সম্প্রতি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন ব্রিসবেন (ব্যাব) আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতির নান্দনিকতা দৃষ্টিনন্দন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ব্রিসবেনের বাংলাদেশী কমিউনটির কয়েকটি সংগঠনের পারস্পরিক সহায়তায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল লোগান ওয়েস্ট কমিউনিটি সেন্টারে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪। উক্ত আয়োজনে নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৫২-এর মহান ভাষা শহীদগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিশু-কিশোরসহ ব্রিসবেনের নানান জাতি-বর্ণের মানুষ।
পাশাপাশি বিগত শতাব্দীর শেষাংশে, ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে যারা অনন্য অবদান রেখেছিলেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আয়োজকগণ সহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
বহু ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনটি সত্যিকারভাবেই একটি আন্তজাতিক রূপ পরিগ্রহ করে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সংষ্কৃতির মানুষেরা বাঙালি জাতির এই সুমহান অর্জন সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পান। অনুষ্ঠানটি ঘিরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ মানুষের সমাবেশ ঘটে, যাদের মধ্যে ভারতীয়, শ্রীলংকান, কলম্বিয়ান, কেনিয়ান এবং অস্ট্রেলিয় নাগরিকদের উপস্থিতি ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিকাল সাড়ে চারটায় সমন্বিত কণ্ঠে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। প্রারম্ভেই ভাষা শহীদগণের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত সুধিবৃন্দ। অতঃপর মাতৃভাষা, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে স্থানীয় বাংলাদেশী এবং বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা, নাচ, গান ও আবৃতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলা হয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সেইসাথে বিশ্বব্যাপী নানা সম্প্রদায়ের মানুষের মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং তাঁদের মাতৃভাষায় কথাবলার অধিকারের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের আঁকা 'বাংলাদেশ ভিত্তিক' দৃষ্টিনন্দন কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রদর্শনীর, যা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন বহু সংস্কৃতির দর্শকমন্ডলী। আয়োজনটিকে কেন্দ্র করে ব্রিসবেনের নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মাঝে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে আয়োজকগনের প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত লক্ষ্যণীয়। নতুন প্রজন্মের মাঝে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য, বাংলা কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি তুলে ধরার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আয়োজক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও আয়োজনটিকে অর্থবহ করে তুলতে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে ভাষা শহীদগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দসহ উপস্থিত সুধীমন্ডলী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনকল্পে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে ভাষা শহীদগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সামিল ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাননীয় সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী মিঃ লিয়ানে ইনক এমপি, লোগান-এর মাননীয় এমপি মিঃ লিনাস পাওয়ার, ক্যালামভেল ওয়ার্ড- এর মাননীয় কাউন্সিলর অ্যাঞ্জেলা ওয়েন, ডিভিশন ৬-এর মাননীয় কাউন্সিলর টনি হল, ভলান্টিয়ার কানেক্ট ইনক-এর মাননীয় সভাপতি মিঃ মাইক বাটলার, কুইন্সল্যান্ডের জাতিগত স্কুল অ্যাসোসিয়েশন-এর মাননীয় সভাপতি আইরিন বেল্ডন এবং মাল্টিকালচারাল অ্যাফেয়ার্স কুইন্সল্যান্ড-এর মাননীয় প্রধান প্রোগ্রাম অফিসার ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল রেডিও-এর সিইও মিঃ উমেশ চন্দ্র।
ব্যাব-এর সাথে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিসবেন বাংলা স্কুল, ব্রিসবেন বাংলা রেডিও, বাংলাদেশ পূজা ও সাংস্কৃতিক সোসাইটি ইনক ব্রিসবেন (বিপিসিএস) এবং সোসাইটি অব বাংলাদেশি ডক্টরস কুইন্সল্যান্ড (এসবিডিকিউ) অনুষ্ঠানটি আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ড. ইমতিয়াজ এবং তানিশার ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ সঞ্চালনায় প্রবহমান অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ব্যাব-এর সম্মানিত সভাপতি ড. কুশল আহমেদ। তিনি অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
ইমতিয়াজ আহমেদ
ব্রিসবেন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: