সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার সনদ : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
২১ জুলাই ২০২০ ২২:২৪

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২৩:১৭

 

চৈত্র মাসের দিন পনেরো হতে না হতেই সুর্য যেন রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে। সকাল না হতেই মাথার উপর আগুন ছড়াতে শুরু করে। এমনিতেই এবছর সবার মনে কেমন একটা উৎকন্ঠা, দুঃশ্চিন্তা। সেই ৭ই মার্চের পর থেকে। কি হবে কি হবে এই জল্পনা কল্পনা সবার মাঝেই ছিল। সবাই রেডিওতে খবর শোনে নিয়মিত। নানারকম কথা শোনা যায়। দেশে নাকি যুদ্ধ লাগতে পারে। আবার কেউ কেউ বলেন কিছুই হবেনা। ভাই ভাইয়ের মন কষাকষি হয় আবার ঠিক হয়েও যায়। মফঃস্বলের সহজ সরল সাধারন মানুষেরা নিজেদের মত করে একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে নেয়। কিন্তু একটা অজানা ভয় সবাইকে কেমন জড়সর করে রাখে। কেউ স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেনা। কি জানি কে কোন কথার কি ব্যাখ্যা করে।

পঁচিশে মার্চ রাতে নাকি ঢাকায় পাখির মত গুলি করে মানুষ মেরেছে পাকিস্তানী মিলিটারিরা। আবার অনেকে বলে ঢাকায় যা হবার হইছে আমাদের এই মফঃস্বল টাউনে কি করতে মিলিটারি আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে ঝালকাঠিতেও মিলিটারি এসে আস্তানা গাড়ে। সাধারন মানুষ কিছু টের না পেলেও, গন্যমান্য ব্যক্তিরা মনে করেন এরা স্বাভাবিক নিরাপত্তার জন্য এসেছে। কিন্তু সকলের ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মাঝরাতে ঝালকাঠি শহর আলোয় আলোয় ভরে যায়। মানুষজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখে চারিদিকে শুধু আগুন আর আগুন। ঝালকাঠির অহংকার তেলের ডিপোসহ সারা শহরে আগুন জ্বলে। যে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে দক্ষিন বাংলার প্রান সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি’র স্নেহসিক্ত শহর ঝালকাঠি। যা একসময় ছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রানভোমরা কলকাতার বিকল্প। 

তৎকালীন পুর্ববঙ্গের দ্বিতীয় কলকাতা হিসেবে পরিচিত ছিল। নদীবন্দর হিসেবে এর গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনই শিক্ষা সংস্কৃতি, ব্যবসা বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে ঝালকাঠির তুলনা ঝালকাঠিই। জীবনানন্দ, কামিনী রায়ের স্নেহধন্য সেই ঝালকাঠি ও তার আশেপাশের জনপদগুলোও ছিল আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। সেই  শহরটা যেন মৃত্যুপুরী হয়ে গেল একদিনেই। শোনা যেত নানারকম গুজব যার বেশিরভাগই শুধু রটনা নয় ঘটনা। দুদিন না যেতেই আশেপাশের জনপদেও সেই সর্বগ্রাসী হায়েনার দৃষ্টি পরতে শুরু করলো। শুরু হলো তাদের যখন তখন যাতায়াত। আর এই যাতায়াত মানে এক একটা গ্রাম শ্মশানে পরিনত হওয়া। প্রতিদিনই নাকি ধরে আনা হত যুবক শ্রেণীর পুরুষদের। তাদের চোখ হাত বেঁধে একটা মোটা দড়ি দিয়ে একসঙ্গে বেঁধে নামিয়ে দেয়া হত সুগন্ধায়। গলা জলে নামিয়ে একবারে গুলি করা হত তাদের রাতের অন্ধকারে। সুগন্ধা তাদের আপন বক্ষে ধারন করে হয়তো বা বিলাপ করত। যে বিলাপের শব্দ মিশে যেত জল আর বাতাসের মিলিত মূর্ছনায়।

 শহর থেকে মাইল তিনেক ভেতরের একটি গ্রাম যার নাম চারুখান। এই গ্রামের মানুষগুলো নানারকম গুজব শুনে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। বড়রা একরকম চিন্তায় আর ছোটোরা অন্যরকম অস্থিরতায়। নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে কিন্তু স্কুল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতেও যেতে দেয়না। এরই মধ্যে একদিন খবর এলো যেকোনোদিন মিলিটারি আসতে পারে এই গ্রামে। কিন্তু গ্রামের মানুষের মাথায় আসছিলনা  গ্রামে মিলিটারি এসে কি করবে? তাই তাদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও সেরকম সাবধানতা ছিলনা। গ্রামে ছিল একটা উচ্চ বিদ্যালয়। যার নামের মাঝেই ছিল তার পরিচয়। চারুখান দশগ্রাম সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে আশেপাশের দশগ্রাম থেকে ছেলেমেয়েরা পড়তে আসতো। বাংলাদেশের গ্রাম বলতে আমাদের চোখে যে চিত্র ভেসে ওঠে,এ গ্রামটিকে তেমন একটি গ্রাম বললে বেশী বলা হবেনা। 

