সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য রসিক যখন বেরসিক (রম্য ভ্রমণ) : আনিসুল কবীর


প্রকাশিত:
৬ জুন ২০২০ ২৩:১১

আপডেট:
৬ জুন ২০২০ ২৩:১৫

সাউথ ইন্ডিয়ান দোকান

 

খানা-খাদ্য জীবনের খুব প্রয়োজনীয় ব্যাপার। ভালো খেতে কে না ভালোবাসে? আমিও ভালোবাসি। তবে সময় এবং স্থানভেদে আমার খাদ্য বিষয়ক আগ্রহ উঠানামা করে। আজকের লেখায় বিদেশ ভ্রমণের সময় অনেকের জন্য আঞ্চলিক খাবার দুর্বিসহ হয়ে দাড়ায়। আমার বন্ধু শাকিলের জীবনে সেই বেদনার্ত অধ্যায়ের কথা লেখতে বসেছি। শাকিলকে একজন পরিপূর্ন খাদ্য রসিক মায় খাদ্য বিশারদও বলা যায়। খাবারের প্রতি ওর ভালোবাসা আমরা মাঝে মাঝে আমাদের আড্ডার রসদ হিসাবে ব্যবহার করি। তবে আমাদের ধারনা ছিলো শাকিল বোধহয় যে কোন প্রকার উচ্চমানের খাবারের প্রতিই দূর্বল। কিন্তু ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বেঙ্গালোর, মহীশুর আর উটি ভ্রমণে নিয়ের সময় আমাদের খাদ্য বঞ্চনার কথা লেখতে বসেছি। শাকিলকে নিয়ে একটু মজা করা যাক।     

বিদেশ ভ্রমণে আমি সাধারণত যে দেশ ভ্রমণ করি সে দেশের লোকাল খাবার নিয়ে আগ্রহী থাকি। কারন আমাদের বিদেশ ভ্রমণ মানে খুব বেশি হলে এক সপ্তাহের ব্যাপার। খাবারের ভালো মন্দ বুঝতেই দেশে চলে আসি। অসুবিধে হয় না। এবার যখন বেঙ্গালোর/বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলাম, ওখানে গিয়ে কি খাবো সে নিয়ে কোন রিসার্চ করা হয়নি। আমার আগে দু’বার মাদ্রাজ/চেন্নাই ঘোরা আছে, তাই দক্ষিণ ভারতের খাবার ব্যাপারে ভালোই ধারণা ছিলো। খুব ভালোই জানি সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারে টক আর কারিপাতা আমাদের বাংগালী জ্বিহ্বাকে খুব একটা প্রশান্তি এনে দিবে না। কিন্তু একই সাথে নানা রকম নতুন খাবারের অভিজ্ঞতা বন্ধুদের সাথে নিতে পারবো ভেবে একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো। আগের ট্যুর গুলোতে বেশ কয়েকবার দক্ষিণের ভেজ থালি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ভালো অভিজ্ঞতা বলা ঠিক হবে না। তবে বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতা, সেটা বলাই যায়। ইডলি, দোসা, উতাপাম, বড়া, পোহা ইত্যাদি নামের দস্যি খাবারগুলোর স্বাদ যাই হোক চেহারা কিন্তু ভালো। সেজন্য আমি ঠিক করে রেখেছিলাম বন্ধুদের নিয়ে বেঙ্গালোরের প্রথম দিনের নাস্তাটা লোকাল খাবার দিয়েই করবো।

