সিডনী বুধবার, ১লা মে ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্রী সাইদা খানম: ক্যামেরা তাঁকেই মানাতো : আফরোজা পারভীন


প্রকাশিত:
১৯ আগস্ট ২০২০ ২২:৩৪

আপডেট:
১ মে ২০২৪ ০৩:৫৭

ছবিঃ আলোকচিত্রী সাইদা খানম

 

সাইদা খানম (২৯ ডিসেম্বর, ১৯৩৭- ১৮ আগস্ট ২০২০) বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী। তিনি প্রয়াত হয়েছেন আজ। তাঁর স্মরণে এই লেখা।
সাইদা খানমের পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙায়। তবে সাইদা খানমের জন্ম পাবনায়। তাঁর বাবার নাম আবদুস সামাদ খান । মায়ের নাম নাছিমা খাতুন। পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও নারী আলোকচিত্রী।
ছবি তোলা শুরু ১৩-১৪ বছর বয়সে। এই বয়সে সাধারণত বই পড়া ও খেলাধুলায় সময় কেটে যায়। কিন্তু সাইদা বই আর খেলার পাশাপাশি এই এতটুকু বয়সেই হাতে তুলে নিলেছিলেন ক্যামেরা।
বাবা আব্দুস সামাদ খান শিক্ষা বিভাগে কাজ করতেন । সে সময় মুসলিম পরিবারের মেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনা করার সুযোগই পেতেন না। ছবি তোলা তো রীতিমতো দুঃসাহস। সেটাই করলেন সাইদা। পরিবারও বাধা দেয়নি। বাবার আপত্তি ছিল কেবল দুটো জায়গায়! বিয়ের আসরে আর স্টেডিয়ামে গিয়ে ছবি তোলা যাবে না। সাইদা প্রথমটা মানতে পেরেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয়টা পারেননি। ছবি তুলতে হয়েছে কাজের খাতিরে ।
ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালে। বোন হামিদা খানম একটা ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলেন। সেই ক্যামেরায় একজন কিশোরী গৃহকর্মীর ছবি তুলেছিলেন সাইদা। পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হলো। সে ছবি দেখে এলাকার মানুষ খুবই অসন্তুষ্ট হলো। একে নারী আলোকচিত্রী, তার উপর ছবির বিষয়বস্তুও এক কিশোরী। দুজনই নারী। এলাকার মানুষ বিরূপ মন্তব্যের ঝড় তুলল। একটাই আশার কথা, সাইদার পরিবার তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
তবে সাইদার জন্য বিরাট এক সুযোগ করে দিয়েছিলেন ‘জায়েদী স্টুডিও’র মালিক জায়েদী। ঢাকায় সেসময় হাতে গোনা কয়েকটি ছবি তোলার স্টুডিও ছিল। জায়েদী স্টুডিওর নাম ডাক ছিল বেশ।জায়েদী স্টুডিওতে নিজের তোলা ছবি প্রিন্ট করাতে যেতেন সাইদা। তাঁর ছবি তোলার ধরন দেখে চমৎকৃত হলেন জায়েদী। ভাবলেন, একে ঠিকঠাক গড়ে তুলতে পারলে কালে সে দেশের স্বনামধন্য আলোকচিত্রী হয়ে উঠবে। জায়েদী সাহেব সাইদাকে শুধু যে ছবি নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তা-ই নয়, তিনি এ সম্পর্কিত প্রচুর বইপত্র-ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগও করে দিয়েছিলেন তাঁকে। ফটোগ্রাফির বিভিন্ন খুঁটিনাটি, অ্যাপারচার, এক্সপোজার, এমনকি ছবির কম্পোজিশন ইত্যাদি বিষয় এভাবেই শিখতে শুরু করেন সাইদা। কিন্তু এই সুযোগ বেশিদিন রইল না। একান্ন সালের দিকে হুট করেই বন্ধ হয়ে যায় স্টুডিওটির কার্যক্রম। কিন্তু যে গুণী তাঁকে আটকায় কে! বাড়িতে
একটি ক্যামেরা ছিল । সে ক্যামেরায় বেশিরভাগ সময় পারিবারিক ছবি তোলা হতো। সেটাই হয়ে উঠল তাঁর হাতিয়ার ।
সাইদা ছবি তোলার মূল প্রেরণা পেয়েছেন খালা কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এবং বড় বোন হামিদা খানমের কাছ থেকে। আটচল্লি¬শ সালের গোড়ার দিকে বোন ক্যামেরাটা কিনে দিয়েছিলেন। তার একটা নিজস্ব ক্যামেরা হলো। সেই ক্যামেরা হাতে পেয়েই তুলতে থাকেন নিজের ইচ্ছেমতো ছবি। আর তখনই তোলেন ওই কিশোরী গৃহকর্মীর ছবিটি।
একজন সত্যিকারের আলোকচিত্রী হয়ে ওঠার পেছনে জায়েদী সাহেবের অবদান তিনি সবসময় স্বীকার করেন। তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন,
‘জায়েদী সাহেবই আমার ফটোগ্রাফির প্রথম শিক্ষক।’
পড়াশোনাতেও দারুণ মনোযোগী ছিলেন তিনি। তিনি তাঁর সময় যখন মেয়েদের জন্য লেখাপড়া ছিল দুরুহ, তখন তিনি দু-দুটো মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৭২ সালে লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতকোত্তর করেন।
১৯৫৬ সালে বেগম পত্রিকায় মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পত্রিকাটির সম্পাদক নুরজাহান বেগমের উৎসাহে তিনি এ দায়িত্ব নেন। আলোকচিত্রী হিসেবে পেশা গ্রহণের জন্য সামাজিকভাবে তাঁকে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়েছে। অবশ্য পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর এমনকী আশির দশকেও এই পেশায় নারীর কাজ করাটা অনুৎসাহিতই করা হতো। তাঁকে কাজ করার অনুপ্রেরণা শুধুমাত্র নুরজাহান বেগমই নন, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনও দিয়েছিলেন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর ছবি ছাপা হয়েছে ‘অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্ররিতে লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সঙ্গে প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
১৯৬০ সালে ‘অল পাকিস্তান ফটো প্রতিযোগিতা'য় প্রথম হয়েছিল তাঁর ছবি। তখন পরাধীন পাকিস্তানের বাসিন্দা আমরা। পাকিস্তান একটি গোঁড়া, রক্ষণশীল দেশ। সে দেশের একজন নারী আলোকচিত্রী প্রথম হয়ে গিয়েছেন বিষয়টা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তাঁকে কোনেক্রমেই হারানো যায়নি বলেই তিনি প্রথম হয়েছিলেন।

