আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হল- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।  (আবু দাউদ)।

হে আল্লাহ আমাদের জুম্মার দিনের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনের তাওফীক দিন। আমীন।

 

মুফতী মাহমুদ হাসান
সিনিয়র শিক্ষক:দারুল হক্ব ইসলামিয়া মাদ্রাসা, মির্জাপুর,টাঙ্গাইল

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top