এই গ্রামেই বাস ভোলার বানভাসি মানুষ সনাতনের। যার তিনকুলে কেউ নাই। নিত্য আসা বানের জলে সর্বহারা আরো কিছু বানভাসি লোকের সাথে ভাসতে ভাসতে সেও এসে ঠাই নিয়েছিল এই গ্রামে। এবাড়ি ওবাড়ি করে শেষে গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত বাড়িতে একখানা মাথাগোজার কুড়েঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করে। চালচুলাহীন সনাতনের ঘর হয়েছে যখন তখন গ্রামবাসীরাই তার ঘরনী এনে দেয়। পাশের গ্রামের একটি অনাথ সদ্য কৈশোর পেরুনো মেয়ে সুধাময়ীর সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। এ অঞ্চলে সবে পানচাষ শুরু হয়েছে। সনাতন সে পানের বরজের কাজে বেশ পারদর্শী হওয়ায় তার দিন ভালই কাটছিল। দিনশেষে ঘরে ফিরে আসত সনাতন। হুকোর তামাকে নারকেলের ছোলার আগুন দিয়ে দাওয়ায় বসে দুচারটে টান দিয়ে কাশতে শুরু করত। সুধাময়ী দিনের আলো থাকতে থাকতে রাতের রান্না শেষ করায় ব্যস্ত ।কাশি শুনে ছুটে এসে বলত কতবার কইলাম এতো তামাক খাইয়েন না।কিন্তু আপনে তো মোর কতা কানেই তোলেননা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হুঁকোটা অন্তসত্ত্বা সুধাময়ীর হাতে তুলে দেয় সনাতন। সে দীর্ঘশ্বাস হয়তোবা তার বানের জলে ভেসে যাওয়া আপনজনদের কথা ভেবে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে।

