সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ভিটামিন ডি-এর অভাবে সমস্যা ও সমাধান


প্রকাশিত:
২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৫

ভিটামিন ডি-এর অভাবে সমস্যা ও সমাধান

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: আমাদের দেশে ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত সমস্যায় পড়েন শুধুমাত্র বয়স্করাই নয়। আজকাল ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই এটি কি, কীভাবে কাজ করে, এর অভাবে কি সমস্যা হতে পার আর আমরা কীভাবে সহজে ভিটামিন ডি পেতে পারি তা নিয়ে আজকে কিছু জানার চেষ্টা করব।



 ক্যালসিয়ামের প্রধান উপাদান ভিটামিন ডি



আমাদের হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠন ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। আপনি প্রচুর ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন দুধ, দই, কচুশাক ইত্যাদি খান। কিন্তু আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে। তাহলে খাবার থেকে ক্যালসিয়াম আপনার হাড়ে গিয়ে পৌঁছাবে না। হাড় দুর্বল হয়ে পড়বে। হাড় ক্ষয়রোধ করা এবং হাড়ের গঠনে সহায়তা করা হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় ভূমিকা। এর বাইরেও এর কিছু ভূমিকা আছে।



ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখে। ফলে সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি কম হয়। ভিটামিন ডি ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।



ভিটামিন ডি-এর অভাবে যা হয়



হাড় ক্ষয় হতে পারে। ফলস্বরূপ হাঁটুতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা বা ব্যাক পেইন হতে পারে। ঘন ঘন সর্দি-কাশি ইনফেকশন ইত্যাদিতে আক্রান্ত হতে পারেন। ক্লান্তিভাব বজায় থাকতে পারে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন। এটির অভাবে ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। চুল কমে যেতে পারে। এগুলো সবই হতে পারে। হবেই যে এমনটা নয়।



যেভাবে পাবেন ভিটামিন ডি



বিভিন্ন ভিটামিনের জন্য আমারা বিভিন্ন খাবারের ওপর নির্ভর করি। যেমন ভিটামিন সি-এর উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ফল বিশেষত টক ফল। ভিটামিন এ থাকে ছোট মাছে। কিন্তু ভিটামিন ডি-এর জন্য আমাদের কোনো খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয় না। এটির কাঁচামাল আমাদের শরীরে অটোমেটিক তৈরি হয়ে ত্বকের নিচে অবস্থান করে। সূর্যের আলো ত্বকের ওপর পড়লে সেই কাঁচামাল ভিটামিন ডি তে রূপান্তরিত হয়।



কিছু খাবারের মধ্যে সামান্য ভিটামিন ডি থাকে। যেমন ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ (যেমনÑ টুনা, কড), বিশেষ ধরনের মাশরুম, গরুর দুধ ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে এসব খাবার আমাদের দেশের মানুষের জন্য তেমন সহজলভ্য নয়। ক্রয়ক্ষমতাও আমাদের কম। মুরগি যদি ছাড়া ভাবে পালন করা না হয় তাহলে সেই মুরগির ডিম থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে না। ফার্মের মুরগির ডিম থেকে তাই এটি পাওয়া কষ্টকর।



মরার ওপর খাড়ার ঘা হচ্ছে এসব প্রাকৃতিক খাবার থেকে আমাদের চাহিদার মাত্র ২০ ভাগ ভিটামিন ডি-এর যোগান হয়। তাহলে উপায় কি?



কৃত্রিমভাবে ভিটামিন ডি যুক্ত করে দুধ, সিরিয়াল, ওটমিল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এসব খাবারকে বলা হয় ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড ফুড। এসব খাবার প্রচুর খেতে হবে অথবা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খেতে হবে। সেই ট্যাবলেট আবার এমনি খেলে হবে না। দুধের সঙ্গে খেতে হবে। কারণ ফ্যাট ছাড়া আবার ভিটামিন ডি ঠিকমত হজম হয়ে শরীরে প্রবেশ করে না। ব্যাপক ঝামেলা।



এত সব চিন্তা করে খাবার খাওয়া অথবা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খাওয়ার ঝামেলা থেকে আপনি সহজেই মুক্তি পেতে পারেন শুধুমাত্র সপ্তাহে ৪-৫ দিন প্রতিদিন আধা ঘণ্টা রোদ পোহালে। এটাই সবচেয়ে কার্যকর, সহজ আর ন্যাচারাল সমাধান। রোদ লাগানোর ক্ষেত্রে মনে রাখবেন,



* ভোরবেলা বা বিকাল বেলার রোদ লাগালে হবে না। আপনার ছায়া যখন আপনার চাইতে দৈর্ঘ্যে ছোট হবে সে সময়ের রোদ লাগাতে হবে। সেই হিসাবে দুপুর ১২টার যত আশপাশে হলে ভালো। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা সব মৌসুমেই কাজ করবে।



* জানালার কাঁচ ভেদ করে আসা রোদ দিয়ে কাজ হবে না।



* সানস্ক্রিন ত্বকে মাখলে ভিটামিন ডি তৈরি হবে না। কারণ সানস্ক্রিন রোদের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।



* রোদ পিঠে লাগালে সবচেয়ে দ্রুত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কারণ পিঠে ত্বকের ক্ষেত্রফল হাত বা মুখের চেয়ে বেশি।



এভাবেই মানুষ শত শত বছর ধরে সূর্যের আলোর মাধ্যমে ভিটামিন ডি পেয়ে আসছে।



কিন্তু বর্তমানে ইট-পাথরের শহরে সময় করে রোদ পোহানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। তাই যাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিজনিত কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে (যেমন হাড় ক্ষয়) তারা চুপচাপ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি-এর ট্যাবলেট খেয়ে নেবেন। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিম দুধ বা ফলফলাদি থেকে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করার আশা করবেন না।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top