সিডনী বুধবার, ১লা মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বউঠান কাদম্বরী, রবীন্দ্রনাথের দেবী হেকেটি : আফরোজা পারভীন


প্রকাশিত:
৬ মে ২০২০ ২০:৪০

আপডেট:
৬ মে ২০২০ ২০:৪১

আফরোজা পারভীন


রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরীর সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। তাদের প্রেমে ছিল এটা মাথায় রেখেই অধিকাংশ গবেষণা শুরু হয় বলেই শেষ ফলও সেটাই দাঁড়ায়। কিন্তু বিষয়টা অত সহজ নয়। আসলে তাদের সম্পর্ক কি ছিল সেটা নির্ণয় কঠিন। কারণ তেমন কোনো প্রমাণ নেই। সবই অনুমান আর রবীন্দ্রনাথের রচনা নির্ভর। আর সেসব রচনা বা লেখায় রবীন্দ্রনাথ কখনই বলেননি তাঁর সাথে নতুন বউঠানের প্রেম বা ততোধিক সম্পর্ক ছিল। কাদম্বরীর কোন লেখা আমরা পাইনি। একটা চিরকুট পর্যন্ত না। শোনা যায় তিনি একটি ‘সুইসাইড নোট’ লিখে গিয়েছিলেন। সেটাতে কি ছিল তাও জানা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে শেষ সমাধানে পৌঁছা যায় যে, কাদম্বরী রবীন্দ্রনাথের প্রেমিকা ছিলেন!
আসলে সম্পর্কের নানাবিধ রসায়ন থাকে। বন্ধুত্ব প্রেম ভালবাসা মাতৃত্ব কোনটার থেকে কোনটার দূরত্ব খুব বেশি নয়। আর প্রেম না হলেও মানসসঙ্গি হওয়া যায়, হওয়া যায় প্রেরণাদাত্রী। প্রেরণাদাত্রী প্রেমিকা নাকী বন্ধু এ প্রশ্নের জবাব অন্তত আমার কাছে নেই।
কাদম্বরীর বয়স যখন ৯ বছর তখন ১৯ বছর বয়সি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে তার বিয়ে হয়। কাদম্বরীর বাবা শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার। সামাজিক প্রতিপত্তিতে কাদম্বরীর পরিবার ঠাকুর পরিবারের সমকক্ষ ছিল না। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির কিছু নিয়মাচারের কারণে সেকালের গোঁড়া ব্রাক্ষ্মণরা এ বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। সে কারণে জমিদারি স্টেটের কর্মচারি বা আত্মীয় স্বজনের মধ্য থেকেই দেখে শুনে এ পরিবারে বউ করে আনা হতো । কাদম্বরীর নাম মাতঙ্গিনী। ঠাকুবাড়িতে এলে বিবাহ পূর্ববর্তী নাম বদলে কাদম্বরী করা হয়। ঠাকুর পরিবারে বউদের নাম বদলে দেয়ার রেওয়াজ ছিল।
কাদম্বরী যখন পুত্রবধূ হিসেবে ঠাকুর পরিবারে প্রবেশ করেন, তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭। তিনি কাদম্বরীর চেয়ে ২ বছরের ছোট ছিলেন। ১২ বছরের ছোট ছিলেন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের চেয়ে ।
কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় কাদম্বরী ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। এটা যে আসলে কেমন সম্পর্ক তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে এটা বলতে পারি, এ সম্পর্ক মুখরোচক গল্প করার নয়, অনুভব করার ।
রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনেক গুণ। তিনি নাট্যকার, সঙ্গীতস্রষ্টা, সম্পাদক এবং চিত্রশিল্পী। ঠাকুর পরিবারের উজ্জলতম নক্ষত্র বলা যায় । সুদর্শন, দীর্ঘকায়, মজবুত গড়ন, তীক্ষ নাক, বলিষ্ঠ চিবুক। ব্যক্তিত্বের ধাঁরে ধাঁরালো। নাম যশ আকাশ ছোঁয়া। পিতার অনুপস্থিতিতে জমিদারির দেখাশোনা থেকে শুরু করে খেলাধূলা, ঘোড়ায় চড়া শিকার সবকিছুতেই দক্ষ । তাঁর অনেক নাটক রঙ্গমঞ্চে নিয়মিত অভিনীত হয়েছে সেসময়। বাংলা সাহিত্যের একেকটি অমূল্য রতœ সেগুলো।
কাদম্বরী যথেষ্ট বুদ্ধিমতী আর চৌকস ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির বউ হয়ে যখন আসেন, তখন সামান্য অক্ষর পরিচয় ছিল তাঁর । স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির আগ্রহে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছিলেন। তখনকার দিনে ঠাকুরবাড়িতে এমনই ছিল রীতি। কাদম্বরী বউ হয়ে ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করার পর তাঁর জন্য বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ কেনা হয়েছিল । ঠাকুরবাড়ির সে বছরের হিসেবের খাতা থেকে এ কথা জানা যায়।
১৮০০-১৯০০ শতকে বাঙালি উচ্চবিত্ত সমাজের নারীদের শিক্ষিত হওয়া অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার ছিল। নারীরা অন্দরেই জীবন পার করে দিত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। সেখানে ঠাকুর পরিবার তাদের ঘরের নারীদের জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতির পরিবেশ কিছুটা হলেও উন্মুক্ত করেছিল। নারীশিক্ষা, চিন্তার স্বাধীনতা আর ব্যক্তিত্বের বিকাশের ব্যাপারে তারা উদার ছিল।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের সাথে পরবর্তী জীবন মেলে না। প্রথম জীবনে তিনি কিছুটা গোঁড়া ও রক্ষণশীল ছিলেন। তবে তাঁর উপর প্রভাব ছিল দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ও বৌদি জ্ঞানদানন্দিনীর। তাদের প্রভাবে প্রাচীনপন্থী সংস্কার ত্যাগ করেন তিনি। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন কলকাতার আধুনিক বাবু। তিনি কাদম্বরীকে ঘোড়ায় চড়া শেখালেন। গঙ্গার ধারে নির্জনে তালিম দিতেন। কাদম্বরীর শিক্ষা শেষ হবার পর প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রী গড়ের মাঠে ঘোড়ায় চড়ে হাওয়া খেতে বের হতেন। সে সময় কাদম্বরীর ঘোড়ায় চড়ে স্বামীর সাথে হাওয়া খেতে বের হওয়া রীতিমতো আলোড়ন জাগিয়েছিল কলকাতার রক্ষণশীল সমাজে।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, “ জ্যোতি দাদা ও বৌঠান চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গঙ্গার ধারে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন।”
কাদম্বরী প্রচন্ড রুচিশীর ছিলেন। তিনি ঠাকুরবাড়ির তিনতলার ছাদে গড়ে তুলেছিলেন “নন্দন কানন”। পিল্পের উপর বসানো হল সারি সারি পাম গাছ। ছিল চামেলী, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, করবী, দোলনচাঁপা ফুলের গাছ। আর ছিল হরেক রকম পাখি। এছাড়া ঘর সাজাতে ভালবাসতেন তিনি। ঠাকুরবাড়ির চেহারাই বদলে দিয়ে অপরূপ করে তুলেছিলেন।
ঠাকুরবাড়ির ছাদ বাগানে সন্ধ্যাবেলায় গানের আসর বসত । জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বেহালা বাজাতেন, রবীন্দ্রনাথ গান ধরতেন । কাদম্বরী নিজেও গাইতেন। ভালো গাইতেন তিনি। বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ জগন্মোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের পৌত্রী তিনি। তাঁর রক্তেই গান ছিল। ঠাকুরবাড়ি আসার পর পিয়ানোও বাজাতেন তিনি। কাদম্বরীর উৎসাহে ছাদে বসত সাহিত্যপাঠের আসর। যে আসরে আসতেন সাহিত্যিক অক্ষয় চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শরৎকুমারী। মাঝে মাঝে আসতেন কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাাথ ও স্বর্ণকুমারী ছিলেন এই সভার স্থায়ী সদস্য। বিহারীলাল চক্রবর্তী’র কবিতা কাদম্বরী খুব ভালোবাসতেন। কাদম্বরী বিহারীলালের কবিতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে একখানি আসনও বুনে উপহার দিয়েছিলেন।
বইয়ের নেশা ছিল কাদম্বরীর । তিনি বই পড়ে সেগুলোকে নিয়ে ভাবতেন, উপভোগ করতেন। তবে নিজে পড়ার চেয়ে শুনতে ভালোবাসতেন বেশি। প্রায় দিন দুপুরে নতুন বউঠানের হাতের পাখার বাতাস খেতে খেতে তাঁকে বই পড়ে শোনাতেন রবীন্দ্রনাথ।
কাদম্বরী ভালো অভিনয় করতেন। জ্যোতিরিন্দ্রের লেখা প্রহসন “এমন কর্ম আর করব না”তে প্রথম অভিনয় করেন কাদম্বরী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নায়কের ভূমিকায়। এরপরে 'বসন্ত উৎসব' এবং 'মানময়ী' নাটকেও কাদম্বরী বেশ ভাল অভিনয় করেন।
কাদম্বরীর মনে ছিল চিরন্তন মাতৃত্বের বোধ। নিঃসন্তান ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথকে যেমন ভালোবাসতেন তেমনই ভালোবাসতেন বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। তাদের দেখাশুনা করতেন। অসুখ বিসুখ হলে রাত জাগতেন শিয়রে বসে। বাচ্চাদের কিছু সমস্যা হলে সাথে সাথে ছুটতেন কাদম্বরী। সদ্য মাতৃহারা দেবর ছোট্ট বালক রবিকেও তিনি পরম স্নেহে তাঁর কাছে টেনে নিয়েছিলেন। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে বড়জোর এক কি দেড় বছরের বড় ছিলেন তিনি।
কাদম্বরী দেবী আর জ্যোতিরিন্দ্রের মধ্যে যোজন যোজন মানসিক দূরত্ব ছিল । বাবার কারণে ঠাকুরবাড়ির অনেকেই কাদম্বরীকে নিচু চোখে দেখত। খোঁটা দিতো। কথা শুনাতে ছাড়ত না। কাদম্বরীর সাথে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিয়েতে সত্যেন্দ্রনাথের তীব্র আপত্তি ছিল । তাঁদেরই বাড়ির কাজের লোকের মেয়ে কিনা বউ হয়ে তাঁদেরই বাড়িতে আসবে এ তিনি মানতে পারছিলেন না কিছুতেই! কিন্তু পিতা দেবেন্দ্রনাথের ইচ্ছায় আট বছরের মাতঙ্গিনীর সাথে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিয়ে হল। কিছুই করার ছিল না সত্যেন্দ্রনাথের । সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীও মোটেও পছন্দ করতেন না কাদম্বরীকে। তিনি ব্যক্তিত্বময়ী, সুন্দরী সাজসজ্জায় পাটু। তিনি সবসময়ই মনে করতেন কাদম্বরী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আদৌও যোগ্য নয়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথে পরিবারে ‘নতুন’ নামে পরিচিত। সেই সূত্রে কাদম্বরী নতুন বৌঠান। কাদম্বরীকে হেয় করে আনন্দ পেতেন জ্ঞানদানন্দিনী । চাইতেন জ্যোতি ক্রমশ দূরে সরে যাক কাদম্বরীর কাছ থেকে। তাকে একা করে দেওয়ার মধ্যে যেন জ্ঞানদানন্দিনীর সব আনন্দ। জ্ঞানদাদেবী প্রায়ই বলতেন,‘ নতুনের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। কী যে একটা বিয়ে হল ওর। কোথায় নতুন আর কোথায় ওর বউ! এ বিয়েতে মনের মিল হওয়া সম্ভব নয়। স্ত্রী যদি শিক্ষাদীক্ষায় এতটাই নীচু হয়, সেই স্ত্রী নিয়ে ঘর করা যায় হয়তো, সুখী হওয়া যায় না। নতুন তো সারাক্ষণ আমার কাছেই পড়ে থাকে। গান বাজনা থিয়েটার নিয়ে আছে, তাই সংসারের দুঃখটা ভুলে আছে।’ নতুন ঠাকুরপোর প্রতি ছিল তার বাড়াবাড়ি রকম দরদ।
অনেক গুণ থাকার পরও স্বামীর পাশে যেন খানিকটা নিষ্প্রভ ছিলেন কাদম্বরী। তিনি নিভৃতচারী। তখনকারদিনে চারপাশে লোকজন বসিয়ে অনর্গল গল্প করে আসর মাতিয়ে রাখা ছিল ড্রয়িংরুম কালচার। সমাজের উঁচুতলার মানুষদের এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু কাদম্বরী ছিলেন একদম অন্যরকম। প্রখর ব্যক্তিত্ব ছিল তাঁর। একা থাকতে ভালবাসতেন। কল্পনাপ্রবণ ছিলেন । বই ছিল তাঁর সাথি। স্বল্পভাষী, রহস্যময়ী, প্রচন্ড অভিমানী আর জেদী ছিলেন। ছিলেন মায়ের মতো স্নেহপরায়ণা, বালিকার মত উচ্ছল স্বভাবের। কঠিন কোমলের অপূর্ব মেলবন্ধন ছিল তার মধ্যে। সুন্দরী, দীর্ঘাঙ্গী । বড় বড় চোখ, ঞন ভ্রুপল্লব আর মানানসই সাজসজ্জায় তিনি ছিলেন অনন্যা। কৌতুকভরা দুটি চোখ ছিল। সে চোখের চাহনিতে, কথা বলার ভঙ্গীতে বাঝা যেত তাঁর ব্যক্তিত্বের দ্যুতি। তাঁর সৌন্দর্য ছিল গ্রীক দেবীর মতন। রবীন্দ্রনাথ ডাকতেন গ্রীক দেবী ‘হেকেটি’ নামে।
নিজের মধ্যে গুটানো এই মানুষটা সহজে কারো সাথে যেমন মিশতে পারতেন না একথা যেমন সত্য তেমন এটাও সত্য যে ঠাকুবাড়ির লোকেরা তাঁকে এড়িয়েও চলত। অনেক সমালোচনা ছিল তাঁর। তাঁকে ভুল বোঝেনি এমন খুব কম মানুষই ছিল সে সময়। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে বলত দেমাগী, মিশতে পারে না একদমই। এর উপর ছিলেন নিঃসন্তান। রবীন্দ্রনাথের বড়দিদি স্বর্ণকুমারীর মেয়ে ঊর্মিলা ছিল কাদম্বরীর ভারী ন্যাওটা। স্বর্ণকুমারী বেশিরভাগ সময় লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। উর্মিলা কাদম্বরীর কাছে আদর পেতো। কাদম্বরী থাকে খাওয়াতেন, ¯œান করাতেন। সিঁড়ি থেকে পড়ে ঊর্মিলা যখন মারা গেল, আত্মীয়স্বজন, ঝি-ঠাকুর সবাই কানাঘুষা করা শুরু করল, কাদম্বরীর জন্য মারা গেছে মেয়েটি। আঁটকুড়ি, হিংসা করে খেয়ে ফেলেছে এত্তটুকুন মেয়েটাকে।
কাদম্বরী নিঃসঙ্গ ছিলেন। স্বামী দিনরাত ব্যস্ত কাজ নিয়ে, নাহলে নাটক- নভেল নিয়ে। মনের মিলও তেমন ছিল না। স্বামী যে তলার মানুষের সাথে চলাফেরা করতেন তাদের পছন্দ হতো না কদম্বরীর। সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন না । তাঁর দিন কাটতো জোড়াসাঁকোর তেতলায়, একা, নিসঙ্গ। তাঁর এই একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গ জীবনে এক পশলা মুক্ত হাওয়ার মতো ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । দুই বছর বয়সের ছোট দেবরটির সাথে দশ বছরের বউঠানের ভাব করে নিতে এতটুকু সময় লাগেনি। বন্ধুত্ব ছিল সমানে সমানে। রবির সব আবদার ছিল নতুন বৌঠানের কাছে। বৌঠান শুনত রবির লেখা নতুন কোন কবিতা অথবা গল্প।
রবি তখনও হয়ে উঠেনি দেশবরেণ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দুইবার বিলেত থেকে পড়াশুনা শেষ না করেই ফিরে এসেছেন। আত্মীয়স্বজনের বাক্যবাণে জর্জর। সে বাক্যবান থেতে বাঁচিয়ে দিলেন নতুনদা নতুন বউঠান। দাদা-বউদির সাথে অবকাশ যাপন করতে লাগলেন চন্দননগরের মোরান সাহেবের বাগানবাড়িতে। বাগানবাড়ির দিনগুলির কথা ঘুরে ফিরে অনেকবার এসেছে তাঁর লেখায়।
এসময় রবীন্দ্রনাথের সব লেখার প্রথম পাঠক ছিলেন কাদম্বরী। অসাধারণ সূক্ষ ছিল তাঁর রুচিবোধ, সৌন্দর্যবোধ আর সাহিত্যজ্ঞান! লেখার প্রশংসা, প্রেরণা কিংবা সমালোচনা করতেন তিনি। সে সমালোচনা ছিল অকাট্য। ‘বউঠাকুরানির হাট’ উপন্যাসের পরিকল্পনা তিনি দুপুরবেলা বউঠানের পাশে বসে হাতপাখার বাতাস খেতে খেতেই করেছিলেন।
অশোক বসনা যেন আপনি সে ঢাকা আছে
আপনার রূপের মাঝারে,
রেখা রেখা হাসিগুলি আশেপাশে চমকিয়ে
রূপেতেই লুকায় আবার।
(ছবি ও গান-আচ্ছন্ন, ১)
বউদিকে সাজতে দেখে রবি আপন মনেই সাজিয়েছিলেন এই চরণগুলো।
রবীন্দ্রনাথের নাম ডাক হতে শুরু করল। জ্যোতিরিন্দ্রের মতো বাইরের ডাকে সাড়া দিলো সেও। তাঁর লেখার যশ খ্যাতি যত ছড়িয়ে পড়ছিল । লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা রবি উন্মোচিত হচ্ছিল। কিন্তু নতুন বউঠান এর জীবনে তো কোন পরিবর্তন আসেনি। হ্যাঁ এসেছে। রবির সঙ্গ হারিয়েছে সে। প্রগাঢ়ভাবে চেপে ধরেছে নিঃসঙ্গতা বিষণœতা। রবি বাইরের হাতছানিতে চলে গেল । কাদম্বরীর জীবন কাটাতে লাগলো সেই তেতলাতেই।
চন্দননগর থেকে আসার পরই জ্ঞানদায়িনীর অতি উৎসাহে রবীন্দ্রনাথের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। কাদম্বরীরর সাধ ছিল নতুন বউকে সে গড়েপিটে যোগ্য করবে রবির। কিন্তু সে আহ্লাদেও বাদ সাধল জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। সে চায় না রবির বউ-এর সাথে সখ্য হোক কাদম্বরীর। নিঃসঙ্গতার শাস্তি দিতে চায় নতুন বৌঠানকে!
ঠাকুরবাড়িতে কাদম্বরীকে অপমান করা হতো, খোঁটা দেওয়া চলছিল নিয়মিত। অনেকেই মানতে পারছিলো না এক কর্মচারীর মেয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এতটা প্রভাব বিস্তার করুক । চন্দননগর থেকে আসার পর সে খোঁটা বাড়তে থাকে।
কাদম্বরীর কাছের বলতে একমাত্র ছিলেন রবি। বিয়ের পর তিনিও নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্বামী জ্যোতিরিস্ত্রনাথ নাটক নিয়ে ব্যস্ত। কোনো কোনো রাতে বাড়ি ফেরেন না। রাত কাটান থিয়েটারের লোকজনদের সাথেই। একাকিত্ব ভুলতে কাদম্বরী আফিম নেওয়া শুরু করলেন।
এক বিকেল বেলার কথা। ঠাকুরবাড়ির তেতলার কাদম্বরী। তাঁর মন আজ অনেকখানিই লঘু। দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর আজ একটু শরীর ভাল লাগছে। চেহারায়ও হারানো লাবণ্য ফিরে এসেছে। তিনি আজ সেজেছেন গাঢ় নীল নয়ন সুখ সিল্কের শাড়িতে। জ্যোতিরিন্দ্রের প্রথম জাহাজ “সরোজিনী” আজ প্রথম ভাসবে পানিতে। আর সে উপলক্ষ্যে পার্টি হবে জাহাজে। তাঁকে নিতে আসবে স্বামী। আর সেজন্যই এত সাজ। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেল। সন্ধ্যেয় আসার কথা অথচ বাজছে রাত দশটা। কাদম্বরী বুঝে গেলেন তাঁর স্বামী আজ আসছেন না। সবসময় যেটা হয়ে এসেছে- তাঁকে ছাড়া সব আমোদ আহ্লাদ- তেমনটা হবে আজকেও। দিনে দিনে জমানো অভিমান আর কষ্টের বিশাল হিমবাহে অবশেষে ফাটল ধরল। ধীর স্থির, স্বল্পভাষী, নিজের কষ্ট গোপন করা নারীটির আজ ধৈর্যের শিকল ছিঁড়ল।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “প্রথম আলো” উপন্যাসে এমনই নিখুঁত বর্ণনাা আছে কাদম্বরীর মৃত্যুর দিনের। অবশ্য পরে জানা গিয়েছিল ওদিন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ইচ্ছে করে আসেননি এমন নয়। তাঁর জাহাজ আটকে গিয়েছিল চড়ায়। কিন্তু ততক্ষণে আত্মহত্যা করে ফেরেছেন কাদম্বরী। শোনা যায় আত্মহত্যার আগে স্বামীর জামার পকেটে নটী বিনোদিনীর লেখা একখানা চিঠি পেয়েছিলেন।
আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে। সেদিন কাদম্বরী দেরাজ থেকে শিশি খুলে নিয়ম মাফিক আফিমের চেয়ে অনেক বেশি আফিমের গুলি খেলেন। রবির খাতাতে তিনি লেখা দেখেছিলেন ‘ হেথা হতে যাও পুরাতন’। তিনি আর নতুন বৌঠান নন। সবার কাছে পুরাতন হয়ে গেছেন, বাতিল হযে গেছেন। এমন অনেক ঘটনা একসাথে জড়ো হয়ে কাদম্বরীর আত্মহত্যার পথটি প্রশস্ত করেছিল।
কোন কোন সমালোচকের মতে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অবহেলা অনেকখানি দায়ী কাদম্বরীর মৃত্যুর জন্য। অথচ কাদম্বরীর মৃত্যুর পর রূপবান গুণবান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহ করেননি!
১৯৪০ সালে লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘ ছেলেবেলা’য় উন্মোচিত হলো কাদম্বরীর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের নানা দিক। জানা গেল ‘‘যা-তা তর্ক নিয়ে কথা-কাটাকাটি’’ তাঁদের কথাকাটাকাটির কথা। জানা গেল কীভাবে ঠাকুরপোর কবিত্বশক্তিকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়ে কাদম্বরী ‘‘ কেবলই খোঁটা দিয়ে বলতেন, কোনোকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো’’ লিখতে পারবেন না তিনি। কিন্তু এই ‘তর্ক’ ও ‘ খোঁটা’র আপাত আবরণের আড়ালে নিহিত ছিল পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধার মাধুর্য। আরও জানা গেল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কাছারিতে গেলে তেতলার ঘরের দুপুরের নির্জনতায় বউদি ও দেওরের সময় কাটত পারস্পরিক সান্নিধ্যে। ‘বঙ্গদর্শন’ থেকে রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস পড়ে শোনাতেন বউঠাকরুণকে। ‘‘আপন মনে পড়ার চেয়ে আমার পড়া শুনতে বউঠাকরুণ ভালবাসতেন। তখন বিজলিপাখা ছিল না। পড়তে পড়তে বউঠাকরুনের হাতপাখার একটা ভাগ আমি আদায় করে নিতুম।’’
‘জীবনস্মৃতি’(১৯১২) লিখতে বসে রবীন্দ্রনাথ জানালেন, তাঁর ‘‘চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’’ রবীন্দ্রনাথের ২৪ বছর বয়সে ঠাকুরবাড়িতে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ভগ্নীপতি সারদাপ্রসাদ, বউঠাকুরানি কাদম্বরী ও মেজদাদা হেমেন্দ্রনাথের; তবু মৃত্যুর সঙ্গে কবির স্থায়ী পরিচিতি যে মূলত কাদম্বরীর কারণে একথা সর্বমহল ধরেই নিয়েছে।
ধরে নেয়ার অবশ্য কারণও ছিল। কাদম্বরীর মৃত্যুর পর নানান তথ্য জনসমক্ষে জানাজানি হয়। ঠাকুরবাড়ির হিসাবের খাতা থেকে জানা যায় কাদম্বরীর মৃত্যুর পরে ঠাকুরবাড়িতে পুলিশ এসেছিল। তবে মৃতদেহ মর্গে পাঠানো হয়র্নি। বাড়িতেই করোনার কোর্ট বসানো হয়েছিল। আত্মহত্যার খবর যাতে কোনও সংবাদপত্রে প্রকাশিত না হয়, সেজন্য ঠাকুরবাড়ির তরফে বিভিন্ন মহলে ঘুষ দেওয়ারও হিসেব পাওয়া যায়। (পাল ২০৬-২০৭)। শুধু তাইই নয়, কাদম্বরীর রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটটি ঠাকুরবাড়ির পক্ষে কলঙ্কজনক বিবেচনা করে দেবেন্দ্রনাথের আদেশে নষ্ট করে দেয়া হয়। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের বিবাহের মাস চারেক পরেই আত্মহত্যা করেছেন কাদম্বরী। দু’য়ে দু’য়ে অনেকেই চার মিলিয়ে ফেলেন। অনেকের মনেই এই বিশ্বাস দানা বাঁধতে থাকে যে, রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরীর মাঝে রবীন্দ্র-পতœী মৃণালিনীর আগমনই কাদম্বরীর আত্মহননের কারণ। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার ব্যপারে কাদম্বরীর বাড়াবাড়ি উৎসাহ ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে তিনি চুপ করে যান। এটাও অনেকের চোখে পড়েছিল ।
তবে ভিন্নমতও আছে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে -“কাদম্বরীর আকস্মিক মৃত্যুর কারণ হচ্ছে, মহিলাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের পরিণাম”। জ্ঞানদানন্দিনীর সাথে ছিল তাঁর প্রবল মতান্তর। কিন্তু জ্ঞানদায়িনীর সাথে মতান্তরের কারণে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেবেন এতটাও মনে হয় না।
একদিকে কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় আর সখ্যের কারণে রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরীর প্রেম এমনকি পরকীয়া পর্যন্ত ভেবেছেন অনেক লেখক গবেষক। অথচ রবীন্দ্রনাথ নিজে ‘জীবনস্মৃতি’- তে লিখেছিলেন, “মায়ের মৃত্যুর পরে বাড়িতে যিনি কনিষ্ঠা বধূ ছিলেন (অর্থাৎ কাদম্বরী) তিনিই মাতৃহীন বালকদের ভার লইলেন। তিনিই আমাদিগকে খাওয়াইয়া পরাইয়া সর্বদা কাছে টানিয়া, আমাদের যে কোনও অভাব ঘটিয়াছে তাহা ভুলাইয়া রাখিবার জন্য দিনরাত্রি চেষ্টা করিলেন”। রবীন্দ্রনাথ এখানে ‘মাতৃহীন বালকদের’ উল্লেখের পরেও উচ্চারণ করছেন ‘আমাদিগকে’, যা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় ওই মাতৃহীন বালকদের মধ্যে তিনিও অন্তর্ভুক্ত । এ থেকে আমরা কি বুঝব? কোন মিমাংসায় যাবো?
কাদম্বরীর মৃত্যুর সাত দিন “প্রকৃতির প্রতিশোধ” বইটি প্রকাশিত হয়েছিল । উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল শুধু “ তোমাকে দিলাম”। “ শৈশব সঙ্গীত” এর উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল “বহুকাল হইল, তোমার কাছে বসিয়াই লিখিতাম, তোমাকেই শুনাইতাম। তুমি যেখানেই থাক না কেন, এ লেখাগুলি তোমার চোখে পড়িবেই।”
এই উৎসর্গগুলিতে কারো নাম উল্লেখ না করা হলেও বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না বইগুলি কাদম্বরীকে উৎসর্গ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তবে রবীন্দ্রনাথ নতুন বউঠানকে নিয়ে খোলাখুলিভাবে লিখেছেন নষ্টনীড় গল্প। সেটা আসলেই এক নষ্টনীড়ের গল্প। ভুল মানুষের প্রেমে পড়েছিলেন এক নারী। সে নারীর ভীরু হরিণীর মত স্ত্রস্তপায়ে ঘর ছেড়ে যাওয়ার গল্প সেটা। তাহলে এ গল্প কি করে রবীনদ্রনাথ আর তাঁর নতুন বউঠানের হয়! তবে হ্যাঁ এ গল্পে প্রবলভাবে কাদম্বরীর ছায়া আছে। প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে কাদম্বরীকে। ঘটনার প্রবাহে, কাহিনী প্রেক্ষাপটে মিল আছে।
স্ত্রী ছাড়াও একাধিক নারী রবীন্দ্রনাথের লেখায় এসেছে, ছাপ ফেলেছে। এসেছেন– ইন্দিরা দেবী, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। কিন্তু কাদম্বরী এসেছেন সবচেয়ে বেশি। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন রচনায়। তাঁর জায়গাটি কেউ নিতে পারেনি। কবির জীবনে ধ্রুবতারার মতো জ্যোতির্ময় ছিলেন তিনি সর্বদা। নতুন বৌঠানের দিকে চেয়ে বাঁধা গানটির মতই-
তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা
এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা
এছাড়াও অনেক কবিতা ও গানে তাঁর ছায়া দেখা যায়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর চার বছর পর কবি ‘তবু মনে রেখো -- ’ গানটি লেখেন। এটা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখেন এতে কোনও সন্দেহ নেই।
“তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।
যদি থাকি কাছাকাছি,
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি ---
তবু মনে রেখো ।।
রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে যখন ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করেন তখনও তাঁর ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে নতুন বৌঠানের মুখ।
রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরীর মনের মিল ছিল অনেক। একজন আরেকজনকে বুঝতেন। নর-নারীর সব সম্পর্ককে প্রথাগত “ প্রেম” এর কাতারে ফেলা ঠিক না। সবার জীবনেই একটা জানালা দরকার। দরকার ভেন্টিলেশন। কাদম্বরী ছিলেন বীন্দ্রনাথের সেই জানালা। আর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কাদম্বরীর বদ্ধ জীবনে মুক্ত বাতাস। তাঁরা একজন আরেকজনের মানসসঙ্গী ছিলেন । শুধু “প্রেম” দিয়ে সংজ্ঞায়িত করলে এ সম্পর্কের সবটা বোঝা যাবে না।
পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়, রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরীর সম্পর্ক নিয়ে যে ক্রমাগত গবেষণা বিশ্লেষণ পোস্টমর্টেম এর অনেকটাই সূচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজে। কেন করেছেন তা তিনিই জানেন। হয়ত মনের তাগিদে করেছেন, করেছেন নতুন বউঠানের প্রতি ভালোবাসায় শ্রদ্ধায়, অথবা মনের অজান্তে না বুঝে। এখন যুগে যুগে গবেষকরা খুঁজে বেড়াবেন তাঁদের সম্পর্কের মূল সূত্রটি। তাতে রবীন্দ্রনাথ বা কাদম্বরীর কিছুই আসে যায় না।
আমরা বরং খুব খুশি এটা ভেবে যে, বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে নতুন বউঠানকেন্দ্রিক রবীন্দ্রনাথের কিছু অমুল্য লেখা পেয়ে।
ঋণ :
১। রবিজীবনী (১খন্ড- ৯ম খন্ড)- প্রশান্ত কুমার পাল ২। ঠাকুরবাড়ির কথা- হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
৩। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল- চিত্রা দেব
৪। প্রথম আলো- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫।আমার জীবনস্মৃতি- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
৬। রবীন্দ্রজীবনকথা – প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়
৭। কাদম্বরী দেবী- সুব্রত রুদ্র

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top