সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১

কেদারনাথ যাত্রার পথে পথে : ডঃ গৌতম সরকার


প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৩৬

আপডেট:
১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৩১

 

হরিদ্বারে আমাদের ট্রেন ঢুকলো ভোর ৪:৫৫- র জায়গায় গনগনে দুপুর সোয়া বারোটায়; যোশিজি গতকাল রাত্রেই নৈনিতাল থেকে এসে অপেক্ষা করছেন তাই আমরা আর সময় নষ্ট না করে গাড়িতে চড়ে বসলাম । হাঁসফাঁস গরমের মধ্যে হরিদ্বারের ভিড় ঠেলে ২৩ কিলোমিটার দূরে হৃষিকেশে এসে আগে খেয়ে নিলাম, তারপর আরো ৭২ কিমি পাড়ি দিয়ে পৌছলাম দেবপ্রয়াগ - পঞ্চ প্রয়াগের অন্যতম, অলকানন্দা আর ভাগীরথীর সঙ্গম যা গঙ্গা নাম নিয়ে হরিদ্বার হয়ে সমতলের দিকে বয়ে গেছে ।

দেবপ্রয়াগ থেকে ৩৫ কিমি দূরে শ্রীনগর, ছবির মতো সুন্দর এক শহর, বেশ কিছুটা উপত্যকা জুড়ে শহরের বিস্তার৷ ওখান থেকে আরো ৩৫ কিমি পথ পেরিয়ে পৌছলাম রুদ্রপ্রয়াগ৷ তখন সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেছে, কিন্তু  আকাশে গোধূলির আলো যথেষ্ট৷ চটপট তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম এখানকার সঙ্গমের উদ্দ্যেশ্যে --- কেদার নাথ থেকে বয়ে আসা মন্দাকিনী আর বদ্রিনাথ থেকে আসা অলকানন্দা মিলিত হয়েছে৷ জি.এম.ভি.এন-র হোটেল থেকে সঙ্গম হাত ছোঁয়া দূরত্বে কিন্তু এর স্পর্শ পেতে অনেকটা ঘুরে যেতে হবে৷ বেরিয়ে পড়লাম, কিন্তু কিছুটা যেতেই প্রকৃতি বাদ সাধল, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো, চলল প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে৷ অবশেষে আমি যখন সঙ্গমে পৌঁছে দুই ভালোবাসার নদীর সাথে হাত মেলালাম তখন সেখানে কোনো জনপ্রাণী নেই- মন্দির বন্ধ, আরতি শেষ, আর আমার স্ত্রী সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট না নেওয়ার ব্রত নিয়ে অনেকটা ওপরে দাঁড়িয়ে৷

ছবিঃ লেখক ডঃ গৌতম সরকার

পরের দিন অর্থাৎ একত্রিশের (মে, ২০১৭) ভোরে ঘুম ভাঙলো অলকানন্দা -মন্দাকিনির যৌথ সরগমে৷ তৈরী হয়ে একক ভ্রমণে বেরিয়ে আবার পৌঁছলাম সঙ্গমে, কালকের আবছা আলোয় দেখা মন্দির আর নদীদ্বয়ের মিলনস্থল প্রখর আলোয় চাক্ষুষ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা৷ মন্দাকিনীর ওপরে সুন্দর ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে ঘুরে এলাম ওপর পারের এক বস্তি (আদিবাসী গ্রাম ) থেকে৷ অচেনা অযাচিত আগন্তুককে দেখে কয়েকটি বাচ্ছা দৌড়ে পিছনে পালি্ত্রিশে, সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রায়বৃদ্ধ রাগী রাগী মুখে চুটকা খাচ্ছে আর তার সামনে দুটো বাচ্ছা পালাতে না পেরে অবাক আর ভয়মিশ্রিত চোখে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার বৃদ্ধের দিকে৷ আমি কাছে গিয়ে 'নমস্তে' বলতে বৃদ্ধের মুখে গালভরা হাঁসি৷ কিছু কুশল সংবাদ আদান প্রদানের পর আরেকটু এগিয়ে গেলাম কিন্তু বেশিদূর এগোনো গেলনা৷ পূর্ব উল্লিখিত শিশুগুলি ভেতরে গিয়ে ইতিমধ্যেই খবর দিয়েছে আর কয়েকজন মহিলা গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে । আর এগোনো সমীচীন হবেনা মনে করে ব্রিজ পেরিয়ে আরেকবার রুদ্রনাথকে দর্শন করে প্রভাতিক ভ্রমণ সাঙ্গ করলাম৷