বেঙ্গালোরে পৌছানোর আগে থেকেই খাবার নিয়ে শাকিলের টেনশন একটু একটু টের পেতে শুরু করেছিলাম আমি আর অন্য দুই বন্ধু আমান আর লিটন (বস)। কারণ স্পাইস জেটের যে ফ্লাইটে আমরা কোলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুতে রওনা দিয়েছিলাম, সেখানে টিকেট কাটার সময় খাবারের জন্য পেমেন্ট করতে হয়।  বিদেশে হালাল নন হালালের কথা চিন্তা করে আমান সবার জন্য ভেজ (সবজি) স্যান্ডুইচের বুকিং দিয়ে রেখেছিলো। প্লেনে এক সাড়িতেবসার ৩  সিট ছিলো তাই একসাথে তিনজন, আমান, লিটন আর শাকিল বসেছে আর আমি ওদের পিছে। আমান যে আমাদের জন্য ভেজ স্যান্ডুইচ দিয়ে রেখেছে সেটা তো আর আমি জানিনা। এয়ার হোস্টেস/কেবিন ক্রু আমাকে মেনু কার্ড দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কি চাই? আমি চিকেন টিক্কা স্যান্ডুইচ, মসলা চা আর পানি বলে দিয়েছি। সামনে ওরা কি খাচ্ছে সেটা নিয়ে আর কথা বার্তা বলিনি। লোকাল বাসের সিটের মতো সিটে বসে অতো খোঁজ নেয়া কঠিন। যাক, আমার বলে দেয়া খাবার পেয়ে যাওয়ার পর আমি বেশ যত্ন করে খেয়ে নিয়েছি। খাওয়া শেষ চুকচুক করে চা খাচ্ছি, তখন শাকিল দেখি সামনের সিটের উপর থেকে মাথা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কিরে স্যান্ডুইচ কেমন লাগলো? আমি বললাম চিকেন টিক্কা স্যান্ডুইচটা জোস। শাকিলের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো বেচারির হার্টের দুইচারটা বিট মিস হয়ে গেলো। অথবা প্লেনটা লোকাল বাসের মতো গর্তে পরছে (কোন রকম বাম্পিং ছাড়াই)। সাই করে ঘুরে আমানের কাছে জিজ্ঞাসা করলো যে আমান আমার জন্য আলাদা মিল দিয়েছিলো কিনা। আমানও অবাক। সে জানালো সবার জন্য এক মিল। এমন কি, চায়ের জন্যেও কোন টাকা দেয়নি। এমনিতে ভোমা সাইজ দুটা স্যান্ডুইস খেয়ে বেশ কাহিল ছিলাম, তারপরও দেখি শাকিল ওর ভেজ স্যান্ডুইচের এক পিস আমার দিকে বাড়িয়ে রেখেছি, মুখে বলছে, এটাও খেয়ে নে? পরে তিন জনের কেউ না খাওয়ায় শাকিল হ্যান্ড ব্যাগে রেখে দিয়েছিলো স্যান্ডুইসটি। আমরা সবাই বেশ অবাক হলাম একটা সবজি দেয়া স্যান্ডুইসে শাকিলের লিজেন্ডরী খিদার অবসান হলো?  

