সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

হিমেল সমীরণের ঝাপটা : মীম মিজান


প্রকাশিত:
৬ মে ২০২০ ২০:২৬

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৯

মীম মিজান

 

নির্মল এক সকাল। পরিচ্ছন্ন কালো পিচঢালা রাস্তা। ধানমন্ডি এলাকার মানুষের বিহানকালের আরামের ঘুম ভাঙেনি। আমি পিঠে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছি ৩২ নম্বরের দিকে। হঠাৎই মানসপট জাগিয়ে তুলল কলমের জাদুতে মোহাবিষ্টকারী একজন মানুষের অস্তিত্ব। স্পর্শে করিৎকর্মা মুঠোফোনে তার এগার ডিজিটের নম্বরে সবুজ বাটন চাপলাম। ক্রিংক্রিং।
:হ্যালো ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আমি মীম মিজান।
:ওয়া আলাইকুম আসসালাম। মীম মিজানের নম্বর সেইভ করা আছে। নাম বলতে হবে না। আপনি ক্যামন আছেন?
:আলহামদুলিল্লাহ। ভাই আপনি ক্যামন আছেন?
:আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি।

এরকমই কথাবার্তা হচ্ছিল সেই মানসপটে উদিত ব্যক্তির সাথে। কিছুটা শ্লেষ্মাযুক্ত গলায় তিনি জানালেন যে, তাকে নাকি মনিরুল ইসলাম দোলা ফোন করেছিলেন সাক্ষাতের জন্য। আর আমিও তার সাথে দেখা করার জন্য অনেকবারই চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফলতা নামক মুকুটটি আজো পারিনি আয়ত্তে আনতে। অনেকেই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন তখন তিনি মিরপুরের তার কর্মস্থলে উপস্থিত। আজিমপুর থেকে মিরপুর যেন বাংলাদেশ থেকে কাতার দূরত্ব। যেখানে বিমানে কাতার যাওয়া যায় তিনঘন্টার মধ্যে। আর সেখানে আজিমপুর থেকে মিরপুর তিনঘন্টায় অনেক সময় কল্পনাতীত। সকল কাজের ঐ একটি জায়গা হওয়ার কারণে কী ধীরতা এ নগরীতে! কী স্থবিরতা এর গতিতে! স্বল্পপ্রজ শক্তিমান এ কথাকার হয়ত কথাসাহিত্যে আরো প্রোজ্জ্বল সৃষ্টি রাখার প্রয়াস করতেন। তবে আমরা জাতি হিশেবে দুর্ভাগা যে তারসহ(যাকে নিয়ে লিখতেছি) সমস্ত রাজধানীবাসীর কর্মক্ষম কত সহ¯্র ঘন্টা কেড়ে নিয়ে তাদেরকে প্রায় আড়ষ্ট করে দিচ্ছি। আমরা বঞ্চিত হচ্ছি অনেক কালজয়ী সৃষ্টির রসাস্বাদন থেকে।

মার্ক জুকারবাগের ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল তার সাথে। পড়েছিলাম তার ‘শিশির’ শীর্ষক কোমল মোলায়েম গল্প। আজো সেই শিশিরে স্নাত হই আমি। বাষ্পীভূত শিশির জমে যেমন দূর্বাঘাসের ডগাকে করে পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু দূর্বাঘাসের দেখা হয় না সেই শিশিরের উৎপত্তিস্থল। তেমনি আমার পাঠক হৃদ যে শিশির ফোঁটার দ্বারা নন্দিত ও তৃপ্ত তার উৎপত্তিস্থল নামক লেখকের সাথে পারিনি মিলতে।

২০১৭ সালের বইমেলা। তার সাথে মেলায় সাক্ষাতের জন্য ওভার ফোনে অনেক কথা বলে সন্ধ্যার দিকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের নিচথেকে ঢাকার গর্ব রিকশা করে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে মেলা প্রেমীদের সেই ভীড়। আমাকে বয়ে নেয়া রিকশা রাজু ভাস্করের সামনে পৌঁছতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। আমি তাকে ফোন করি আবার। বললেন, ‘আমিতো বাসায় চলে এসেছি। আপনি এক কাজ করেন, আজিমপুর কবরস্থান মসজিদের কাছে আসেন। সেখানে নামাজান্তে কথা হবে।’ আমি পরেরদিন সিরাজগঞ্জ ফিরব। তাই আর সে যাত্রায় মিলা হলো না তার সাথে।

আমি অবচেতন মনে ভাবি। তার সাথে হবে বুঝি কোথাও হঠাৎ দেখা। এমনও তো হতে পারে আমি কোন প্রয়োজনে ঢাকা গেলাম। গাবতলি থেকে উঠলাম নিউ মার্কেট বা নীলক্ষেতের বাসে। রাজধানীবাসীর বদ অভ্যেসের বাসের গেটের কাছের ভীর ঠেলে ঘামে নেতিয়ে পড়ে শেষের দিকে এগুতে দেখি একজন চুলহীন মাথার কাঁচাপাকা গোঁফওয়ালা ব্যক্তির পাশে একটি আসন খালি। তিনি সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন বসতে। খাঁদি কাপড়ের পাঞ্জাবি পরিহিত সেই ব্যক্তির পাশে ঘর্মাক্ত শরীরে বসে সাথে সাথে আবিষ্কার করব যে, ইনিতো সেই শিশিরের উৎপত্তিস্থল। যে শিশিরে আমি প্রায়শই ভিজি দূর্বাডগার মতো। হই তৃপ্ত। সেই শিশিরের আঁধার পেয়ে আমি ঘর্মাক্ত শরীরে অনুভব করব জৈষ্ঠের সকালের এক হিমেল সমীরণের ঝাপটা। মাসের প্রারম্ভিক চাঁদের মতোই মুখশ্রী করে হেসে বলব, ‘হঠাৎ দেখা হলো’।

 

মীম মিজান
লেখক ও সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top