আজ আমাদের গন্তব্য গৌরীকুণ্ড, তবে ইচ্ছে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে কার্তিকস্বামী হয়ে গৌরীকুণ্ড যাবো৷ তাই কেদার ছেড়ে বদ্রির পথ ধরে পৌঁছলাম প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে কনকচোরা৷ ওখান থেকে তিন কিলোমিটার ট্রেকপথে কার্তিকস্বামী মন্দির৷ আমাদের পক্ষে খুব একটা সহজ ট্রেক নয়, জানিনা পাহাড়ে কিলোমিটারের কি এরিয়াল মেজার হয় ! কি জানি বাবা ! চড়াই পথে হেঁটে যাচ্ছি তো যাচ্ছি .....যাচ্ছি তো যাচ্ছি ......রাস্তা আর শেষ হয়না৷ তবে রাস্তাটা অতি সুন্দর, পাইন, ফার আর রডোডেনড্রনে পুষ্ট পথ৷ শেষ প্রান্তে এক গ্রাম আর সেখান থেকে অনেকটা চড়াই জুড়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে মায়াবতীর  চার কোটি টাকার এক পরিকল্পনা ---সিঁড়ি তৈরী হচ্ছে শূন্যে, দুদিকে মজবুত রেলিং, আরো অনেক কিছু৷ অসম্ভব সুন্দর প্রেক্ষাপটে এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য শিবের ধরাধাম উত্তরাখন্ডে এই একটিই শিবপুত্রের মন্দির আছে৷ কিন্তু আবহাওয়ার অসহযোগিতায় কার্তিকস্বামীর প্রেক্ষাপটে কোনো তুষারধবল শৃঙ্গের দেখা পেলাম না৷

আমার সঙ্গিনীকে নিয়ে চারঘন্টায় ট্রেক অভিযান শেষ করে আবক্ষ খিদে নিয়ে নিচে এসে পেলাম কেবল এক প্লেট করে ম্যাগি৷ সাড়ে তিনটে বাজে, আকাশের অবস্থা কিন্তু ভালোনয় ---সারা আকাশ জুড়ে কালো মেঘ অকাল সন্ধ্যে ডেকে এনেছে৷ মুনখাল আর বাঁশওয়ারা হয়ে শর্টকার্ট করলেও গৌরীকুণ্ড তখনো প্রায় একশো কিলোমিটারের ওপর পথ৷ শোনপ্রয়াগ পৌঁছতে সন্ধ্যে সাতটা হয়ে গেল; আর 'গোদের ওপর বিষফোঁড়া' যেটা হল ---কেদারনাথ যাত্রা শুরুর কারণে আমাদের (সমস্ত ট্যুরিস্টদের ) গাড়ি শোনপ্রয়াগে আটকে দিল, তখনও গৌরীকুণ্ড আসতে পাঁচ কিমি বাকি৷

আমাদের অতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসার মানুষ বলে গেছেন –‘পতির পুণ্যে সতীর পূণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে'৷ কিন্তু আমরা ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক এই মহান সত্য নিজেদের জীবনে পালন করতে সাহস করিনা৷ আমিও একজন এই দলের -সাহস, শক্তি, আর আধিপত্য বিস্তারে অত্যন্ত দূর্বল ; ক্ষীন কণ্ঠে দুয়েকবার প্রতিবাদ জানালেও অবশেষে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ভয়ে আর পাঁচটা পুরুষের মতো সব কিছুই মেনে নিই৷ যার ফলশ্রুতিতে ট্রেক করার ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়ে পয়লা জুনের সকাল ছটায় পাশাপাশি দুটো ঘোড়ায় চড়ে বসলাম কেদারনাথ যাত্রার উদ্দেশ্যে৷

হাজারে হাজারে মানুষ ওই সকালে হেঁটে, ঘোড়ায়, ডান্ডিতে, কান্ডিতে বিভিন্নভাবে  ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করতে করতে এগিয়ে চলেছে চলেছে শৈবতীর্থ পঞ্চকেদারের সবচেয়ে জনপ্রিয় তীর্থ কেদারনাথের উদ্দেশ্যে৷ আমরা ধীরে ধীরে তীর্থযাত্রীর ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম৷ প্রাথমিক পর্বটা বেশ মসৃণ ভাবেই হল; চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলচটি পেরিয়ে দেড়ঘণ্টার মধ্যে পৌছে গেলাম মন্দাকিনীর একদম কোলে অবস্থিত ভীমবালিতে-  গৌরীকুণ্ড থেকে দূরত্ব ছ কিলোমিটার৷ এখানে এসে আমাদের পা -কোমরের একটু বিশ্রাম দিলাম আর কিছুটা উদরের তদ্বির করে এগিয়ে চললাম৷ মন্দাকিনীর অপর পাড়ে নতুন যে রাস্তাটা তৈরি হয়েছে তা ভয়ংকর চড়াই, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সেই প্রানান্তকর চড়াই পেরিয়ে পৌঁছতে হবে লিনচোলি৷ তবে একটাই ভরসার কথা ভীমবালি ছাড়ার কিছুটা পরই আকাশ জুড়ে রজতকান্তি কেদারনাথের সমুজ্জ্বল উপস্থিতি তীর্থযাত্রীদের শক্তি ও ভক্তি দুটোই বাড়াবে৷ আমাদের যদিও খুব কিছু অসুবিধা হলনা, চড়াইয়ে অশ্বভ্রমণ কষ্টকর তো নয়ই বরঞ্চ আরামদায়ক৷ আমরা আস্তে আস্তে  লোয়ার লিনচোলি, আপার লিনচোলি পেরিয়ে অনেকটা ওপরে দূরে গরুড়চটির আভাস পেলাম৷ অবশেষে আরোও কিছু চড়াই আর শেষের দিকে কিছুটা উতরাই পেরিয়ে ঘোড়া আমাদের যেখানে নামিয়ে দিল, সেখান থেকে মন্দির দেড় কিলোমিটার৷