আমরা আসলে শাকিলের শান শওকত তখনও বুঝতে পারিনাই। দিল্লী আ্গ্রা, উত্তর প্রদেশের পর্যটককে ভুলে দক্ষিণে নিয়ে এসেছি, ওটা পরে বুঝেছি হাড়ে হাড়ে। দৃ্শ্যটা এমন আমরা সকাল দশটায় বেঙ্গালোরের হোটেলে চেকইন দিয়ে বের হয়েছি নাস্তা খেতে। কোন ধরনের খাবার খাবো ঠিক করা হয়নি। ভালো কোন রেস্টুরেন্ট পেলে ঢুকে পরবো বলে সবাই একমত। আমি বারবার বলছিলাম সাউথ ইন্ডিয়ান লোকাল কোন দোকানে যেতে চাই। আমানের সায় আছে দেখলাম, বস লিটন তো একপায়ে খাড়া। শাকিলকে দেখলাম মাথার উপর দিয়ে মেট্রোরেলের যাওয়া আসা দেখছে। নিরবতাই সম্মতির লক্ষন বলে ধরে নেয়াই যায়। আর আমি তখন চাচ্ছি আমার চেন্নাই ট্যুরের অভিজ্ঞতাটা সবার হোক। বেশিক্ষণ হাটতে হয়নি। ৫০০ গজ এগোতেই একটা জমজমাট সাউথ ইন্ডিয়ান নাস্তার দোকান পাওয়া গেলো। দক্ষিণ ভারতীয় খাবার দোকানগুলোতে চেয়ার থাকেনা। শুধু স্টেইনলেস স্টিলের উচুঁ উচুঁ টেবিল। লোকজন বিভিন্ন কাউন্টার থেকে খাবার নিয়ে টেবিলে প্লেট রেখে আন্তঃনগরীয় ট্রেনের স্পিডে খেয়ে স্টিলের গ্লাসের পানি মুখের দুই ইঞ্চি উপর থেকে ঢেলে ধুরধার করে বেড়িয়ে যাচ্ছে। অন্য তিন জনের চেয়ে দক্ষিণ ভারতীয় অভিজ্ঞতায় সিনিয়র হওয়ার দরুণ আমি নিজেই সবার জন্য নাস্তার ওয়ার্ডার দিয়ে দিলাম। সবার জন্য মাসালা দোসা। সাথে বড়া। এছাড়া দুধ চা। একই দোকানে দেখলাম জিলাপি ও মিষ্টি আছে। আমান আর লিটনকে দেখলাম বেশ আগ্রহ নিয়ে খেলো। বাংলাদেশের দোসার সাথে তুলনামূলক আলোচনাও টুকটাক করলাম। শাকিলকে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন লাগলো। মজা করে গরুর গোস্তো চাবানোর সময় হঠাৎ এলাচ পরলে যেরকম মুখ হয়, সেরকম মুখ করে শাকিল বললো, ধুর এইটা কোন জায়গা হইলো। আসার সময় কতো ভালো ভালো রেস্টুন্টে পরলো আর তুই এই ভুয়া জায়গায় নিয়ে আসছিস। আমরা সবাই একটু হাসাহাসি করে বুষ্টআপ করার চষ্টা করলাম। জিলাপি মিষ্টি খাওয়ার জন্য হালকা ঝুলাঝুলি করলাম। কিন্তু শাকিলের কিছু গেলো আসলো বলে মনে হলো না।

 

মাসালা দোসা

বড়া

মাসালা চা

এর পরের ঘটনা সেইদিন দুপুরের। নাস্তা খেয়ে হোটেলে একটু রেস্ট নিয়েই গাড়ি রিজার্ভ করে ঘুরতে বেড়িয়েছি। প্রথমেই শহরে কিছু যায়গায় ঘুরাঘুরি করে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো। আমাদের ড্রাইভার বললো লাঞ্চ করে নিতে, কারণ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য বেঙ্গালুরু বোটানিক্যাল গার্ডেন। ওটা ঘুরতে নাকি অনেক সময় লাগবে। সেজন্য আগেই লাঞ্চ করে নেয়া উচিৎ। এবার আমরা আর ভুল করতে চাইলাম না। শাকিলের মনে আর দুঃখ দেয়া যায় না। চারজন একমত হয়ে ড্রাইভারকে ভালো বিরানী পাওয়া যায় এমন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে বললাম। ড্রাইভার সাহেব আমাদের যে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো সেটা কলেবরে বিশাল। একতালা দোতালা মিলিয়ে বেশ বড়। আমরা দোতালাতে বসলাম। চারিদিকে একটা ননভেজ পরিবেশ। রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা হাতে মাছ ভাজা, খাসি মুরগির তরকারী, আর বিরানী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। সবাই খুশি। এর মধ্যে শাকিলের খুশিটা বাহির থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছে, মনে হচ্ছে ওর মুখে স্পট লাইট পরে আছে। টেবিলে বসার পর ওয়েটার মেনু নিয়ে আসলো। আমরা হায়দারাবাদি বিরিয়ানী খাবো বলে ঠিক করলাম। দাম দেখলাম বেশ চড়া। আমাদের ঢাকা শহরের হান্ডির চেয়ে বেশি। ঢাকায় হান্ডিতে দু’জনে দুইটা হায়দারাবাদী বিরিয়ানী দিয়ে একবার খেতে খবর হয়ে গেছিলো বলে আমরা চার জনের জন্য দুইটা বিরিয়ানীর ওয়ার্ডার দিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা প্লেটে খাবো, নাকি কলাপাতায় খাবো জিজ্ঞাসা করে নিলো ওয়েটার। আমরা মহা উৎসাহে কলাপাতায় ভোট দিয়ে দিলাম।তারপরের ঘটনা খুব একটা সুবিধার না। হান্ডির চেয়ে দাম বেশি নিলেও হায়দারাবাদী বিরিয়ানীর পরিমান খুব কম ছিলো। স্বাদও যাচ্ছেতাই। তবে কলাপাতায় খাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রথম বলে সবাই মোটামুটি খুশি। খাবারটা যেহেতু বিরিয়ানী ছিলো, সেজন্য জন্য শাকিল ও বেশ খুশি। তবে বিলটিল দিয়ে নিচে আসার পর দেখি শাকিল বিল কাউন্টারের পাশের স্ন্যাকসবারে কি যেন কিনছে। একটু পরে দেখি ২-৩ প্যাকেট চানাচুর আর ডজন খানিক বামনাকৃতির কলা নিয়ে শাকিল হাজির। মুখে রাজ্য বিজয়ের হাসি। ও আর আমাদের উপরে ভরসা রাখতে পারছিলোনা।

