সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

তালাকনামাহ : মীম মিজান


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৯

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৪

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মেধাবী ছাত্রী মাসুমা। আম ও গম্ভীরার শহর চাপাই নবাবগঞ্জের মেয়ে। বিএসসি অনার্স ও এমএসসি প্রথমশ্রেণী নিয়ে উত্তীর্ণ হলো। একটি বেসরকারী ব্যাংকে প্রথম চাকররি পরীক্ষা দিয়েই পাশ করে। পোস্টিংও পড়ে রাজশাহী শহরের আলুপট্টি শাখায়।

পরিবারের এখন চাপ বিয়ের জন্য। 'এতদিন তো বলেছিস পড়াশুনা শেষ করি। পড়াশুনা শেষ করে জবও পেয়ে গেলি। তাই আর বিয়ে নিয়ে কোনো অজুহাত শুনবো না আমরা। আর যদি তোর পছন্দের কেউ থাকে আমাদের বল।' 

'না, না, আমার কোনো পছন্দ নেই। তবে তোমরা যাকে পছন্দ করবে তাকে কিন্তু আমার থেকেও বড় পোস্টের চাকুরি করতে হবে।' পরিবার জোরসে পাত্র খোঁজা শুরু করে।

বুয়েট থেকে ইইই'তে পাশকরা এক ইঞ্জিনিয়ারকে পছন্দ করে মাসুমার পরিবার। ছেলে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ঢাকায় কর্মরত। স্যালারিও হ্যান্ডসাম। ছেলের বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালীতে। দেখতে যেমন উচু তেমনি কিউট চেহারা। তবে ছেলে ততটা স্বাস্থ্যবান নয়।

নিকটতম একটি শুক্রবারে চাপাই নবাবগঞ্জের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে সম্পন্ন হলো মাসুমা ও ইঞ্জিনিয়ার দম্পতির। মাসুমাকে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বর চলে আসে তাদের কাটাখালীর বাড়িতে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। নব দম্পতিকে ফুলেল শয্যা বাসরঘরে দেয়া হলো। বাসরঘরে দেয়ার সময় ইঞ্জিনিয়ারের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কিসের জানি একটা গুঞ্জরণ উপলব্ধি করলো মাসুমা। 

সব গুঞ্জরণের কথা মাথায় বেশিক্ষণ থাকল না মাসুমার। বাসরঘরের রোমাঞ্চকর পরিবেশের আবহে সবকিছু ভুলে যায় সে। কত স্বপ্ন ও কল্পনার বাসরঘর! কত গল্প! কত খুনসুটি! কত জানা-অজানা ভয়-ভীতির মুখোশ উম্মোচন। অতপর দু'জনেই ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল এগারটা। মাসুমার পরিবারের লোকজনের মধ্যে ব্যস্ততা যে, নতুন জামাই আর মেয়েকে নিয়ে আসতে হবে। কয়েকটি মাইক্রোবাসও এসে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝেই এক আশ্চর্য ঘটনার জন্ম দিয়ে মাসুমা বাড়িতে প্রবেশ করলো।

বাবা এসে কিংকর্তব্যবিমুঢ়চিত্তে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মা আদরের সুরে জিজ্ঞেস করলো 'কি রে কি হয়েছে? কোনো খোঁজখবর না দিয়েই চলে আসলি? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?' 'মা আমি ঐ বাড়িতে আর যাব না। আর কি সমস্যা তা তোমাকে বলতে পারবো না। দাদী কই? তাকে বলবো সমস্যার কথা।'

দাদী মাসুমাকে ঘরের ভিতর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে 'বলতো কি হয়েছে? কি সমস্যার কারণে প্রথমদিনেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে আসলি?' 'দাদী, আমি লজ্জায় ওকথা বলতে পারছি না।' 'শোন, লজ্জা পাসনা। বল, আমাকে বল।'

'আমরা বাসরঘরে তোমার নাতিজামাইসহ অনেক কথাবার্তা বললাম। তারপর আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম শেষরাতের দিকে। সকালবেলা দেখি আমার শরীর প্রায় ভিজা। আর বিছানাটা দেখি ভিজে গেছে। কী এক গন্ধ ! তোমার নাতিজামাই রাতে বিছানায় প্রস্রাবকরে। তোমরা কি করে এ রকম একটা ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিলে? আমার জীবনটা ধ্বংস করতে চাও তোমরা? তুমি আব্বাকে বলো ঐ ছেলের বাড়িতে তালাকনামাহ পাঠাতে।' 

 

মীম মিজান
লেখক ও সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top