ঘোড়া থেকে নেমে মন্দিরের দিকে তাকাতে সমস্ত পার্থিব অনুভূতিগুলো স্তব্ধ হয়ে গেল- অবাক, বিষ্ময়, ভালোলাগা, ভালোবাসা, মুগ্ধতা সবকিছু গুলিয়ে গিয়ে একটাই অনুভূতি সারা শরীর-মনে খেলে গেল --এটাই স্বর্গ, এছাড়া এই জায়গাটিকে আর কোনো বিশেষণেই বিশেষিত করা যায়না৷ চোখের সামনে হাত ছোঁয়া দূরত্বে কেদারনাথ, কেদারডোম, সুমেরু, কীর্তিস্তম্ভ পাশাপাশি আপন আপন আভিজাত্যে সমাসীন৷ হোটেলে ঢোকার আগে মন্দির দর্শনে গেলাম, বেশ বড় লাইন৷ চোখের সামনে বইয়ে  বা নেটের ছবিতে দেখা সেই অতি পবিত্র এবং অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির চোখের সামনে দীপ্যমান আর তার মাথার উপর হিমালয় শৃঙ্গসমূহের সুমহান উপস্থিতি৷ পূজো দিয়ে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে বিকেল বিকেল আবার বেরোলাম৷ হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া গোটা উপত্যকা জুড়ে, একটু সন্ধ্যে হতে কেদারসহ সমস্ত শৃঙ্গগুলো শেষ সূর্যের আলোয় অদ্ভূত রাঙা রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুললো৷ সেই পটপরিবর্তনকে বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই৷ আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি সন্ধ্যারতি দেখে যখন রাত সাড়ে আটটায় হোটেলে ফিরলাম তখন মনে হল -- সত্যিই আমরা পরিপূর্ণ৷

দু তারিখে খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল; কেদারপথের বৈশিষ্ট্য হল বেলা বারোটার পর আবহাওয়া খুব প্রতিকূল হয়ে যায়, তাই ওঠা -নামা দুটোই সকাল সকাল হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ তাই তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম যাতে করে ছটা নাগাদ ঘোড়ায় চড়ে ফেলতে পারি; কিন্তু বিধি বাম ! শুনলাম ঘোড়াযাত্রা শুরু হবে সাড়ে আটটা -নটায়৷ এখানকার অফিস খুলবে সকাল আটটায়৷ আসলে গৌরীকুণ্ড থেকে যে সমস্ত ঘোড়া ওপরে আসে সেগুলো সন্ধ্যেবেলা সওয়ারী নিয়ে বা বিনা সওয়ারীতেই নিচে নেমে যায়৷ কারণ ঘোড়া বা ঘোড়সওয়ার কারোর পক্ষেই রাতে কেদারে থাকা সম্ভব নয়৷ তাই সকালবেলা গৌরীকুণ্ড থেকে সওয়ারী নিয়ে ঘোড়া আসবে তারপর ওপরের লোকেরা নিচে নামার সুযোগ পাবে৷ অগত্যা আমাদের সকালবেলা ঠান্ডা-ঠান্ডায় নিচে নামার পরিকল্পনা বাতিল করে আবার হোটেলে ফিরতে হল৷ ইতিমধ্যে যে কটি ঘোড়া ওপরে আছে তারা সুযোগ পেয়ে পর্যটকদের সাথে ব্ল্যাক করা শুরু করে দিয়েছে৷ ওপর থেকে নিচে নামার সরকারি রেট ১১00 টাকা সেখানে কেউ ৩০০০, কেউ ৩৫00 টাকা দর হাঁকছে, আর আশ্চর্য্যের কথা কোনো কোনো পর্যটক তাতেই রাজি হয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসছে৷ এর ফলশ্রুতিতে দেখলাম সরকারি অফিস খুলে স্বাভাবিক রেটে যাত্রা শুরু হওয়ার পরও  কিছু কিছু ঘোড়াওয়ালা বিভিন্নভাবে পর্যটকদের ভুল বুঝিয়ে বেশি টাকা লোটার চেষ্টা করছে৷ যাই হোক আমরা কাউন্টার থেকে পরচি কেটে যাত্রা শুরু করলাম ঠিক সাড়ে আটটায় ।

ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে ওঠাটা একদমই কষ্টদায়ক নয় কারণ চড়াইয়ে ওঠার সময় ঘোড়াকেও দম নিতে নিতে ধীরে সুস্থে ওপরে উঠতে হয়, তাই বেশি ত্যাঁদরামি করার সুযোগ পায় না; কিন্তু নামার সময় হয় ঠিক তার উল্টো৷ তিন ঘণ্টার প্রাণান্তকর অবতরণ, লিঞ্চোলি থেকে ভীমবালির পাঁচ -ছ কিলোমিটারের অবিরাম উৎরাই শেষ করে মনে হল শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ রাস্তায় খুলে পড়ে গেছে। আবার আমাদের মতো পঞ্চাশবর্ষীয়দের ক্ষেত্রে প্রকৃতির নিয়মেই বেশ কিছু অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ ইতিমধ্যেই বিদ্রোহ ঘোষণা শুরু করে দিয়েছে৷ অবশেষে জঙ্গলচটিতে একটা ব্রেক নিয়ে যখন গৌরীকুন্ডে এসে পৌঁছলাম তখন আমাদের দুজনেরই 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্হা৷ গাড়ি আছে শোনপ্রয়াগে, তাই একটা ট্রেকার ধরে রওয়ানা দিলাম, যোশিজি ওখানে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন৷

কেদারযাত্রার পরের পাঁচদিন আমরা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বুকিং করিনি; পরিবেশ -পরিস্থিতি, শরীর, সক্ষমতা অনুযায়ী কদিন ঘুরবো এটাই  ঠিক করা আছে, তবে ইচ্ছে আছে -তুঙ্গনাথ আর বদ্রীনাথ ....এরপর আর যেটুকু হয়, তবে সেটা অবশ্যই সময় নিয়ে, আর শরীরকে সইয়ে সইয়ে৷ আমরা শোনপ্রয়াগ থেকে সাড়ে বারোটা নাগাদ রওয়ানা দিলাম, পথে গুপ্তকাশীতে খেয়ে নিলাম, এরপর কুণ্ড পেরিয়ে মন্দাকিনীকে বিদায় জানিয়ে উঠে এলাম কুণ্ড থেকে মাত্র ছ কিলোমিটার দূরে উখিমঠে৷ কপালে জোরে জি.এম.ভি.এনে একটা ঘর পেয়ে গেলাম৷ অসম্ভব সুন্দর প্রেক্ষাপটে অবস্থান এই ট্যুরিস্ট লজের৷ যদিও খুবই প্রান্তিক ব্যবস্থা, দুটো মাত্র ঘর আর একটা ডরমিটরি, সামনে উন্মুক্ত প্রান্তর জুড়ে দেখা যাচ্ছে চৌখাম্বা, নীলকণ্ঠ, ভার্তৃঘন্টা ইত্যাদি পর্বতশৃঙ্গ৷

উখিমঠের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল - শীতকালে এখানকার ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরে কেদারনাথজির পূজো হয়৷ দেওয়ালির পর বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে এই মন্দিরে নামিয়ে আনা হয়৷ এই জায়গাটির আসল নাম ছিল ‘ঊষা মঠ’; দৈত্যরাজ বাণাসুরের রাজধানীর অন্তর্গত মন্দিরের মধ্যে এখনো দৈত্যরাজ বানাসুরের মেয়ে ঊষার সাথে কৃষ্ণপৌত্র অনিরুদ্ধের বিবাহ মণ্ডপ বিদ্যমান৷ উখিমঠ একটা অত্যন্ত সুন্দর, ছোট্ট নির্জন জনপদ -এক কথায় স্বপ্নপাহাড়ের হ্যামলেট৷ এত শান্ত, শব্দহীন শহর পাহাড়েও আমি খুব কম দেখেছি; দুয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত শহরের একদিকে কেদারনাথজির অধিষ্ঠান ওঙ্কারেশ্বর মন্দির আর আরেক প্রান্তে ভারত সেবাশ্রম৷ খুব ভালো লাগবে ব্যাস্ত সিডিউলের মধ্যে দুয়েকটা দিন এখানে কাটিয়ে যেতে৷

 

ডঃ গৌতম সরকার
অর্থনীতির শিক্ষক, যোগমায়া দেবী কলেজ, কলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top