সেই অখাদ্য হায়দারাবাদী বিরিয়ানী

সেদিন রাতেও অতি অখাদ্য ডিনার করেছিলাম ম্যাকডোনাল্ডসে। ভেজ বার্গার দিয়ে। চরম অখ্যাদ্য ছিলো বার্গার গুলো। তবে মজা হলো তার পরদিন সকালে। এবার হোটেলের কমপ্লিমেন্টারী ব্রেকফাস্ট। ব্রেকফাস্ট দেখে আমান খুব খুশি, কারণ কালারফুল সাউথ ইন্ডিয়ান ব্রেকফাস্ট ছিলো। সাথে জ্যাম জেলী, বাটার, পাউরুটি, টোস্ট ইত্যাদি ইংলিশ ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা। ভেজ ছাড়া অন্য কোন কিছু নাই জেনে শাকিল ডুবন্ত মানুষ যেভাবে খড়কুটো ধরে বাচার চেষ্টা করে সেভাবে জিজ্ঞেস করলো, ডিম নাই? জানা গেলো ডিম সিদ্ধ বা ওমলেট কিছুই নাই। পরেই দৃশ্য হৃদয় বিদারক। আমান জীবনের প্রথম পোহা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ওর স্ত্রীকে ফোন করে বলছে। লিটন ধীরে সুস্থ্ সব কিছু চেখে দেখছে আর শাকিল পাউরুটি আর জ্যাম নিয়ে গভীর মনযোগে ফোন দেখছে।

আমানের ব্রেকফাস্টের প্লেট

বাকিটা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি। বাকি চারদিনও শাকিলের জন্য চরম বেদনার এক ঐতিহাসিক আখ্যান বলা যেতে পারে। তবে মাঝে মাঝে কিছু আনন্দের ঝলকের মতো কিছু ঘটনাও অবশ্য ছিলো। তারপরের দুই দিনের জন্য আমরা টিপু সুলতানের ঐতিহাসিক শহর মহীশুর হয়ে উটি হিল স্টেশনে ঘুরতে যাই। দুইদিনের জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করি। ড্রাইভার ব্যাটা মুখে মুখে খুব মাই ডিয়ার টাইপ থাকলেও ভিতরে ভিতরে বেশ দুষ্ট ছিলো বোধহয়্। নিজে ভেজ খাবার ছাড়া খায়না বলে সে প্রতিটা জায়গায় থেমেছে ভেজ রেস্টুরেন্টে। আমরা অনেক করে বলার পরও সে আমাদের ননভেজ রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়নি। এদিকে শাকিলের খাওয়ার দৃশ্য একদম যাকে বলে আইডেন্টিকাল। প্রতিবারেই এক দৃশ্য। আমরা হয়তো পালাংক পনির দিয়ে ভাত মাখাচ্ছি, আর শাকিল ভিষণ মনোযোগের সাথে ফেসবুকে কিছু একটা পোস্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাড়াতাড়ি খাওয়ার কথা বললে, বলতো, দাড়া ডাটা খুব স্লো, পোস্টটা আপ হয়ে নিয়ে খাচ্ছি। আমাদের খাওয়া শেষে দেখতাম শাকিল প্লেটের তিনভাগের একভাগ খেয়ে বলেছে, জোস ছিলো খাওয়াটা।

এবার ভালো একটা অভিজ্ঞতা বলি। মহীশুরে একরাত থেকে তার পরদিন উটিতে চলে যাই। উটিতে পৌছাতে দুপুর পার হয়ে যায়। তখন আমরা প্রথমবারের মতো একটা ননভেজ রেস্টুরেন্ট পেয়ে যায় একটা হোটেলের ভিতরে। রেস্টুরেন্টটা বেশ ভালো মনে হলো। বিরানী আর চিকেন কাবাব ওয়ার্ডার দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে সবাই বসে আছি। খাবার আসতে একটু দেরী হচ্ছিলো। এরপর হলো সবচেয়ে মজার ঘটনা। যে শাকিলকে দেখে আগের দুই দিন মনে হয়েছিলো খাবার দাবারের মতো তুচ্ছ কাজে সময় নষ্ট করার বান্দা সে না, সেই শাকিল এবার ওয়েটার বিরানীর বাটি টেবিলে রাখার আগেই টুক করে হাত থেকে নিয়ে নিলো। ওয়েটার আমার জন্য স্যুপ আনতে গেলে সবাই ওকে একটু ভৎসনা করে ছবি তুলার আগেই প্লেটে বেড়ে নেওয়ার তোরজোর থামিয়ে ছবি তুলে ওকে ছেড়ে দেয়া হলো। এবারের খাবারটা অবশ্য ভালো ছিলো। এবং উটিতে বাকি দুই বেলার খাবারও ভালো ছিলো। পরের দিন রাস্তায় ভেজ ননভেজের জটিলতা শেষে আবার বেঙ্গালোরে পৌছালাম।

উটিতে সেই ভালো বিরিয়ানী ও চিকেন কাবাব

শেষ দিনের সকালে সবচেয়ে ক্লাসিক ঘটনা। আগের হোটেলেই আমরা উঠেছিলাম। ফলে যথারিতী সেই আগের ভেজ ব্রেকফাস্ট ছিলো। আমি আমান একদিকে বসেছি জানালার দিকে মুখ করে। লিটন আর শাকিল রেস্টুরেন্টের ভিতরের দিকে মুখ করে বসেছে। আমরা তিনজন মনযোগ দিয়ে নাস্তা খাচ্ছি, হঠাৎ শাকিলের দিকে তাকিয়ে দেখি শাকিল এক দৃষ্টিতে কি যেন দেখছে। ও যেহেতু রেস্টুরেন্টের ভিতরের দিকে মুখ করে বসেছে, সব বোর্ডারকেই সে দেখতে পাচ্ছে। ওকে দেখে আমার আফ্রিকার কেনিয়া বা তাঞ্জানিয়ার তৃনভূমিতে সিংহীর শিকারের দৃশ্যের কথা মনে হলো। বাচ্চা কোন ইম্পালা হরিণ দেখে যেমন সিংহী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়, সেরকম। শাকিল শুধু গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে না, এই যা পার্থক্য। আমি নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলাম কি দেখিস? শাকিল নিশিতে পাওয়া গলায় বললো, ওমলেট! ঐ লোকটা ওমলেট খাচ্ছে। বাকি তিন জনের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। শাকিল আবার মুখ খুললো, আমাকে ওমলেট আইনা দে। আমি রেস্টুরেন্টের লোককে ডেকে ৪টা ওমলেট দেয়ার কথা বলে দিলাম। সিঙ্গেল ডিমের ওমলেট আসার পর শাকিলের পরের ডায়লোগ, ঐ লোকটা ডাবল ডিমের ওমলেট খাচ্ছিলো।

আরও অনেক কিছু বাকি থাকলো। শুধু আরেকটা জিনিস মনে পরেছে, ফেরার পথেও আবার ভেজ স্যান্ডুইচের বদলে চিকেন টিক্কা স্যান্ডুইচ জুটেছিলো আমার কপালে।      

 

লেখক: আনিসুল কবীর

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top