সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


মালদ্বীপে উন্মুক্ত ভারত-নেপালের শ্রমবাজার, বন্ধ বাংলাদেশের


প্রকাশিত:
২৬ মার্চ ২০২২ ২২:৩২

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ০১:৫৩

ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ। দেশটির আয়তন মাত্র তিনশ’ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্য পাঁচ লাখ। আয়তনে ছোট হলেও শ্রমবাজারের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন লাখের বেশি। অবকাঠামো নির্মাণ ও পর্যটন খাতেই অধিকাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন।

তবে অনেকেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। ফলে তারা পাচ্ছেন না উপযুক্ত শ্রমের মূল্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলে বাড়বে প্রবাসী আয়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ২০১৯ সাল থেকে দেশটির শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। ভিসা বন্ধ থাকায় এই শ্রমবাজার হাতছাড়া হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। এই সুযোগে ভারতীয়দের দখলে চলে যাচ্ছে এই শ্রমবাজার। মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন এমন তথ্য।

মালদ্বীপের দূতাবাস সূত্র বলছে, মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই অবৈধ। যারা অবৈধ (অনিয়মিত) তাদের নিয়মিত করতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সময় তখন ৪০ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেন। ওই সময় রেজিস্ট্রেশন করলে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় ২০ হাজার কর্মী রেজিস্ট্রেশনই করেননি।

এতে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক। যদিও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর করোনায় দেশটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধই ছিল। এখন আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়েছে, কিন্তু সম্ভাবনাময় মালদ্বীপের শ্রমবাজারে বন্ধ আছে অদক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী জানান, ভারতের ষড়যন্ত্রে ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকার এক বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মী না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এক বছর পার হয়ে গেলেও ওই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভারত কোনোভাবেই চাইছে না নতুন করে বাংলাদেশ থেকে কাউকে এখানে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হোক।

তারা জানান, তাই এখনো মালদ্বীপে বাংলাদেশের শ্রম বাজার আটকে আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা থেকে শ্রমিক নেয় মালদ্বীপে। যা বাংলাদেশের জন্য খুবই দুঃখজনক। মালদ্বীপের শ্রম বাজারের অন্যতম আস্থার নাম ছিল বাংলাদেশ। সেই দেশে এখন বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়া বন্ধ আছে।

মালদ্বীপের রাজধানীতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেওয়া নাম কামলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেই কামলা বাজারে শুধুমাত্র বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিক। শ্রমিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় মালদ্বীপ সরকার আপনাদের বৈধ হওয়ার জন্য সময় দিয়েছে বৈধ হচ্ছেন না কেন? কারণ হিসেবে অনিয়মিত অনেক প্রবাসী বলেন, এখানে বৈধ হতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন যা বাংলাদেশের টাকায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। এত টাকা দিয়ে অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা নিয়মিত হচ্ছে না।

জানা গেছে, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী ইচ্ছাকৃত নিয়মিত হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা মালিকের, কিংবা কোম্পানির নামে অল্প বেতনে কাজ করেন। আর কামলা বাজার থেকে কাজে গেলে বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। দেশটিতে আয়ের খাতও সীমিত। শুধু পর্যটন খাতকেই অর্থনীতির প্রধান উৎস হিসেবে ধরে এগিয়েছে অনেকটা পথ। এই খাতকে আধুনিকায়নের ফলে খুব অল্প সময়েই দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হয়েছে শক্তিশালী। বর্তমানে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ডলারে।

মালদ্বীপে বাংলাদেশী শ্রমবাজারে প্রতিবন্ধকতা ভারত

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অপ্রত্যাশিত জয় পায় ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালিহ। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ভারত প্রীতিতে জড়ান। আর ভারতও দীর্ঘদিন বাংলাদেশের দখলে থাকা মালদ্বীপের শ্রম বাজারকে নিজেদের করে নেওয়ার কূটচাল শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি বৈরি আচরণ শুরু করে মালদ্বীপ সরকার। যদিও ইব্রাহিম সালিহ ভারতীয় সেনাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলেই ভারত সরাসরি মালদ্বীপে হস্তক্ষেপ করতে পারছে বলে মনে করেন প্রবাসী শ্রমিকরা।

আর ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালিহ দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই শুরু হয় ওই দেশে থাকা বাংলাদেশী শ্রমিকদের নতুন যুদ্ধ। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সময় মালদ্বীপের শ্রম বাজারের অন্যতম আস্থার নাম ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশী শ্রমিকদের দুরাবস্থা বাড়ে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যখন অর্থ পাচারের অভিযোগে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেফতার করা হয়।

তবে আবারও সুদিন ফিরবে বলে আশায় আছেন বাংলাদেশী শ্রমিকরা। কারণ মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সাজা সে দেশের সুপ্রিমকোর্ট গত ৩০ নভেম্বর বাতিল করে তাকে মুক্তি দেয়। আবদুল্লাহ ইয়ামিন মুক্তির পর গত ৬ ডিসেম্বর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশে মালদ্বীপে ভারতীয় সেনাদের অপসারণের আহ্বান জানান।

মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগে মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশী অনিয়মিত (অবৈধ) শ্রমিকদের নিয়মিত করার উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার। এরপর করোনা শুরু হয়ে গেলে মালদ্বীপের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়েন প্রচুর বাংলাদেশী। তখন অনেক বাংলাদেশীকে টিকিট দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের ফিরে আসা আর হয়নি।

করোনা শেষের দিকে। এজন্য মালদ্বীপে সবপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। এই সবকাজে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। তারা অন্য দেশের শ্রমিকদের মতো নয়। মালিক যখনই তাদের কাজের জন্য বলে তারা কাজে সম্মতি দেয়। প্রচুর পরিশ্রমীও তারা। আসলে মালদ্বীপ সরকার এখন চাচ্ছে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে। বাংলাদেশী শ্রমিকরা এই সারিতে পড়ে না। তাই তাদের আসা বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই এই সমস্যা কাটানো যাবে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top