 সন্ধ্যা হতে না হতে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে দুজনে ভাত খেয়ে নেয়। কো্নোদিন সনাতন রাতেরবেলা পান গুছতে যেত। কিন্তু এই যুদ্ধ শুরুর পর কেউ তেমন পান নিয়ে ঝালকাঠির সোম শুক্রবারের হাটে যায়না। তাই কিছুটা অলস সময় কাটে সনাতনের। মাঝে মাঝে অন্য কাজে ডাক পরে সনাতনের। কারো ঘরের চাল ছাওয়া,নয়ত গাছ নিড়ানো,বাড়ীর চারপাশের জঙ্গল পরিস্কার করা। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কেউ বাড়ির চারপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল কাটেনা। কি জানি যদি মিলিটারি আসে তাহলে যাতে এই জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা যায়। পরদিন এরকমই কাজে যাওয়ার কথা সনাতনের। তাই সকাল সকাল মাটির মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পরে স্বামী স্ত্রী। শুয়ে শুয়ে স্বামী স্ত্রী তাদের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলে। সনাতন বলে,বৌ মোগো পোলারে কোলোম স্কুলে পাডামু। লেহাপরা হিয়ামু। মোগোতো স্কুলে পাডাইতে দূরে যাওয়া লাগবেনা। গরের দুয়ারে স্কুল, পান্তা খাইয়াই স্কুলে যাইতে পারবে। মোর মত মুখ্যু অবেনা। হে যেন লেহাপড়া শিইখ্যা চাকরি করতে পারে। মোর নাহান মাইনষের বাড়ি কাম করা না লাগে যেন। নিজে যাতে একখান বাড়ি করতে পারে। পরের বাড়ি উপরাইদ্দা না থাহা লাগে। বৌ সে কথায় সায় দিয়ে বলে, হয় আপনে মোর মনের কতা কইছেন। মোরো মনে আশা পোলারে লেহাপরা হিয়ামু। লাগে মুইও পাঁচজনের গরের কাম করমু। একথা সেকথা বলতে বলতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে কানাঘুষায় শোনা যায় মিলিটারি আসতে পারে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নাকি এই গ্রামের পুরুষদের লিস্ট করে দিয়েছে যাদের মারতে পারলে পাকিস্তানীদের লাভ হবে। এ ছাড়া এই গ্রামটি শিক্ষা সংস্কৃতিতে বেশী বাঙালিয়ানার প্রসার ঘটাচ্ছে। যা কোনভাবেই পাকিস্তান রাস্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সে সময়ের পাকিস্তানের অখন্ডতার রক্ষক হয়ে পাকিস্তানীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা শান্তিকমিটির অতি উৎসাহে সত্যিই পরেরদিন মিলিটারি এসে পড়লো শান্ত ছবির মত এই আদর্শ গ্রামটায়। চৈত্রমাসের পোড়া রদ্দুরের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের প্রায় সবাই ঘরেই ছিল। তাই মিলিটারি এসে যখন ঝাঁপিয়ে পড়লো তখন সবাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে প্রাণ নিয়ে ছুটতে লাগলো। সনাতনও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। বৌকে পালাতে বলে ঠেলে দিয়ে নিজে আবার ঘরে গেল ছেলের জন্য কটা টাকা জমিয়েছিল বাঁশের কুলুঙ্গীতে তা আনার জন্য। সেটা নিয়ে বাইরে এসে দিল দৌড়। কিন্তু ছোটখাটো গড়নের সনাতনের বুকে এসে কিযেন লাগলো। কিছু বোঝার আগেই সে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। ঘন্টা কয়েকের ধ্বংসলীলা শেষে মিলিটারিরা চলে গেল ঝালকাঠিতে তাদের আপাতঃ নিরাপদ আশ্রয়ে। বাড়ির আনাচে কানাচে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো ধীরেধীরে তাদের ঘরে ফিরতে লাগলো। কিন্তু হায় ঘর কোথায়? পরে আছে নিভে যাওয়া আগুনের কিছু অবশেষ। সুধাময়ীও ফিরলো।ফিরে দেখে সনাতন তখনো ফেরেনি। সদ্য সতেরো কি আঠারো পেরোনো সুধাময়ী বুঝতেই পারেনা কি হলো সনাতনের? তারপর দেখে উঠানের মাঝে বাড়ির সবাই ভীড় করে আছে। কাছে গিয়ে দেখে সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছে সনাতন,তার সারা শরীর রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। সুধাময়ী বা এ গ্রামের মানুষ এর আগে কখনো দেখেনি এভাবে মানুষ মারা যায়। তাই গোটা গ্রাম যেন পাথর হয়ে যায়। সেদিন মিলিটারির ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে পা হারায় আরো একজন। পরে সন্ধান মেলে আরো একজন বানভাসি মানুষ যে এই গ্রামেরই বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন অকৃতদার। যাকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে যায়। আরো অনেক হতভাগ্য বাঙালির সাথে তার রক্তও সুগন্ধার জলরাশিকে বাড়িয়েছিল। 

মানুষের জীবন তো থেমে থাকার নয়। সময়ের প্রলেপে সব ক্ষতই ভরাট হয়ে যায়। শুধু থেকে যায় ক্ষতের দাগ। একদিন যুদ্ধ শেষ হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে জানতে পারে সুধাময়ী। কিন্তু বুঝতে পারেনা স্বাধীন হওয়ায় তার কি লাভ হয়েছে?

 সনাতনের মৃত্যুর পর কিছুদিন সুধাময়ীর জীবনে সকলের সহানুভুতির ছাতাটা মেলাই থাকে।কিন্তু অনন্তকাল তো আর থাকতে পারেনা। সুধাময়ীকেও তার আঠারো বছরের অন্দরমহলের জীবন ছেড়ে বাইরের জগতে পা রাখতে হয়।দিনমজুরি,ভিক্ষাবৃত্তি সহ এক অল্পবয়েসী সন্তানসম্ভবা বিধবার জীবনে যতরকম দূর্বিপাক আসার কথা সবকিছুর মোকাবিলা করতে করতে ক্লান্ত সুধাময়ী শেষ অবধি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সনাতনের দেখা স্বপ্নকে  সত্য করার অলীক বাসনায় দ্বিগুন উৎসাহে শুরু হয় আরো কঠিন সংগ্রামের। অর্ধাহার,অনাহার,অপুষ্টিতে জর্জরিত সুধাময়ী ছেলেকে বুকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি কাজে যায়।

 কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কেমন যেন মানুষগুলো বদলে যেতে শুরু করে। এতো মৃত্যু এতো ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হয়তোবা মানুষের স্বাভাবিক কোমলতা হারিয়ে গেছে। তাই দুধের শিশুসহ কেউ তেমন কাজ দেয়না। সময়টাই এমন সবার নিজের অভাব,হারানোর বেদনা এতবেশি ছিল যে অন্যকে দেখার উপায় ও সামর্থ ছিলনা তাদের। তাই ভিক্ষাবৃত্তিই সম্বল হয়ে যায় সুধাময়ীর। ছেলে একটু বড় হলে আবার বাড়ি বাড়ি কাজ শুরু করে সে। মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় সনাতনের ইচ্ছের কথা। ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে হবে। যেকরেই হোক ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে হবে। কিন্তু সুধাময়ীতো আর সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তাই মুক্তিযোদ্ধার সম্মান বা সুবিধা কোনটাই তার ভাগ্যে জোটেনি। তাই ছেলেকে সনাতনের মনের মতো করে মানুষ করা সুধাময়ীর সামর্থ্যে কুলায়নি। সুধাময়ীর ছেলে যার নাম রেখেছিল অতি উৎসাহী প্রতিবেশীরা জয় সে বুনো আগাছার মত অনাদরে অবহেলায় গায়ে-গতরে বড় হলেও তার না দেখা বাবার স্বপ্নের বিদ্বান ছেলে হতে পারেনি। বলা যায় তার হওয়ার কথাও ছিলনা। কখনো কখনো নিশুতি রাতে ঘুমন্ত ছেলের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে সুধাময়ী ভাবে সনাতনের মনের মতো করে পোলাডারে মানুষ করতে পারলামনা। একটা শব্দহীন দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে সুধাময়ীর বুক চিড়ে। পাছে ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। আবার পাশ ফিরে শোয় সুধাময়ী।

মনে মনে বলে সনাতন দ্যাশ নাকি স্বাধীন অইছে তোমাগো নাহান মাইনষের মরন অইছে বইললা। কিছুই বোজতে পারিনা স্বাধীন হওয়ার মানে কি? স্বাধীনের আগে তুমি ছেলা বইলা মোর গরে বাইরে এতো কষ্ট করা লাগে নাই। আর স্বাধীন দ্যাশে তো মোর প্রাণডা লইয়া টিইক্কা থাহা দায়। 

সেই সুধাময়ী কবে কখন যে নীরবে মরে গেল তাও কেউ মনে রাখেনি। যারা নয়মাস অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে তাদের যুদ্ধ নয়মাস পরে শেষ হয়ে গেছে। তাদের জীবনের স্বাভাবিক স্রোতধারা থেমে যায়নি, বা বদলেও যায়নি। কিন্তু সুধাময়ীকে বিনা অস্ত্রে যুদ্ধ করে যেতে হয়েছে আমরন। বেঁচে থাকার যুদ্ধ, নিজের ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ। যে যুদ্ধের খবর লেখা নেই কোথাও। যে যুদ্ধকে যুদ্ধ বলে মনেও করেনা কেউ। এই যে সনাতন মরে গেল কেন মরে গেল সে প্রশ্নের উত্তরটাও কোনদিন জানা হয়নি সুধাময়ীর। সত্যি বলতে এটা যে জানার বিষয় সুধাময়ী তো তাও জানতোনা। 

তারপর কেটে গেছে প্রায় ত্রিশটি বছর। সুগন্ধার প্রবাহ অনেকটা ধীরলয়ে বইছে। ধানসিঁড়ি এখন আর নদী নেই কোন রকমে  তার কৃশকায় শরীর নিয়ে টিকে আছে। তার দুইতীরে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ জনপদ। গল্পের গরু যেমন গাছে ওঠে,কবিতায় জোছনা যেমন করে হেসে লুটিয়ে পড়ে তেমন করেই অসম্ভবের ঘরে সম্ভবের জন্ম হলো। সুধাময়ীর ছেলে লটারি পাওয়ার মত একখানা মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়ে গেল সনাতনের নামে। আর সেই সনদের জোরে ভাল একটা কাজও পেয়ে গেল। ছেলে সুধাময়ী আর সনাতনের নামে স্মৃতিস্তম্ভ বানালো। স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে লেখা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা সনাতন। আর পাশে সুধাময়ী দাসী।

গল্পের শেষটা গল্পের মতই হয়েছে হয়তো। কিন্তু সুধাময়ী আর সনাতনের ছেলে জয় সেতো এই মহানগরের কোন অন্ধগলিতে গড়ে ওঠা হাজারো কারখানার কোন এক কারখানায় নিজের শ্রমের বাজার খুঁজছে।

বিঃ দ্রঃ কিশোর বয়সের স্মৃতি থেকে সত্য ঘটনার আলোকে গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম। নামগুলোই শুধু কাল্পনিক কিন্তু চরিত্রগুলো সত্যি। তাই এটাকে গল্প হিসেবে নেয়া না নেয়া সম্মানিত পাঠকের ইচ্ছা। ধন্যবাদ। 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top