এলো মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১। টালমাটাল দেশ। স্বাধীনতার আকাঙক্ষায় উদ্বেল জনগণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে সাইদা খানম ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। ১৬ ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন ও রূপসী বাংলা) সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা বাধা পেরিয়ে সে ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে যান তিনি। তবে প্রচন্ড গোলাগুলির কারণে সেদিন ছবি তুলতে পারেননি। তবে নির্ভীক সাইদা খানমের সাহসিকতা দেখে সেদিন সবাই আবাক হয়েছিল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুদিন ছবি তোলা থেকে একটু দূরে ছিলেন। তারপর আবার হাতে তুলে নিয়েছেন ক্যামেরা।
অলোকচিত্রী হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন সাইদা খানম। ১৯৭৩ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘অল ইন্ডিয়া ফটো জার্নালিজম কনফারেন্সে’ যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে। ১৯৮২ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ এশিয়ান গেমসে বেগম পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ছবিও তোলেন সাইদা খানম। সত্যজিৎ-এর তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। এই পুরস্কার পাবার পর তাঁকে নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। ১৯৬২ সালে ‘চিত্রালী’ পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম। এর আগেও নানা কাজে কলকাতায় এসেছেন। উত্তম-সুচিত্রার ছবি তোলার সুযোগও হয়েছে। কিন্তু সত্যজিতের সঙ্গে তখনও দেখা হয়নি তাঁর। সত্যজিৎ-রায়ের সাথে তাঁর দেখা হওয়ার সেই অমূল্য ক্ষণের বর্ণনা দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সাইদা খানম বলেছেন এভাবে:
‘এর মধ্যে অনেকবারই ভেবেছি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যাপারে। কিন্তু সেভাবে সময়-সুযোগ হয়নি। একবার পত্রিকা থেকেই আমাকে বলা হলো সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কাজ করতে। তো আমি একদিন গেলাম তার বাড়িতে। এটি ছিল লেক টেম্পল রোডে অবস্থিত। একবার ভাবলাম চলে যাই। তিনি হয়তো ব্যস্ত আছেন, বিরক্ত হতে পারেন। আবার কী মনে করে গেলাম তার বাসায়। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি কী চাই? সে সময়টাতে অল্প সময় হয়েছে তিনি ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমাটি শেষ করেছেন। ওই সিনেমাটি নিয়েই আমি কথা বললাম। তারপর কথায় কথায় আমি একফাঁকে তার কাছে ছবি তোলার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। পরে শুনেছিলাম তিনি আমার ছবি তোলার প্রশংসা করেছিলেন।’
বণিকবার্তায় প্রকাশিত অপর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:‘কয়েক দিন পর আমি ঢাকায় ফিরে এলাম। মানিকদা আমাকে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র কয়েকটি স্টিল ছবি দিয়েছিলেন। সেই ছবি, আমার নিজের তোলা মানিকদার ছবি এবং সাক্ষাত্কার লিখে যখন পারভেজ ভাইকে দিলাম, তিনি বিস্ময়ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী করে এই অসাধ্য সাধন করলেন!’
পরে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের সঙ্গে সাইদা খানমের খুব ঘনিষ্ঠতা হয় । সত্যজিৎ-এর স্ত্রী তাঁকে স্নেহ করতেন। তাঁদের মধ্যে পত্রালাপ হতো। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাসায়, ছবির শুটিংয়ে। ‘মহানগর’, ‘চারুলতা’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’- এই তিনটি ছবির শুটিংয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন সাইদা খানম। এটা ছিল পেশাদার আলোকচিত্রী সাইদা খানমের জন্য এক অসামান্য সুযোগ। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার নন, তাই চলচ্চিত্রে সরাসরি কাজ করেননি। কিন্তু সত্যজিতের ছবির শুটিংয়ে উপস্থিত থেকে ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তা-ও একটি নয়, তিন তিনটি ছবিতে!
ক্যামেরায় ছবি তোলার পাশাপাশি লেখালেখি করেছেন আজীবন। । তাঁর উল্লে¬খযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’, ‘আলোকচিত্রী সাইদা খানম-এর উপন্যাসত্রয়ী’। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমি ও ইউএনএবির আজীবন সদস্য। যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সঙ্গে।
আলোকচিত্রী ও সাহিত্যিক হিসেবে তিনি অনেক পুরস্কার/ সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড,জাপান, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোশিপ, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি।
এক বর্ণাঢ্য, কর্মমুখর, জীবন কাটিয়েছেন সাইদা খানম। প্রচার বিমুখ আর নিভৃতচারী ছিলেন। কিন্তু মেধা তাঁকে নিভৃতে থাকতে দেয়নি।
সাইদা খানম প্রায় ৩ হাজারের অধিক ছবি তুলেছেন। তিনি সময়ের প্রয়োজনে ছবি তুলেছেন। তাই প্রকৃতি, নিসর্গ বা অন্যান্য বিষয়াবলী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদসহ শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের ছবি তুলেছেন তিনি। তিনি তাঁদের ছবি তোলার পাশাপাশি তাদের সান্নিধ্যও লাভ করেছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব-ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্র নাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছবি তুলেছেন তিনি। ছবি তুলেছেন রানী এলিজাবেথ, মাদার তোরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্ন- এর মতো বিখ্যাত মানুষদের। চন্দ্রবিজয়ী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন সাইদা খানম নিজ হাতে।
ইতিহাসকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য ছবি তুলতে শুরু করেছিলেন সাইদা, কিন্তু আজ বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ইতিহাসে তিনি এক অনস্বীকার্য অংশ, এক কিংবদন্তি।
সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি নিয়ে তিনবার আয়োজন করেন একক প্রদর্শনী। নিজের তোলা মাদার তেরেসা’র ছবির প্রদর্শনী করার আয়োজন করেছিলেন। দেশে বিদেশে প্রচুর প্রশংসিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালে দৃক লাইব্রেরিতে ‘শান্তি নিকেতন ও কণিকা বন্দোপাধ্যায়’ শীর্ষক প্রদর্শনী করেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন, ‘কখনো ভাবিনি যে ক্যামেরাকে ভয় পেতাম, সেটি আমার সারা জীবনের সাথী হবে।’ সময় বদলেছে। এসেছে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ক্যামেরা। কিন্তু সাইদা খানম ফিল্মের ক্যামেরাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ডিজিটাল ক্যামেরা তাঁর কাছে মনে হয় ‘ফাঁকি দেওয়া’। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তখনকার দিনে আমরা খেয়াল করতাম কখন রোদ আসবে, কী এক্সপোজার দেব। এখন তো শুধু ক্যামেরা ধরে রাখলেই হয়।’
বর্ণাঢ্য এবং বিশাল এক কর্মজীবন ক্যামেরার সাথে পার করে প্রায় ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্যামেরা ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সাথি। যেখানেই গেছেন ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে গেছেন। বিয়ে, ঘর সংসার করেননি, ক্যামেরার সাথেই ছিল তাঁর ঘর সংসার। রাজধানীর বনানীতে থাকতেন। ছবি তোলার পাশাপাশি পড়াশোনা ও লেখালেখি করতেন। ঠুমরি-গজল, রবীন্দ্রসংগীত ভালবাসতেন।
নিভৃতচারী ছিলেন। চলেও গেলেন নিভৃতে। তবে যে কীর্তি রেখে গেলেন তা নিভৃতে থাকার নয়। অজানালোকে ভালো থাকুন সাইদা খানম!
তথ্যসূত্র:
১. জাহিদুল করিম (মার্চ ০৮, ২০১৫)। " দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম"। দৈনিক প্রথম আলো।
২. উইকিপিডিয়া
৩. বাংলাপিডিয়া

 

আফরোজা পারভীন
কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, কলামলেখক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top